সুখ সন্ধানী পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

0
916

#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-২৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★

এর পরের ঘটনাগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঘটেছে।ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের কাছে নোহার বিয়ে ঠিক হয়েছে।সেদিন রাফি আর নোহাকে জড়াজড়ি অবস্থায় হাবিব সাহেব দেখে নিয়েছিলেন।রাফিকে কিছু বলেননি কিন্তু নোহাকে সপাট চড় মেরে গালে দাগ তুলে ফেলেছেন।রাফি আটকাতে গেলে হাবিব সাহেব উত্তেজিত হয়ে যায়,কথা বলতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট উঠে।এই ফ্লাটে হট্টগোল শোনে পাশের ফ্লাটের সবাই এসে বুঝতে পারে কি নিয়ে সমস্যা রুবি আবার নোহাকে মারে রাফি আটকাতে চাইলে হাবিব রাফিকে ধমকে চলে যেতে বলে রাফি চলে যায়।তারপরে রাফির ফুফুরা রাফির হয়ে কয়েকবার হাবিবের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছে।যথাসম্ভব বুঝিয়েছে কিন্তু হাবিব অপারগ।তিনি সোজা নাকোচ করে দিয়েছেন।দুইদিনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার পাত্র খুজে বিয়ের দিনও ঠিক করা হলো।বিয়ের দিন সকালে নোহা লুকিয়ে তার দাদুর মোবাইল দিয়ে ফোন দিল,রাফি রিসিভ করে বলল,
—“হ্যাঁ দাদু বলো।”

নোহা ফুপিয়ে কেঁদে বলল,
—“রাফি আমার বিয়ে আজকে।”

রাফি নিশ্চুপ হয়ে শুনল কোন কিছু বলল না।রাফির নিরবতা শুনে নোহা অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে,
—“এই তুমি কথা বলনা কেন?আমি বাড়ি থেকে বের হচ্ছি কোথায় আসব বলো?”

—“তুমি কোথাও বের হচ্ছো না।”

—“কেন আমিতো তোমায় ছাড়া বাচঁব না রাফি।”

—“বাচতে হবে।এমন কিছু করলে চাচ্চু কি করবে ভেবেছ?”

নোহা থমকে যায়।চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
—“আচ্ছা ভালো থেকো।”

রাফি ছোট্ট করে বলে,
—“হুম।”

নোহা মোবাইল রেখে বাবার রুমে যায় শেষ বারের মতো বাবাকে বলে —“বাবা…”

হাবিব মেয়ের দিকে তাকায়,
—“বাবা আমি বিয়ে করতে পারবনা।”

—“কেন পারবিনা রাফির জন্য।”

নোহা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলল,
—“বাবা আমি উনাকে ভালোবাসি উনাকে ছাড়া আরেকজনকে কিভাবে বিয়ে করি।”

—“আমি জন্ম দিলাম আমার চেয়ে এখন ওই ছেলেটার জন্য যেহেতু এতো মায়া তাহলে যা বাড়ি ছেড়ে চলে যা আর যদি এই বাড়িতে থাকিস তাহলে বিয়েটা করতেই হবে।”
নোহা অনেকক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল তারপর রুমে এসে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দেয়,মায়ের দেয়া বিয়ের পোশাক চুপচাপ পড়তে থাকে রুবি অবাক হয়ে মেয়ের কর্মকাণ্ড দেখে যে মেয়ে বিয়ে করবনা করবনা করে রাত দিন চিৎকার করে সেই মেয়ে কিনা নিজে নিজেই বিয়ের জন্য রেডি হয়ে যাচ্ছে।

দুপুর একটায় বরপক্ষ আসে।নোহা চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসে নোহা এতো চুপচাপ আছে যে দৃশ্যটা সবার চোখে পড়ছে।রুবি মেয়েকে কয়েকবার হাসতে বলেছেন কিন্তু নোহার মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখা গেল না।কাজী এসে যখন বিয়ে পড়ানো শুরু করে তখন নোহা নিজেকে আর সামলাতে পারে না বাবার দিকে তাকিয়ে কাতর গলায় বাবাকে ডাকে,চোখের পানিতো সেই কখনই অবাধ্য হয়ে পড়ছে।নোহার এমন বেসামাল অবস্থা দেখে উপস্থিত সবার চোখে পানি চলে আসে।নোহার কান্না সারাদিন গাল মন্দ করা রুবিরও বুক খামচে ধরে।এতক্ষণ শক্ত হয়ে বসে থাকা হাবিব সাহেবও কিছুটা নড়ে যায়,কিন্তু পাত্রপক্ষকে কথা দিয়ে ফেলেছেন এখন আর কিছুই করা সম্ভব না।তিনি কাজীর দিকে তাকিয়ে বললেন”কাজী সাহেব শুরু করেন।”
ঘরে পিনপতন নিরবতা সবাই নোহার কবুল শব্দটা শুনার অপেক্ষায় আছে কিন্তু না কবুল বলা ছাড়া শুনল কলিংবেলের কর্কশ গলার ডাক।
রুবি হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে।দরজা খুলার সাথে সাথেই রাফি এক প্রকার দৌড়ে বাসায় ঢুকে।কাউকে কিছু না বলে সোজা হাবিব সাহেবের পায়ের কাছে গিয়ে বসে।উপস্থিত পাত্রপক্ষ অবাক হয়ে অচেনা ছেলেটার কর্মকাণ্ড দেখে।নোহা রাফিকে দেখে গুমড়ে কেঁদে উঠে।রাফি হাবিবের দুহাতে ধরে হাবিবের চোখের দিকে তাকায়,রাফির নিঃশব্দে কাঁদছে।রাফির পরিবারের সবাই এই প্রথম রাফির চোখের পানি দেখল,রাফি শক্ত ধাচের মানুষ কখনোই কাঁদেনি,কিন্তু আজ কাঁদছে নোহার জন্য।
—“চাচ্চু আমি খুব নিঃস্ব বাবা মাকে হারিয়ে।আমার কিছু আপন করে নিতেই ভয় লাগত যদি আবার হারিয়ে ফেলি,নোহাকেও সেই ভয়েই কাছে ঘেষতে দিতাম না কিন্তু কিভাবে যেন মেয়েটা আমাকে ভালবাসলো আর আমার ভালোবাসাও নিল।আর দেখ আজ বাবা মায়ের মতো,নোহাও হারিয়ে যাচ্ছে বাবা মাকে হারিয়েছি ছোটবেলায় কিন্তু নোহাকে হারিয়ে কিভাবে থাকবো?চাচ্চু আমাকে এই মেয়েটা দিয়ে দাও।তুমি দেখ না এই মেয়েটা ছাড়া আমার আর কিছুই নাই,আমি খুব একা!”

রাফি হাবিবের দু’পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদে।তার সাথে সাথে সবাই কাঁদে,পাত্রপক্ষ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে,ছেলেটার সাথে যে নোহার সম্পর্ক আছে এটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।হাবিবের চশমার ফাক দিয়ে পানি পড়ে রাফি তখনো তার পায়ে ধরে কাঁদছে।হাবিব সাহেবের মন আর মানল না রাফির মাথায় হাত রেখে বললেন,
—“যা দিয়ে দিলাম তোকে,কিন্তু রানীর মতো রাখতে হবে।”

হাবিবের এমন কথা রাফির কর্নগোচর হতেই শিরদাঁড়া বেয়ে খুশীর স্রোত নেমে যায়।মাথা উঠিয়ে বলে,
—“রাখব।তুমি শুধু আমার করে দাও।”

পাত্রপক্ষ এবার রেগে যায়।উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”আমাদের কি তামাশা দেখানোর জন্য এনেছেন,মেয়ের প্রেম ছিল আগেই বুঝা উচিত ছিল যত্তসব ফালতু লোক।”
হাবিব মাথা নাড়িয়ে বলেন,”আসলে আপনারা চলে যান।কাজী সাহেব আপনি থাকেন।”

উনার কথায় পাত্রপক্ষ রেগে কতক্ষণ চেচামেচি করে যায়।তারপর নোহা আর রাফির বিয়ে হয়।

অতঃপর রাফি আর নোহাকে রাফির আগের রুমেই একসাথে বাসরে দেয়া হলো।রাতের মধ্যে শিহাব নিশি যতোটুকু পেরেছে ততটুকুই ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।নোহা চুপ করে বিছানায় বসে আছে।সে ভেবেছিল সব শেষ এই জীবনে রাফি তার হবার না, কিন্তু হলো উলটা এখন রাফি তার পুরোটা রাফিই তার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।কিছুক্ষণ পরে রাফি রুমে আসে সোজা বিছানায় গিয়ে নোহার পাশে বসে দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না।তারপর হুট করে দুজনেই হেসে ফেলল।রাফি নোহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল,
—“তোমার জন্য কেঁদে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে মাথা ম্যাসাজ করে দাও।”
নোহা রাফির সংস্পর্শে এসে সুখ সুখ অনুভব হয়।তারপর……..
পরের রাতটা তাদের দুজনের,দুজনে সুখের উচ্চপর্যায়ের সিড়ি বেয়ে উঠে,রাফি ভাবে এইতো সুখ তার সুখ সন্ধানী পাখি।এভাবেই কেটে যাক জীবন হয়ে যাক ভালোবাসার জয়।

(.সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে