#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-২১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★
রাত সাড়ে এগারোটা।নোহা প্রেমের নীল ব্যাথায় ছটফট করে।চোখের পানি একাধারে পড়ছে।নোহা বিছানায় বসে মুখে হাত চেপে ডুকরে কেঁদে উঠে।পাগলের মতো নিজের চুল খাঁমচে ধরে।রাফি আর তার ভালোবাসায় যে সুক্ষ্ম ফাটল ধরেছে এটা বুঝেই কষ্ট হচ্ছে।রাফির সাথে কথা বলা দরকার,তারপর নিজেকে সামলে রাফির রুমের উদ্দেশ্যে বের হয়।
রাফি বারাব্দায় দাঁড়িয়ে একেরপর এক সিগারেট ঠোঁটে চেপে ধরছে।বুকের ব্যাথাগুলো যদি এভাবে সিগারেটের মতো পুড়িয়ে শেষ করা যেতো তাহলেই সব যন্ত্রনার অবসান ঘটতো।অন্যদিন থেকে আজকে যেন রাফির বেশিই ক্লান্ত লাগছে।হাতের সিগারেট ফেলে ক্লান্ত পায়ে রুমে যায়,লাইট জ্বলা অবস্থায়ই বিছানায় গা ছেড়ে সুয়ে পড়ে।শিমুল তুলার নরম বালিশে সুয়ে রাফির মনে হলো সে জনম দুঃখী।বুকের হাহাকার ধামাচাপা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল,চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই একফোঁটা পানি চোখের কার্নিশ বেয়ে নেমে বলে গেল নোহাটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসা হয়ে গেছে।রাফি শুয়েও শান্তি পেল না উঠে বসল।ব্যাথাতুর হৃদয় নিয়ে আবার বারান্দায় পা বাড়ায় বিশাল আকাশে নিজের বিষন্নতা যদি এক বিন্দুও দেয়া যেত!
★★★
নোহা দরজায় হাত রেখে বুঝল দরজা ভেজানো,টুপ করে ভেতরে এসে দরজায় খিল দিল।সারা রুমে পর্যবেক্ষণ করে দেখল,রাফি বারান্দায় ছন্নছাড়া চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে।নোহা বারান্দার দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়,দুজনেই যানে প্রেমের বিষাক্ত পরিনতি।সামনের দাড়ানো ছেলেটা নোহার না এটা ভাবতেই বুক কেঁপে ওঠে।নিরবে চোখের পানি ফেলে এগিয়ে যায়।রাফি যেন নোহাকে দেখেও দেখে না,আকাশের নিকষ কালো অন্ধকারেই তাকিয়ে থাকে।রাফির নির্লিপ্ততা দেখে নোহার ঠোঁট উল্টে কান্না আসে।গা ঘেষে রাফির কাছে আসে নরম তুলতুলে হাত দিয়ে রাফির হাত ধরে ভিজা গলায় বলে,
—“তুমি দেখেছনা আমি এসেছি!”
রাফির বুকে যে তান্ডব বইছে তা কি নোহা দেখতে পাচ্ছে না?রাফি শীতল গলায় বলল,
—“দেখেছিতো।”
রাফির ঠান্ডা গলা শুনে নোহার চোখে আবার পানি জমল।
—“দেখলে বুকে জড়িয়ে নাও।”
রাফি নোহার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।এই মেয়েটার দিকে তাকালেই রাফির মনে শীতল বাতাস বয়।চোখে স্বপ্নেরা ছুটাছুটি করে।
—“নোহা আমাদের বোধহয় আর এগিয়ে যাওয়া ঠিক না।”
নোহা ডুকরে কেঁদে উঠে।দু’দিকে মাথা নেড়ে বলে,
—“আমি বাঁচতেই পারবনা।”
রাফি নিজের আবেগ চেপে বলল,
—“কিছু করার নেই সোনা।চাচ্চুর আজকের কথায় স্পষ্ট বুঝাই যায় তিনি আমাদেরকে কেমন ভাবে দেখে কতটুকু বিশ্বাস করে।”
নোহা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো।
—“তুমি আমার কষ্টটা বুঝলে না রাফি”
—“আমি আগেই শর্ত দিয়েছিলাম।তুই তাতেই রাজি হয়েছিস।”
রাফির প্রতিটা কথা নোহার বুকে ভারি পাথরের মতো পড়ছে।
—“ভালোবাসা তো কোন শর্ত মানে না।”
রাফি নিজেরও খুব অসহায় লাগছে।নোহার ভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“আমিও তোকে খুব ভালোবাসি জান।কিন্তু বাবা তুল্য চাচ্চুকে কিভাবে কষ্ট দেই বল?আমাকে নিজের সন্তানের থেকেও বেশী ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে।”
নোহাকে আগেই রাফি তার মনোভাব বলেছিল,তাই নোহা রাফির কথা বুঝতে পারল।নিজেদের মাঝের সামান্য ব্যাবধান দূরে ফেলে নোহা রাফির বুকে আছড়ে পড়ল।ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে ওঠা দেখে রাফি বুঝল নোহা কাঁদছে।রাফি দু’হাতে মুখটা ধরে বলল,
—“আমাকে ছোটবেলা থেকেই দেখছিস,আমার কষ্ট তুই না বুঝলে কে বুঝবে নোহা।”
নোহা ফুপিয়ে কাঁদে।রাফি আর কখনো তার হবার না এটা বুঝতে নোহার খুব বেশি কষ্ট হলো না। রাফিকে শক্ত করে জড়িয়ে বলে,
—“আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরো রাফি।খুব শক্ত করে।”
রাফির বুকে তোলপাড় হয়।চোখ ভারী হয়ে আসে।নোহাকে বুকের খাচায় চেপে ধরে মনে হয় নোহার বুকেই মিলে রাফির সুখের সন্ধ্যান।আজকের পরে আর কখনো মিলা হবে না।খুব চুপিসারে রাফি চোখের পানি ফেলে।নোহা রাফির বুকে মাথা রেখেই বুঝে তার জানটা কাঁদছে।এটা বুঝে তার কান্না বেড়ে যায়।অস্পষ্ট স্বরে বলে,
—“জান একটা আবদার করি।”
—“হুম.”
রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে নোহা বলল,
—“আজকে আমাকে সবটা দিয়ে ভালোবেসে দাও।”
রাফি অপলক নোহাকে দেখে।এমনটা হবার না।এমন হলে দুজনে আরো প্রেমে মেখে যাবে।একবার সাগরের স্রোতে ভেসে গেলে এক নৌকায় উঠা ছাড়া উপায় থাকবেনা।রাফি শীতল কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,
—“এটা সম্ভব না সোনা।প্লিজ।”
নোহা যেন বেপরোয়া প্রেমিকা হয়ে গেছে।রাফির চোখে আকুতি মাখা পরশ এঁকে বলল,
—“আজকেই একটু সুখ দাও রাফি যেন সারাজীবন এটা নিয়েই বেঁচে থাকতে পারি।”
রাফিরও ইচ্ছে করছে নোহার মাঝে নিজেকে বিলিন করে দিতে।সর্বোচ্চ সুখ দিয়ে নোহাকে কাঁদাতে।কিন্তু কোনটাই সম্ভব না।রাফি নিজেকে শক্ত করে বলল,
—“রুমে যা নোহা।রাত হয়েছে।”
—“আমার ইচ্ছাটা? ”
রাফির নরম গলায় বলে
—“না পূরুন করি?”
নোহা কাঁদছে আর বলছে,
—“প্লিজ রাফি।”
রাফি কিছু একটা ভাবল,তারপর রুমে চলে গেল।নোহা ভাবল তার ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে যাবে।দু’হাতের পিঠে চোখ মুছে,চলে যাবার জন্য পা বাড়ায়।রুমে ঢুকে দেখল রাফি কিছু একটা হাতে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নোহা খেয়াল করে দেখল সেই গিফট বক্সটা যেটা দেখে নোহা অনেক অভিমান করেছিল।নোহা ফ্যালফ্যাল করে রাফির দিকে তাকায়।রাফি এগিয়ে আসে,নোহার দিকে বক্সটা দেখিয়ে বলে,
—“আজকের রাত সবটা তোর জন্য।”
নোহা মাথা নেড়ে বলল,
—“কি করব?”
রাফি একটু হাসলো বোধহয়।
—“তোকে কালো শাড়িতে দেখার খুব ইচ্ছা।”
নোহার মন এত কষ্টের মাঝেও বিজয়ের উল্লাসে কেঁপে উঠল।রাফিকে কিছু বলবে তার আগেই রাফি বলল,
—“রাত কিন্তু খুব ছোট।”
নোহা খুব সাবধানে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেল।
রাত একটা পঁচিশ।রাফি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল সারা ঘর অন্ধকার।বিছানায় একটা মানুষের ছায়া দেখা যাচ্ছে।রাফি কিছু না বলে লাইট জ্বেলে দিল।কিন্তু বিছানায় তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল।রাফি জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে নিল।মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেছে!রাফি এক ধ্যানে বিছানার মাঝে বসা প্রণয়িনীর দিকে তাকিয়ে আছে, এখান থেকে চোখ সরানো সত্যিই দায় তার প্রণয়িনী যে আজকে প্রনয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে।নোহা কালো কাপড়টা গ্রামের মহিলাদের মতো ব্লাউজ ছাড়া গায়ে পেচিয়ে পড়েছে।দুধে আলতা গায়ের রঙ কালো কাপড়ে যেন ডিকরে পড়ছে।রাফির সারা শরীর কেঁপে ওঠে।মোহবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে থাকে।নোহা ধীরপায়ে বিছানা থেকে নেমে রাফির খুব কাছে এসে দাঁড়ায়।এতো কাছে যে দুজনের নিশ্বাস একে অপরের সাথে আলিঙ্গন করতে পারছে।
নোহা খুব লজ্জা পাচ্ছে তারপরেও রাফির সুখটা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে রাজি না।লজ্জাবনত মুখ নিচু করে রাফির প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী হয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।রাফি ঘোরলাগা গলায় বলে,
—“এগুলো কি করেছিস?”
নোহা কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বলল,
—“ভাল লাগছে তো!”
রাফি নোহার বুকের তিলে তাকাল,কালো শাড়ী কালো তিল মিলেমিশে একাকার।রাফির সারা শরীরে এন্ডোনালির হরমোন জেগে উঠেছে।নোহার মতই ফিসফিস করে বলল,
—“খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।কি করব?”
রাফির এমন কথায় নোহার সারা শরীর লজ্জায় কুকড়ে গেল।রাফির দিকে পিঠ করে দাঁড়ায়।দুহাত একসাথে মুচরাতে থাকে।নোহা উদোম পিঠ রাফিকে টেনে কাছে আনে।রাফির লোমশ বুকে নোহার উদোম পিঠ লাগতেই নোহা কেঁপে সরে যেতে চাইলে রাফি যেতে দেয় না সাপের মতো পেচিয়ে নিজের দিকে ফিরায়।কপালে ভালোবাসার বিশুদ্ধতম চুমু দিয়ে বলে,
—“খুব সুন্দর লাগছে সোনাপাখি।একদম পুতুলের মতো।”
নোহা যেন সব লজ্জা ভুলে গেল,দু’হাতে রাফির গলা আঁকড়ে ধরে রাফির পুরুষালি ঠোঁটের দিকে তাকায়।কিছু না বলে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে।রাফি আবেশে নোহার কোমড় আঁকড়ে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নেয়।ফিসফিস করে বলে —“আজকে তুই শেষ জান।”
নোহা কিছু বলে না।রাফির চোখে তাকিয়ে বুঝে নেয় তার প্রেমে আজ ভয়াবহ ঝড় উঠে গেছে এই ঝড় সুনামির তান্ডবে পরিনত হতে পারে।নোহাকে পাজকোলা করে রাফি বিছানায় নেয়।নোহার পাতলা শরীর রাফির বলিষ্ঠ দেহের নিচে চাপা পড়ে যায়,দুজনের ঠোঁটের ঘনিষ্ঠ চুম্বনে দুজনে পাগলের মতো হয়ে যায়।দুজনের হাত বেপরোয়া হয়ে দুজনের শরীরে এক অন্য পরশ বুলিয়ে দেয়।এক দীর্ঘ চুম্বন শেষে রাফি মাথা উঠিয়ে নোহার লাল মুখের দিকে তাকায়,এই মায়াবতী সারাজীবনের জন্য তার হলে খুব ক্ষতি হতো না।নোহা এবার লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়,রাফি আলতো হেসে নোহার কানের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে বলে”আগুনের আচে মোম এসে যদি বলে প্লিজ আগুন আমাকে গলাবেন না তা তো হয় না সোনা মোম অলরেডি গলতে শুরু করে দিয়েছে।”
নোহার ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি যে কখন গা থেকে সরে কোমড়ে চলে গেছে দুজনের কেউই সেটা খেয়াল করলনা।রাফি গলার তীলে অসংখ্য আদরে নোহাকে পাগল করে তুলল,তারপর নোহার মেয়েলি বক্ষতে রাফি প্রথম ছোঁয়াতেই নোহা আবেশে ছটফট করে উঠল।রাফি থামল না আদরে আদরে নোহার ছটফটানি শিৎকারে রূপ নিল।রাফি একহাতে নোহার মুখ চেপে বলল,
—“আস্তে জান।কেউ শুনতে পাবে।”
রাফির ভয়ংকর আদরে নোহার চোখে পানি।ইশ এই ছেলেটা এতো সুখ দিতে যানে!নোহার ইচ্ছে করছে এই পাগলা ঘোড়াকে নোহা বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে।রাফি নোহার ফরসা উদরের দিকে তাকিয়ে থাকে হাত দিয়ে ছুয়ে ঠোঁট ছুয়িয়ে দেয়।
দুজনের শরীর যখন অন্য সুখের সন্ধানে রাফি তখন থেমে যায় দ্রুত গতীতে শ্বাস নিয়ে নোহার দিকে তাকায়,আচমকা থেমে যাওয়ার জন্য নোহা রাফির চোখে তাকায়।
রাফি ফিসফিস করে বলে,””নোহা আমরা এতো বড়ো ভুল করতে পারি না।পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমে যাবি।এই বলে হনহনিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
নোহা অনেকক্ষন বিছানায় শুয়ে কান্না করে,রাফির জন্য অপেক্ষা করে পরে যখন রাফির রুম থেকে বেড়িয়ে যায় তখন কেউ অগোচরে সব দেখে নেয়,ভালোবাসার পরিণতি কি আরোও ভয়ংকর হবে!
চলবে তো??