#সেই_তুমি
Sumon Al-Farabi
#৫ম_পর্ব
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি। অবন্তী এসে আমার সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি হচ্ছে!
– কি হবে!
– এভাবে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছেন কেন!
– দিন।
– কি দিবো?
– কেন! চকলেট দেওয়ার কথা ছিলো যে।
“যার সাথে চুপিচুপি কথা বলছেন তার কাছে গিয়ে চকলেন নেন। ” কথাটা বিড়বিড় করে বললাম।
– কিছু বললেন?
– কই না তো।
– আমার চকলেট দিন সাথে কিন্তু আইসক্রিম ও দেওয়ার কথা ছিলো।
– আমার মনে নাই। আর আমি এখন বাইরে যেতে পারবো না। আপনি বের হন তো।
অবন্তী আর একটা শব্দ উচ্চারণ করলো না। হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। একটু পরেই আবার হনহন করে এসে একটা বালিশ নিয়ে গেলো।
আমি তেমন কিছু না ভেবেই ফেসবুকিং করছি। তবে একটু পরেই খেয়াল করলাম আম্মু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মুর পিছনে অবন্তী দাঁড়িয়ে আছে। আম্মুর দৃষ্টিতে কেমন আগুন ঝড়ছে।
– কি হয়েছে আম্মু এমন বিষহীন সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছো কেন?
– তোর কি বাসায় থাকার ইচ্ছে আছে!
– একদমই না। আমি আজ চলে যেতে পারলেই বেঁচে যাই।
– তাহলে এখনই বেরিয়ে যা। এক মুহূর্ত যেন তোকে আমার সামনে না দেখি।
আম্মু আমার কথা কি সিরিয়াসলি নিলো!
– কি হয়েছে সেটা তো বলবা।
– তোর সাহস হয় কিভাবে আমার মেয়েকে তুই রুম থেকে বের করে দিস।
– আমি আবার কাকে বের করে দিলাম!
– তুই অবন্তী কে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলিস নি!
– হ্যাঁ। কিন্তু
– কিসের কিন্তু! কি ভেবেছিস ওর এখানে কেউ নেই? তুই আজ সারারাত রুমের বাইরে থাকবি। বাসার বাইরেও থাকতে পারিস সমস্যা নেই।
– কিন্তু আম্মু
– কোনো কিছু শোনার সময় নেই। অবন্তী তুমি এখানে ঘুমাও আর তুই রুম থেকে বের হ।
এখন আমি হাজার চিল্লাতে থাকলেও কোনো কাজ হবে না। একবার ডিকলার হয়ে গেছে যখন তখন ওটাই বহাল থাকবে।
ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে আসলাম। হঠাৎই মাথায় অদ্ভুত এক ভুত চাপলো। অনেক দিন হলো রাতের শহরটা দেখা হচ্ছে না। আজ যখন সুযোগ টা পেয়ে গেলাম হাতছাড়া করা উচিত হবে না।
দরজা বাইরে থেকে লক করা ঠিক হবে না। যদি কারো বাইরে যেতে হয়। তাহলে এখন কি করবো!
দরজায় দুই বার নক করার পর অবন্তী এসে দরজা খুললো।
– কিছু বলবেন!
– হ্যাঁ।
– দেখুন আম্মু নিষেধ করছে তাই চাইলেও ভিতরে আসতে দিবো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বাইরে যাচ্ছি আপনি মেইন গেইট টা লক করে দিয়েন ভিতরে থেকে।
– বাইরে কোথায় যাচ্ছেন!
– সেটা আপনার না জানলেও চলবে ।
অবন্তী দাঁড়িয়ে রইলো আমি চলে আসলাম। আজ টং দোকানের চা, চায়ের সাথে সিগারেট এরপর এই হালকা ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম পিঠা সবকিছুর স্বাদ নেওয়া যাবে।
তখন রাত প্রয় ১২ টা হবে। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো। আমি সচরাচর অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলে সেটা রিসিভ করি না। যায় একে একে তিন থেকে চারবার কল আসার পর রিসিভ করলাম।
– হ্যালো।
ওপাশে থেকে শুধুই নাকের শব্দ আসছে মনে হচ্ছে কেউ কান্না করছে।
– কে বলছেন!
– কোথায় আপনি!
এবার বুঝতে পারছি এটা অবন্তী। আমি এমন এক স্বামী যার ফোনে তার স্ত্রীর নাম্বার সেইভ নেই।
– আপনি কল করছেন কেন!
– কোথায় আপনি?
– আপনাকে তো বলেই আসলাম আমি বাসার বাইরে।
– আমাকেও নিয়ে যান আপনার কাছে আমি আপনার কাছে যাবো।
– দরকার নেই, আমি তো আপনাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলাম। তাি জন্য তো আমাকে বাসার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। এখন আপনি থাকুন আপনার রুমে। আমায় আর কল দিবেম না বলে দিলাম।
কল কেটে দিলাম। কিন্তু সাথে সাথেই আবার কল দিলো। এবাড কান্নার আওয়াজ আরও বেশি মনে হচ্ছে।
আমার দুর্বলতা একটাই। আমি কারো কান্না সহ্য করতে পানি।
– কান্না করতে হবে না আমি আসছি। এতটুকু বলেই কল কেটে দিলাম।
গেইটের সামনে এসে কলিং বেল দেওয়ার আগেই গেইট খুলে দিলো। মনে হচ্ছে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি ভিতরে আসতেই আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
– আমি না হয় একটু মজা করছি তাই জন্য আপনি এভাবে বাইরে চলে যাবেন।
এই মুহূর্তে আমার আর বলার কিছুই নেই। আমি এখন শুধুই নিরব দর্শক।
সারারাত আমাদের দুজনের মাঝে মনে হয় না এক চুল পরিমাণ দূরত্ব ছিলো এতটাই শক্ত করে জরিয়ে ছিলো।
সকাল হতেই শুরু হয়ে গেছে ডাকাডাকি। কিন্তু আজ অন্য দিনের তুলনায় ডাকাডাকির পরিমাণ টা কিছুটা বেশি।
– এই যে আর কতক্ষণ ঘুমাবেন!
– কেন!
– তাড়াতাড়ি উঠুন।
– কেন! আজ কি আবার কোথাও যাওয়ার তারিখ আছে নাকি!
– আজ তো বাবার বাসায় যাবো সেখানে গিয়ে আপনাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো যাকে দেখলে আপনি চমকে উঠবেন।
– আপনার বাবার বাসায় আবার কে এমন আছে যাকে দেখলে আমি চমকে উঠবো।
– সেইটা তখন দেখতে পারবেন। এখন তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নিন।
অবন্তী রুমের বাইরে গেলো। আমি তখনও শুয়েই আছি। হঠাৎই তিথি কল করলো। তিথি তো সচরাচর কল করে না। হঠাৎ এই সময়ে কল করলো কেন!
– কি হয়েছে!
– দোস্ত তুই যে ছেলেটার ছবি আমায় দেখিয়েছিলি সেই ছেলেটা আমায় ম্যাসেজ করছিলো। বললো আজ নাকি তোরা তোর শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিস।
– হ্যাঁ। কিন্তু ঐ ছেলে কেমনে জানলো!
– মনে হয় ওদের কোনো প্ল্যান আছে। সাবধানে থাকিস দোস্ত। আজকালকের নিউজ গুলো তো দেখতেই পাস। কত কিছুই না ঘটে। নিজেকে সাবধানে রাখিস।
তিথি কল কেটে দিলো। কিন্তু মাথায় অদ্ভুত এক বিশ্রী চিন্তা দিয়ে গেলো।
To be continue….