#সেই_তুমি
Sumon Al-Farabi
#শেষ_পর্ব
– আপনি এখনো বিছানা ছেড়ে উঠেন নি! আমরা যাবো কখন ঐদিকে আবার রাস্তায় অপেক্ষা করছে।
– রাস্তায় কে অপেক্ষা করছে!
– কে আবার! আমার বাবা।
– উনি রাস্তায় অপেক্ষা করছে কেন!
– যদি রাস্তা ভুলে যান তাই।
আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। আম্মু আমার সামনে বসে।
– আচ্ছা আম্মু আমার কি যেতেই হবে!
– কেন!
– না, মানে! উনি একাই যাক। আমি গিয়ে কি করবো!
– মেয়েটা এতটা রাস্তা একাই যাবে, তাছাড়া তুই তোর শ্বশুর বাড়ি যাবি না!
– শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কি দরকার আমি বাসাতেই থাকি।
– বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। মেয়েটা সকাল থেকে কতটা আনন্দে আছে, এই সময় তুই যদি এসব বলিস তবে মনটা খারাপ করে বসে থাকবে ।
একজনের মন ভালো রাখতে না জানি আজ কি হাল হয় আমার।
শ্বশুর বাড়িটা আমাদের বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এক ঘন্টায় পৌছে গেলাম। এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিক ছিলো।
দুপুরের খাওয়া করে আমায় একটা রুম দেখিয়ে ওখানে রেষ্ট নিতে বললো। আমি সেখানে কিছুক্ষণ শুয়ে ছিলাম এর মাঝেই দুচোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম চলে আসে।
অদ্ভুত একটা স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে যায়। চোখ খুলে বুঝতে পারলাম প্রচন্ড ঘামে সারা শরীর ভিজে আছ। সময়টা ঠিক আন্দাজ করতে পারছি না।
হঠাৎই কানে হাসির শব্দ আসলো। বেডের পাশে সোফাটায় যখন তাকালাম তখন আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো। আমি এখনো ঘুমেই আছি কিনা সেটা চেক করার জন্য শরীরে হালকা চিমটি কাটলাম। কিন্তু আমি জেগেই ছিলাম।
অবন্তীর সাথে যে ছেলেটার ছবি আমি দেখেছিলাম সেই ছেলেটা আর অবন্তী সোফায় বসে গল্প করছে। তবে কি তিথির কথাই সত্যি হতে যাচ্ছে। এসব কিছু কি তাহলে আগে থেকেই প্ল্যান করা!
অবন্তী সোফা ছেড়ে উঠে আমার পাশে এসে বসলো- ঘুম ভাংলো! সেই কখন থেকে ও আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
– আমার জন্য! আমার জন্য কেন!
ছেলেটা ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে মনের মাঝে একটু একটু ভয়ের সঞ্চার হচ্ছে।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে আমার পাশে এসে বসে বললো- জিজু কি অবস্থা!
ছেলেটার ব্যবহারে আমি আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম।
– আমায় চিনতে পারছেন!
আমি কিছুই বলতে পারছি না শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।
– আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমরা পরে কথা বলবো কেমন! এখন আমি আসি।
অবন্তী ছেলেটার পিছনে পিছনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ঘুম থেকে উঠতেই চোখের সামনে যদি অদ্ভুত কিছু ঘটে যায় যেটা কখনোই আপনার কল্পনায় ও ছিলো না তখন আপনার কেমন অনুভব হবে!
এখন সন্ধ্যা।
চা হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি এবং মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চুমক দিচ্ছি।
– জিজু কি করছেন!
পিছনে ফিরলাম। সেই ছেলেটা।
– চা খাচ্ছি।
– তখন তো আপনার সাথে কথাই হলো না। তাই আবার আসলাম আপনাকে বিরক্ত করতে। আমায় অবশ্যই চিনতে পারছেন।
– কিন্তু আপনি এই বাসায় কেন!
– সেটা তো অবশ্যই বলবো। তবে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
– কেন!
– অবন্তী আমার বোন। আমরা জমজ। বিয়ের আগে আপনাকে আমরা কেউ চিনতাম না। আর যেহেতু আপনাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছে তাই আপনার মনে আমার বোনের জন্য কতটুকু ভালোবাসা আছে সেটা পরীক্ষা করার জন্য আমার আর অবন্তীর ছবিগুলো আপনাকে দিয়েছিলাম। আমি কনফিউশানে ছিলাম যে আপনি আমায় চিনবে হয়তো কিন্তু অবন্তী বললো আপনি বাসার কাউকে চিনেন না। তাই এটা আমার জন্য খুব সহজ হয়ে গেছে।
– সবটা বুঝতে পারছি কিন্তু আমাদের লাভ ম্যারেজ এটা আপনাকে কে বললো!
– কেন! অবন্তী। ওর পছন্দেই তো বিয়েটা হয়েছে। হঠাৎ একদিন এসে ও বললো ও একজন কে খুব পছন্দ করে তার বাসা থেকে আমাদের বাসায় বিয়ের কথা বলতে আসবে। প্রথমে কারোরই মত ছিলো না। কিন্তু যখন আপনার বাসা থেকে আংকেল আন্টি আসলো তাদের সাথে কথা বলে সবাই রাজি হয়ে গেছে।
ছেলেটার প্রতিটি কথায় আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। যেখানে আমি অবন্তী কে চিনতামই না সেখানে অবন্তীর সাথে আৃার লাভ ম্যারেজ হয়েছে অথচ এটা আমি জানি না।
– কি ভাবছেন আপনি!
– তেমন কিছু না। আপনার বোনকে একটু ডেকে দিবেন!
– আচ্ছা আমি ডেকে দিচ্ছি।
চা’য়ে চুমুক দিতে গিয়ে দেখি চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। কাপটা সামনে একটা চেয়ারে রেখে ভাবনায় ডুবে গেলাম। সোনালী অতীত। লাভ ম্যারেজ শব্দ টা আমার কাছে স্বপ্ন ছিলো। এই জন্য জীবনে একজন কে প্রচন্ড ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু কি জানি কোন অদ্ভুত কারণে তাকে হারিয়ে ফেলেছি।
– আমায় ডেকেছেন!
– ওহ আপনি। হ্যাঁ ডেকেছিলাম।
– বলুন কি বলবেন।
– আমাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছে!
– এটা আপনাকে কে বললো!
– আপনার সাথে আমার কবে প্রেম ছিলো!
অবন্তী কিছুটা সময় নিরব থাকলো।
– আচ্ছা আপনার স্নিগ্ধা কে মনে আছে! যার সাথে আপনার প্রায় ছয় মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।
– হ্যাঁ। কিন্তু আপনি ওকো কিভাবে চিনেন!
– আমার মাঝে কি স্নিগ্ধার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছেন!
– আমি স্নিগ্ধা কে কখনো দেখি নি। আমাদের অনলাইনে কথা হতো। তবে তার! ওয়েট!
আমি ভালো করে অবন্তীর দিকে তাকালাম। ডানের চোখের নিচে একটা তিল এবং সেই চোখের ভ্রুর মাঝেই একটা কাটা দাগ। এখন আমার নিজেকে বিশ্বাস করাটা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
– আপনি তাহলে!
– আমি স্নিগ্ধা। তোমার থেকে এক অজানা কারণে আলাদা হয়ে গেলেও আম্মুর সাথে আমার রেগুলার কথা হতো। তিনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন আমাকেই তার মেয়ে বানাবে। অতঃপর আম্মু তার কথা রেখেছে। আমি ও আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম একবারে বিয়ের পর তোমার সাথে যোগাযোগ শুরু করবো তার আগে না। আমিও আমার কথা রেখেছি।
এমন কিছু যে আমায় কখনো শুনতে হবে সেটা আমি কখনো কল্পনা ও করিনি। তবে অবন্তীর কথা শুনে আমার দুচোখ দিয়ে আমার অজান্তেই পানি চলে আসলো। এই সেই মেয়ে যার জন্য আমি প্রতিটা রাত কেঁদেছিলাম।
– তোমার একবার ভাবা উচিত ছিলো আমি কতটা কষ্ট পাবো।
– ভেবেছিলাম, কিন্তু আম্মু বলেছিলো সাময়িক কষ্টের পর যদি দীর্ঘ সময় ভালো থাকা যায় তবে সেই সাময়িক কষ্টই ভালো। তবে আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমায় ভুলে গেছো। কিন্তু যখন তোমার ফোনে আমার হাতের ছবিটা দেখলাম তখন বুঝতে পারছি তুমি এখনো আমারই আছো।
– পুরুষ যাকে ভালোবাসে তাকে কখনো ভুলে যায় না। সময়ের বিবর্তনে শুধু প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়।
– সব শেষে আমি তোমাকে পেয়ে গেছি এর থেকে বেশি কিছু কখনোই আমার চাওয়ার ছিলো না।
অবন্তী কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
– একটা সময় স্বপ্ন ছিলো তোমায় এভাবে আপন করে নেওয়া।
– এখন বুঝি স্বপ্ন নেই!
– এখন তো সেটা বাস্তব। এভাবেই থেকে যেও সারাটা জীবন আমার সেই তুমি হয়েই।
The End…