সেই তুমি পর্ব-০৪

0
536

#সেই_তুমি
Sumon Al-Farabi
#৪র্থ_পর্ব
– তিথি শোন, আমার বউকে দেখে কি মনে হয় ওকে বিশ্বাস করা যায়!
তিথি তখন দরজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কি ভেবে আমার দিকে দ্রুত আসলো- তোদের মাঝে কি কোনো সমস্যা চলছে!
– ঠিক সমস্যা না। তবে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না আমার বউকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে কি না। তোরা তো দীর্ঘ দিন ধরে সংসার জীবনে আছিস। তোদের অভিজ্ঞতা অনেক তাই যদি তোদের অভিজ্ঞতা থেকে আমায় কিছুটা সাহায্য করিস।
– তোর বউকে দেখে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু সবার তো মন তার চেহারা দিয়ে বোঝা যায় না। তোর সাথে কি কোনো ধরনের সন্দেহ মূলক আচরণ করছে?
– আমার সাথে কোনো সন্দেহ মূলক আচরণ করে নি। তবে দাঁড়া তোকে একটা জিনিস দেখাই।

ফোন থেকে সিক্রেট ফাইলে গিয়ে পিকগুলো বের করলাম। তিথি ছবিগুলো দেখেই থ হয়ে গেলো।
– এগুলো কি! তুই এগুলো কোথায় পেয়েছিস?
– আমায় একটা ছেলে দিয়েছে। বলছে অবন্তী নাকি ওর প্রেমিকা। ছবিগুলো কি কোনো ভাবে এডিট করা মনে হচ্ছে তোর?
– এগুলো এডিট করা লাগছে না। যদিও বা এডিট হয় তবে সেগুলো খুবই সুক্ষ্ম হাতের কাজ। এভাবে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে ছবি সত্যি এটা বিষ্ময়কর। কিন্তু অবন্তী কে দেখে তো এমন কিছু মনে হচ্ছে না।
– এখন তুই বল আমি কি করবো!
– তুই বরং এক কাজ কর!
– কি কাজ!
– তুই অবন্তীর সাথে সবটা শেয়ার কর। ওকে দেখা এগুলো তারপর দেখ ও কি বলে।

তিথিদের বাসায় খাওয়া করে কিছুটা সময় কাটিয়ে ঠিক সন্ধ্যার সময় বাসার পথে পাড়ি জমালাম। রাস্তায় হঠাৎই অবন্তী বাইক থামাতে বললো।
– কি হলো এখানে থামাতে বললেন কেন!
– আমরা তো বাসার কাছেই চলে এসেছি তাই না।
– হ্যাঁ।
– আপনি যে আমায় চকলেট দিতে চাইলেন সেটার কি হবে শুনি! বাসায় কি দোকান আছে যে ঐখানে থেকে কিনে দিবেন।
– আজ দিতেই হবে! কাল দিবো।
– আমার আজকেই লাগবে। নয়তো কান্না করে দিবো।
– এই আপনি কি বলুন তো! কিছু হলো কি না কান্না জুড়ে বসেন।
আমার কথায় অবন্তী বাইক থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলো।
– কি হলো কোথায় যাচ্ছেন!
– বাসায়।
– চকলেট নিবেন না!
– না, আমার কিছু লাগবে না।
– তাহলে বাইকে উঠুন এভাবে হেঁটে যাচ্ছেন কেন?
– আমি হেঁটেই যাবো।

অবন্তী সামনে সামনে হাঁটছে আমি পিছনে পিছনে বাইক নিয়ে আসছি। বাইক নিয়েও মেয়ে মানুষের পিছনে পিছনে হাঁটতে হচ্ছে, নিজেই নিজের ধৈর্যের প্রশংসা না করে পাচ্ছি না।
একটু পর পরই হর্ণ দিচ্ছি। কিন্তু ফিরেও তাকাচ্ছে না। এভাবে চলবে না। আমি বাইক নিয়ে ওকে ওখানে রেখেই চলে আসলাম। কিন্তু বাসার সামনে এসে দোটানায় পরে গেলাম। বাসায় ঢুকলেই আম্মু জিজ্ঞেস করবে অবন্তী কোথায়, আর একা একটা মেয়ে রাস্তায় হাঁটছে কেউ যদি কিছু বলে তাহলে আবার কান্না করে পুরো নদী বানিয়ে দিবে। দেশে তো আদর্শ ছেলের অভাব নেই রাস্তায় একা একটা মেয়ে চুপচাপ হাঁটতে দেখলেই সঙ্গ দিতে চলে আসে।
আবার বাইক নিয়ে চললাম সেই রমণীর কাছে। পুরুষ এমন একটা জাতি যার জীবন চক্র চলে নারীকে কেন্দ্র করে, কখনো মা কখনো বউ আবার কখনো মেয়ে। পুরুষ তাদের মানসিক শান্তি খুঁজতে এই তিন নারীর কাছেই বার বার ফিরে যায়।

পুরো রাস্তা খুঁজলাম, যেখানে রেখে চলে আসছি সেখানে পর্যন্ত কিন্তু অবন্তী কে কোথাও পেলাম না। প্রচন্ড চিন্তা মাথায় জমছে। মেয়েটা এইটুকু সময়ের মাঝেই আবার কোথায় উধাও হলো। আবার সেই রাস্তায় বাসা পর্যন্ত আসলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না।
তৃতীয়বার যখন আবার খুঁজতে বের হলাম তখন রাস্তার পাশে অবন্তী কে বসে থাকতে দেখলাম।
– কই গেছিলেন আপনি! আমি কতক্ষণ ধরে আপনাকে খুঁজলাম।
– জানি, আমি দেখেছি আপনাকে বাইক নিয়ে যাওয়া এদিকে।
– আজব! আপনি দেখলেন কিন্তু ডাকলেন না কেন!
– আমি কি আপনাকে বলছিলাম আমায় ছেড়ে যেতে, আপনি নিজে থেকে ছেড়ে গেলেন তাই আপনি নিজেই খুঁজে বের করুন।
– মামা এই যে আপনার ফুচকা।
পাশের ফুচকাওয়ালা মায়া এসে এক প্লেট ফুচকা এগিয়ে দিলো।
– আমি ফুচকা ওর্ডার করিনি তো।
– আমি করেছি। আংকেল আমাকে দিন। আর আপনি বাইকের উপর থেকে নেমে এখানে আসুন। চাঁদ দেখবপন আর ফুচকা খাবেন।
– এই সময় আকাশে চাঁদ কোথায় পেলেন!
– আমি কি! আমি আপনার চাঁদ না! এতো সুন্দর একটা ব্যাক্তিগত চাঁদ থাকতে আপনি সবাই যে চাঁদ দেখে সেটা খুঁজতে যাবেন কেন!
কথাটা শুনে হাসি পেলেও আমি হাসি আঁটকে রাখলাম কিন্তু ফুচকাওয়ালা মামা হেসে দিলো।

অবন্তীর পাশে বসে আছি। ও একটার পর একটা ফুচকা মুখে পুড়ছে, আমি মাঝে মাঝে একটা নিচ্ছি।
– খাওয়া তো শেষ এখন যাই!
– হুম চলুন।
– আগে গিয়ে বিল দিয়ে আসুন।
– আমার কাছে তো টাকা নেই।
– টাকা নেই তো অর্ডার করছিলেন কেন!
– আমি জানতাম আপনি আসবেন তাই। তাড়াতাড়ি বিল দিয়ে আসুন আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।

যখন বিল দিতে গেলাম মামা মুচকি হেঁসে বললো- মামী কিন্তু অসাধারণ মামা। আপনাদের খুব ভালো মানিয়েছেন।
আমি মজার ছলে বললাম – নিজের বউয়ের দিকে নজর দেন মিয়া অন্যের বউকে দেখা বাদ দিন।
বাইক এ উঠবো তখনই অবন্তীর ফোনে কল আসলো। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম ঠিক ঐ ছেলেটার ছবি স্কিনে ভাসছে। আমার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে অবন্তী কথা বলতে শুরু করলো।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে