#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৪৪
বাবাকে অপেক্ষা করতে বলে দৃষ্টি রুমে চলে গেল। দুই জা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন বেয়াইকে আপ্যায়ন করার জন্য। তিনি সোফায় বসেন। ফারনাজ বাবার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করে। কত কথা তার! তিন চার মাসের জমিয়ে রাখা কথাগুলো যেন আজই শেষ করবে। ফাহাদ আবরার মনোযোগ দিয়ে মেয়ের কথা শোনেন। বড় মেয়ের চঞ্চলতা মিস করেন খুব। আফরান বোকার মতো দাঁড়িয়ে একপাশে। শশুর তো তাকে দেখেও দেখল না। সে নিজে এগিয়ে গিয়ে লম্বা একটা সালাম দেয়,
“আসসালামু আলাইকুম, শশুর বাবা।”
ফাহাদ আবরার গম্ভীর মুখে জবাব দেন। আফরান পাশে বসে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি এতো সহজে গলে যাবার মানুষ নন। হঠাৎ ফারনাজ জিজ্ঞেস করে,
“তুমি না জানিয়ে হঠাৎ চলে এলে যে বাবা! কিছু কি হয়েছে?”
“দৃষ্টি আমাকে আসতে বলল। বাড়ির জন্য মন খারাপ করছে নাকি, তাই নিতে এসেছি।”
আফরান আকাশ থেকে পড়ে। বউ চলে যাবে! সে কেমন কথা! এখনো তো কিছুই হলো না, আর তাকে বউ হীন করে চলে যাবে। সে ব্যাকুল হয়ে বলে,
“না না, দৃষ যাবে না। এখনো তো বা.. আই মিন কিছু না। কিন্তু, না যেতে পারবে না।”
ফাহাদ আবরার বিরক্ত হলেন, বললেন,
“আমার মেয়ে আমার সাথে যাবে। এতে তোমার এতো সমস্যা কীসের?”
অসহায় আফরান কিছুই বলতে পারল না। শশুরের সাথে কি বলা যায়? একটু হলেও তো লজ্জা অবশিষ্ট আছে।
গাইগুই করেও আফরান বিশেষ কিছু করতে পারল না। সিনথিয়া গেছে কিছুদিনের জন্য টুরে, মেয়েকে সাথে নিয়ে। সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে। যাবার সময় বলে গেছে, “ভাইদের রিসিভশনের আগেই আমি এসে পড়ব। তার আগে মেয়েকে একটু বাংলাদেশ ঘুরিয়ে আনি।” তার সাথে গিয়েছে দুজন সব থেকে বিশ্বস্ত এবং পুরোনো গার্ড। সে থাকলে নিশ্চয় কিছু না কিছু করে দৃষ্টিকে আটকাতে পারত। দৃষ্টি তৈরি হয়ে লাগেজ হাতে নেমে এলো। তাকে দেখে মিসেস সাইমা বললেন,
“বেড়াতে যাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি চলে আসিস, কেমন? তোকে ছাড়া বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে রে।”
দৃষ্টি মৃদু তাচ্ছিল্য হাসে। আর আসা, কারো মাথা ব্যথা হয়ে সে থাকতে চায় না। আর না কারো পথের কাঁ’টা হয়ে। ফাহাদ আবরার উঠে দাঁড়ালেন। সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ছোট মেয়ের লাগেজ হাতে নিলেন। ফারনাজ মোচড়া মুচড়ি করছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। সেও যেতে চায় বাবার সাথে। বলল,
“আমিও যাব, বাবা।”
তিনি মুখ খোলার আগেই মিসেস অনা বললেন,
“এখন একদমই জার্নি করা যাবে না, নাজ। তুমি বরং কিছুদিন পর যেও। তুরাগ দিয়ে আসবে।”
তাহলে আর কি? ফারনাজ চুপ হয়ে গেল। ফাহাদ আবরার বড় মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন,
“সাবধানে থাকবে। আর তুরাগকে আমি বলব ও বাড়িতে যাবার কথা।”
সে ভীষণ খুশি হলো। বাবার বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর তিনি বাড়ি থেকে বের হলেন। পিছু পিছু আফরান চলে এলো গাড়ি পর্যন্ত। সেও তো জামাই কিন্তু তাকে দাওয়াত করা তো দূরে থাক, ভালো করে কথাই বলল না শশুর। ফাহাদ আবরার গাড়িতে লাগেজ উঠিয়ে দিলেন। দৃষ্টি কোনোদিকে না তাকিয়ে চুপচাপ উঠে বসে। তিনি আফরানের দিকে চেয়ে বলেন,
“বিদায় দিতে কি আমার বাড়ি পর্যন্ত যাবে?”
আফরানের মুখটা চোরের মতো হয়ে গেল। সে সত্যিই চায়ছিল এক ফাঁকে গাড়িতে উঠে বসতে। জোর পূর্বক হেসে বলল,
“না না, আমার তো ডিউটি আছে। আপনারা সাবধানে যাবেন। আর নিজের মেয়েকে একটু দেখে রাখবেন।”
তিনি কঠোর কণ্ঠে জবাব দিলেন,
“সে কথা তোমাকে বলে দিতে হবে না।”
চোখের পলকে গাড়ি ইততেয়াজ ম্যানশন থেকে বেরিয়ে গেল। আফরান কেবল দাঁড়িয়ে রইল শূন্য বুকে। কেমন খালি খালি লাগছে না?
বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই রূপসী এসে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করল,
“আফরান চলো না আজ কোথাও থেকে ঘুরে আসি।”
“আমার ডিউটি আছে, রূপসী।”
তবুও সে বলে,
“ছুটি নিয়ে নাও। চলো আজ যাবই যাব। তাছাড়া তুমি কাল রাতে আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলে বলে আমি রাগ করে আছি। কি হতো একটু গল্প করলে?”
বেশ পীড়াপীড়ি শুরু করল সে। আফরানের মেজাজ গতকাল থেকেই চটে আছে। দৃষ্টির সাথে তার সম্পর্ক টা একটু হলেও অস্বাভাবিক যেটা সে কালই ঠিক করে নিত। যেভাবেই হোক ঠিক করত। তার সব অভিমান, অভিযোগ সামনে বসিয়ে রেখে শুনত। কিন্তু রূপসী সেটা হতে দেয়নি। তার জন্য আফরানের সেই সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেল। আর আজ? আজ পুরো বউই হাতছাড়া। এতোটা মেজাজ খারাপ হয়ে গেল যে, সে কড়া কণ্ঠে ধমক দিল। ধমকের তোপে রূপসীর আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠল। সে শান্ত চঞ্চল আফরানকে চেনে, কিন্তু সে রেগে গেলে কেমন হয়ে যায় তা জানে না। আফরান দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“কি বলেছি কানে যায়নি? বলছি না আমার ডিউটি আছে? হাসপাতালের অসুস্থ রোগী রেখে আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াব? কে তুমি, হ্যাঁ? কে? যে তোমাকে আসতে বলেছে তার সাথেই ঘোরো। আমি কি বলেছিলাম নাচতে নাচতে আমার পিছু পিছু চলে আসতে? বিদায় হও চোখের সামনে থেকে। যাও!”
রূপসী কাঁপতে কাঁপতে চলে গেল। ভীষণ ভয় পেয়েছে সে। শান্ত মানুষ রেগে গেলে এমন ভ’য়ঙ্কর হয় তা সে জানত না। এখন সে আমিনুল ইততেয়াজের কাছে গিয়ে তার নামে নালিশ করবে।
মিসেস সাইমা ছেলের চেঁচামেচি শুনে ছুটে এলেন। আফরান সোফায় বসে কপালে আঙুল ঘষে চলেছে সমান তালে। তিনি বললেন,
“কি হয়েছে? হঠাৎ এমন অস্থির হয়ে উঠলি কেন?”
“ভালো লাগছে না, মা। এসব আমি আর নিতে পারছি না। হাসপাতালে যাব।”
“নাস্তা করবি না?”
“না।”
বলেই সে উঠে দাঁড়ায়। রুমে যাবার আগে রুক্ষ সুরে বলে,
“বাড়ি এসে যেন আমি রূপসীকে না দেখি। আমার সামনে আবার যদি আসে তাহলে আমি কি করব, আমি জানি না।”
মিসেস সাইমা ভীষণ বিস্মিত হলেন। ছেলেকে এভাবে রেগে যেতে তিনি খুব কমই দ্যাখেন। তার ছেলে মাথায় হাজার টেনশন নিয়েও মাথা ঠান্ডা রেখে সব সামলাতে পারে। তবে কি হলো আজ?
–
দৃষ্টি বাড়িতে পা রাখার পর পরই সেখানে যেন উৎসব শুরু হলো। মেয়েটা আজ কতদিন পর এলো! পায়েল বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ কাটাল। যদিও কলেজে দ্যাখা হয়। তাই কি? এভাবে তো কতদিন থাকা হয়নি। দৃষ্টি মুখের উপর নকল একটা পর্দা টেনে রেখেছে। যে পর্দা ভেদ করে তার মনের খবর কারো কাছে পৌঁছাবে না। বন্যা আর বর্ষণ বাড়িতে নেই। তারা এলেও নিশ্চয় হইহই শুরু করবে। মা আর ছোট মা’কে একসাথে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখল। মৃদু স্বরে বলল,
“তোমাদের মিস করেছি খুব।”
তারাও মেয়েকে পেয়ে খুশি। পরপরই তাকে বিশ্রামের জন্য পাঠিয়ে দিলেন। নিজেরা ব্যস্ত হলেন মেয়ের পছন্দের হরেক রকম খাবারের আয়োজনে।
দৃষ্টি রুমে গিয়ে শ্বাস নিল। নিজের রুম তার ভালো লাগছে না। কয়েক মাসেই যেন এই রুম পর হয়ে গেছে আর অন্যের রুম আপন। লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। বৈবাহিক জীবনের চিন্তা কি মস্তিষ্কে আসে? অবশ্যই আসে। তার এই অনিশ্চিত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি? তার ভাবনার মাঝেই পায়েল হুড়মুড় করে দরজা ঠেলে প্রবেশ করে। বিছানায় তার পাশে বসে গদগদ কণ্ঠে বলে,
“কি গো ননদিনী! জামাইকে নিয়ে এলে না কেন সাথে?”
দৃষ্টির মজা করার মতো মেজাজ নেই। তবুও সে শান্ত সুরে বলল,
“তার হাসপাতালে হাজার কাজ আছে। সময় পেলে আসবে না পেলে আসবে না।”
“এটা কেমন কথা, দৃষ? ও বাড়িতে যাবার পর এই প্রথম আসলি, তাও একা! স্যারকে নিয়ে এলেই পারতি। স্যার তো এখান থেকেই হাসপাতালে যেতে পারতেন। মা আর ছোট মা কতো মন খারাপ করছেন, স্যার আসেননি তাই।”
দৃষ্টির এত কথা ভালো লাগছে না। মুখ কুঁচকে বলল,
“না এলে আমি কি করব?”
“একবারও বলেছিলি আসার কথা? বাবা বলেছিলেন?”
একটু চুপ থেকে সে বলল,
“না। আমিও বলিনি আর বাবাও বলেনি। তুই এখন যা তো পায়েল। আমি ঘুমাব একটু। ডাকবি না একদম।”
মুখ ঘুরিয়ে নিল সে। পায়েল কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। তার মন বলছে কিছু হয়েছে। কোনো ঝামেলা হয়েছে কি? ভাবল পরে দৃষ্টির সাথে আবার কথা বলে নেবে। এখন ক্লান্ত যখন, তখন ঘুমাক। ধীরে বিছানা থেকে নেমে দরজা চাপিয়ে চলে গেল।
চলবে,
#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৪৫
ছুটির দিনে দুপুরে খেতে বসতে না বসতেই আমিনুল ইততেয়াজ মুখ কুঁচকে ফেললেন। যেন তিনি ভীষণ রকমের অখাদ্য গিলে ফেলেছেন। এমন স্বাদহীন খাদ্য গলাধঃকরণ করেননি আগে কখনো। বললেন,
“তরকারিতে কিছু একটা যেন নেই। কেমন যেন লাগছে। গিলতেই পারছি না এমন। কি নেই বলো তো, সাইমা?”
মিসেস সাইমা মুখ গম্ভীর করে ফেললেন। বলেন,
“আজ রান্নায় আপনার ছেলের বউয়ের ছোঁয়া নেই। সপ্তাহে চারদিনই তো সে রান্না করত, শুক্রবারে করত স্পেশাল রান্না। তাও কেবল আপনার জন্য। আপনার আবদার, এই খাব সেই খাব। সব মেনে নিয়ে কেবল ও আপনার জন্য রাঁধত।”
আমিনুল ইততেয়াজ থমকে গেলেন। হঠাৎই তার মনে পড়ে গেল একদিন শুক্রবার সকালের কথা।
সেদিন সবে সকলে বসে চা পান করছেন। দৃষ্টি নিজেই সবাইকে পরিবেশন করে দিচ্ছিল। তার মনটা চায়ছিল মেয়েটা কিছু রেঁধে খাওয়াক। তিনি আড়চোখে তার দিকে চেয়ে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,
“রোজকার খাবার আজ খেতে ইচ্ছে করছে না, তিয়াস। তাই না?”
“হ্যাঁ, ভাই। আজ শুক্রবারে অন্যরকম কিছু হলে বেশ হতো।”
“ঠিকই বলেছিস। তবে তোর ভাবীর হাতের রান্না খেতে খেতে বোর হয়ে গিয়েছি।”
“তাহলে অনা রাঁধুক?”
“অনার রান্নাও তো প্রায়ই খাই। তার থেকে বরং আজ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে খাই।”
সব শুনে দৃষ্টি মৃদু স্বরে বলল,
“বাইরের খাবার খাওয়া তো ভালো না, আঙ্কেল। শরীর খারাপ করতে পারে। তার চেয়ে আপনি কি খাবেন বলুন? আমি তৈরি করে দেব।”
আমিনুল ইততেয়াজ এটাই চেয়েছিলেন। যেন দৃষ্টি নিজেই তাকে জিজ্ঞেস করে। কারণ তিনি কখনো তাকে বলবেন না। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি বললেন,
“তুমি রাঁধবে?”
“আপনার যদি আপত্তি না থাকে তবে।”
“বেশ, তুমি বরং গরুর মাংস দিয়ে বিরিয়ানী করো। আর তোমার যা ইচ্ছে।”
অগত্যা দৃষ্টি তা মেনে নিল। সেদিন দুপুরে প্রতিবারের মতোই তিনি চেটেপুটে খেয়েছেন। মেয়েটার রান্নার হাত যে এতো ভালো! কিন্তু তিনি মুখ ফুটে কিছু বলেন না। দৃষ্টি কিছু চায়ওনি শুধু তার আবদার পূরণ করে গেছে।
আবারও মিসেস সাইমার কণ্ঠ শোনা গেল,
“সেদিন যখন ও ওর বাবার সাথে চলে গেল, একটু বিদায় দিতেও তো এলেন না। বাড়িতে ছিলেন অথচ ঘরের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে ছিলেন। কি হতো মেয়েটার মাথায় একটু হাত রাখতে? কি করেনি ও আপনার জন্য? আপনার কত কটু কথা মুখ বুজে সহ্য করেছে জানেন? মুখ ফুটে কিছু বলে না বলে কি আমি বুঝি না? নিজের পরিবার ছেড়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমাদেরও উচিত ছিল তাকে তার পরিবারের মতই আগলে রাখা। কিন্তু আমরা ব্যর্থ, এখন ওই রত্ন আমাদের বাড়িতে ফিরে এলেই হলো। এতো অবহেলার পর ও ফিরবে বলে তো মনে হয় না।”
আমিনুল ইততেয়াজ কোনো জবাব দিতে পারলেন না। দৃষ্টি চলে যাবার দিনই রূপসী ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বাড়ি ছেড়েছে। আফরানের রাগকে এতোই ভয় পেয়েছে যে তাকে বাড়ি ছাড়ার কথা বলা লাগেনি। আঙ্কেলকে বলে যখন তার কোনো হেলদোল দেখল না, তখন সে নিজের ইচ্ছাতেই বের হয়ে গেছে। আমিনুল ইততেয়াজও নিজের ভুলটা হয়তো বুঝেছেন। অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে ধরেছে তাকে। বাড়িতে এলেই যে পানির গ্লাস মুখের সামনে ধরত সে নেই। তার চাওয়ার আগেই যে চা এনে হাজির হতো সে নেই। তার নিত্য নতুন আবদারে যে ঘাম ঝরিয়ে রান্না করত সে নেই। সামান্য একটা দোলনা কিনে দেওয়ায় পৃথিবী জয় করার মতো যে খুশি হয়েছিল সে নেই।
তিনি হাত ধুয়ে উঠে গেলেন। এখন আর গলা দিয়ে তার কিচ্ছু নামবে না। টের পেলেন মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে গেছেন তিনি।
—
“কান খুলে শুনে রাখো, আমার মেয়ে তোমাদের বাড়িতে ফিরবে না। ওর সাথে ঠিক কেমন ব্যবহার হতো প্রথম দিন থেকেই তা আমি জানি না ভেবেছ? সব জানি আমি। তাই ফোন করা বন্ধ করো।”
আফরানকে দ্বিতীয়বার কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। হতাশ শ্বাস ফ্যালে সে। এ জ্বালা আর ভালো লাগে না। দৃষ্টিকেও বলিহারি! ফোনটা কেন বাপের কাছে জমা দিতে হলো? তারা তো স্বামী স্ত্রী নাকি? প্রেমিক প্রেমিকা তো নয়, যে ফোন দেওয়া বারণ। ফোন দিলেই শশুর ধরে আর তাকে ঝাড়ি মা’রে। কোনো জায়গায় শান্তি নেই। দশ দিন হয়ে গেল অথচ বউয়ের সাথে একটু কথাও বলতে পারল না শশুরের জ্বালায়। আজ আর থাকা যাচ্ছে না। অনেক হয়েছে। সে ওরারড্রব থেকে শার্ট বের করে গায়ে জড়ায়। জিন্স বের করতেই দরজার নক হয়। গিয়ে দরজা খুলে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দ্যাখে। চমকাল বটে। আমিনুল ইততেয়াজ ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন। তাকে তৈরি হতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“যাচ্ছ কোথাও?”
“হু।”
“এতো রাতে কোথায় যাচ্ছ?”
আফরান জবাব দিল না। বাবাকে বলবে যে, বউয়ের কাছে যাচ্ছি? তাও শশুর মানা করার পরও হ্যাংলার মতো! আমিনুল ইততেয়াজ বুঝে নিলেন। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
“আমি একটা কথা বলতে এসেছিলাম।”
“বলো।”
“ভাবছি যে তোমাদের রিসিভশনটা সেরে ফেললে কেমন হয়? ফারনাজ আর কদিন পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়বে। তার আগেই এসব সেরে নিলাম।”
আফরান যে কতটা চমকেছে তা তার চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি একটু ইতস্তত করেন। বলেন,
“তোমার কি মতামত? হাতে সময় আছে? হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়া যাবে দুটো দিন?”
সে সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বলে,
“সেটা তো পারের কথা, বাবা। তার আগে শশুর মশাই তার মেয়েকে এ বাড়িতে আবার পাঠাবে কিনা জানা দরকার।”
তিনি ব্যস্ত হয়ে বললেন,
“সে কি কথা? পাঠাবে না কেন?”
“সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো।”
তিনি শান্ত হয়ে গেলেন। তার জন্যই! চিরাচরিত অহংকারের পর্দা সরিয়ে তিনি বললেন,
“আমি যাব কাল কথা বলতে। দরকার হলে হাত জোড় করে অনুরোধ করব।”
“বাবা তুমি!”
“হ্যাঁ আমি। আমিই তো সেই শুরু থেকে মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। তাই আমারই উচিত দায়িত্ব নিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনা। দরকার পড়লে ফাহাদের কাছে মাফ চেয়ে নেব।”
আফরান যেন অন্য এক বাবাকে আবিষ্কার করল। যে বাবার অহংকার নেই। বিজনেস পার্টনারের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। সব ভুলে সে মাথা ঝুঁকতে প্রস্তুত। সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আবেগে আপ্লুত কন্ঠে বলে,
“থ্যাঙ্ক ইউ, বাবা। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ!”
তিনি হাসেন। শেষ কবে ছেলে এভাবে জড়িয়ে ধরেছিল? তার এতো ভালো লাগল। ছেলের পিঠ চাপড়ে দিলেন। বললেন,
“যাও, বৌমার রাগ ভাঙাও গিয়ে। আর আমি সকাল সকাল চলে যাব তোমার শশুর বাড়িতে। তাদের রাজি না করিয়ে ফিরব না।”
আফরান একটু লজ্জা পেল। বাবা বুঝে ফেলেছেন! সে ফিটফাট হয়ে তৈরি হয়ে বউয়ের অভিমান ভাঙানোর মিশনে নেমে পড়ল।
–
দৃষ্টির রুমের নিচে দাঁড়িয়ে আফরান বেশ বিপাকে পড়ল। দেওয়াল টপকে তো চলে এলো, কিন্তু ব্যালকনির দরজা তো বন্ধ। এখন কি হবে? কিছুক্ষণ ভেবে সে ফারদিনের নম্বরে ফোন করে। ফারদিন তখন পড়ালেখায় অবহেলার জন্য পায়েলের বিশেষ ক্লাস নিচ্ছে। দু আঙুলে তার ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে বলল,
“আজকাল খুব চলে এই দুটো। কথার ফোয়ারা বয়। অথচ পড়ালেখার নাম নেই। পড়ালেখায় বেলায় এটা কাজ করে না। তাই না? তাহলে সেলাই করে দেই?”
পায়েল ব্যথা পাচ্ছে। র’ক্ত জমে গেছে ইতিমধ্যেই। তার হাত ছুটিয়ে বলল,
“ব্যথা পাচ্ছি তো। পড়ালেখা করি না আপনাকে কে বলল? সারাদিন কি বাড়িতে থেকে দ্যাখেন যে পড়ি কি পড়ি না? আর নিজে ব্যথা দিচ্ছেন আবার নিজের কাজে এই দুটো ব্যবহার করলে খবর আছে।”
হেঁচকা টেনে সে বলে,
“কি করবে ব্যবহার করলে? একশো বার কাজে লাগাব। ব্যথা দেবও আমি আর সারাবও আমি। এই সব তো আমারই।”
বলেই পরপর দু’বার অধরে অধর ছোঁয়ায়। সে লজ্জা পেয়ে বলে,
“ধুর! ছাড়ুন তো।”
ফারদিনের ইচ্ছে, আরো একটু শায়েস্তা করা। তবে ফোনের শব্দে আপাতত ক্লাসে বিরতি দিতে হলো। সুযোগ পেয়ে পায়েলও ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল। ছোট্ট শ্বাস ফেলে সে ফোন উঠিয়ে কানে ধরে। বলে,
“কি হয়েছে? এতো রাতে আমাকে মনে পড়ল কেন?”
“শেষ বারের মতো আমাকে একটা উপকার করে দে। শেষ বার কেন? এই প্রথম এই শেষ।”
“এতো ভূমিকা ফেলে পয়েন্টে এসো।”
“তোর বোনের ব্যালকনির দরজাটা খুলে দে।”
“মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার? ও ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন আমি যাব ওর ব্যালকনির দরজা খুলতে!”
“প্লিজ যা। আমার জীবন ম’রনের প্রশ্ন।”
“আমি পারব না।”
“পারবি না? তুই পারবি না? আমি এক্ষুনি পায়েল কে ফোন করে তোর বারোটা বাজাব।”
“ও কি করবে আমাকে? সাহস আছে?”
“ও অনেক কিছুই করতে পারে। ওকে বলব আজ দৃষ্টির সঙ্গে গিয়ে থাকতে। ও কিন্তু আমার কথা ফেলবে না। তারপর তোর রাত কীভাবে কাটবে ভেবে নে।”
ফারদিন ভীষণ বিরক্ত হলো। এসবের মানে কি? তবে বোনের সংসারের ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়া তারও একটু কর্তব্য আছে। বলল,
“যদি আজই ওকে মানাতে পারো তবেই আমি এই কাজ করব।”
আফরান দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলল,
“পারব।”
চলবে,
#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৪৬
[বাচ্চারা দূরে থাকো।🥱]
“ভাইয়া! কিছু লাগবে তোমার?”
বোনের ঘুম ঘুম কণ্ঠে ফারদিনের বড্ড মায়া হয়। নিশ্চয়ই গভীর ঘুম থেকে উঠে এসেছে! সেও বা কি করতে পারে? বিরক্ত না করে উপায় নেই। আফরানের উপর রাগ হয় ভীষণ। সে মৃদু কণ্ঠে বলল,
“ঘুমিয়ে পড়েছিলি?”
বলতে বলতে সে রুমে প্রবেশ করে। দৃষ্টি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কদিন ধরে ঘুম হয় না ঠিক ঠাক। আজ কি মনে করে ঘুম এলো কে জানে? আর ভাইয়াই বা কি মনে করে এলো? বলল,
“হু, তোমার দরকার কিছু?”
ফারদিন একটু এদিক ওদিক ঘুরল। সরাসরি তো আর ব্যালকনির দরজা হাট করে খোলা যায় না। তার জন্য উপযুক্ত কারণ দরকার। সে বলল,
“জানলা দরজা সব বন্ধ করে রেখেছিস কেন? হুট হাট বিদ্যুৎ কখন চলে যায় ঠিক আছে? তার চেয়ে বরং এই জানালাটা আর ব্যালকনির দরজাটা খুলে রাখ।”
সে নিজেই দরজা আর জানালা খুলে দিল। বলল,
“বাইরের হওয়া এলে আর দম বন্ধ লাগবে না। ভালো ঘুমাতে পারবি।”
দৃষ্টি তার কথা মেনে নেয়। ফারদিন তার মাথায় হাত রেখে বলল,
“এতো চিন্তা কীসের তোর? চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। খাসও না ঠিক মতো। এমন করে চললে বাঁচবি? আর আমরা আছি কি করতে? তোর সব চিন্তা আমাদের, আমার। যা হবে সব ভালো হবে। ভালো মানুষদের সাথে কখনো খারাপ হতে পারে না। খুব ভালো থাকবি তুই, নাজের মতোই বা তার থেকেও ভালো। ঘুমিয়ে পড়।”
কথা শেষ করে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেল। দৃষ্টির চোখ ভিজে এলো। সে সত্যিই ভালো থাকবে, নাকি ভাইয়া তাকে সান্ত্বনা দিয়ে গেল? দরজা আটকে, আলো নিভিয়ে সে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল। ঘুম ভেঙে গেছে। এখন কি আর ঘুম আসবে?
হঠাৎ মস্তিষ্কে প্রবেশ করল বজ্জাত লোকটা। সে মনে প্রাণে তাকে বিশ্বাস করে, ভরসা করে। রূপসী অস’ভ্যতামির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও তার স্বামী ফিরেও তাকাবে না। সে জানে। আফরান যে তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে তাও সে জানে। কিন্তু আমিনুল ইততেয়াজ তো তাকে পছন্দ করে না। কেন অন্যের অপছন্দের মানুষ হয়ে তার সামনে ঘুর ঘুর করবে? চলে এসেই ঠিক হয়েছে, এখন নিশ্চয়ই তিনি শান্তিতে আছেন।
আচমকা শব্দে সে চমকে ওঠে। জানালা দিয়ে আগত মৃদু আলোয় আবিষ্কার করে এক কৃষ্ণ অবয়ব। শব্দটা ব্যালকনির দরজা বন্ধের ছিল। দৃষ্টি ভয় পেল না। চুপচাপ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল।
আফরান ঘন ঘন শ্বাস ফ্যালে। অনেক দিন পর আজ আবার এভাবে উঠতে গিয়ে ভীষণ ধকল গেছে। সে বিছানার অপর প্রান্তে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে। পাশের টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে গজ গজ করে বলে,
“বয়স হচ্ছে তো আমার নাকি? আর কতদিন এভাবে কচি প্রেমিকদের মতো এভাবে লাফালাফি করতে হবে, বল তো?”
দৃষ্টি তাকে একদমই পাত্তা দেয় না। সে যেন অদৃশ্য! আফরান খেয়াল করল তার শার্টের হাতা এবং বুকের বা পাশের কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। পাইপ বেয়ে উঠতে গিয়েই এমন হলো। বুকের কাছটা তো জ্বলছেও, কে’টে গেল নাকি! গা থেকে শার্ট ছাড়িয়ে সে বুকে হাত রাখে, একটু চামড়া উঠেছে। আর কিছু না। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলল,
“দ্যাখ তোর কাছে আসতে গিয়ে কত কষ্ট করতে হচ্ছে আমাকে। আর ওই এক শশুর যে আমাকে সহ্যও করতে পারে না আর বউয়ের কাছে আসতেও দেয় না। আমি যে কি জ্বালায় আছি।”
সে কোনো প্রকার জবাব দেয় না। আফরান আবার বলে,
“ঘুমিয়ে পড়লি নাকি! আমি এতো কষ্ট করে এলাম আর তুই ঘুমাবি!”
শার্ট এক কোণে ছুড়ে ফেলে বিছানায় পা উঠিয়ে বসে। হাত বাড়িয়ে তার বাহু চেপে হেঁচকা টানে উঠিয়ে বসায়। কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“ঘুমিয়ে পড়লে মোটেও ভালো হবে না বলে দিলাম। আমার কষ্ট তোর চোখে পড়ে না?”
সে বিরক্ত হয়। বলে,
“এভাবে রাত বিরাতে এসে এসব বিরক্ত করছেন কেন? কোনো কাজে আসলে তা শেষ করে চলে যান।”
আফরান ফিসফিসিয়ে বলে,
“সত্যি? যে কাজে এসেছি তা করব?”
দৃষ্টি এবার চুপ হয়ে গেল কোনো কথা বলল না। আফরান তার মুখোমুখি বসল। কোথা থেকে যেন কয়েকটা বক্স বের করল। একটা মাঝারি আর একটা একটু ছোট এবং অন্যটা একেবারেই ছোট। তিনটা বক্স তার সামনে রেখে একটা হাতে নিল। সেটা খুলতেই বেরিয়ে এলো দুটো চিকন চকচকে চুড়ি। খেয়াল করতেই বোঝা যাবে তাতে হীরা বসানো। দৃষ্টি ছটফটিয়ে উঠতেই সে দিল এক ধমক। অতঃপর বউয়ের হাতে সে খুব যত্ন করে চুড়ি পরিয়ে দিল। পরবর্তী বক্স খুলতেই দ্যাখা গেল একটা লকেট ওয়ালা চেইন এবং ছোট ছোট কানের দুল। তাও হীরা দিয়ে তৈরি। আফরান এবার একটু কাছাকাছি গেল। চুল সরিয়ে চেইন পরিয়ে দিল। এগুলো পরাতে তার ভীষণ ভালো লাগল, কারণ চেইন পরানোর অযুহাতে তাকে ছুঁয়ে দিতে পারছে। কানের দুল পরানো শেষে অবশিষ্ট বক্সে পাওয়া গেল একটা ছোট্ট নাকফুল। তাও হীরার! আফরান যেন গোঁ ধরে বসেছে তার স্ত্রীকে হীরায় মুড়িয়ে দেবে। সব শেষে আফরান অবাক হয়ে চেয়ে রইল। দৃষ্টিকে তার কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে। চোখ ধাঁধিয়ে যাবার মতো সুন্দর। তার উপর পরে রয়েছে শাড়ি। বলল,
“আজ আমি আমার সত্যিকারের বউকে দেখছি। আমার সামনে তো কখনো শাড়িই পরিস না। অথচ এখানে এসে শাড়ি পরে ঘুর ঘুর করছিস! কি লাভ শাড়ি পরে যদি আমিই খু.. আই মিন দেখতে না পারি?”
আচমকা জড়িয়ে ধরে। কণ্ঠে দরদ মিশিয়ে বলে,
“বউ, বউ, ও বউ! শোন না? এতো রাগ কেন আমার উপর? ভালোবাসি তো।”
এতো বছর পর কাঙ্ক্ষিত শব্দ কর্ণগোচর হতেই দৃষ্টি শরীর ছেড়ে দিল। পুরোপুরি আফরানের বুকে মিশে গেল। সে তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরল। শ্বাস রুদ্ধ করে দৃষ্টি বলল,
“কি বললেন?”
“শুনিস নি?”
“আবার বলুন।”
“ভালোবাসি।”
“আবার।”
“ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।”
হু হু করে কেঁদে উঠল সে। সকল অভিমান, অভিযোগের দেওয়াল যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। জড়ানো কণ্ঠে বলল,
“আমি ভালোবাসি না, ভালোবাসি না। একদম ভালোবাসি না। শুনেছেন আপনি?”
আফরান মৃদু শব্দে হেসে ওঠে। বলে,
“হু, শুনেছি। তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস।”
“না।”
দৃষ্টির খেয়াল হলো আফরান শরীরে শার্ট নেই। আগে খেয়ালে আসেনি। লজ্জায় মিইয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে সরে এলো। নজর সরিয়ে বলল,
“চলে যান।”
সে কেমন বাচ্চাদের মতো করে বলল,
“যাব না। চলে যাবার জন্য এসেছি নাকি?”
দৃষ্টি কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। বলল না কিছু। আফরান এগিয়ে তার কানের কাছে মুখ রেখে বলল,
“এই দৃষ? একটু আদর দিবি?”
হৃদয় কেমন কেঁপে উঠল না? কুঁকড়ে গিয়ে বলল,
“আমি কেন? রূপসী আছে না?”
“ও তো বউ নয়। আমার তো বউয়ের আদর চাই।”
তার এমন লাগামহীন কথায় দৃষ্টির কি হচ্ছে তা যদি সে বুঝত! আফরান ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল তার কাঁধে। বিড়বিড় করে বলল,
“একটু দয়া কর আমার উপর। তোর একটু ছোঁয়ার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।”
পাশ ফিরতেই দৃষ্টি তার বুকের নিচে চলে গেল। চোখ অন্যদিকে রেখে বলল,
“আপনি কখনো কোনো কিছু করার আগে অনুমতি নিয়েছেন আমার? বিয়েটাও তো আমার অনুমতি নিয়ে করেননি। আজ এমন করছেন কেন?”
আফরান বিস্ময়ে চেয়ে বলে,
“অনুমতি নেওয়া লাগবে না?”
সে তার বুকের দিকে চেয়ে বলল,
“এখানে লাগল কীভাবে?”
“এই তো উঠতে গিয়ে লাগল।”
দৃষ্টি তৎক্ষণাৎ এক অভাবনীয় কাজ করে ফেলল। কোমল ঠোঁট জোড়া দিয়ে সে মৃদু ক্ষত স্থানে চুমু খেল। আফরানের শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। অবাক হয়ে বলল,
“তুই আমাকে নিজ থেকে ছুঁয়ে দিলি!”
সে আর কিছু বলে না। এই লোককে কি সব ব্যাখ্যা করতে হবে? আফরান মৃদু হাসে। উত্তর যা পাবার তা আগেই পেয়েছে। তার হাত ধরে বলল,
“এতো চাপা স্বভাবের কেন তুই? সরাসরি কিছু বলতে পারিস না। বললেই হয় আমাকে আদর করুন। তা না! অতো সব কি আমি বুঝি?”
তার চুড়ি দুটো খুলে পাশে রেখে দিল। দৃষ্টি তার চোখ থেকে চশমা খুলে নিয়ে ছোট ছোট চোখ জোড়ায় চেয়ে বলল,
“বুঝলে বুঝুন না বুঝলে নেই। বর হয়েছেন কেন? বউয়ের মনে খবর বুঝতে পারেন না।”
ঠোঁটের কোণে হাসি ধরে রেখেই সে কানের দুল খুলে নিল। বলল,
“মাঝে মধ্যে না বললে তো বুঝব না। সব সময় কি বোঝা যায়? তবে আকার ইঙ্গিত করলেও আমি বুঝব। অতোটাও মূর্খ নই।”
“আপনি তো কপিবাজ। কপি করে ডাক্তারি পাস করেছেন। এমন অ’সভ্য ডাক্তার আমি জীবনেও দেখিনি।”
আফরান তার গলার নিচে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলল,
“শুধু আমি না, অনেক ডাক্তারই অসভ্য হয়। সবাই হয়। তারা তো তোকে দ্যাখাতে আসবে না যে, দ্যাখো আমি অসভ্য। সে শুধু তার বউকে দ্যাখাবে। যেমন আমি দ্যাখাই।”
চেইন টাও খুলে রেখে দিল। যেভাবে নিজে অলংকারে আবৃত করেছিল ঠিক সেভাবেই অলংকার হীন করে ফেলল। কেবল রইল নোজপিন। আফরান ঝুঁকে তার কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে বলল,
“কত অপেক্ষা করেছি এই মুহূর্তের জন্য জানিস? যেমন অভিমান করবি তেমনই অভিমান ভাঙানোর পথও দেখিয়ে দিবি। নাহলে আমি পথই খুঁজে পাব না।”
দৃষ্টি আর কথা বলে না। আফরান আলো নিভিয়ে দিল। সে চায় না দৃষ্টির কোনো প্রকার অস্বস্তি হোক। অতঃপর তার অধরে অধর ছুঁইয়ে দিল। এতটুকুতে সে কি ক্ষান্ত হবে? ধীরে ধীরে দৃষ্টির শরীরের কোনো অংশ ছুঁতে বাদ রাখল না। ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় কঁকিয়ে উঠল সে। দন্তের দংশ’নে পীড়ায় জর্জরিত হয়ে দৃষ্টি ফিসফিসিয়ে শুধায়,
“কোন জন্মের রাগ মেটাচ্ছেন আমার উপর?”
আফরান উন্মাদ। নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আগেই। বুকে মুখ গুঁজে অধর ছুঁইয়ে বলে,
“রাগ নয়, পাঁচ বছরের ধরে রাখা ধৈর্য নিঃশেষ করছি। লাগাম বদ্ধ আমিকে লাগাম ছাড়া করে দিচ্ছি।”
উন্মাদ আফরান সামলাতে বেশ বেগ পোহাতে হলো তাকে। দু হাতে আগলে নিল স্বামীকে। এতো আদরে সোহাগে তার মনে হলো, সে ম’রে যাবে। এমন সুখের য’ন্ত্রণায় সে ম’রে যাবে।
চলবে,