#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-২৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★
আজকে নিশি আর শিহাবের বিয়ে।দুইবোন মিলে হাবিবের কাছে সব বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেছে।এরমধ্যে একবার নিশির পেট ব্যাথা খুব বেড়ে গিয়েছিল,তাই এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হচ্ছে। হাবিব সাহেব প্রথমে রাজি ছিল না ভাই বোনের মধ্যে বিয়েটা তার খুব খারাপ লাগে,কিন্তু নিশির ব্যাপারটা আলাদা।পরে রাজি হওয়ায় আজকে ঘরোয়াভাবেই বিয়েটা হবে।মেহমান বলতে শুধু কাছের লোকেদেরই বলেছে।সবাই যখন বিয়েতে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে নোহা চুপ করে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,তার মনে আষাঢ় মাসের ঝড়,নিশি আর শিহাব ভাই বোন তাও দুজনে বিয়ে করে ভালোবাসায় পূর্ণতা আনবে তাহলে রাফি নোহা কেন নয়?নিশির অসুখের অজুহাতে যদি শিহাবকে পায় তাহলে নোহারও অসুখ হোক,ভয়াবহ অসুখে মরে যাবার অবস্থা হোক তারপরেও রাফিটা নোহার হোক,মরার আগে একবার সবার সামনে রাফিকে নিজের বলে পরিচয় দিক।নোহা এখন মনে প্রানে চায় তারও অসুখ হোক তাহলে রাফিটা যদি তার হয়!এসব আকাশ কুসুম ভাবে।হাবিব সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে দেখেন নোহা অন্যমনস্ক হয়ে কি যানি ভাবে,খুব গভীর যে ভাবনার পরিধি তিনি তার কোমল মেয়েটার দিকে তাকায়,আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করে নোহা অনেক শুকিয়ে গেছে,অনেকদিন ধরে খেয়াল করছেন হাসিখুশি নোহার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাচ্ছে।সারাক্ষণ কেমন মনমরা হয়ে থাকে।একমাস ধরে ভার্সিটিতেও যায় না।আর ওদিক দিকে রুবি বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে।কয়েকটা বিয়ে দেখাও হয়ে গেছে,আচ্ছা নোহা কি বিয়ের কথা শুনেই টেনশন করছে আর তাই শরীর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।হাবিব সাহেব চোখ পিটপিট করে নোহার কাছে গেলেন,মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–“মামুনি তুমি রেডি হচ্ছ না কেন?”
নোহা করুণ চোখে বাবার দিকে তাকায়,আহা তার প্রিয় বাবা ।বাবাকে কিভাবে বলবে মায়ের কড়া নিষেধ নোহা যেন ওখানে না যায়।কারন নাহার রাফিকে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না,আর নোহা গেলেই দেখা হবে যা তিনি চায় না।নোহা কিছু বলার আগেই রুবি এসে উপস্থিত হলেন,নোহার দিকে চোখ পাঁকিয়ে হাবিব সাহেব কে বললেন,
—“আরে সবাই যাওয়ার দরকার কি,আর নোহা বলেছে নোহার শরীর নাকি ভালো লাগছেনা।তাই না আম্মু?”
এই বলে তিনি নোহাকে ইশারা করেন।কিন্তু নোহার ইশারায় সায় দিতে ইচ্ছে করেনা,তার ইচ্ছে করে বিয়েতে যেতে রাফিকে মন ভরে দেখতে,তার বুকের জলন্ত আগুনে বরফ গলা ঠান্ডা পানি ঢালতে।কিন্তু মায়ের কথার নড়চড় হলেই বিপদ তাই মাথা নেড়ে বলল,
—“হ্যাঁ বাবা আমি যাব না তোমরা যাও।”
মূহুর্তেই হাবিব সাহেবের কপাল কুঁচকে আসে।ফুফুর বাসায় যাবে এত সমস্যার কোন কারন তিনি দেখছেন না,তিনি ভাবুক চোখে তাকিয়ে বলেন,
—“মামনি সবার সাথে দেখা হলেই বরং ভালো লাগবে।মন ফ্রেশ হবে।যাও যলদি রেডি হও।”
রুবি মনে মনে কপাল চাপড়ায়,হায় আল্লাহ দেখা হলেই তো বিপদ।
রুবি শত চেষ্টা করেও আটকাতে পারল না,হাবিব সাহেব মেয়েকে নিয়েই যাবেন,নিশি এই পর্যন্ত অনেকবার ফোন করেছে নোহা তার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই নোহার যাওয়া চাই ই চাই।অগত্যা রুবি সায় দেয়।
রুবি যেতে ইশারা করার পরেই নোহা রুমের দিকে ছুটে,ইশ তার রাফিকে দেখবে মনে আনন্দ নিয়ে জটপট রেডি হয়ে যায়।
নোহারা সবাই দুপুর বারোটায় এসে পৌছায়।নোহা সবার মাঝে প্রিয় মুখটা খুঁজে নিল,আসেনি!সে আসেনি।আসবেনা নাকি?নোহার বুকে বিরহের ধামামা বাজে,কান্না পায়,নোহা নিশির পাশে চুপ করে বসে।মনে মনে দোয়া করে রাফি যেন আসে,তার একটু দেখা দরকার,একটু জরুরি কথা বলা দরকার।রাফি আসে দুপুর দু’টোয় নিশির অস্থিরতা তখন আকাশছোঁয়া।রাফি সবার সাথে হালকা কথা বলে নিশির সাথে দেখা করতে এলো,তখন নোহা আর নিশি একসাথেই বসে ছিল রাফির শান্ত মুখটা দেখে নিশির চোখ বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল।রাফিকে দেখে এতো কান্না পাচ্ছে কেন তার?রাফি তার হবে না এই জন্য নাকি অনেকদিন পরে দেখল এই জন্য?
রাফি আলগোছে নোহার দিকে তাকায়,নিশির সাথে সৌজন্য কথা বলে,আরেকপলক নোহাকে দেখে এতো শুকিয়ে গেছে কেন মেয়েটা?নোহার শুকনা মুখের দিকে তাকিয়ে রাফির ভালো লাগেনা,ব্যাথারা তাকে আঁকড়ে ধরে,কিন্তু নোহাকে বেশিক্ষণ দেখতে পারলনা ড্রয়িংরুম থেকে তার ছোটমা তাকিয়ে আছে তার দিকে,যেন চোখ দিয়ে বলতে চাইছে,ওখানে কি হ্যাঁ?।রাফি আরেকপলক দেখে নিল নোহা বিছানায় শুয়ে তাকেই দেখছে,কোন কথা বলছেনা,শুধু চোখ চিকচিক করে গাল বেয়ে পানির ধারা নামে।
নিশি দুজনের চোখের দৃষ্টি বুঝে নিল।বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি।”
রাফি বিব্রত মুখে রুবির দিকে ফিরে দেখল এখনো আগের মতোই তাকিয়ে আছে,রাফির থাকার খুব ইচ্ছা,কিন্তু থাকা যাবে না তাই নিশিকে বলল,
—“না তুই থাক।আমি যাই।”
নোহার কিছু বলার আগেই রাফি সেখান থেকে প্রস্থান করল।
নিশি নোহার দিলে তাকিয়ে দেখল নোহা ফুপিয়ে কাঁদছে,নিশি ছুটে গিয়ে দরজা লাগিয়ে এলো,নোহা নিশিলে জাপটে ধরে বলল,
“আমি আর সইতে পারছিনা নিশি।আমার দম আটকে আসছে।”
নিশি বুঝানোর ভঙ্গিতে বলল,
“সব ঠিক হয়ে যাবে।”
নোহা মাথা দুদিকে নেড়ে বলল,
“কিচ্ছু ঠিক হবেনা।কিচ্ছু না।”
রুবি মেয়েকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছেন।রাফি যদিও কোন পাগলামি করেনি কিন্তু নোহা কাছে আসতে চেয়েছে।রুবির জন্য পারেনি,বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে,নাহার রুবিকে ডাকলেন তাকে সাহায্য করতে,তিনি চলে যাবার পরে নোহা পা টিপে ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে গেল,তখন রাফি শিহাবকে বলছিল তাদের ফ্লাটে যাবে যাওয়ার পরে এখনো আসেনি
নোহা দেখল ফ্লাটের দরজা ধাক্কা দেয়াতে খুলে গেল,ভেতরে গিয়ে দেখল কেউ নেই সবাই নিশিদের বাড়িতে।নোহা শিহাবের রুমে গিয়ে ঢুকল।
“হ্যাঁ তার সুখপাখি এখানেই বিছানায় চুপ করে বসে আছে”
নোহাকে দেখে রাফি দাঁড়ায়,যেন যানতই নোহা আসবে নোহার জন্যই এই অপেক্ষা,নোহার চোখে পানি এসে কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যায় দুহাতের তালু দিয়ে পানি মুছে।রাফি ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুটে উঠে।রাফির হাসি দেখে নোহা ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।রাফি দু’হাত প্রসারিত করে কাছে ডাকে।
নোহা রাফির বুকে মাথা রেখে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।রাফি তার বলিষ্ঠ হাতের মধ্যে নিয়ে নোহাকে বুকের খাচায় চেপে ধরে।মুখ দিয়ে ফিসফিস করে বলে,”এখন শান্তি লাগছে জান।খুব।”
নোহা মাথা উঠিয়ে রাফিকে দেখে,রাফি টুপ করে নোহার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।নোহা অভিমানি গলায় বলে,
—“এতক্ষণ কতো চাইলাম দেখা করতে কিন্তু আপনি বুঝলেন না।”
রাফি হাসে আসলে এতোক্ষণ নোহা যে দেখা করতে চাইছিল রাফি ভালো করেই বুঝেছে কিন্তু সম্ভব হয় নি,তাছাড়া বিচ্ছেদ যদি হয় তাহলে আর কাছে আসাটা ঠিক না,তাই রাফি চাইছিল নোহা যেন কাছে না আসে,কিন্তু পাগলা মন কে তো বুঝানো সম্ভব না তাইতো সব নিয়ম ফেলে একটু শান্তির দিকে ছুটেছে।
রাফি শক্ত করে নোহাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে তখনি কারো উত্তেজিত কন্ঠের হুংকার খালি ফ্লাটে আগুনের ফুলকির মতো পড়ে,
চলবে….