#সুখ_সন্ধানী
পর্ব -১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
—“পেট পিট দেখানোর জন্য শাড়ি পড়ছিস?বেয়াদব।তাড়াতাড়ি শাড়ীর আঁচল ঠিক কর নাইলে থাপ্পড় মেরে চাপার দাত উল্টাপাল্টা করে ফেলব।”
শিহাবের চাপা হুমকি শুনে নিশির মুখ কাদোকাদো হয়ে যায়।চোখ ঘুরিয়ে চারপাশে তার মামাতো বোন নোহাকে খুজে।তার শাড়ীর সেফটিপিন খুলে কোথায় যেন পড়ে গেছে।তাই অপরিপক্ক হাতে নিশি শাড়ী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।তার বদৌলতেই পেট বোধহয় দেখা গেছে তাই শিহাব এভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। নিশিকে চোরাচোখে এদিক ওদিক তাকানো দেখে শিহাব ধমকে বলে,
—“চোরের মত চারপাশে কি খুজিস?”
নিশি আস্তে করে বলে,
—“ওই নোহাকে খুজি।”
শিহাব ভ্রুকুঞ্চন করে বলল,
—“কেন?তোর মতো নোহাকেও পেট দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামাতে চাস নাকি!থাপ্পড় খেতে না চাইলে তাড়াতাড়ি ঠিক কর বেয়াদব মহিলা।”
নিশি যদি এখন বলে যে সেফটিপিন হারিয়ে ফেলেছে তাহলে ধমকে অবস্থা রফাদফা করে ফেলবে আবার যদি শাড়ীর আঁচল ঠিক না করে তাহলে এই জল্লাদ পুরুষ সত্যিই কখন থাপ্পড় মেরে দেয় তার বিশ্বাস নেই।
নিশি জীব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
—“শিহাব ভাই আমার শাড়ীর সেফটিপিন কই যানি খুলে পরে গেছে।”
শিহাবের কপালে বিরক্তিতে ভাজ পড়ল,চোয়াল শক্ত করে বলল,
—“তোর মত বলদের থেকে এরচেয়ে বেশি কি আশা করা যায়।আয় আমার সাথে।”
নিশি হুট করে বলল
—“কোথায়?”
শিহাব যেন দিগুণ তেতে উঠেছে,
—“কোথায় মানে আঁচল খুলে নাচানাচি করার ইচ্ছা আছে নাকি?রাবিশ মেয়ে কোথাকার।”
শিহাব নিশিকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের একটা ফাকা জায়গায় বসিয়ে বলল,
—“দশ মিনিট বোস।এখান থেকে এক পা ও এদিক ওদিক করবিনা।এসে উল্টাপাল্টা দেখলে পা ভেংগে গলায় ঝুলিয়ে দেব।মনে থাকবে?”
নিশি সাথে সাথেই ঘাড় কাত করে বুজাল মনে থাকবে।
শিহাব দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল।
নিশি এরমধ্যেই মনে-মনে শিহাবকে বকে তুলোধুনো করে ফেলেছে।এত এত মানুষের সামনে কেমন করে ধমক দিল।ইশ নিশির মান সম্মান আর থাকল না।কতগুলো ছেলে ভাব করতে চাইছিল কিন্তু ওই বজ্জাত পুরুষটার জন্য কেউই কাছে ঘেষতে পারেনি।নিশি মুখ দিয়ে ধ্যাত শব্দ করে চারিপাশে তাকায়।আজকে নিশির মামাতো বোন মারিয়ার বিয়ে।তার একমাত্র মামার মেয়ে মারিয়া।বর্তমানে বিবিএ পড়ছে তার মধ্যেই পছন্দমতো পাত্র পেয়ে মামা বিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু এখানে এসে সে কিছুই মজা করতে পারছেনা আর না পারার কারন হল কি বজ্জাত পুরুষটা।সম্পর্কে হনুমানটা নিশির খালাতো ভাই।নিশি ইতোমধ্যে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দোয়া করে ফেলেছে কোন মেয়ের যেন খালাতো ভাই না থাকে খালাতো ভাই থাকা মানে অপরাধ ঘোরতর অপরাধ,এই অপরাধ চাইলেই রোধ করা যায় না।শিহাব চাইলেই নোহাকে ডেকে দিতে পারত তা না করে কই যে গেল নিশির রাগের মাত্রা তরতর করে বাড়ছে অবশ্য শিহাবের সামনে সে বরাবরই বিড়াল।
নিশির নানুর দুই মেয়ে এক ছেলে তার মধ্যে শিহাবের মা নুরজাহান বেগম বড় তারপর তার মামা হাবিব ইসলাম আর সবার ছোট নিশির মা সাবিকুন নাহার।ওহ সরি নিশির নানুর আরেকটা ছেলে ছিল মহিদুল ইসলাম কিন্তু এখন আর নেই।একটা ছেলে রেখে স্বামী স্ত্রী দুজনেই এক ভয়াবহ গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা যায়।ছেলেটার নাম রাফি আদনান।দশ বছর বয়স থেকে দাদা-দাদী, চাচা-চাচীর সাথেই থাকছে।
শিহাব নিউ মার্কেট থেকে এক প্যাকেট সেফটিপিন কিনে আনে।রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠছে।নিশি এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারে?ওই ছেলেগুলো কিভাবে দেখছিল ও কেন বুজতে পারে না।নাকি ঝাকে ঝাকে ছেলেদের বেশামাল করার দায়িত্ব নিয়েছে।ওফ শিহাব আর ভাবতে পারে না এই মেয়টা আজকাল খুব জ্বালায়।অসহ্য!সে নিজে আর নিশির সামনে যায় নি নোহাকে খুজে তার কাছে সেফটিপিন দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।তা দেখে নিশি সস্থির নিশ্বাস ফেলে।যাইহোক ওই রাহ্মস আর আসেনি এই ভালো।
রাফি চোখ বন্ধ করে চেয়ারে বসে আছে।মাইগ্রেনের ব্যাথাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।আজকে মারিয়ার বিয়ে না হয়ে যদি অন্যকারো বিয়ে হতো শত মিনতি করেও রাফিকে এই হইচই পরিবেশে আনা যেত না।রাফির চাচ্চু হাবিব আর ছোটমা রুবিকে সে মা বাবার মতই শ্রদ্ধা করে তারাও নিজের ছেলের মতই ভালোবাসে তাই না আসলে খুব খারাপ দেখাত।রাফির হাবিব চাচ্চুর দুই ছেলে দুই মেয়ে।হাবিবের বড় ছেলে মুনাফ ইসলাম বাবার ব্যবসা সামলায় তারপর মেয়ে মারিয়া মেহনাজ আজকে তারই বিয়ে তারপর ছোট মেয়ে নোহা দিলরুবা এবার ইন্টার পরিহ্মা দিয়েছে।রাফি চোখ বন্ধ করেই বুজতে পারে কারো উপস্থিতি।তার বুজতে মোটেই অসুবিধা হয় না এটা কে।চোখ বন্ধ করেই বলে,
—“দূরে থাকতে বলছিনা?কাছে আসলি কেন?”
নোহা কাতর স্বরে বলে,
—“আপনার কি মাথা ব্যাথা?”
রাফি চোখ মেলে পূর্ণদৃষ্টি মেলে তাকায়।বিরক্তি নিয়ে বলে,
—“তুই কি চাস আমি চলে যাই?”
নোহা সাথে সাথে মাথা নেড়ে বলল,
—“না।”
—“তাহলে আশেপাশে ঘুরঘুর করবিনা।”
নোহা কাতর চোখে রাফিকে দেখল। বেহায়া হয়ে ফের প্রশ্ন করল,
—“মাথা কি বেশি ব্যাথা করছে?”
রাফি কিছু বলল না।কিছুহ্মন চুপ থেকে বলল,
—“নোহা আমার কাছে আসবি না।তর মতো নিলজ্জ, বেহায়া মেয়ে আমি আশেপাশে চাই না।”
নোহা আহত চোখে তাকিয়ে আছে। কখন যে চোখে জল টইটুম্বুর হয়ে টুপ করে গড়িয়ে পড়ল খেয়াল করল না। চুপ করে রাফির কাছে থেকে সরে আসল।ওয়াশরুমে ঢুকে হাত দিয়ে মুখ চেপে কেঁদে দিল।দুনিয়ায় এত পুরুষ মানুষ থাকতে সে কেন এমন পাথর মনের মানুষের প্রেমে পড়ল?এমন মানুষকে মন কেন দিয়ে বসল যার কাছে তার বিন্দু পরিমাণ দাম নেই।কিছুহ্মন পরে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে একটা ওয়েটার কে ডেকে পাঠায়।একটা কফি আনার ব্যাবস্থা করতে বলে,কফি আনা হলে রাফিকে দেখিয়ে বলে দিয়ে আসার জন্য আর নোহা আড়ালে দাঁড়ায় যদি তাকে দেখলে কফি না নেয়।রাফি কফি হাতে নিয়ে বসে আছে সে জানে এটা কে পাঠিয়েছে।খুশি হয়েছে নাকি বিরক্ত হয়েছে বুজা যাচ্ছে না।কিন্তু কিছু একটা হচ্ছে যেটা অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা নোহার চোখে পড়লনা।রাফি চোখ বন্ধ করে কফির কাপে চুমুক দেয়।দূর থেকে নোহা অপলক দেখে প্রিয় শক্ত মনের মানুষটিকে।
চলবে….