#সেই_তুমি
Sumon Al-Farabi
#৩য়_পর্ব
মাথার উপর অদ্ভুত এক বোঝা চেপে যাচ্ছে। আমি কি উঠে গিয়ে ওর সাথে কথা বলবো! ফোনের ওপাশে কে সেটা কি জিজ্ঞেস করবো! কার সাথে এতো হেঁসে হেঁসে কথা বলছে এতো রাতে সেইটা কি জানতে চাইবো! নানান সব প্রশ্নে ভরে যাচ্ছে মন।
– এই যে উঠুন, আর কতো ঘুমাবেন!
ঘুম ঘুম চোখ খুললাম। অবন্তীর মায়াবী চেহারা চোখের সামনে।
– তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন দশটা বেজে গেছে।
– আর কিছু সময় ঘুমাই।
– আপনার বন্ধু কল করছিলো সকালে। বললো আজ নাকি আমাদের দাওয়াত আছে ওনার বাসায়।
– হুম
– কই আপনি তো আমায় বলেন নি।
– মনে ছিলো না।
– উনি তাড়াতাড়ি যেতে বলছে।
– আচ্ছা আপনি রেডি হয়ে নিন।
অবন্তী একটু পরেই আবার ডাকতে লাগলো। রাতে ঘুমাতে দেয় নি এখন আবার জ্বালাচ্ছে।
– কি হয়েছে! সমস্যা কি! দেখছেন না ঘুমাচ্ছি, বার বার ডাকার কি আছে!
ধমক দিয়ে কথাগুলো বললাম। আমার কথা শেষ কিন্তু অবন্তী কোনো কথা বলছে না শুধু অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এর মাঝেই চোখ ছলছল করতে শুরু করে দিলো। মেয়েদের একমাত্র অস্ত্র যেটা পারমাণবিক বোমার থেকেও বেশি ভয়ংকর। অবন্তী তৎক্ষনাৎ সেখানে থেকে চলে গেলো।
একজন মানুষের মস্তিষ্ক প্রতিদিন কয়েক সেকেন্ডের জন্য নাকি কাজ করা বন্ধ করে দেয় মানুষ সেই সময়টা যতসব আবোল তাবোল কাজ করে। সেই কাজের জন্য পরবর্তীতে আবার আফসোস করে। আমার মনে হয় এইমাত্র আমার সাথেও সেটাই হলো।
নিজের ব্যাবহারের জন্য নিজেকেই খারাপ লাগছে। এভাবে না বললেও পারতাম। ধ্যাত আর ঘুমাবো না। উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসলাম।
– আম্মু অবন্তী কই!
– ছাঁদে গেলো দেখলাম।
– এই অসময়ে কেউ ছাঁদে যায়? আচ্ছা ঠিক আছে আমি ছাঁদে যাচ্ছি।
ছাঁদের এক কোনা থেকে অদ্ভুত এক শব্দ ভেসে আসছে। বুঝতে বাকী রইলো না যে অবন্তী এখানে বসে কান্না করছে।
– আপনি এখানে কি করছেন!
আমার কথা শুনে নিজের চোখ মুছে নিলো।
– কিছু না। এমনিতেই বসে আছি।
অবন্তীর পাশে বসলাম- আপনার হাতটা একটু ধরি!
– না।
তবুও অবন্তীর হাত ধরলাম – খুব খারাপ লেগেছে তাই না!
অবন্তী কোনো কথা বলছে না।
– আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। হঠাৎ করে যে এমন রেগে যাবো সেটা কখনো কল্পনাও করিনি।
– আমারই দোষ। আপনি ঘুমাচ্ছেন দেখেও আমি বার বার ডেকে যাচ্ছি। কিন্তু আমার ও দোষ না আপনার বন্ধু বার বার ফোন দিয়ে যাচ্ছে।
– সব দোষ ঐ বেডার। আপনার কোনো দোষ নেই। ওর বাসায় গিয়ে ওকে মারবো। আপনি এখন তো কান্না থামান ।
– আমি সেই কখন থেকে আপনার সাথে বাইরে যাবো জন্য সেজেগুজে বসে আছি কিন্তু আপনি আমায় বকা দিলেন।
সেজেগুজে কথাটা শুনে অবন্তীর দিকে ভালো করে তাকালাম। মেয়েটাকে অন্য দিনের থেকে অসম্ভব মায়াবী লাগছে। বিয়ের দিন ও এতো সুন্দর দেখায় নি। চোখে কাজল পড়েছিলো যেটা কান্নার পানিতে চারদিকে ল্যাপ্টে গেছে সেইটা দেখতে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। ঠিক একটা বাচ্চা মনে হচ্ছে।
– আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে। চালুন আপনি আবার চোখে কাজল পড়বেন ততক্ষণে আমি রেডি হয়ে যাবো।
– আমি আর কোথাও যাবো না। আমি বাবাকে কল দিয়ে বলবো আমায় নিয়ে যেতে।
এই যা, আমি ওর উপর রাগ দেখিয়েছি একথা আম্মু জানতে পারলে আমায় আস্ত রাখবে না।
– শুনুন না।
– আমি কিছু শুনবো না।
কান্না এখন কিছুটা কমছে কিন্তু একটু পর পর নাকের টানাটানি ঠিকই আছে।
– দশটা চকলেট কিনে দিবো।
অবন্তী এবার আমার দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে কাজ কিছুটা হয়েছে আর একটু লোভ ধরাতে হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে ২০ টা চকলেট।
– সাথে আইসক্রিম ও দিতে হবে।
এই মেয়ে দেখি আমার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হবে এখন চলুন।
রুমে এসে অবন্তী প্রথমে ওয়াশরুমে গেলো। কিন্তু যাওয়ার আগে ফোনটা বেডের উপর রেখে গেলো। ফোনটা চোখে পড়তেই আমার মাথায় গতরাতের কথা চলে আসলো। আমি কি ফোনটা চেক করবো! এটা কি ঠিক হবে! আমারই তো বউ ওর ফোন আমি চেক করতেই পারি। যতই বউ হোক প্রত্যেকের পারসোনাল লাইফ আছে। কিন্তু চেক না করলে আমি সত্যি টা জানবো কিভাবে!
যখন ভাবতে শুরু করি একটার পর একটা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায় শেষে কিছুই হয়ে ওঠে না। আমাদের জীবনের সাফল্যের পথে সব থেকে বড় বাধা আমার মতে কনফিউশান। আমরা কোনো কাজের আগে কনফিউশানে এমন ভাবে জড়িয়ে যাই যে ঐ কাজে সফলতা পাওয়া তো দূর কাজটাই করা হয় না।
এতক্ষণে হিজিবিজি ভাবতে ভাবতেই অবন্তী চলে এসেছে।
– আপনি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন।
– হুম।
মাথা নিচু করে নিজেকে বকতে বকতে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।
আজ দাওয়াত ছিলো রাফির বাসায়, রাফি আর তিথি দুজনেই আমার বেষ্টফ্রেন্ড। তারা লুকিয়ে লুকিয়ে কখন প্রেম করছে জানতেই পারিনি। পরে যখন তারা বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছে যায় তখন আমায় জানায়।
– দোস্ত তোর বউ কিন্তু খুব সুন্দর।
অবন্তী আইয়ান এর সাথে বসে খেলছে এই ফাঁকে তিথি আমায় অন্য রুমে নিয়ে এসে কথাটা বললো।
– হুম, অনেক সুন্দর।
– মেয়েটা কত্তো কিউট।
– কিউট তো বটেই। আইচ্ছা দোস্ত একটা কথা বল আমায়!
– কি কথা!
– অবন্তী কে খুব ভালো করে দেখে আয়। তারপর বলছি।
তিথি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে কিছু না বলে রুমে গেলো। একটু পরেই আবার চলে আসলো।
– দেখে আসলাম এখন কি বলবি বল।
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি তিথির সাথে সব শেয়ার করা ঠিক হবে কি না!
– কি হলো কিছু বল!
– মেয়েটা অনেক মায়াবতী না!
– এটা দেখতে পাঠালি আমায়!
– তাছাড়া কি! আমার বউ তোর থেকে সুন্দর এটাই তোকে দেখালাম।
– তোর বউ সুন্দর সেটা তো আগেই দেখছি। যত্তসব।
তিথি রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কিন্তু আমি আমার কথাগুলো শেয়ার করার মতো কাউকে পাচ্ছি না।
To be continue…..