#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-১৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★
রাফি চুপ করে বিছানায় বসে আছে।সারটা দিন অফিসে কি অবস্থায় কাটিয়েছে সেটা একমাত্র রাফিই জানে।কয়েকবার ভুল করে ফেলেছিল।মনের সাথে যুদ্ধ করে হেরে যাচ্ছে।কালকের রাতের ঘটনা নিয়ে রাফি খুবই আপসেট।কাল রাতে না হুশ ছিল না মাতাল ছিল কেমন একটা ঘোরলাগা অবস্থায় ছিল বোঝানো যাবে না।রাফির ফজরের আজানে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল,মাত্র মিনিট চল্লিশের মতো ঘুমিয়েছে।মাথা ভার হয়ে আছে,চোখ খুলেই পাশে নোহাকে দেখে চমকে উঠে।চোখ কচলে নিজেকে ধাতস্থ করে এটা সপ্ন নয় বাস্তব।কাল রাতে ড্রিংক করে নোহার রুমে এসেছিল সে!”শিট শিট শিট”।রাতের ঘটনা আবছাভাবে সব মনে পড়ে,নোহা তার বুকে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে।বুকের তিলে অসংখ্য কামড়ে লাল রক্ত জমাট বাধা দেখা যাচ্ছে,নরম গোলাপি ঠোঁট রক্তবর্ন ধারণ করেছে।রাফি বাম হাতে চুল খামচে ধরল।নিজের কাছেই নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।নোহা ঘুমের মাঝেও রাফির কুচকানো শার্ট খামচে ধরে আছে,যেন ছাড়লেই হারিয়ে যাবে।রাফি খুব সাবধানে নোহাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।অপলক ঘুমন্ত নোহাকে দেখে।কাল রাতে রাফি নিজেকে খুলে দিয়েছিল তাল পাতার মতো নোহা অতি যত্নে তাল পাতার শিরা উপশিরা পড়ে নিয়েছে এবার রাফি পালানোর আর সুযোগ পাবে না।রাফি নিজ ইচ্ছাই নোহার কাছে এসে ঘুমন্ত সব অপূর্ন ইচ্ছা জাগিয়ে দিয়েছে এবার কিভাবে নোহাকে আটকাবে?আর না নিজেকে?রাফি দেয়ালে হেলে দাঁড়ায়।তারপর নোহাকে ফিসফিস করে কয়েকবার ডাকে,
—“নোহা,শুনছিস।”
নোহা শুনল না বরং বুকে বালিশ জড়িয়ে মুখে অস্পষ্ট শব্দ করে আদুরে বিড়ালের মতো বালিশে মুখ ডুবাল।রাফির বুকে তোলপাড় হয়,শরীরের সমস্ত হরমোন জেগে উঠে,পিঠ বেয়ে নেমে যায় শিতল শিহরন,বুকে অসহনীয় যন্ত্রনার অনুভব হয়।হাত পা শক্ত করে নিজেকে সামলায় চোখ বন্ধ করে জোড়ে শ্বাস নেয়,জিভের লালা নিয়ে ঠোঁট ভিজায়,খাটের পাশে এসে একটু ঝুকে নোহার নরম হাতে হালকা টেনে ডাকে।ঘুমের মধ্যে হাতে টান পড়ায় নোহা যেন ভূত দেখার মতোই চমকে উঠে বসে।রাফির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল কি! পরক্ষণেই রাতের সব মনে পড়াতে নোহা মাথা নিচু করে ফেলল।রাফি বুঝল নোহার লজ্জার কারন।বসার কারনে জামায় টান পড়েছে তাই বুকের তিলে জমাট রক্ত স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে,ঠোঁট ছিলে লাল হয়ে আছে,রাফি নিজেকে নিজেই শাসাল কি অবস্থা করেছে সে!নোহা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।তার সামনে এটা মাতাল রাফি না সজ্ঞানে থাকা রাফি।এই রাফির দিকে তাকাতে নোহার ভীষন লজ্জা লাগছে।নোহা রাফির কিছু বলার অপেক্ষায় থাকল।রাফি গলা ঝেড়ে বলল,
—“রুম থেকে বেরিয়ে দেখ কেউ আছে কি না।আমি বেরবো।”
নোহা নিঃশব্দে বিছানা থেকে নামে।তার সারা শরীর লজ্জায় নুয়ে পড়তে চায়,একজনের দীপ্তমান চোখ যে তার উপরেই স্থির সেটা নোহা না দেখেও বুঝে যাচ্ছে।দরজার হাতল ধরে বাহিরের পরিবেশ দেখল।ঘর মোটামুটি অন্ধকার বাবা মায়ের,আর দাদুর রুমে আলো জ্বলছে নামাজ পড়তে উঠেছে বোধহয়।নোহা দরজা চাপিয়ে একপলক রাফিকে দেখল,কাপা গলায় বলল,
—“বাহিরে কেউ নেই।”
রাফি আর এক মূহুর্তের জন্য দাড়ালো না দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যায়।দরজা আটকে বুকে হাত চেপে দাঁড়ায়।ওই রুমে আর একটু থাকলেই নির্ঘাত কোন অভাবনীয় কাজ করে ফেলত।রাফি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়,এই কয়েকদিনের মাঝেই তার নিজস্ব ফ্লাটে উঠে যাবে,ফ্লাট এখনো ঠিক হয়নি তাতে কি একটা রুম ঠিক করতে পারলেই চলবে।আপাতত এই বাসা থেকে যাওয়া দরকার তা না হলে কখন যে কি হয়ে যাবে তা বলা এখন সত্যিই মুশকিল।
সকাল সাতটায় রাফি রুম থেকে বেরোয়।ফ্রিজ থেকে লেবু নিয়ে লেবুর শরবত বানায়,মাথা ভার হয়ে কেমন বমি পাচ্ছে এটা খেলে ঠিক হবে হয়তো।রুবি রুটির পানি বসিয়ে রান্নাঘরের বাহিরে রাফিকে দেখে বলে,
—“কিরে তুই বাসায় আসলি কখন?কাল না বললি বাসায় আসবি না বন্ধুর বাসায় থাকবি!”
রাফি হাসার চেষ্টা করে মনে মনে মিথ্যা কথা সাজিয়ে বলে,
—“থাকিনি ছোটমা চলে এসেছি।বেশ রাত করে ফিরেছি তো তাই কলিং বেল না দিয়ে এক্সট্রা চাবি দিয়েই খুলেছি।”
রুবি হাতে ছুরি আর লেবু দেখে হেসে বললেন,
—“তা এই সাত সকালে লেবুর শরবত কেন?মদ খেয়েছিস নাকি রে!”
রাফি জানে রুবি মজা করেই বলেছে।তাও মা তুল্য রুবিকে সে খুব মান্য করে রুবির কথা শুনে তার ঠোঁট শুকিয়ে যায়।শুকনো হেসে বলে,
—“ছোটমা তুমি কি যে বল!সকাল থেকে মনে হচ্ছে প্রেশার হাই হয়ে গেছে।ঘাড়ে কেমন ব্যাথা হচ্ছে।”
রুবি চিন্তিত গলায় বললেন,
—“হ্যাঁ তোকে একটু অসুস্থ লাগছেই।রাতে ঘুমাসনি?”
—“ঘুমিয়েছি।”
—“আচ্ছা রুমে গিয়ে ফ্রেস হ।নাস্তা রেডি করে ডাকব।যা।”
রাফি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে যায়।
★★★
নোহা বিছানায় স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।কালকের রাতটা সপ্নের মতোই জলমলে ছিল।রাফির প্রেমের বর্ষনে নোহার খরা লাগা মন ভিজে একাকার।নোহা ক্ষুনাক্ষরেও টের পায়নি রাফি তাকে এত ভালোবাসে।নোহা রাতের স্মৃতি মনে করে লজ্জায় বালিশ বুকে চেপে আবার শুয়ে পড়ে।শোয়ার পরে মনে হল বিছানাটা রাফির গায়ের সুভাস আষ্টেপৃষ্টে রেখে দিয়েছে।নোহা হাসল হেসে রাফি যেখানে ঘুমিয়েছিল সেখানে চুমু খেলে।সারা বিছানায় গড়াগড়ি করে রাতের মিষ্টি স্মৃতির পাতায় ডুবে লজ্জায় মুখ ডাকল।
রাতে রাফি নোহাকে বুকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল।খানিক পরে রাফি নোহার দিকে মুখ করে তাকায়।বুকের তিলটায় আরো কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে,
—“আমি মরে যাচ্ছি সোনা। প্রতিদিন ঠিক এভাবেই কাছে চাই।”
নোহা কিছু বলল না কাজল কালো চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
দীর্ঘদেহী মানুষটা নোহার খরগোশের মতো শরীরে মিশে যেতে চাইছে গলায় মুখ নামিয়ে ভিজা চুম্বন এঁকে গলায় ঠোঁট,নাক ঘষে দিল,রাফির ছোট দাড়ির ঘষায়।নোহার সর্বাঙ্গ কেপে উঠে জানান দেয় এই রাফিটা একমাত্র তার।নোহা এই প্রথম কোন পুরুষের ছোয়া পাচ্ছে,ছটফটিয়ে অনুভূতিরা জানান দিচ্ছে ভাল লাগার কথা।তলপেটে হাজারো প্রজাতির কিলবিল করে নিজের ইচ্ছাকে বলছে কানেকানে!!নোহা ঠোঁট কামড়ে রাফির চুল খামচে ধরল।রাফি মুখ তুলে নোহাকে দেখল,নোহার ছটফটানি রূপ দেখে মাতাল রাফি একটু হাসলো।নোহা হাসল না চোখে মুখে তার আকুতি মিনতি,তীব্রভাবে কাছে পাওয়ার ভাসনা,দুহাত দিয়ে রাফিকে আকড়ে ধরে ছিল।রাফি আরেকটু ঝুকে নোহার ঠোঁটে আবার নিজের ভালোবাসার ছাপ দিল,উল্লাসে নেচে উঠল নোহার কচি মন,প্রিয় পুরুষের সব স্পর্শ খুব আনন্দের হয়।রাফি চুম্বনরত অবস্থায়ই নোহাকে দেখল নোহা রাফির মাথা চেপে রাফিকে আরো কাছে আনতে চাইছে।রাফি আচমকা থেমে গেল,ঠোঁটের স্বাধ নিতেও ভুলে গেল।চোখ বুজে জোড়ে শ্বাস ফেলে সরে গেল চোখ বন্ধ করেই তিলে আরেকটা চুমু খেয়ে,পরপর কামড়ে দিল।নোহা ব্যাথা পেলেও কিছু বলল না,চুপচাপ রাফির গতিবিধি দেখছে।রাফি নোহার আবেদনময়ী নরম বুকে মাথা রাখল।কিছুক্ষণ পরে রাফির ঘন নিশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝতে পারল রাফি ঘুমিয়েছে।
নোহা পরম আদরে রাফিকে জড়িয়ে ধরে, রাফির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
—“এই রাফিটা!এই সোনাপাখিটা সবটা আমার।”
রাফি ঘুমোয়নি আলতো হেসে বলল,
—“হুম সবটাই তোর।”
নোহা লজ্জায় হেসেছিল আর রাফি ঘুমিয়ে গিয়েছিল।তারা একে অপরকে ভালোবেসেছিল কিন্তু গভীরভাবে ছোঁয়ে দেয়নি।রাফির যেন এই হুশটা ছিল।
একটা কাকের ডাকে নোহা কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসে।আজকে কাকের বিরক্তিকর ডাকটাও নোহার ভালো লাগছে।কেন?রাফির সানিধ্য পেয়েছে বলে!নোহা জানে রাফি কিছুই স্বীকার করবে না,খাবার টেবিলে যেভাবে তাকাচ্ছিল যেন নোহা অচেনা মানুষ।বছর ধরে অপেক্ষা করতে পেরেছে আর এখন পারবেনা?পারবে শুধু গভীর রাত হবার অপেক্ষা।
★★★
রাফি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে খাচ্ছে।কিন্তু সিগারেটের গন্ধ তার নাকে লাগছে না,পাশের বারান্দায় নোহার লাগানো বেলীফুলের গাছে থোকায়-থোকায় বেলীফুল সেই ফুলের তীব্র ঘ্রাণ নাকে লাগছে।রাফি ফুসফুস ভরে শ্বাস নেয়।রাফি জানে আজকে প্রনয়ীনি আসবে।তাইতো দরজায় লক করেনি।এক মন চায় নোহা আসুক প্রেমের বানে তাকে ভাসিয়ে দূর দূরান্তে নিয়ে যাক,আরেক মন ভাবে এটা কখনোই সম্ভব না।
★★★
খয়েরী সুতির শাড়ী পড়ে নোহা ঝটপট রাফির রুমে ঢুকে যায়।বুকে হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করে।রাফি দরজা খোলা রেখেছিল নোহা মুচকি হেসে রুমে চোখ দেয়।রাফি রুমে নেই নোহা নিশ্চিন্তে বারান্দায় পা বাড়ায়।কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে রাফি রাতের আকাশ দেখতে ব্যাস্ত।দু’হাত পকেটে পুরে কেমন ভাবলেশহীন হয়ে দাড়িয়ে আছে।রাফির গায়ের তীব্র পুরুষালী ঘ্রান নোহা বুক ভরে নেয়।কাল রাতেও এই ঘ্রান মেখে ঘুমিয়েছিল।
★★★
রাফি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে নোহা এসেছে।নোহার গায়ের ঘ্রানটা রাফির খুব চেনা।চোখ বন্ধ করে মনের কথাগুলো গুছিয়ে নিল।আজকে যা হবার হবে তাও সব বলতেই হবে তা না হলে যে খুব দেরী হয়ে যাবে!!
—চলবে—