সূর্যকরোজ্জ্বল পর্ব-০৪

0
104

#সূর্যকরোজ্জ্বল
পর্বসংখ্যা-০৪
ফারিহা জান্নাত

– মিস মণিদীপার উপর অ’ক’থ্য নি’র্যা’ত’ন চালানো হয়েছে। তার মাথার জায়গায় জায়গায় চুল ওঠা, চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। বাম চোখে ধা/রা/লো কিছু দিয়ে আঘাত করেছে, শুধু আঘাত-ই করেনি চোখটা তুলে ফেলা হয়েছে। মাথায়-ও আঘাত লেগেছে।স্মৃতি চলে যাওয়ার আশঙ্কা ইন্টারনাল পার্ট’সে গুরুতর জ/খ/ম হয়ে আছে, ধারণা করা-ই যায় কয়েকজন মিলে এই কাজ করেছে। এছাড়াও শরীরের জায়গায় জায়গায় অনেক ক্ষত আছে। যারা এই কাজ করেছে তাদের মনে হয় কষ্ট সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।

সমস্ত শরীর থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো পৃথিশার। শরীর ঝিম ধরে গেছে। তার ননীর পুতুল বোনটার এ অবস্হা হয়েছে তা ভাবতে ইচ্ছে করছে না। পলক ফেলতেই টপটপিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ল।

– প্লিজ, কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ। তার জ্ঞান ফিরার আশায় আছি আমরা। তবে ও পুরোপুরি একটা ট্রমায় থাকবে। তখন আপনাদেরই ওকে সামলাতে হবে। ওই সময় একটি শিশুর মতো ওকে দেখে রাখতে হবে।

– আর কোনদিন কি বাম চোখে দেখতে পাবে না?

– চোখ না থাকলে কি দিয়ে দেখবে বলুন তো?

– চিকিৎসা বিজ্ঞান কত উন্নত হচ্ছে আজকাল। কোন উপায় কি নেই।

– আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে বাংলাদেশে নেই, উন্নত দেশগুলোতে পেতে পারেন।

পৃথিশা মাথা নাড়িয়ে ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। কিছু একটা মনে হতেই পিছন ফিরে বলল,

– ফিজিক্যাল রিপোর্টগুলো আমি ছাড়া যেন আর কারো হাতে না যায়,এই বিষয়টা দেখবেন প্লিজ।

– সিউর, তবে পুলিশ জানাজানি হলে

– ওটাও আমি হ্যান্ডেল করব।ডোন্ট ওয়া’রি।

পৃথিশা বেরিয়ে গেল। মণিদীপা এখনো আইসিইউতে। বড় একটা টেলিভিশনে সর্বক্ষণ দেখানো হয় তাদের। পৃথিশা সেদিকে এক পলক তাকিয়ে কেবিনের সামনে দাঁড়ালো।লুকিং গ্লাস দিয়ে মণিদীপাকে দেখলো সে। সারা শরীরে থাকা ব্যান্ডেজের মধ্যে কয়েকটা খুলে দেওয়া হয়েছে। একটা চোখ এখনো বাধা। মাথায়ও ব্যান্ডেজ করা এখনো। অচেতন শরীরটার দিকে তাকিয়ে বুক ভার হয়ে এলো পৃথিশার। নব মোচড়ে ভেতরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই দায়িত্বরত নার্স এসে আটকে দিলো। ঠোঁট চেপে পৃথিশা বলল,

– একটু দেখেই চলে যাব। বেশি সময় নিব না। একটু যেতে দিন প্লিজ।

নার্স বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো। বোঝাতে চাইলো তার কোনভাবেই এখন ভেতরে যাওয়া সম্ভব নয়। ভিজিটিং আওয়ার ছাড়া অন্য সময় কোনভাবেই ঢুকতে দেওয়া হয় না। সেই সময়ই কারো আওশাজ পেয়ে নার্স থেমে গেলো। নম্র স্বরে ভিতরে যেতে বলল। পেছন ফিরে কথার মালিককে দেখার ইচ্ছে পৃথিশার ছিল না। তবে পুরুষালি ভারী স্বরের গলা সে শুনেছিল।সে নিশ্চুপে বোনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তার থেকে বেশ খানিকটা দূরেই নার্স দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিশা পাশে পড়ে থাকা রিপোর্ট দেখলো। ডাক্তার যা বলেছে তাই বিস্তারিত ভাবে লিখা। পড়ার ইচ্ছা হলো না তার। বোনের মাথায় হাত বুলাতে চাইলো তবে নার্স সেটা করতে দিলো না। মাথায় হাত লাগানো নিষেধ। পৃথিশা আলতো করো বোনের আঙুলে হাত ছোঁয়ালো। মনে মনে বলল, “ডাক্তারের কথা যদি সত্যি হয়,তুই যদি সবকিছু ভুলে যাস তাহলে তোকে আমি নতুন জীবন দিবো বুবু। সেখানে এসব বিশ্রী সত্য থাকবে না।” পৃথিশা পরপরই বেড়িয়ে গেল। বাহিরে থাকা চেয়ারে বসে মামাকে ফোন করলো মায়ের খবর নিতে। কথা বলা শেষে চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো সে। এদিক-টায় তেমন কেউ নেই। রাত বাড়ছে, সবাই নিজ নীড়ে ফিরে গেছে। পৃথিশা সামনের দিনগুলো ভাবার চেষ্টা করলো। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। অবসর নিয়েছেন বছর দু’য়েক হবে। পেনশন, মণিদীপার টিউশনির টাকা দিয়ে ভালোভাবেই দিনকেটে যেত। তবে এখন তাদের কি কি ঝামেলায় পড়তে হবে তা এখনো সে ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারছে না। এই ঘটনা যদি ভুলেও জানজানি হয় তাহলে বাড়িওয়ালা যে তাদের তাড়িয়ে দিবেন তা স্পষ্ট। এছাড়া ঘটনা জানাজানি হলে ওই এলাকায় থাকা যাবে না। পৃথিশা এমনিতেও ভেবেছিলো সে ওখানে আর থাকবে না। মণিদীপাকে নিয়ে অবশ্যই নতুন এলাকায় উঠতে হবে। ভাবনা শেষে মোবাইলে ডাটা ওন করলো। ফেসবুকে ঢুকতেই বুক কেঁপে উঠলো তার। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। মণিদীপার খবর এখন ভাইরাল নিউজ। সবাই এটা নিয়েই তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত। চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো পৃথিশা। মাথা ঝাঁকিয়ে হেডলাইন পড়ার চেষ্টা করলো সে।

— পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ধ/[র্ষি]/ত : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মণিদীপা চৌধুরী। গত শুক্রবার রাতে তাকে এক গলিতে বি//ব/স্ত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকায় থাকা কিছু ছেলে এ সংবাদ দিয়েছে। এছাড়াও তার সহপাঠীরা বলেন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোন সোস্যাল মিডিয়া কিংবা ফোনে। ধারণা করা যাচ্ছে প্রেমিকের সাথে আড়ালে দেখা করতে গিয়ে এ অবস্হা হয়েছে তার। যদিও মণিদীপার পরিবার সম্পর্কে কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি তবে…

আর পড়তে পারলো না পৃথিশা। মস্তিষ্ক আর লোড নিতে সক্ষম হলো না। জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো সে।

____

পৃথিবী গোল,বলা হয় এখানে সবাই সমান প্রাপ্য ভোগ করে নিজ কর্মগুণে। তবে সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সমান ক্ষমতা দিয়ে পাঠাননি। ক্ষমতার বৈষম্য আছে বলেই মানুষের বৈষম্য গড়ে ওঠে। পৃথিশা এই মূহুর্তে একটি কক্ষে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। জ্ঞান ফিরেছে কিছুসময় পূর্বেই। মাথায় এখন তার অনেক কিছু ঘুরছে। মণিদীপার খবর বাহিরে গেলো কীভাবে? তারা এত বিখ্যাত কেউ নয় যে তাদের নিয়ে নিউজ করতে হবে। তার এই মূহুর্তে একজনের কথাই মাথায় আসছে সেই এমপি। হুমকির কারনে হয়তবা তার আত্মসম্মানে লেগেছে কিংবা ভাগ্নীর কর্মকাণ্ড ঢাকার জন্য হয়তবা তিনি এ কাজ করেছেন। তাকে ছাড়া আর কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না পৃথিশার্ মণিদীপা যে রাস্তায় পড়ে ছিলো তা ছিল সরু চিপা গলি।সেখানে সচরাচর কেউ আসে না। তাই অন্য কারো দেখার সুযোগ নেই। দেখলে আরও আগেই ঘটনা ছড়িয়ে পড়তো। পৃথিশা ভাবনার মাঝে খেয়ালই করেনি কখন নার্স এসেছে। তার হাতে ব্রেকফাস্ট। পৃথিশা জানিয়ে দিলো, সে এখন কিছু খেতে পারবে না

– আপনার শরীরে কোন স্ট্রেন্থ নেই। কাল পড়ে গেছিলেন। ইমিউনিটি সিস্টেম লো হয়ে গেছে। স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছিলো। ভয় পায়িয়ে দিয়েছিলেন আমাদের, আপনার জন্য স্যার সারারাত এখানে ছিলেন। এখন প্লিজ খেয়ে নিন। নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে যাবেন

পৃথিশা জবাব দিলো না। হাত বাড়িয়ে জুসের গ্লাসটা হাতে নিলো। নার্স তা দেখে চলে গেলো। আবারও ভাবনায় ডুবে গেলো পৃথিশা। তবে তাকে বেশি ভাবার সুযোগ না দিয়েই আরেকটি নার্স তড়িঘড়ি করে এসে বলল,

– মিস মণিদীপা আপনার পেশেন্ট?
– জি..
– তাড়াতাড়ি আসুন,ওনার জ্ঞান ফিরেছে।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে