#সূর্যকরোজ্জ্বল
পর্বসংখ্যা-২০
ফারিহা জান্নাত
পৃথিশার মৃদু চিৎকারে চোখে থাকা ঘুমটুকুও ছুটে গেলো যুবকটির। তার চোখের দৃষ্টি উদভ্রান্ত, পড়নে কালো টিশার্ট। চোখ-মুখ কঁচলে পৃথিশাকে দেখে তার ভ্রু সহসাই কুঁচকে গেলো। চমকিত গলায় বলল,
– তুমি?এখানে কিভাবে আসলে?
পৃথিশা নিজেও অবাক হয়েছে চরমভাবে। ফেনটা বের করে ম্যামের নাম্বারে কল করতেই ফোনের টিউন শোনা গেলো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টি পৃথিশার চোখে, পৃথিবী এত ছোট।
– আপনি? আপনি রোজ ম্যামের ছেলে ডা. মারুফ? মানে ম্যাম আপনার মা?
– ম্যামের ছেলে আমি হলে, উনার তো আমার মা হওয়ারই কথা তাই না?
মারুফের কন্ঠস্বর কৌতুকময়। পৃথিশাকে এখানে দেখে অবাক সে। কিছু একটা মনে পড়তেই শুধালো,
– তুমি এখানে কেন? বাসার জন্য তুমিই ফোন দিয়েছিলে?
পৃথিশা মাথা নাড়ালো। মারুফ মুখভঙ্গি পাল্টে গেলো। গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
– কেন? তোমার বাসার কি হয়েছে?
– এতিমদের কোন বাড়ি থাকে না। ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার হলে বলুন,নাহলে চলে যাই।
পৃথিশার কড়া উত্তরে মারুফ কিছু বলল না। ফ্ল্যাটের চাবিটা নিয়ে এসে পৃথিশাকে বাসা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ছোটখাটো একটা স্টুডিও ফ্ল্যাট। একটা রুম,সাথে ছোট একটা রান্নাঘর ও বারান্দা। খুব বেশি বড় না। তবুও বারান্দার জন্য পৃথিশার পছন্দ হলো বাসাটা। দেখতে আসবে বলে হয়তোবা পরিষ্কার করিয়ে রাখা হয়েছিল।
মারুফ জিজ্ঞেস করলো পৃথিশাকে,
– কবে উঠবে?
– আজ, এক্ষুণি।
অবাক হলো মারুফ।
– তুমি সব নিয়ে এসেছো?
পৃথিশা দরজার বাহিরে হাত দিয়ে দেখালো। মারুফ উঁকি মেরে দেখলো সিড়ির কোণায় বড় দুটো লাগেজ রাখা। অবাক স্বরে বলল,
– তুমি এগুলো নিজে টেনে এনেছো? কিভাবে আসলে এতদূর?
– উবারে করে এসেছি। উল্টোপাল্টা কথা বাদ দিয়ে আপনি বলুন বাসায় এখন উঠা যাবে কিনা।
– উঠা তো যাবেই।কিন্তু তোমার কেন ফার্নিচার আছে? কিভাবে থাকবা?
– ফার্নিচার দুইদিনের মধ্যেই এসে যাবে।
পৃথিশা আর কোন কথা বলল না। সিড়ি থেকে একটা লাগেজ টেনে আনার চেষ্টা করতেই মারুফ এগিয়ে এসে দুটো লাগেজই নিয়ে রুমে রেখে দিলো। অবাক হয়ে নিজের ছোট হাত আর মারুফের হাতগুলো মিলানোর চেষ্টা করলো সে। এত ভারি ব্যাগগুলো একসাথে নিয়ে নিলো! মারুফের কাছ থেকে ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে দরজা আটকে দিলো। চিন্তিত মারুফ কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে নিজেও চলে গেলো।
বাসাটা নিজের মতো ঘুরে দেখছিলো পৃথিশা। কলিংবেল লের আওয়াজ পেয়ে ফিরত আসলো দরজায়। মারুফ এসেছে। হাতে আটা লেগে আছে। পৃথিশাকে দেখে মৃদু হাসলো সে।
– তুমি কি সকালল নাস্তা করেছো?
পৃথিশার হাতের ঘড়িতে তাকালো। সকাল এগারোটার বেশি বাজে। এই লোক এখন নাস্তার কথা জিজ্ঞেস করছে।
– সকাল সাড়ে এগারোটা বাজে? এখন কে নাস্তা করে? আমি খেয়ে এসেছি।
মারুফ হেসে মাথা চুলকালো। আটাগুলো মাথায় লেগে গেছে।
– আসলে আজ ডিউটি নেই তো তাই বেলা করে উঠেছি। তাও যথেষ্ট তাড়াতাড়িই উঠেছি।
– আমি না আসলে আরও পরে উঠতেন?
– হে অবশ্যই।
পৃথিশা বড় বড় চোখে তাকালো। এগারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়েও কম ঘুমিয়েছে। অবশ্য পৃথিশাও আগে এমন করেই ঘুমাতো। ইদানীং কালেই ঘুমাতে পারে না। উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখে। মারুফ পৃথিশাকে বলে চলে গেলো,তার নাকি রুটি বসানো চুলায়। পৃথিশার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো মারুফ একাই সব করে? তার মতো? জিজ্ঞেস করা অবশ্য হলো না।
দুপুরের খাবারটা পৃথিশা বাহির থেকেই কিনে আনলো। গ্রামের বাড়িতে ফোন দিয়ে ফার্নিচার আনার ব্যবস্হা করেছে সে। নতুন করে শুধু একটা বুকশেলফ কিনতে হবে। পৃথিশার গল্পের বইগুলো রাখার জায়গা হচ্ছে না। বাসায় একা থাকতে ভালো লাগছে না পৃথিশার। একটা খাতা কলম নিয়ে লিস্ট করতে বসলো সে। যত কম জিনিস নিয়ে থাকা যায় তত ভালো। বাসাটা এমনিতেই ছোট। খাট আনার সাহস পাচ্ছে না সে। এই বাসায় তাদের বিশাল খাট আটবে না। লিস্ট করা শেষ হলে বাহিরে বের হওয়ার জন্য তৈরী হতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। মারুফ ছাড়া আসার কেউ নেই। দরজা খুলতেই পৃথিশার ধারণা সত্যি হলো, মারুফই এসেছে। একা আসে নি। হাতে ব্যাগ। পৃথিশাকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মারুফ নিজেই তাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলো। বাসায় পৃথিশা কিছুই করে নি। শুধু একপাশে চাদর বিছানো ও পানির বোতল। ব্যাগগুলো ফ্লোরে রেখে ক্লান্ত শ্বাস ফেললো মারুফ। পৃথিশা এগিয়ে এসে বলল,
– আপনি এইসময়? এগুলো কি?
– মায়ের ছাত্রীর বাসায় আসলাম প্রথমবার। খালি হাতে আসা যায় নাকি?
পৃথিশা বিপাকে পড়ে গেছে। বাসার বসার জায়গাও নেই।পৃথিশা যে তাকে বসতে বলবে সেই সুযোগও মিলছে না। মারুফ বোধহয় পৃথিশার অবস্হা বুঝতে পারলো। নিজ থেকেই বলল,
– একা বাচ্চা একটা মেয়ে কীভাবে আছে সেটাই দেখতে এলাম। ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই।
ব্যাগগুলোর দিকে উঁকি দিলো পৃথিশা। ফলমূল সহ কাঁচা বাজারও আছে। লোকটা পৃথিশাকে বারবার ঋণী করে দিচ্ছে। এমন কেন সে? পৃথিশাকে ব্যাগ হাতে দেখে মারুফ জিজ্ঞেস করলো,
– কোথাও যাচ্ছিলে?
– কয়েকটা জিনিস কেনার দরকার ছিলো।তাই বের হচ্ছিলাম।
– তুমি এখানকার রাস্তাঘাট চেনো?
পৃথিশা আমতা আমতা করছে।মারুফ চটে গেলো।খানিকটা গম্ভীর স্বরেই বলল,
– একা একা এই সন্ধ্যা করে বের হচ্ছো? বিপদে পড়লে কি হবে ভেবে দেখেছো?
পৃথিশা মাথা নিচু করে রাখলো। কথা বলল না। মারুফ গম্ভীর স্বরেই আবার বলল,
– কি কি লাগবে? লিস্ট দাও দেখি
– দরকার নেই। আমি নিজেই পারবো।
মিনমিনে স্বর পৃথিশার। মারুফ মনে মনে হাসলো। একটু বকা খেয়েই মুখটা কেমন ছোট করে ফেলেছে। এই মুখ দেখে কি রেগে থাকা যায়? যায় না, মারুফ তো পারে না। হাসিটা চেপে জিজ্ঞেস করলো,
– আচ্ছা রাগ করে না। ভালোর জন্যই বলেছি। চলে আমার সাথে, আমি আজ দেখিয়ে দেই। পরে তুমি নিজে যেও আবার।
পৃথিশার আসলেই দরকার ছিলো। তাই গেলো মারুফের সাথে। আজ মারুফ গাড়ি বের করলো না। দোকান কাছেই, হেঁটেই যাওয়া যাবে। তবে বিকাল হতেই সেখানে মানুষের ভীড় নামে। অনেকটা সময় নিয়ে কেনাকাটা করলো দু’জন মিলে। মারুফের অন্যরকম সত্তা দেখে অবাক হলো পৃথিশা। ভীড়ের মধ্যে পৃথিশাকে কীভাবে আগলে রেখেছিলো, বাবা’র পরে অন্য কোন পুরুষের এমন কাজে চোখ ভিজে উঠেছিলো পৃথিশার। রাতের খাবার কিনে বাসায় ফিরলো দু’জনে। ব্যাগগুলো পৃথিশা বারবার নিতে চাইলেও মারুফের সাথে পেরে উঠে নি। কয়েকবার বলেছিলো, কিন্তু মারুফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই চুপ।
রাতে ঘুমমানোর সময় পৃথিশার মন খারাপ হয়ে গেলো। পুরোটা ঘর এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।পৃথিশার কান্না পেলো। জীবনটা এত বদলে গেলো কেন।কেন তার কোন আপন মানুষ রইলো না। দাদা বাড়িতে কেউ কোনদিন একটিবারের জন্যও ফোন দিয়ে খোঁজ নিলো না। মণিদীপা কেন লড়াই করলো না, কেন একটু সহ্য করলো না। পৃথিশা তো ছিল তার সাথে। কেউ একটিবারের জন্য ছোট্ট পৃথিশার কথা চিন্তা করলো না। বাবার জান ছিলো সে। বাড়ির সবাই তাকে পুতুলের মতো রাখতো। পৃথিশার মনে পড়ে না কোনদিন সে নিজে রান্নাঘরে গিয়ে চুলার গ্যাস জ্বালিয়েছে। মা- বাবা ছোট মেয়ে বলে কোনদিনই কিছু করতে দেয় নি। খুব বেশী ধনী হয়তোবা তারা ছিলো না কিন্তু তার কোন শখ অপূর্ণ থাকে নি কোন দিন। মণিদীপার উপর পৃথিশার রাগ হচ্ছে অনেক। কষ্ট মণিদীপা পেয়েছিল ঠিকই তবে ঝড় তো বয়ে গেছে পৃথিশার উপর। ছোট মেয়েটা এক ধাক্কায় বড় হয়ে গেছে। এতদিনের চেপে রাখা ব্যাথাগুলো যেন আজ উপচে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। নিজেকে সামলাতে পারছে না।
চলবে,
সূর্যকরোজ্জ্বল
পর্বসংখ্যা-২১
ফারিহা জান্নাত
অনবরত কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো পৃথিশার। মূহুর্তেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো। কোথায় ছুটির দিন ঘুমাবে তা না সাত সকালে ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। গায়ে কোনমতে ওড়না জড়ালো পৃথিশা। এদিকে অনবরত বেল বেজেই যাচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই মারুফের মুখস্রী ভেসে উঠলো। সারা পিঠময় ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে বারবার, ঘুমে চোখ খুলে রাখা দায়। মারুফের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে রমণীর এমন কান্ডে। অধর জোড়া প্রসারিত করে বলে,
– কি ব্যাপার? কাল আমাকে নিজেই বললে দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠি, অথচ আজ নিজে..
কথা থেমে গেলো মারুফের।পৃথিশার চোখের দৃষ্টি এলোমেলো। পা টলমল কররছে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। মারুফ এগিয়ে চিন্তিত স্বরে বলল,
– পৃথিশা, কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো..
বলার আগেই পৃথিশা ঢলে পড়লো মারুফের গায়ে। হতভম্ব হয়ে গেলো মারুফ। পৃথিশার গালে কয়েকবার টোকা দিলেও কাজ হলো না। পৃথিশার বাসায় খাট না থাকায় নিজের বাসায়ই নিয়ে গেলো তাকে। মারুফ তাকে কোলে করে নিয়ে গেছে জানলে নিশ্চিত এতক্ষণে লজ্জায় রাঙা হতো মেয়েটা।
বিছানায় পৃথিশাকে শুয়িয়ে এসি অন করে দিলো সে। অভিজ্ঞতা থাকায় কিছুটা বুঝতে পারছে প্রেশার ফল করেছে। চেক করতেই দেখলো তার ধারণা সঠিক। রাগ হলো তার। মেয়েটা শেষ কখন খেয়েছে? পৃথিশাকে জাগালো না আর। অপেক্ষা করতে থাকলো মেয়েটা কখন জাগবে। মেয়েটাকে আজ অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছিল তার বাসায় নাস্তা করার জন্য।
বেশ খানিকক্ষণ পর ঘুম ভাঙলো পৃথিশার। শরীরে এক ফোঁটা শক্তি নেই যেন। অপরিচিত জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লো সে। মারুফ সোফায় বসে কাজ করছিলো। পৃথিশার জন্য আজও সে ডিউটি শিফ্ট করেছে৷ মেয়েটাকে একা রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছিলো না। পৃথিশাকে উঠতে দেখে এগিয়ে আসলো সে। পাশের টি-টেবিল থেকে শরবত নিয়ে এগিয়ে দিলো। পৃথিশা পানি নিলো না। বরং জিজ্ঞেস করলো,
– আমি এখানে কিভাবে?
মারুফ তার কথার উত্তর না দিয়ে শরবতটা নিতে ইশারা করলো। মারুফের দৃষ্টি দেখে পৃথিশা নিয়ে অল্প খেয়ে আবার রেখে দিলো। মারুফ শান্ত স্বরে বলল,
– পুরোটা শেষ করো।
এমন করে বললে কেউ না শুনে পারে? পৃথিশা তো পারে না। চুপচাপ শরবতটা খেয়ে নিলো। অতিরিক্ত মিষ্টি শরবতটা। খাওয়া শেষ করতেই মারুফ আবার পানি এগিয়ে দিলো। এবার আর কিছু বলল না পৃতিশা। চুপচাপ পানিটাও খেয়ে নিলো। মারুফের দিকে এবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই মারুফ বলল,
– কতক্ষণ ধরে না খেয়ে?
পৃথিশা উত্তরদ দিলো না। গতকাল দুপুরের পর আর খাওয়া হয় নি সত্যি বলতে। বিকেলে মারুফের সাথে বাহিরে চা খেয়েছিলো শুধু। মারুফ আবারে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হলো? কখন খেয়েছিলে লাস্ট?
– গতকাল দুপুরে।
কন্ঠস্বর নিচু পৃথিশার। মারুফের রাগ উঠে গেলো। হাতে থাকা গ্লাসটা শব্দ করে টেবিলে রেখে বলল,
– এতক্ষণ ধরে না খেয়ে তুমি অথচ হুঁশ নেই। খাওনি কেন হ্যাঁ আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন তো ঠিকই বললে খেয়েছে? তাহলে এখন?
পৃথিশা কিছু বলল না। মারুফকে কখনো এতটা রাগতে দেখেনি সে। মারুফ আবারো বলল,
– কি হলো? এখন কথা বলো না কেন? প্রেশার,সুগার সব তো তলানিতে। অথচ দিন-রাত লাফিয়ে বেড়াও।
নাক টানলো পৃথিশা। চোখে ইতিমধ্যে অশ্রু জমেছে। নিজের কান্ডে নিজেই অবাক হলো সে। কই কখনো তো কোনদিন এত অল্প কথায় কাঁদেনি সে।তবে আজ কি হলো? মারুফ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। পরপরই রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। পৃথিশা স্বস্তির শ্বাস ফেললো। তবে মারুফ হাতে প্লেট নিয়ে রুমে প্রবেশ করলে তার স্বস্তি রইলো না। প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে এসেছে সে। মারুফের তার দিকে প্লেট এগিয়ে বলল,
– সবটা শেষ করো তাড়াতাড়ি।
পৃথিশা অবাক হলো অনেকটা।লোকটা তার জন্য কেন এত করছে। প্রশ্নটা মনে মনে করলেও মুখে জিজ্ঞেস করে না সে। পাছে আবার মারুফ রেগে বসে। পৃথিশা প্লেট নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মারুফ প্রশ্ন করে,
– কোথায় যাচ্ছো?
– নিজের বাসায় গিয়ে খাই। মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে।
– এখানে তুমি মানুষ কোথায় দেখছো?
– কেন আপনার বাসায় কেউ নেই?
পৃথিশার কন্ঠস্বর বিস্মিত। মারুফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই বিষয়ে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত সে।
– বাবা মারা গিয়েছে অনেক বছর হবে। আমি তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। আর আম্মু মারা গেলো মাস ছয়েক আগে। ভাই-বোন নেই আমার। দাদা বাড়ির দিকে কাছের কোন আত্নীয় নেই কারন বাবার ভাই ছিলো না। একাই থাকি আমি।
পৃথিশা কিছু বলল না। তার মতো অবস্হা মারুফের। তনে তার মতো এতটা নাজুক অবস্থায় নেই সে। পৃথিশাকে খেতে না দেখে মারুফ ধমক দিলো আবারো,
– সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে যাচ্ছে অথচ তোমার খাওয়ার নাম নেই। খাওয়া শুরু করো তাড়াতাড়ি।
পৃথিশা মারুফকে পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।পেছন পেছন মারুফও এলো। দেখলো পৃথিশা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। মারুফকে আসতে দেখে বলল,
– বেডরুমে খাবার ফেলে অপরিষ্কার করতে চাই নি। তাই এখানে এলাম।
মারুফ নিজেও এগিয়ে এসে পৃথিশার সামনাসামনি বসলো।তার দৃষ্টি পৃথিশার দিকে।ইদানীং কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে সে। খেতে খেতেই পৃথিশা প্রশ্ন ছুঁড়লো,
– আপনার ফিয়ন্সের সাথে দেখা করাবেন না আমায়?
মূহুর্তেই মেজাজ থমথমে হয়ে গেলো মারুফের। উত্তর দেওয়ার আগেই কলিংবেল বাজলো উচ্চস্বরে।পৃথিশাকে বসতে বলে দরজা খুলতে গেলো সে। পৃথিশা টেবিলে বসে দেকতে পেলো না কে এসেছে তবে কথা শুনলো,
– দিন দুপুরে যুবতী মাইয়া তোমার ঘরে কি করে? দেশটা রসাতলে গেলো একেবারে তোমাগো মতো নষ্টা পোলা-মাইয়ার জন্য।
চলবে,