সুবাসিত মল্লিকা পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
191

#সুবাসিত_মল্লিকা
কলমে: মম সাহা

অন্তিম পর্ব:

১০.

বাহিরে ঝড়ো হাওয়া উথাল-পাতাল বইছে। গত দু’দিন যাবত এত বৃষ্টি কেন হচ্ছে তার হদিস পাচ্ছে না কেউ।
বেলির শরীরটা দুর্বল। কাল মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পর তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তারপর মুনিব বাড়ি নিয়ে আসে তাকে। কিন্তু শরীরের দুর্বলতা কাটছে না কিছুতেই বেলির। মাথা ঘুরছে অনবরত। প্রেশারও বাড়া। ডাক্তার বলেছেন অতিরিক্ত প্রেশার বেড়ে যাওয়ার কারণে এমন মাথা ঘুরছে।

বেলি আজ স্নান করে বাথরুমেই কাপড় রেখে এসেছে। ধোয়ার মতন শক্তি তার ভেতরে অবশিষ্ট ছিল না। মুনিব সে-ই কাপড় গুলো অব্দি ধুয়ে দিয়েছে। বেলি বারণ করা স্বত্বেও শুনেনি সে।
এখন বিছানায় শুয়ে আছে বেলি। মুনিব বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। কারো সাথে ফোনে কথা বলছে হয়তো। বেলি তাকে একবার সাবধান করতে ডাকল,
‘বৃষ্টির ছিঁটা আসতাছে না শইলে? ঘরে আইসা কথা বলেন। ভিইজ্জা যাইবেন তো!’

মুনিব ফোন কানে রেখেই বারান্দার দরজা দিয়ে উঁকি মেরে হাসল। ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে বলল, ‘আসছি।’

বেলিও হাসির বিপরীতে হাসি বিনিময় করল। বৃষ্টির থামা-থামির নাম নেই। মুনিব কথা বলে ঘরে এলো। বেলির পাশ ঘেঁষেই বসল। স্নেহ ভরা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বেলি উষ্ণ আদরে চোখ বন্ধ করে রাখল। অনেকটা নীরবতায় সময় কাটার পর মুনিব হুট করে বলল,
‘উড়নচন্ডী, একটা কথা বলবে?’

বেলি চোখ মেলল। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘কী?’
‘তুমি কি বিয়ের আগে কাউকে পছন্দ করতে?’

মুনিবের প্রশ্নে থতমত খেলো বেলি। গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে বলল,
‘ক্যান? এমন কথা জিজ্ঞাসা করেন ক্যান?’

‘না, হতেই তো পারে বিয়ের আগে তুমি কাউকে পছন্দ করতে।’

‘এমন কথা কেন কইতাছেন সেডা তো বলবেন!’

‘এই যে তুমি আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকো সেজন্য বললাম।’

এবার বেলির উদ্দীপনা নিভে গেল। মুনিবের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো সে। ঠোঁট কাঁপলো কথা বলতে গিয়ে। অস্ফুটস্বরে বলল,
‘সেটা তো..’

কথা শেষ হতে দিল না প্রকৃতি। তার আগেই নিচ থেকে জামাল ভূঁইয়ার ডাক ভেসে এলো। ভয়ঙ্কর রকমের চেঁচিয়ে ডাকছেন ভদ্রলোক। বাড়িতে ডাকাত পড়লেও মানুষ এত জোরে জোরে চিৎকার করে না যতটা জামাল ভূঁইয়া করছেন।
চমকে উঠল মুনিব, বেলি দু’জনেই। বেলি উঠতে নিলে মুনিব তাকে উঠতে নিষেধ করে। নিজেই ছুটন্ত পায়ে ঘরের বাহিরে চলে যায়।

ড্রয়িং রুম জুড়ে তুমুল নিস্তব্ধতা। জামাল ভূঁইয়ার হুংকারের পর সবটাই শুনশান, নীরব। মুনিবের কপালে তিন ভাঁজ। অবাক স্বরে বলল,
‘চিৎকার করে ডাকলেন কেন? কী হয়েছে!’

জামাল ভূঁইয়া যেন রাগে অন্ধ। কাঁপছেন অনবরত। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গিয়েছে রীতিমতো। নিজের বাবার এমন ভয়ঙ্কর পরিবর্তন দেখে খটকা লাগলো মুনিবের। সে দ্রুত পায়ে বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে বাবার বাহু ধরে দাঁড়ালো। উত্তেজিত বাবাকে শান্ত করতে করতে বলল,
‘কী হয়েছে আব্বু? এমন ভাবে রাগে কাঁপছেন কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে?’

জামাল ভূঁইয়ার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না অতিরিক্ত উত্তেজনায়। কেমন ভয়ঙ্কর কম্পন তার শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়েছে। মুনিব বিচলিত হলো,
‘বলবেন তো, আব্বু, হয়েছেটা কী?’
মুক্তা ভূঁইয়াও বিচলিত হলেন। স্বামীকে সামলানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। মুক্তা ভূঁইয়া ভেবে পেলেন না মানুষটা কোন কারণে এতটা রেগেছে।
‘কী হইছে কইবা তো! এত রাগছো কার উপর!’

জামাল ভুঁইয়া হুঙ্কার ছেড়ে উঠলেন। যে হুঙ্কারে কেঁপে উঠল ভুঁইয়া বাড়ির আঙ্গিনা।

‘মুনিব, তোমার বউ কই ডাকো হেরে। বিশ্বাসঘাতকের এই দুনিয়ায় কোনো জায়গা নাই। ডাকো বলতাছি।’

ভ্রু কুঞ্চিত করল মুনিব। বাবার বাহু থেকে হাত সরিয়ে বলল, ‘কী বলছেন! বেলিকে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।’

‘সম্মান! কারে সম্মান দিতে কও? যারে ঘরে তুলছো বুইঝা তুলছিলা তো? সে তোমার পিঠ পিছে কী কী করছে?’

ঘটনার স্রোত এভাবে অন্য ধারায় বইবে কে জানতো? বেলি নিজেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। দূরে দাঁড়িয়ে আছে চামেলি। বেলি শ্বশুরকে কাঁপতে দেখে ছুটে এলো। কিন্তু বেশি কাছে আসতে পারলো না। তার আগেই জামাল ভূঁইয়ার চিৎকার থামিয়ে দিল তাকে।

‘খবরদার তুমি এইখানে আসবা না। আমারে ধরবা না। একটা নষ্ট মেয়েমানুষ।’

জামাল ভুঁইয়ার কথা গুলো বড়ো অনাকাঙ্খিত ছিল। মুনিব বাবাকে ছেড়ে দিল। রেগে গিয়ে বলল,
‘আব্বু, মুখ সামলে কথা বলেন। বেলি আমার বিয়ে করা স্ত্রী।’

‘স্ত্রী না ইস্ত্রি জিগাও। যারে এত সোহাগ দিলা, বাপের কথা অমান্য কইরা বিয়া করলা সে কি করছে জানো?’

বাবার এই রাগ অযৌক্তিক কিংবা মিথ্যে লাগছিল না। কিন্তু বেলির সাথে বাবার বলা সম্বোধন গুলোও মানাচ্ছিল না। মুনিব পড়ে গেলে সংশয়ে। সংকোচ মাখা কন্ঠে বলল, ‘কী করছে ও?’

জামাল ভূঁইয়া সেন্টার টেবিলের উপর থেকে একটি রিপোর্ট নিয়ে এগিয়ে ধরল মুনিবের দিকে। তাচ্ছিল্য করে বলল,
‘তোমার বউ পোয়াতি কিন্তু সে বাচ্চার বাপ তুমি নও।’

আকাশে মেঘ করে ঘন গর্জন দিয়ে উঠলেও এত জোরে বুকের ভিতরে গিয়ে কম্পন সৃষ্টি করে না যতটা না এখন সৃষ্টি করল। মুক্তা ভূঁইয়া মুখ চেপে ধরলেন বিস্ময়ে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা চামেলিরও চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। চমকে উঠলো বেলি,
‘কী, কী কন এডি!’

‘আমি কী কই তুমি জানো না? এত বড় বেঈমান আমার বাড়িতে আছে এটা ভাবলেওতো আমার মাথায় রক্ত উঠে যাইতাছে।’

মুনিব হেসে দিল। বোকা বোকা কণ্ঠে বলল,
‘আব্বু, আপনিও না, এমন মজা কেউ করে?’

মুনিবের চোখে মুখে অবিশ্বাস। সে যেন বাবার কথাটা মানতেই পারছে না। জামাল ভুঁইয়ার চোখ টলমল করে উঠল। ছেলেকে চরম সত্যিটা জানাতেও তার কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। তবুও বলল,
‘তোমার বউ পোয়াতি। তিন মাস তার বাচ্চার বয়স। অথচ তোমাগো বিয়া হইছে আইজ তেইশ দিন। এই হিসাব বুঝাও আমারে।’

মুনিব বাবার মুখের কথা বিশ্বাস করল না যেন। রিপোর্টের কাগজটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজেই দেখতে লাগল। উদ্ভ্রান্তের মতন কতক্ষণ চোখ ঘুরালো সেই কাগজটায়। বেলিও এগিয়ে গিয়ে মুনিবের পাশে দাঁড়াল। কণ্ঠে ভয় তার। আতঙ্ক নিয়ে বার বার বলল,
‘কী দেহেন? সত্যি করে কন তো আব্বা যা কইছে তা সত্যি! আপনি বিশ্বাস করেন?’

মুনিব মৃত চোখ নিয়ে রিপোর্টটার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুই উত্তরে বলল না।
মুক্তা ভুঁইয়া ছুটে এলেন ছেলের কাছে। কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
‘আব্বা তোর বাপ যা কইতাছে তা কি ঠিক? আমার একটুও বিশ্বাস হয়না। একটু কস না। তোর বাপ ভুল দেখছে তাই না।’

মুনিব ধপ করে সোফায় বসে পড়ল। রিপোর্ট গুলো হাতের মুঠোতেই রইল। ভগ্ন কণ্ঠে বলল, ‘ঠিক।’

বাহিরে তুমুল ঝড়। ভুঁইয়া বাড়ির ভেতরে জটলা। মুনিবের ফুপি, ফুপা, চাচারা, খালারা সব দিয়ে ঘর ভরে গিয়েছে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পুরো বাড়িতে মানুষে গমগম করছে। বেলির বাবা-মাও এসেছেন। কাঠগড়ায় আসামি বেলি। মুনিব বিধ্বস্ত প্রায়।

বেলির বাবা করজোড়ে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমার মাইয়া এমন কহনো করতে পারে না। বেয়াইসাব আপনি ভুল কইতাছেন।’

জামাল ভূঁইয়া তেড়ে এলেন। করিম হাসানের বুকে ধাক্কা মেরে বললেন, ‘এই ডাক্তারি রিপোর্ট ভুল? আপনের মাইয়ারে বাড়িতে তুলার পর থেইকা চুরি হইলো, পরপুরুষ ঢুকল কত কী হইলো! আমরা দোষ দিলাম আরেকজনরে। কিন্তু আজ সত্য জলের মতন পরিষ্কার।’

পুরো ঘটনাটায় যে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন সে হলো মুনিবের ফুপি তানু ভূঁইয়া। তিনি তো সোফায় পা দুলাতে দুলাতে মুখ ভেংচিয়ে বললেন,
‘প্রথম থেইক্যাই এই মাইয়ারে আমার সন্দেহ হইতো। কী চোপা মাইয়ার! আইজ হইলো তো শান্তি?’

বেলির মা পা ধরলেন জামাল ভূঁইয়ার। বেলির বাবাও তা-ই করলেন। কিন্তু বেলি নিরুত্তর।
জামাল ভূঁইয়া এমন নিরুত্তর বেলিকে দেখে আর খ্যাপে গেলেন, ‘কার লাইগ্যা আপনারা পা ধরেন? ঐ দেখেন আপনাগো মাইয়া কী সুন্দর ঐ হানে দাঁড়ায় আছে। দেখছেন? সত্য চাপা দিতে পারবো না তাই চুপ কইরা আছে। এই বেইমানির শাস্তি পাইতেই হইবো। আপনাগো মুখে চুন কালি লাগাইয়া এ বাড়ি থেইকা বের করুম নইলে আমার নাম জামাল ভূঁইয়া না।’

জামাল ভূঁইয়ার এমন রাগে আঁতকে উঠল সবাই। তানু ভূঁইয়ার স্বামী নিষেধ করতে এলে রামধমক দিয়ে থামিয়ে দেন তিনি। বেলির মায়ের হাউমাউ করা কান্না আরও বাড়তে থাকে। ছুটে গিয়ে মেয়ের গালে অনবরত চ ড় দিতে দিতে বলে,
‘মুখ পুড়ি তুই ক সব মিথ্যা। সবাইরে ক এই একটা কথাও সত্যি না।’

মায়ের চিৎকার মা করতেই থাকে। বেলি এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে মুনিবের দিকে। তারপর সর্বহারা অভাগিনীর মতন প্রাণহীন পায়ে মুনিবের কাছে এগিয়ে যায়। আসন পেতে বসে মুনিবের পায়ের কাছটায়। এক বুক আশা নিয়ে মুনিবকে শুধায়,
‘আপনে তো আমারে বিশ্বাস করেন তাই না? আপনে তো জানেন আমি কেমন? বিশ্বাস করেন তো না-কি?’

বিধ্বস্ত মুনিব চোখ তুলে অব্দি তাকায় না। কাঁদতে কাঁদতে চোখের কোণা লাল হয়ে গিয়েছে ছেলেটার। সে দু’হাতের আঁজলে মুখ চেপে ধরে অস্ফুটস্বরে বলল, ‘আমি তোমায় ভালোবেসে ছিলাম, মল্লিকা। তুমি এভাবে ঠকাতে পারলা?’

এরপর পরিবেশ নিস্তব্ধ। কেবল মুনিবের হু হু কান্নার শব্দ গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে সকলের। বেলি হাসে। বিড়বিড় করে বলে,
‘কে কারে ঠকাইলো তার বিচার না-হয় গোপনে হইবো।’

এরপর ভাগ্য বিধাতার ইশারায় সব খারাপটা হয় বেলির পরিবারের সাথে। বেলির মাথার চুল গুলো ফেলে দিয়ে মুখে কালি মাখিয়ে এই ভর সন্ধ্যে বেলা পুরো গ্রামে ঘুরানো হয়। বেলিও ঘুরে। মুনিব হাজার বার বাবাকে নিষেধ করে কিন্তু জামাল ভূঁইয়া সে-ই নিষেধ মানলে তো! বেলির বাবা-মায়ের আকুতিও শুনে না কেউ। পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে এরপর গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয় মেয়েটাকে। ও একটা বার ফিরেও তাকায় না। একটা বার নিজের পক্ষে কিচ্ছু বলে না। হয়তো বুঝে গিয়েছে ওর ভাগ্য আজ ওর বিপক্ষে।
মুনিব মাথা ঘুরে পড়ে যায় শেষমেশ। এত কঠোরতা সে মানতে পারে না হয়তো!

সপ্তাহ খানিক পর……

রাতের আকাশে ভীষণ জোরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়িই বৃষ্টি আরম্ভ হবে হয়তো!
জানালার কাছের টেবিলটায় বসে আছে মুনিব। উদাস দু’টি চোখ। হুট করে মাঝ রাতে তার দরজা খোলার শব্দ হতেই সে চমকে দরজার দিকে তাকায়। চামেলি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে। মুনিব ভাবিকে দেখে কিছুটা অবাক স্বরে বলে,
‘আপনি এখানে? এখানে কী আপনার?’

চামেলি দরজাটার ছিটকিনি টেনে দেয়। কামুক হাসি নিয়ে এগিয়ে আসে মুনিবের দিকে। লাল লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট গুলোকে বাঁকিয়ে ইশারা করে। দেহের অঙ্গভঙ্গি গুরুতর অশ্লীল।
মুনিব আবার বলে, ‘কী চান এখানে আপনি? কী জন্য আসছেন?’

চামেলি এবার মুনিবের দিকে এগিয়ে গিয়ে মুনিবের গলা জড়িয়ে ধরল। মুনিবের ঠোঁটে ছোটো চুম্বন এঁকে বলল, ‘কী আর চাওয়ার আছে আমার? তোমারে চাই। একদম কাছাকাছি চাই। কতদিন হইলো দেহটা আমার উপোস কইরা শুকাইতাছে। আর কতদিন দূরে রাখবা আমারে?’

মুনিবের কুঁচকানো ভ্রু অস্বাভাবিক ভাবে শিথিল হয়ে যায়। তার পুরুষালি হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে চামেলির কোমড়। খুব নিকটে এসে, ফিসফিস করে বলে,
‘আর এক মিনিটেও দূরে রাখবো না। আগে বলো কেউ সজাগ নেই তো?’

‘এত কাঁচা কাম আমি করমু? তোমার আমারে এতই কাঁচা লাগে? এত গুলা স্বর্ণের গয়না তোমার মার ঘর থেইকা নিয়া আমার ঘরে রাখছি কেউ টের পাইছে? পায় নাই। এই চামেলিরে ধরা অসম্ভব।’

চামেলির কথায় মুনিব হাসে। চামেলির গালে চপাস করে চুমু খেয়ে বলে,
‘মেয়েটা প্রথম দিন এসেই বেশি সন্দেহ সন্দেহ করেছে। ভাবছিলাম সরল-সোজা বউ আনবো কিছু বুঝব না । কিন্তু..তোমাকে নিয়ে সন্দেহ করাটাই তো সর্বনাশ। সেজন্য তাড়াতাড়ি বিদায় হতে হলো। তিন মাসের বাচ্চা পেটে এমন একটা ডাক্তারি রিপোর্ট না হলে বিদায় করতে সমস্যা হচ্ছিল। এত ভাবে চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছিল না। এক ছেলেকে দিয়ে চুড়ি দেওয়ালাম, বাড়িতে ঢুকিয়ে মারার ভয় দেখালাম আরেকটাকে দিয়ে তবুও মেয়েটা যাওয়ার নাম নিল না। তাই এভাবেই বিদায় করতে হলো!’

মুনিবের কথায় মুখ ভেংচালো চামেলি। ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘তার জন্য এখন দরদ লাগে না-কি গো?’

‘আমার তো সব দরদ তোমার জন্যই।’ কথাটা বলে দু’জন দু’জনের খুব নিকটে চলে এলো। সারা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলো অথচ তাদের এই অনৈতিক নৈকট্যের ভাব কমলো না।
দূর আকাশ বিদ্যুৎ চমকালো আবার। সে রুপোলী আলোয় ভুঁইয়া বাড়ির চন্দ্রমল্লিকার পাড়ে বসা বেলির কালো শরীরটা দেখা গেলো। চকচক করে উঠল তার হাতে থাকা ধারালো ছু রিটা। খুব শান দিয়ে নিয়ে এসেছে মেয়েটা।
ছু রিটার দিকে তাকিয়ে হাসল বেলি। বিড়বিড় করে বলল, ‘বেঈমানির শাস্তি কেমন হয় আপনের বাপ তা জানে না। কাইল যখন আপনাগোরে জড়াজড়ি কইরা ম ই রা পইড়া থাকতে দেখবো তখন বুঝবো শাস্তি কী।’

তারপর গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে দিঘির মাঝে পা ডুবিয়ে দিল মেয়েটা। বাতাসের সাথে ভেসে আসতে লাগল বাগানের মল্লিকা ফুলের ঘ্রাণ। তার সাথে ভেসে এলো মানুষ মল্লিকার খিলখিলিয়ে হাসি। মানুষ ভুলেই গেছে, মেয়ে ফুলের সুবাসকে দমানো যে কঠিন!

[সমাপ্ত]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে