#ধারাবাহিক গল্প
#সুচরিতা
পর্ব-চার
মাহবুবা বিথী
সুচরিতার ননস চলে যাবার পর শাশুড়ীমা রান্না ঘরে এসে সুচরিতাকে দেখে বললেন,
——এতো যে স্বামীর প্রতি পিরিত আজ বিয়ের তিন বছর হলো একটা বাচ্চা পয়দা করতে পারলে না। আমার ছেলেকে যদি খাই মেটাতে আসতেই বলেছিলে তা এতো মিথ্যা বলার দরকার ছিলো না। আর এখনকার মেয়েদের ও লাজশরম নাই। আমরাও স্বামীর ঘর করেছি। নির্লজ্জ তো ছিলাম না। একান্নবর্তী পরিবারে অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়।
একথাগুলো বলে উনি চলে গেলেন।
সুচরিতা ডিনারের জন্য টেবিলে ভাত বেড়ে দিচ্ছিলো। শাশুড়ী মায়ের কথাগুলো শুনে ও তব্দা খেয়ে গেল। কদিন আগেও যে শাশুড়ী মা ওকে চোখে হারাতো কি এমন ঘটনা ঘটলো যে এখন আর ওকে সহ্য করতে পারেন না। চোখের কোণটা সিক্ত হয়ে গেল।
পরদিন সুচরিতা একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো। রাতে মনে হয় জ্বর এসেছে। শরীর মন দুই খারাপ ছিলো। হিমেলের জন্য সুচরিতার খারাপ লেগেছে। ও কতো খুশি মনে আসলো সুচরিতার সাথে সুন্দর সময় কাটাবে আর সুচরিতা জ্বর বাঁধিয়ে বসলো। সারা রাত ঘুমিয়ে কাটালো। আর হিমেল বেচারা ওর মাথায় জলপট্টি দিলো। ওষুধ খাওয়ালো। ভোরের দিকে জ্বর ছেড়ে যাওয়াতে বেচারা ঘুমিয়েছে। ঘুমন্ত হিমেলের মুখটা দেখে সুচরিতার খুব মায়া লাগছে। ভালোবাসাগুলো মনে হয় এভাবে মায়ায় পরিণত হয়। হিমেলের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে সুচরিতা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে চা বানাতে কিচেনে গেল। কিচেনে ওর মেজ জা সবজি কুটছে। ওকে দেখে বললো,
——স্বামীর সোহাগ খেয়ে ঘুম ভাঙ্গতে দেরী হলো বুঝি।
——না,গো ভাবি সারা রাত জ্বরের ঘোরে পড়েছিলাম। বরং আপনার ছোটোভাইকে আরোও আমার সেবা করতে হলো।
ওর মেজ জা কারিমা সুচরিতার গলার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ও একটু অবাক হলো। তারপর কিছু না বলে কিচেন থেকে চলে গেল। মেজ জা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে শাশুড়ী মা এসে সুচরিতাকে বললো,
——তুমি গোসল করবে তার রান্না ঘরের কাজ শুরু করবে।
——মা আমার সারা রাত জ্বর ছিলো।
——ওসব বুঝিনা বাপু। আমার রান্না ঘরে ঢুকতে হলে পাকপবিত্র হয়ে ঢুকতে হবে।
এমনসময় ওর বড় জা এসে বললো,
—–তুমি গোসলে যাও আমি সবাইকে চা বানিয়ে দিচ্ছি।
কেন ওর সাথে এমন হচ্ছে সুচরিতা বুঝতে পারছে না। শাশুড়ীর হুকুম অমান্য করার উপায় নেই। আজ শনিবার। বাসায় এসব নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি হোক সুচরিতা নিজেও চায় না। ভাসুর দু,জন হিমেল বাসায় আছে। ওদিকে হিমেলও ঘুম থেকে উঠে ড্রইং রুমে ওর ভাইদের সাথে বসে গল্প করছে। ওকে ডেকে যে বলবে মাকে বুঝাতে সে উপায়ও নাই।ও যদি এখন দেরী করে শাশুড়ী মায়ের রাগও চরমে উঠবে। অগত্যা ওয়াশ রুমে ঢুকে সুচরিতা গোসল করে নিলো। গোসল করে বের হওয়ার সময় দেখে বড় জা সখিনা ওর বিছানার এক কোণায় বসে আছে। ওকে দেখে বললো,
—–মা তোমাকে চাদরটা পাল্টাতে বলেছে।
——কালকেই তো পাল্টেছি।
——না, মানে কারিমা মাকে বলেছে তোমার চাদরে নাকি সঙ্গমের দাগ লেগে আছে। আর তোমার লাভ বাইটগুলো ঢেকে রেখো। হাজারো হোক বাড়িতে তো মুরুব্বিরাও থাকেন।
এ কথা বলে ওর বড় জা চলে গেল।
সুচরিতার কানটা গরম হয়ে গেল। ও তাড়াতাড়ি আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো গলার কাছে একটা লাল দাগ রয়েছে। এইজন্য মেজ ভাবি ওভাবে তখন ওর গলার দিকে তাকিয়েছিলো। মানুষের মন কতটা জঘন্য হলে এ ধরনের কথা মুখ দিয়ে বের হয়। ওর কি কোনো প্রাইভেসি থাকতে পারে না?..ও জানে ওর মেজজা খুব নিচু মনের মানুষ। তবে তার ধরণটা যে এতোটা নিচু সেটা সুচরিতার জানা ছিলো না। যাইহোক সুচরিতা বিছানার চাদর পাল্টানোর সময় হিমেল এসে ওকে বললো,
—–তুমি এই জ্বর শরীরে গোসল করতে গেলে কেন?
——এমনি।
—–চাদর পাল্টাচ্ছো কেন?
—–মেজ ভাবি বলেছে আমাদের চাদরে নাকি সঙ্গমের দাগ লেগে আছে।
—–উনি কি ম্যাগনিফাই গ্লাস দিয়ে চেক করেছেন। কি নোংরা মানুষের মন।
এ কথা বলে হিমেল সুচরিতার কাছে আলমারীর চাবিটা চাইলো। সুচরিতা চাবিটা হিমেলের হাতে দিয়ে বিছানা গোছাতে লাগলো। হিমেল আলমারী থেকে দশ হাজার টাকা বার করে চাবিটা সুচরিতার হাতে দিলো। সুচরিতা টাকাগুলো দেখে হিমেল কে জিজ্ঞাসা করলো,
—–তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?
——না, বাড়ির বিদ্যুত গ্যাস আর পানির বিল দেওয়ার জন্য টাকাগুলো মেজ ভাইকে দিবো।
এমন সময় সুচরিতা মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলো। হিমেল তাড়াতাড়ি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। সে সময় ওর মেজ জা হিমেলকে ডাকতে ঘরে ঢুকে এই অবস্থা দেখে বললো,
—–ছোটো ভাই তোমরা দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে তো এসব করতে পারো। তোমাদের না হয় লজ্জাশরম নেই কিন্তু আমাদের তো আছে।
হিমেল রেগে ধমক দিয়ে বললো,
—–চুপ করো ভাবি। যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না।
কারিমা একটি থতমত খেয়ে গেল। হিমেল সুচরিতাকে আলতো করে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বললো,
—-জ্বর শরীরে তোমাকে কে গোসল করতে বলেছে?
—–খারাপ লাগছিলো বলে আমি নিজেই করেছি।
কারিমা মুখ ভার করে হিমেলকে বললো,
—–তোমার ভাই তোমাকে ডাকছে?
—–ভাইজানকে অপেক্ষা করতে বলো আমি আসছি।
কারিমা মুখ ভার করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
হিমেলের মেজাজ খারাপ দেখে ওর মা তাড়াতাড়ি ওদের ঘরে চলে আসলো। হিমেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
——কি হয়েছে এতো মেজাজ খারাপ করছিস কেন?
—–তোমার ছোটো বউমার কান্ড দেখো জ্বর অবস্থায় গোসল করে এখুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলো।
——ও তো সকালে আমায় কিছু বললো না।
—–মা তুমি এতোদিনেও বুঝতে পারো নাই ও তো খুব চাপা স্বভাবের।
——ঠিক আছে ওর শরীর দেখে মনে হচ্ছে খুব দুর্বল। আমি ওর জন্য দুধ নিয়ে আসছি।
শাশুড়ী মা চলে যাওয়ার পর সুচরিতা হিমেলকে বললো,
—–এতো রাগ করার কি আছে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে শরীর এমনিতেই সামলে উঠবে।
—–তুমি আর কোনো কথা বলবে না। আমি ডাক্তার ডেকে আনছি।
হিমেল ওকে শুয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ওর মেজ ভাইয়ের হাতে টাকাগুলো তুলে দিলো। উনি হিমেলের চেহারা দেখে বললেন,
——এতো টেনশন করিস না। ডাক্তার ডেকে এনে দেখিয়ে নে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওর বড় ভাই আবার হোমিওপ্যাথি করে। তাই উনি হিমেল ডেকে বললেন,
—-আমার কাছ থেকে দুই পুরিয়া খাইয়ে দে জ্বর বাপ বাপ করে চলে যাবে।
—–না,আমি ডাক্তার ডেকে আনছি। ও একটু দুর্বল হয়ে গেছে।
হিমেল ডাক্তার নিয়ে এসে সুচরিতাকে দেখিয়ে নিলো। এতে যে সুখবরটা ও জানতে পারলো এক লহমায় ওর সব রাগ পানি হয়ে গেল। ও বাবা হতে চলেছে। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে ফেরার পথে পাঁচকেজি মিষ্টি কিনে ঘরে ফিরলো। ওর মা দেখে বললো,
—–কিরে অসময়ে এতো মিষ্টি কেন কিনতে গেলি?
——মা, তুমি আবারো দাদী হচ্ছো।
—–তাই নাকি?
—–হুম
হিমেল মিষ্টির প্যাকেট খুলে ওর ভাস্তে রাজনকে ডেকে বললো,
—–আয় বাপ হওয়ার মিষ্টি খাই।
—–কে বাপ হচ্ছে চাচা আমি না তুমি?
—–তুই তো বাপ হয়ে গেছিস। আমি কেবল হচ্ছি।
—–আমি কোথায় বাপ হলাম।
—–আমাদের সবার তুই বাপ।
এ কথা বলে চাচা ভাতিজা হেসে উঠলো।
হিমেল ওর ভাবিদের ডেকে বাড়ির সবাইকে মিষ্টি দি।।তে বলে রুমে চলে এসে দেখলো সুচরিতা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। ওকে আর ঘুম থেকে ডেকে তুললো না। ও ময়লা কাপড়গুলো মেশিনে দিয়ে গোসল করতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ওদিকে সুচরিতার মেজ জা এই খবরে খুশি হতে পারলো না। কারণ তার তো মেয়ে হয়েছে। কিন্তু বড় জায়ের ছেলে হওয়াতে ও এবাড়িতে বেশী আদর পায়। এরপর যদি সুচরিতারও ছেলে হয় তাহলে ওর মেয়ের কপালে কোনো আদর যত্নই জুটবে না। ও এক গ্লাস আনারসের জুস বানিয়ে সুচরিতার ঘরে নিয়ে গেল। ঐ সময় হিমেল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে ওর মেজভাবি সুচরিতার জন্য জুস বানিয়ে এনেছে। ওর তখন মেজ ভাবির সাথে ও রকম খারাপ ব্যবহার করাতে একটু খারাপ লাগলো। তাই গলার স্বরটা নরম করে বললো,
—–ভাবি তুমি কিছু মনে করো না। আসলে সুচরিতা মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়াতে খুব ভয় পেয়েছিলাম।
—–না,ভাই কিছু মনে করিনি। ওর ঘুম ভাঙ্গলে জুসটা খাইয়ে দিও।( আর মনে মনে বললো, তুমি জানোই না আমি কি জিনিস)
চলবে
#ধারাবাহিক গল্প
#সুচরিতা
পর্ব-পাঁচ
মাহবুবা বিথী
সুচরিতার ঘুম ভাঙ্গলো দুুপুর দুইটার সময়। ঘুম ভেঙ্গে দেখে হিমেল ওর মাথার কাছে বসে আছে। হিমেল ওকে চোখ মেলতে দেখে বললো,
——এখন কেমন লাগছে?
——বেশ ভালো।
——বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসো। একসাথে লাঞ্চ করবো।
সুচরিতা আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে বসলো। হিমেল ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
—–আল্লাহপাক আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার দান করেছেন। আমি ভীষণ খুশী। এতোটাই খুশী যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসো।
সুচরিতা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে যখনি রুম থেকে বের হবে সে সময় ওর মেজ জা এসে বললো,
——তুমি উঠেছো? জুসটা খেয়ে নাও।
ঘরে ঢুকে জুসের গ্লাসটা যখনি সুচরিতার দিকে বাড়িয়ে দিতে চায় অমনি হিমেল বলে,
—-ভাবি খালি পেটে জুসটা এখন ওর খাওয়ার দরকার নেই। পেটে গ্যাস করবে। তুমি বরং জুসটা নিয়ে যাও। ও বরং ভালো মতো লাঞ্চ করুক।
—–ঠিক আছে ভাই।
প্রচন্ড বিরক্তি সহকারে কারিমা জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে কিচেনে চলে গেল। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো যখনি ও সুচরিতাকে ঘায়েল করতে চায় তখনি মেয়েটা কিভাবে যেন পার পেয়ে যায়। তবে কারিমাও হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। শাশুড়ীমা সুচরিতার পছন্দের খাবারগুলো রান্না করেছেন। কলার মোচার কাবাব ভুনা গরুর মাংস পাটশাক ভাজি সুটকি ভর্তা সব উনি নিজের হাতে রান্না করেছেন। সুচরিতার উদ্দেশ্যে কারিমা বললো,
—–সুচরিতা কি ভাগ্য তোমার! অনেক ভাগ্য করে এরকম শাশুড়ী কপালে জোটে। তুমি ছোটো বউ বলে মা তোমাকে চোখে হারায়। আজকে সব রান্না মা তোমার জন্য নিজের হাতে রান্না করেছেন।
হিমেল খুশীতে গদগদ হয়ে বললো,
——আমার মায়ের কোনো তুলনা নাই। আমার মায়ের রান্নার স্বাদতো অমৃতের মতো।
সুচরিতার বড় জা নিজের স্বামীর কৃতিত্ব জাহির করতে বললো,
—–ছোটো ভাই আজকের বাজার কিন্তু তোমার ভাই করেছে। তোমার ভাই আবার বাজারটা ভালো করে।
কারিমাও ওর স্বামীর গুনকীর্তণ করতে গিয়ে বললো,
——ছোটোভাই তোমার ভাই কিন্তু সুচরিতার জন্য অনেক রকম ফল কিনে এনেছে। এখন তো আমের সময়। চাপাইনবাবগঞ্জে বাগান থেকে আমের অর্ডার করেছে।
সুচরিতার তিন বছরে এ বাড়ির সবাইকে ওর চেনা হয়েছে। তাই এদের আদিখ্যেতায় সুচরিতার মন এখন আর গলে না। লাঞ্চ করে সুচরিতা রুমে চলে আসলো। ওর সাথে সাথে হিমেলও রুমে চলে আসলো। বিছানায় বসতে না বসতে সুচরিতার শরীরটা গুলিয়ে উঠলো। দৌড়ে ওয়াশরুমে যেতে গিয়ে বাথরুমের দরজার সামনে দুপুরে যা খেয়েছিলো সব উগড়ে দিলো। হিমেল টেবিলে রাখা পানির বোতলের মুখটা খুলে ওর হাতে দিয়ে বললো,
—–তুমি মুখ হাত ধুয়ে কুলি করে বিছানায় এসে বসো। আমি পরিস্কার করছি।
—–সমস্যা নাই। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে পরিস্কার করে ফেলতে পারবো।
—–যা বলছি তাই করো সুচরিতা। আবার মাথাটা ঘুরতে পারে।
সুচরিতা আর কথা বাড়ালো না। সুবোধ বালিকার মতো বিছানায় এসে বসলো। বমি হবে, মাঝে মাঝে মুড সুইং হবে, খাওয়ার রুচি থাকবে না, এসব কম্পিলিকেশনের কথা ডাক্তার হিমেলকে বলেছে। সুচরিতার জন্য ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। এক তো গতরাতে জ্বর গেল এখন আবার যা খেলো সব উগড়ে দিলো। হিমেল ওয়াশরুমটা ডেটলের পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে দিলো। বমিগুলো বেলচা দিয়ে তুলে প্যানে ফেলে দিলো। তারপর কিচেনে গিয়ে কারিমাকে বললো,
——ভাবি সুচরিতা বমি করে সব উগড়ে দিলো। বমির সাথে অনেক পানিও বের হয়েছে। ওকে একটু জুস বানিয়ে দিবে?
——তুমি ঘরে গিয়ে বসো আমি এখুনি জুস বানিয়ে আনছি।
খুশীতে ডগমগ হয়ে কারিমা জুস নিয়ে সুচরিতার ঘরে গেল। ও ভাবলো এবার রেখে আসবো না দাঁড়িয়ে থেকে খাইয়ে আসবো। সুচরিতার বয়স কম বলে ওকে উপর থেকে যতটাই সহজ সরল লাগুক না কেন ওর ভিতরটা ঠিক ততটাই কঠিন। আপাতত ও বুঝে গেছে এবাড়িতে আপাতত ওর কোনো বন্ধু নেই। কারিমা জুসের গ্লাসটা সুচরিতার হাতে দিয়ে বললো,
—–এখনি খেয়ে নাও। দেখবে শরীরে জোর পাবে।
সুচরিতা জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক চুমুক খেয়ে ওর কেন যেন মনে হলো এটা আনারসের জুস। ও জুসটা না খেয়ে কারিমার দিকে তাকিয়ে বললো,
——ভাবি, এটা কি আনারসের জুস?
কারিমা কিছুই না জানার ভান করে বললো
——হুম, সমস্যা কি? আমি তো জেবাকে পেটে নিয়ে প্রচুর আনারসের জুস খেয়েছি।
——তুমি তোমার মেয়েকে পেটে নিয়ে আনারসের জুস খেয়েছো কি খাও নাই এটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই তবে আমাকে এই প্রাথমিক পর্যায়ে তোমার জুসটা দেওয়া উচিত হয় নাই। আমি যদি জুসটা পুরো খেয়ে ফেলতাম আল্লাহ না করুন আমার বাচ্চাটার ক্ষতি হতে পারতো। অনেক সময় বাচ্চা অ্যাবরশন হয়ে যায়।
——তুমি এটা আমায় কি বললে?তোমার কি মনে হয় আমি জেনে বুঝে তোমায় জুসটা এনে দিয়েছি যাতে তোমাদের বাচ্চাটা অ্যাবরশন হয়ে যায়? ছোটো ভাই আমাকে বললো,তুমি বমি করে দুর্বল হয়ে গিয়েছো তাই হাতের কাছে যে ফলটা পেয়েছি সেটাই তোমাকে জুস বানিয়ে দিয়েছি। দেখো ছোটো ভাই সুচরিতা যখন আমায় বিশ্বাস করে না তবে ওর কোনো কিছুর দায়িত্ব তুমি আমায় দিও না।
এ পৃথিবীতে যেচে কারো উপকার করতে নেই এ কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে সুচরিতার ঘর থেকে কারিমা বের হয়ে গেল। হিমেল কারিমার এই ছলচাতুরী বুঝতে পারলো না। ও ভাবলো ডাক্তার বলেছে এসময় সুচরিতার মুডসুইং হবে হঠাৎ করে রেগে যাবে এটা বুঝি তারই লক্ষণ। তাই সুচরিতাকে বললো,
—–সুচরিতা তোমার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। ভাবি কেন চাইবে আমাদের বাচ্চাটা অ্যাবরশন হয়ে যাক?
সুচরিতার আসলে এই বিষয়টা নিয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই হিমেলকে বললো,
——আমি এই বিষয়ে তোমার সাথে এখন কোনো কথা বলতে চাইছি না।
এদিকে কারিমা মন খারাপ করে শাশুড়ী মায়ের ঘরে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—–মা সুচরিতা বলেছে ও আমায় বিশ্বাস করে না। আমি চাই ওর বাচ্চাটা অ্যাবরশন হয়ে যাক সেজন্য ওকে আমি আনারসের জুস বানিয়ে দিয়েছি। কতোবড় অভিযোগ ও আমার প্রতি করলো। আপনি তো বলতেন ও খুব সহজ সরল ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। এখন তো দেখতে পাচ্ছি ভাজা মাছ তো ভালোই উল্টাতে জানে সে সাথে কাঁটাও ছাড়াতে জানে। দেখলেন, খাবার টেবিলে ও কি করলো? আপনি যে এতো কষ্ট করে ঘেমে নেয়ে ওর জন্য রান্না করলেন ভালো কি মন্দ একটা কথা মুখ দিয়ে বের করলো না।(বিষটাতো ঢাললাম এবার সুচরিতা তুমি বুঝবে কত ধানে কত চাল)
——আসলে একদম প্রাথমিক পর্যায়ে আনারসের জুস খাওয়া উচিত না। তুমি এটা জানতে না?
——জানলে কি আর ওকে দেই? মানুষের ভুল তো হতেই পারে। ছোটোভাই এসে বললো ও বমি করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই হাতের কাছে যে ফলটা পেয়েছি সেটা দিয়েই ওকে জুস বানিয়ে দিয়েছি।
——আচ্ছা ঠিক আছে। এই বিষয়টা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।
শাশুড়ী মা কারিমার কাছে সবটা শুনে সুচরিতার উপর রেগে থাকলো। মনে মনে ভাবলো আজ আর এটা নিয়ে উনি কিছু বলবেন না। কাল ছেলেরা অফিসে গেলে এর বোঝাপড়া উনি করবেন। এতো সাধনায় গড়া সংসার উনি ভাঙ্গতে দিবেন না।
এদিকে রাতে হিমেল খবর পেলো ওর নিটওয়্যারের ডিলটা হাতছাড়া হয়ে গেছে। যদিও এরকমই হওয়ার কথা ছিলো। ও টিংকুর সাথে আর বিজনেস করতে চায় না। এবার সিঙ্গাপুরের বাতাসে টিংকুর সম্পর্কে কিছু কথা শুনে এসেছে। ও নাকি নারী পাচারকারী আর মাদক চোরাচালানীর সাথে জড়িত। তাইতো চিঠি মারফত টিংকুর সাথে বিজনেস ও আর করবে না এটা জানিয়ে ও সিঙ্গাপুর থেকে চলে এসেছে। কিন্তু ও এটাও জানে বাসায় এই বিষয়টা নিয়ে ওর দু,ভাই ওকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে।
চলবে