#সূর্যকরোজ্জ্বল
পর্বসংখ্যা-১২+১৩
ফারিহা জান্নাত
ব্যস্ততম নগরী ঢাকা। এখানকার মানুষগুলোও আত্মকেন্দ্রিক। নিজেদের মত করে থাকে সবাই। অন্য কাউকে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। পৃথিশার খালু আর্মি অফিসার ছিলেন, সেই সুবাদে পৃথিশার খালা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে থাকেন। ক্যান্টনমেন্ট এলাকাগুলো বেশ ছিমছাম, গুছানো হয়ে থাকে। পৃথিশার বেশ পছন্দ হলো জায়গাটা। কোন কোলাহল নেই, চেঁচামেচি নেই। প্রত্যেকটা বাসার সাথে একটা করে পার্ক। গাড়ি থেকে নামার জন্য তাগাদা দিলেন রাহনুমা বেগম। চুলগুলো সামলে নিয়ে নামলো পৃথিশা। গাড়ির ঝাঁকুনিতে বেণী প্রায় খুলে গেছে। হাঁটু নিচে পড়া চুলগুলো পৃথিশা সেই কবেই কেটে ফেলতো যদি না মণিদীপা বাধা দিতো। মণিদীপার কথা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। পৃথিশা একটা জিনিস বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে, মণিদীপার জন্য তার যতটা মন খারাপ হয় ততটা মন খারাপ তার মা কিংবা বাবার জন্য হয় না। তাদের ছাড়া নিজেকে সামলে নিতে পেরেছে সে কিন্তু মণিদীপার চলে যাওয়াটা সে এখনো মানতে পারে নি। হয়তোবা সর্বক্ষণ মণিদীপার সাথে থাকার কারণেই তার অভাবটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ভাবনা বাদ দিয়ে খালার পাশে দাঁড়ালো সে। বিশাল উঁচু বিল্ডিং, গায়ে বড় করে নাম লিখা ‘পড়শী’। পৃথিশা লক্ষ্য করলো সবগুলো বিল্ডিংয়ের আলাদা আলাদা নাম। পৃথিশার খালার এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় ছেলে কিছুদিন আগে পড়াশোনা শেষ করেছে পৃথিশা যতদূর জানে। মেয়েটার খবর জানা নেই তার। রাহনুমার ধাক্কায় সজ্ঞানে ফিরলো পৃথিশা। গাড়ির পেছন থেকে তাদের ব্যাগগুলো ড্রাইভার নামিয়ে ফেলেছে। নিজের বিশাল লাগেজটা নিয়ে হাঁটা ধরলো পৃথিশা। রাহনুমার বাসায় কখনো আসা হয় নি তার। রাহনুমাই যেতেন সবসময়। পৃথিশার মায়ের বড় হওয়ার বোনকে খুব স্নেহ করতেন। পৃথিশার খালু গত হয়েছেন বছর দুয়েক হবে। মিশনে মৃত্যু হওয়ায় এখানে বেশ সুযোগ-সুবিধা পান রাহনুমা। তবে রাহনুমা বেশিরভাগ একাই তাদের বাসায় যেতেন। তাই তার ছেলে-মেয়েকে দেখার খুব একটা সুযোগ হয়নি পৃথিশার।
বিশাল বিল্ডিংয়ের আটাতালায় রাহনুমা বেগনের বাসা। বাসার সামনে জুতার র্যাক ও নানারকম ইনডোর প্ল্যান্ট। পৃথিশার গাছ পছন্দ না।কিন্তু মণিদীপার পছন্দ থাকায় তাদের অনেকগুলো ফুল গাছ ছিলো। পৃথিশা সেগুলো সাথে করে নিয়ে এসেছে। তবে গাড়ি যে ঝাঁকুনি খেয়েছে তাতে মনে হয় সব গাছ একসাথে লেপ্টালেপ্টি করে লেগে আছে। কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুললো রাহনুমা বেগমের বড় ছেলে রায়ান। মা’কে দেখে জড়িয়ে ধরলো সে। পৃথিশার দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুঁচকালো। রাহনুমাকে জিজ্ঞেস করলো,
– উনি কে?
– পৃথিশা,তোর ছোট খালার মেয়ে। মনে নেই?
বড় বড় চোখে পৃথিশার দিকে তাকালো রায়ান। অস্বস্তিতে পড়ে গেলো পৃথিশা। এদিক-ওদিক দৃষ্টি ঘুরাতে লাগলো। রায়ান বিস্মিত স্বরে বলল,
– মাই গড! এটা পৃথিশা? এত বড় হয়ে গেছে কীভাবে? ও না কত ছোট ছিলো, এইযে এতটুকু।
বলেই তিনি কোমড় সমান পর্যন্ত হাত দিয়ে ইশারা করলো রায়ান। পৃথিশা আরও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। রাহনুমা বেগম ছেলেকে সরালেন। পৃথিশা এতক্ষন বাহিরে দাঁড়িয়েই তাদের কথা শুনে যাচ্ছিলো। রাহনুমা তাকে ভেতরে আনলেন। বাসাটা বেশ বড়। তিনি পৃথিশাকে একটা রুম দেখিয়ে দিলেন। বুয়াকে বলে তিনি আগেই রুম পরিষ্কার করিয়ে রেখেছিলেন। পৃথিশাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলেন তিনি।
পৃথিশাকে যে রুম দেয়া হয়েছে তা মাঝারি ধরনের, খুব বেশি বড় না আবার ছোটও না। একটা আলমারি, একটা টেবিল ও বিছানা। রুমের সাথে একটা বারান্দা-ও আছে। পৃথিশা লাগেজটা বিছানার উপর রাখতেই রায়ান আসলো তার রুমে। ঢোকার আগে দরজার শব্দ করে দুইবার। পৃথিশা সেদিকে তাকালো। রায়ান শরবতের গ্লাসটা টেবিলে রেখে হেসে বলল,
– জার্নি করে এসেছ, ঠান্ডা শরবত ভালো লাগবে।
মৃদু স্বরে ধন্যবাদ দিলো পৃথিশা। রায়ান তার দিকে কিছুক্ষণ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আম্মু বলেছিল তুমি মারকুটে ধরনের মেয়ে। কিন্তু তোমাকে তো সেরকম মনে হচ্ছে না।
মাত্রই শরবত মুখে তুলেছিল পৃথিশা। রায়ানের কথা শুনে তা গলায় আটকে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
– আমি কি এখন আপনার সাথে মারামারি করে দেখাব আমি কেমন?
– এইতো এতক্ষণে কথা ফুটেছে মুখে। মারামারি করতে বলি নি, জাস্ট জানতে চেয়েছি। যাই হোক, জার্নি করেছ রেস্ট নাও। মারামারি করার সময় পাবো আরো।
পৃথিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রায়ান বেরিয়ে গেলো। রায়ান চলে যেতেই পৃথিশা দরজা আটকে দিলো। জামা বের করে গোসল করতে চলে গেল। বের হতে না হতেই দরজায় আবারো টোকা পড়লো। পৃথিশা তখন চুল মুছতে ব্যস্ত। ভেজা তোয়ালে-টা বিছানায় রেখে সে দরজা খুলতে গেলো। রায়ান খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছে। পৃথিশার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। তাকে চুপ থাকতে দেখে পৃথিশা নিজেই জিজ্ঞেস করলো,
– কিছু বলবেন?
রায়ান অস্ফুটস্বরে কিছু একটা বলল। পৃথিশা শুনতে পেলো না ঠিকমতো। তাই আবারো একটু জোরেই জিজ্ঞেস করলো,
– কি বলতে এসেছেন বলুন।
রায়ান দৃষ্টি সরালো। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
– খেতে আসুন।
যেতে গিয়েও আবার ফিরে এসে বলল, “চুল মুছে নিও, জামা ভিজে যাচ্ছে।”
বলেই চলে গেলো। পৃথিশা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। হুঁশ ফিরতেই ভেজা তোয়ালেটা মাথায় জড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। খাবার টেবিলে রাহনুমা বেগম, রায়ান বসে আছে। রাহনুমা বেগমের মেয়েকে চোখে পড়লো না পৃথিশার। জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলো না। পৃথিশা রাহনুমা বেগমের পাশে বসলো। তার ঠিক সামনাসামনি বসলো রায়ান। তার চোখের দৃষ্টি অন্যরকম। পৃথিশাকে খানিকটা বিভ্রান্ত দেখালো। সবাইকে চুপচাপ দেখে রায়ানই কথা বলা শুরু করলো। পৃথিশার ব্যাপারে সবই শুনেছে সে।সেখান থেকেই আন্দাজে ঢিল ছুঁড়লো,
– মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষা তো দুই মাস পরই হবে। প্রিপারেশন কেমন?
হাত থেমে গেলো পৃথিশার। রায়ানের দিকে চকিত নজরে তাকালো। রাহনুমা বেগম ছেলেকে বললে,
– তোকে কে বলল পৃথিশা মেডিকেলে দিবে? পৃথিশা বলেছে?
পৃথিশা কিছু বলল না দেখে রাহনুমা রায়ানকে আবারো জিজ্ঞেস করলেন,
– কি রে বল।
– মনে হলো তাই বললাম।
পৃথিশা কোন কথা না বলে চুপচাপ খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। এইচএসসি পরীক্ষার পরে পড়াশোনায় যে ঘাটতি এসেছে তা এই এক মাসে কভার করা সম্ভব হবে না। মণিদীপার ইচ্ছা ছিলো পৃথিশাকে মেডিকেলে পড়ানোর। পৃথিশার নিজস্ব কোন পছন্দের সেক্টর নেই, তবে সে চেয়েছিল ইন্জিনিয়ারিংয়ের দিকে যেতে। পরে অবশ্য মণিদীপার ইচ্ছেতে মেডিকেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই কয়েকমাসে তার তেমন কোন প্রস্তুতি নেওয়া হয় নি। এখন শুরু করলেও শেষ করতে পারবে না।
এসব নিয়ে ভাবনার মাঝেই রাহনুমা বেগম প্রবেশ করলেন, হাতে এক গ্লাস দুধ। পৃথিশার জন্য এনেছেন। মেয়েটা কয়েকদিন কিছুই খায় নি। এছাড়াও তিনি ঠিক করেছেন পৃথিশাকে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাবেন। মেয়েটা আজ গাড়িতে ঘুমের মধ্যেও কয়েকবার ভয় পেয়ে উঠে গেছে। চিকিৎসা না করালে জল বহুদূর গড়াবে। পৃথিশাকে খানিকটা জোর করে অর্ধেকের মতো দুধ তিনি খাওয়াতে পারলেন। মেয়েটা এতো জেদি, কারো কথা সহজে শুনতে চায় না। গ্লাসটা টেবিলে রেখে তিনি পৃথিশাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– কোথায় এডমিশন নিবি? কিছু ঠিক করেছিস?
– মেডিকেলে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় নেই হাতে।
রাহনুমা বেগম কিছু একটা ভাবলেন। পরপরই বললেন,
– রায়ন পড়াবে তোকে। ও তো মেডিকেলে-ও চান্স পেয়েছিলো,পড়লো না। ও তোকে গাইড করতে পারবে।
পৃথিশা কিছু বলল না। রাহনুমা বেগম নিজের মনেই বলতে থাকলেন,
– কালকে রায়ানের সাথে গিয়ে প্রয়োজনীয় বই কিনে আনিস, এখন তো কোথাও ভর্তি হলেও বুঝতে পারবি না ঠিকঠাক। আগে নিজে পড়া শুরু কর,পরবর্তীতে ঠিক করিস কি করবি।
কথাগুলো বলে তিনি পৃথিশার মাথায় একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। পৃথিশা শুয়ে পড়লো বিছানায়। শরীর আর চলছে না খাওয়া-দাওয়ার পর।
পরদিন ভোরে বেশ তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙলো পৃথিশার। অপরিচিত জায়গা বলে রাতে বারবার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙলেও রুম থেকে বের হলো না সে । বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো অনেকক্ষণ। ঘড়ির কাঁটা ছয়ের ঘরে আসতেই নিচে রায়ানকে দেখতে পেলো। জগিং স্যুট পড়ে রাস্তার এক মাথা থেকে অন্য মাথায় বারবার দৌড়াচ্ছে সে। কিছুক্ষণ পরপর থেমে আবার বিশ্রাম নিচ্ছে। পৃথিশা বারান্দায় আর দাঁড়ালো না। রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখতে পেলো রাহনুমা বেগম নাস্তার আয়োজন করছে। পাশে কাজের মেয়েটি তাকে সাহায্য করছে। পৃথিশা হাত লাগাতে চাইলো কিন্তু রাহনুমা বেগম দিলেন না। পৃথিশাকে চা দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের করে দিলেন। পৃথিশা চা খেতে বসতেই কলিংবেল বাজলো। রাহনুমা বেগম পৃথিশাকে বললেন দরজাটা খুলতে। পৃথিশা দরজা খুলতেই রায়ানের ঘর্মাক্ত মুখস্রী নজরে এলো। সরে দাঁড়িয়ে রায়ানকে ঢোকার সুযোগ করে দিলো।
বসার ঘরে এসে ফ্যান ছেড়ে গা এলিয়ে বসলো রায়ান। পৃথিশা তার চায়ের কাপটা এখানেই রেখে গিয়েছিলো। কাপটা নিতে এসে দেখলো রায়ান সোফায় বসে আছে,পা দুটো সামনে থাকা টি-টেবিলের উপর উঠানো। পড়নে স্যুটের উপরের দুই বোতাম খোলা, ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে।পৃথিশা চেয়েছিলো নিঃশব্দে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু তা হলো না। কাপটা উঠিয়ে যেতে নিলেই রায়ান চোখ বন্ধ অবস্হায়ই বলে উঠল,
– বসো পৃথিশা, কথা বলি।
পৃথিশা আর যাওয়ার সুযোগ পেলো না। অগত্যা বসতেই হলো তাকে। রায়ান মৃদু হেসে পা নামিয়ে বলল, ” গুড মর্নিং। কি অবস্হা? রাতে ঘুম হয়েছে? চোখ-মুখ ফুলে গেছে একদম। ”
পৃথিশার মুখ লজ্জায় রাঙা হলো। মৃদু স্বরে বলল, ” শুভ সকাল।”
রায়ান উচ্চস্বরে রাহনুমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আম্মু এক কাপ চা।”
তারপর পৃথিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– আম্মু বলল আজকে তোমাকে নিয়ে বই কিনতে যেতে। কখন বের হবে?
– যখন আপনার সময় হবে।
রায়ান শব্দ করে হাসলো। বলল,
– অ্যা’ম এট ইউর সার্ভিস ম্যাম। যখন বলবেন তখনই যাব।
পৃথিশা চুপ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবল, ছেলেটার সমস্যা কি এভাবে কথা বলে কেন সবসময়। পৃথিশাকে কিছু বলতে না দেখে রায়ান নিজেই বলল,
– তাহলে দুপুরের খাবার পর বের হই, তখন রোদ একটু কম থাকবে।
পৃথিশা ‘আচ্ছা’ বলে উঠে গেলো। রায়ানের সামনে বসতে তার অস্বস্তি হয়। ছেলেটার দৃষ্টি তার কাছে অদ্ভুদ ঠেকে।
বিকেল বেলা রোদ কমলে রায়ান পৃথিশাকে নিয়ে বের হওয়ার জন্য তৈরী রায়ানের নিজেদের গাড়ি আছে। গাড়ি নয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো তারা । পৃথিশা রেডি হয়ে বের হতেই রায়ান রওনা হলো তাকে নিয়ে। পেছনের সিটে পৃথিশাকে বসতে দেয়নি রায়ান। জোর করে পাশের সিটেই বসেছে। পৃথিশা কিছু বলে নি,বরাবরেই মতোই নিশ্চুপ ছিলো। এসব অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে চায় না সে। কিছুসময় পর রায়ান নিজেই মুখ খুললো,
-তুমি কি সবসময় এমন চুপ করেই থাকো? কথা বলো না? আম্মু তো বলেছিলো তুমি খুব প্রাণোচ্ছল।
পৃথিশা রায়ানের দিকে তাকালো। সে একমনে সম্মুখে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। চোখ ঘুরিয়ে নিলো পৃথিশা। থমথমে স্বরে বলল,
– কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না,তাই বলিনি।
– কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো না কেন? মানুষটা আমি বলে?
পৃথিশা উত্তর দিতে যাবে তার আগেই গাড়ির ঝাঁকুনিতে তার খোপা করা চুলগুলো ঝড়ঝড়িয়ে খুলে চারপাশে ছড়িয়ে গেলো। বিরক্তিতে মুখ কালো হয়ে গেলো পৃথিশার। বিড়বিড়িয়ে একটা গালি দিয়ে চুলগুলো গুছিয়ে একপাচে আনলো সে। পৃথিশাড বিড়বিড়িয়ে বলা কথাটা রায়ানের কানে গেলো। সে হতভম্ব হয়ে বলল,
– তুমি? তুমি এসব কি বলো? কিসের কি বাচ্চা?
পৃথিশা বিরক্তি ছিলো সবকিছু নিয়ে। রায়ানের দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আপনি কি প্লিজ চুপ করবেন?
রায়ান চুপ হয়ে গেলো, বাকিটা পথ কোন কথা বললো না সে। পৃথিশার প্রয়োজনীয় বইগুলো কিনে দিয়ে তাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে আবার বেরিয়ে গেলো। রায়ান বের হতেই হুট করে বৃষ্টি শুরু হলো। হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নয়, একেবারে মুষলধারে বৃষ্টি। পৃথিশা চিন্তিত চোখে বাহিরে তাকালো। ছেলেটা এখনো আসছে না কেন? তার ভাবনার মাঝেই রায়ান ভেজা শরীরে গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়লো। তার মাথা থেকে পানি পড়ছে। হাতে খাবারের প্যাকেট।সেগুলো সাবধানে গাড়ির সামনের জায়গায় রেখে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছতে থাকলো। পৃথিশার একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু কিছু বলল না। চোখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলো। রায়ান মাথা মুছে পৃথিশার দিকে তাকালো। পৃথিশার পড়নে সাদা জামা,তাতে গোলাপি সুতার কারুকাজ করা। পৃথিশার শ্যামলা বদনে রঙটা অন্যরকম লাগছে। চুলগুলো হাতখোপা করে রাখা,তবে খোপা থাকছে না হেলে ঘাড়ের পড়ে গেছে। রায়ান চোখ সরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
চলবে,