#সেই_তুমি
Sumon Al-Farabi
#২য়_পর্ব
অবন্তীও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো – এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
অবন্তীর থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম – কই না তো। আপনি গিয়ে খেয়ে নিন আমি পরে খাবো।
অবন্তী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো। এরপর চলে গেলো। আমি দ্রুত ছবিগুলো দেখতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই মাথায় কিছু ঢুকছে না। ওর যদি কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক থাকতো তবে অবশ্যই আমায় বলতে পারতো। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো গতকাল তো অবন্তী খুব অসুস্থ ছিলো।
মাথা প্রচন্ড ধরছে। কোনো কিছু নিয়ে অল্প প্রেসার নিলেই মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করে। বালিশ মাথর উপর রেখে শুয়ে আছি।
– আপনি এভাবে শুয়ে আছেন কেন?
মাথার উপর থেকে বালিশ সরালাম- মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
– আমি কি মাথা টিপে দিবো!
– না থাক। সেটার দরকার হবে না।
আচমকাই কি মনে করে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।
– আপনি এখানে আমার সামনে এসে বসুন।
আমার এমন আচরণে অবন্তী কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু কিছু না বলে আমার সামনে এসে বসলো।
– কিছু বলবেন!
– দেখুন আমাদের তো পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।
– হ্যাঁ
– আমরা দুজন দুজনকে চিনতাম ও না জানতাম ও না।
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা আপনার জীবনে এমন কিছু কি আছে যেটা আপনি আমায় জানাতে চান! যদি এমন কিছু থাকে তবে আপনি আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন। আমি কিছু মনে করবো না৷
অবন্তী বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। এরপর আনমনে কি সব ভাবতে লাগলো। আমি অধীর আগ্রহে অবন্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
– একটা কথা আপনাকে জানানো উচিত।
আমার আগ্রহ ক্রমশই বাড়তে লাগলো- কি কথা! বলুন তাড়াতাড়ি।
– আপনি এতো ছটফট করছেন কেন? বলছি তো।
নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বললাম – আচ্ছা ঠিক আছে আপনি বলুন।
– গতবছর আমাদের কলেজ থেকে ট্যুরে গেছলাম। সেখানে আমরা তিনদিন ছিলাম।
– তারপর!
– যেদিন যাই সেদিন একটা ছেলে সব সময় আমার পিছনে পড়ে ছিলো।
অবন্তী ধীরে ধীরে কথাগুলো বলছে কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন কোনো হরর গল্প শুনছি। ক্রমশ গল্পের ভিতরে চলে যাচ্ছি মনে হচ্ছে এই বুঝি কোনো টুইষ্ট আসবে হঠাৎ সামনে ভুত চলে আসবে আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাবো।
– তারপর কি হলো! আপনি থামলেন কেন?
– রুমে ফ্যান দেওয়া আছে তাছাড়া চারদিকে তো গরম ও না তবুও আপনি এভাবে ঘামছেন কেন?
কপালে হাত দিয়ে দেখলাম আসলেই আমি ঘেমে যাচ্ছি।
– হয়তো হালকা জ্বর চলে আসছে। তাই ঘেমে যাচ্ছি।
– আমি ঔষধ নিয়ে আসছি।
অবন্তী উঠে ঔষধ নিতে যাচ্ছে আমি ওর হাত ধরে আবার বসালাম।
– ঔষধ লাগবে না। আপনি আগে পুরোটা শেষ করুন।
– কি পুরোটা শেষ করবো?
– যেটা বলতে শুরু করলেন।
– ওহ। ছেলেটা পরের দিন ও সারাদিন আমি যেখানে যেখানে গেছি আমার পিছনে পিছনে গেছে। এরপর আমরা সব বন্ধু মিলে ওকে এমন মাইর দিছি। পরের দিন থেকে আমাদের ধারের কাছেও ওকে দেখি নি।
ঠিক এই মুহুর্তে আমি হাসবো নাকি কান্না করবো সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বললাম – আপনার কেন মনে হলো এটা আমায় জানানো দরকার!
– অবশ্যই এটা আপনার জানা উচিত।
– কেন সেটা?
– যাতে আপনি আমার সাথে উল্টো পাল্টে কিছু করার সাহস না পান তাই।
অবন্তী হাসতে হাসতে উঠে গেলো। এরপর কি যেন একটা নিয়ে রুমে আসলো।
– হাতে কি ওটা?
– পেইন কিলার ক্রিম।আপনার তো মাথা ব্যাথা করছে।
– ওহ, হ্যাঁ।
– আপনি শুয়ে পড়ুন আমি কপালে ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছি।
আমি অবন্তীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি” যে অসুখ দিলো সেই ঔষধ দিচ্ছে এতে কি আসলেই অসুখ ভালো হবে? ”
– আপনি কি কিছু বলবেন?
– না, আমি আবার কি বলবো। আমি শুয়ে পড়ছি।
মথায় কেউ একটু হাত বুলিয়ে দিলেই অদ্ভুত ঘুম পায়। আমি প্রায় ব্যাথা ভুলে ঘুমাতেই বসেছি তখন আম্মু রুমে আসলো।
– মাথা কি খুব বেশি ব্যাথা করছে! জ্বর আসছে?
-জ্বর আসে নি তবে আসতে পারে।
– তুই রাখে খাবি কখন?
– খাবো না হয়তো।
– কেন?
– খেতে ইচ্ছে করছে না।
– ঢং করবি না। মেয়েটা তোর জন্য না খেয়ে আছে। ঢং বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে দুজনেই।
কথাটা যেন আমায় বৈদ্যুতিক শক দিলো। আমি অবন্তীর দিকে তাকালাম। আম্মু এতক্ষণে চলে গেলো।
– এভাবে তাকানোর কি আছে?
– আপনি খান নি কেন?
– আপনি সহ একসাথে খাবো তাই।
– কিন্তু কেন?
– বাসায় আম্মু বলে দিয়েছে আপনাকে ছেড়ে না খেতে।
– আচ্ছা ঠিক আছে আপনি খাবার রেডি করুন আমি আসছি।
অবন্তী মুচকি হেঁসে বেড়িয়ে গেলো। আমি তার চলে যাওয়া দেখছি। মেয়েটা আসলেই ভালো নাকি ভালোর অভিনয় করছে। আমি তো তাকো সব কিছু আমার সাথে শেয়ার করতে বললাম। কিন্তু তখন ও তো কিছু বললো না। উফ্ এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
রাতে খাওয়া শেষ করে করে এসে শুয়ে পড়লাম। আমার কিছু সময় পরেই অবন্তী রুমে আসলো।
– আপনার বন্ধুর বউয়ের জন্য চকলেট কিনে দিবেন কবে?
– কাল দিবো।
– ড্রেস গুলো ও কি ওনার জন্য?
– না। ওগুলো আপনার জন্য।
– সত্যি?
মেয়েটা আর এক মুহূর্ত শুয়ে না থেকে তখনই উঠে ড্রেসগুলো দেখতে শুরু করলো।
এখন কতটা রাত সেটা ঠিক বলতে পারবো না। কিন্তু কারো হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। হাসিটা অবন্তীর পাশ ফিরলাম কিন্তু অবন্তী নেই। দু’হাতে চোখ মুছে চারদিকে তাকালাম আর হাসির শব্দ কই থেকে আসছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিলাম। হাসিটা বারান্দা থেকে আসছে। মনে হচ্ছে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। কিন্তু এতো রাতে কার সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলছে! তাহলে কি ঐ ছেলে ঠিক! এমন হাজারো প্রশ্ন একের পর এক মনের মাঝে ঝড় তুলতে লাগলো।
To be continue….