সুখময় বৃষ্টি শেষ পর্ব
#লেখা : রায়না মনি
তিন বছর পর…
এই তিন বছরে অঝোর একবার উঁকি মেরেও দেখেনি ধারাদের বাসায়। তবে অঝোরের মা আর ছোট বোন প্রায় তিন মাস আগে ধারাদের বাসায় এসেছিল মিষ্টি নিয়ে, অঝোর ভালো একটা চাকরি পেয়েছে বলে।
ধারা অঝোরের কথা ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারেনি। বৃষ্টি নামলেই অঝোরের কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়েছে, নিঃসঙ্গ লাগা মুহূর্ত গুলোয়ও অঝোরকে মিস করেছে। এমনিতে অঝোরেকে তেমন একটা মনে না পড়লেও, বৃষ্টি নামলে অঝোরের স্মৃতি ধারাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে। এই তিন বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। সকলের জীবন যাত্রা নতুন নিশানা দেখেছে। দিয়া আপুর বিয়ে হয়ে গেছে, স্বামী পাইলট। বেশ ভালোই আছে দিয়া আপু।
অর্করও একটা মিষ্টি গার্লফ্রেন্ড হয়েছে। অর্ককে পাগল বানিয়ে ছাড়ে সে। অর্ক তিন দিন আগে ধারাদের বাসায় এসেছিল, কালকেই চলে গেছে গার্লফ্রেন্ডের যন্ত্রনায়। এখানে থাকাকালীন সময়ে অর্কর গার্লফ্রেন্ড শুধু ফোন করে বলতো,
“বাবু তুমি আসবা কবে ? কতদিন হইছে তোমাকে দেখি না! তুমি তো জানো তোমাকে না দেখে আমি একদিনও থাকতে পারি না। আচ্ছা বাবু তুমি কি আমাকে মিথ্যা বলছো যে তুমি তোমার চাচ্চুর বাড়িতে আছো ?
নাকি তোমার আরও গার্লফ্রেন্ড আছে, তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেছো ? শোনো বাবু তুমি যদি আমায় মিথ্যা বলো তাহলে কিন্তু তার পরিণাম খুব খারাপ হবে। আমি কিন্তু তোমায় গলা সমান পানিতে নামিয়ে সারা রাত দাঁড় করিয়ে রাখবো।”
অর্ক গার্লফ্রেন্ডকে বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল । এমন কী ধারারও ফোনে কথা বলে অর্কর গার্লফ্রেন্ড কে বুঝ দিতে হয়েছে।
অর্কর গার্লফ্রেন্ডের অবস্থা দেখে ধারা তো খুব মজা করেছে অর্কর সাথে। অর্ক গার্লফ্রেন্ড নিয়ে মহা মুসিবতে আছে। কোথাও গিয়ে দুটো দিনও থাকতে পারে না। তারপরে আবার সারাদিন ফোনের উপর ফোন করতেই থাকে। ঘণ্টায় যে কত গুলো ম্যাসেজ পাঠায়। পাগলি একটা।
অর্কর গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়তেই ধারার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু সেই হাসি দীর্ঘস্থায়ী না, ক্ষণস্থায়ী। ধারা চাইলেও বেশি হাসতে পারে না। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি ওর মুখের হাসিটা বিলীন করে দেয়। সবার জীবনে নতুন কিছুর আগমন ঘটলেও, ওর জীবন কেমন যেন আগের জায়গায়ই থমকে আছে। তবে ও আর অঝোরকে পাওয়ার আশা করে না। ও বুঝে গেছে অঝোর কোনো দিনও ওর হবে না। অঝোরের মনের আনাচে কানাচে কোথাও যে ও নেই, তা এই তিন বছরে বেশ ভালো ভাবেই বুঝে গেছে। ধারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে তাকালো। আজকেও শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। পরিবেশটাও কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। গাছের ডাল পালাও বাতাসে হেলেদুলে উঠছে। ধারা আর এখানে দাঁড়াবে না, একটু পর হয়তো বৃষ্টি ঝরবে আকাশ থেকে। কারণ এমন পরিবেশ যে বৃষ্টি নামার বার্তা বহন করে। বৃষ্টি এক সময় ধারার ভীষণ পছন্দের ছিল, বৃষ্টি নামলেই মনে বৃষ্টিতে ভেজার আকাঙ্ক্ষা নাড়া দিতো। কিন্তু এখন বৃষ্টি হলে ধারার ভালো লাগে না, পুরোনো সব স্মৃতিরা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তাই এই সময়টুকু নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখে, চায় না বৃষ্টির ফোঁটা গুলো পড়তে দেখতে। ধারা ক্লান্ত মনে রুমে আসলো। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
“ধারা…”
কারো কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে ধারা। ঘুমের রেশের জন্য ঠিক কোনো কিছু স্পট বুঝতে পারছে না। ঘুমে এতটাই আচ্ছন্ন যে চোখ খুলে তাকাতেই পারছে না।
অনেক ডাকাডাকির পর ধারা চোখ দুটো খুললো। চোখ খুলে মায়ের চেহারা দেখতে পেল। রুবিনা মেয়েকে চোখ খুলতে দেখে বললো,
“আরে ওঠ তাড়াতাড়ি। এই অসময় কেউ ঘুমায়! তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ছাদে যা।”
ধারা ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো,
” ছাদে? ছাদে কেন যাবো? এই বৃষ্টির মাঝে তুমি আমাকে ছাদে যেতে বলছো? এমনিতে তো আমি বৃষ্টির মাঝে ছাদে যেতে চাইলে ছাদের ধারে কাছেও যেতে দাও না।”
“যা না গেলেই দেখতে পাবি, এত প্রশ্ন করিস না তো। তাড়াতাড়ি ছাদে যা। বৃষ্টি থেমে গেছে, আবার নামতেও বা কতক্ষণ, তার আগেই যা।”
বলেই রুবিনা মনে মনে একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
ধারা কিছুই বুঝতে পারছে না যে ছাদে আসলে ওর কাজ টা কী? মা একটু বললেই তো হতো, কিছু না বলেই চলে গেল। ধারা উঠে বসলো। বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসলো। ঘুম ঘুম ভাবটা অনেকটাই কেটে গেছে। ধারা টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে নিলো। মাথার চুল গুলোও অগোছালো হয়ে আছে, যখন চুল আঁচড়াতে যাবে, তখনই ওর চোখ পড়ল বিছানার উপর। আরে ও তো এটা খেয়ালই করেনি। মাথা আঁচড়ানো রেখে ধারা ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে বিছানার কাছে এগিয়ে আসলো। বিছানার উপর একটা গিফট বক্স রাখা। কী ব্যাপার এখানে গিফট বক্স আসলো কীভাবে?
ধারা মনে করতে লাগলো আজকে কোনো বিশেষ দিন কি না? না এমন কোনো বিশেষ দিনের কথা মনে পড়লো না। আচ্ছা কী আছে এর ভিতর? ধারা আর কোনো কিছু না ভেবেই গিফট বক্সটা খুলতে লাগলো। খুলে দেখলো খুব সুন্দর একটা সবুজ রঙের শাড়ি। ধারা শাড়িটা দেখে ভীষণ অবাক হলো! এগুলো আসলো কোথা থেকে ওর রুমে ? আর এটা কেই বা ওর রুমে রাখলো? মা? কিন্তু মা কেন শাড়ি দেবে ? তাও আবার এভাবে।
ধারা শাড়িটা হাতে নিয়ে একটা ভাঁজ খুলতেই কিছু একটা নিচে পড়ে গেল। ধারা তাকিয়ে দেখল একটা চিরকুট। ধারা মেঝে থেকে চিরকুট টা তুলে নিলো। ধারা চিরকুটটা পড়তে শুরু করলো।
চিরকুটে লেখা…
*** আমি তোমাকে কখনো শ্রাবণের মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে দুঃখ বিলাস করতে দেবো না। তোমাকে দুঃখ বিলাসি রূপে আমি কখনো দেখতে চাইনা, আমি চাই ওই পরির মতো মুখটায় সব সময় আনন্দের পরশ লেগে থাকুক।
তোমার ঐ মায়াবী চোখ দুটোতে কখনো কান্না শোভা পাবে না, এখন থেকে ওই চোখে আর কখনো বৃষ্টির ধারা ঝরতে দেবো না। ওই চোখে থাকবে শুধু আমার হারিয়ে যাওয়ার মতো ভালোবাসার গভীরতা। ***
লেখা গুলো পড়ে ধারা খুব বেশি অবাক হলো! ধারার এই লেখা গুলো কোনো একটা কিছুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হচ্ছে, কিন্তু কিসের সাথে? ধারা অনেক ভাবলো কিন্তু ঠিক কিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সেটা খুঁজে বের করতে পারলো না। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
ধারার কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে! কে এই শাড়ি আর চিরকুট পাঠালো ওর কাছে? আর ওর রুমেই বা রাখলো কে এগুলো? মা এই ব্যাপারে কিছু বললো না কেন? ছাদেই বা যেতে বললো কেন?
আর এই চিরকুটের লেখা… ধারা এত কিছু আর ভাবতে পারছে না, ওর মাথার ভিতর চিন্তারা জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
আচ্ছা কী আছে ছাদে ? মা হঠাৎ করেই ঘুম থেকে তুলে ছাদে যেতে বললো কেন? মায়ের কথায় কিছু একটা লুকানো ছিল, আচ্ছা ছাদে গেলেই কি এই সব কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে? ধারা শাড়িটা আর চিরকুটটা বিছানার উপর রেখে দিলো। আর এক মুহূর্ত ও এখানে দাঁড়াবে না! এখনই ওকে ছাদে যেতে হবে! ধারা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল ছাদের উদ্দেশ্য।
ধারা ছাদে পা রাখতেই একজন কে দেখতে পেল। মানুষটা অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আশ্চর্য! এই মানুষ টা ছাদে আসলো কীভাবে? একে ছাদে আসার অনুমতি দিলো কে? মায়ের পরিচিত কেউ ? পরিচিত না হলে তো কিছুতেই ছাদে আসতে দিতো না একে। আবার ওকেও ঘুম থেকে তুলে ছাদে পাঠিয়ে দিলো, এসব কী হচ্ছে? কে এই মানুষটা? মানুষ টাকে পিছন দিক থেকে দেখে একটু চেনা চেনা লাগছে! কিন্তু চিনতে পারছে না, কে এই মানুষটা?
মানুষটা আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ালো। মানুষটার মুখ দেখে ধারার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। হৃদপিণ্ড যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ! শ্বাসটাও যেন আটকে গেছে। ধারা বিশ্বাস করতে পারছে ওর সামনে যে মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে সে বাস্তব নাকি স্বপ্ন! সাদা শার্ট, কালো জিন্স পরা, শার্টের হাতা খানিক গুটিয়ে রাখা, চুল গুলো কপালের উপর পড়ে আছে, একেবারে সেই লোক। না ওর কোথাও ভুল হচ্ছে। এ কিছুতেই…এ কিছুতেই অঝোর হতে পারে না !
অঝোর ধারার অবস্থা দেখে মৃদু মৃদু হাসছে, তবে শুধু ধারার অবস্থা দেখে নয়, দীর্ঘ অপেক্ষার পর আজকে সেই সু সময় এসেছে বলেও হাসছে। তৃপ্তির হাসি হাসছে। অঝোর ধারাকে শান্ত কণ্ঠে বললো,
“কী আজকে তোমার অনুভূতিরা কী বলে?”
ধারা অঝোরের কথা শুনে সচকিত হয়ে গেল। আরে এটা তো ওর স্বপ্ন না সত্যি। এত এত দিন পরে এই মানুষটা কেন এখানে আসছে? জিজ্ঞেস করতে গিয়েও পারলো না, মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। শুধু ওর ঠোঁট কাঁপছে। ধারা একটু নড়তেও পারছে না। মনে হচ্ছে কেউ যেন ওকে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে।
ধারার হৃদপিণ্ড যেন এখন সচল হলো, এখন দ্রুত গতিতে ছুটছে। ওর বিস্ময়ের শেষ নেই! এখানে এভাবে অঝোরকে দেখবে এ আশা ও কখনোই করেনি।
অঝোর ধারার থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়ানো ছিল, এবার ও ধারার সামনে এসে দাড়ালো। বললো,
“কী হলো কথা বলছো না কেন? এমনিতে তো খুব বক বক করো ! ভুলে গেলে নাকি আমায়? নাকি আমায় চিনতেই পারছো না? কোনটা? অবশ্য না চিনলেও সমস্যা নেই, আমি আবার চিনিয়ে দিতে পারব।”
অঝোরের কথা শুনে ধারা বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমন অঝোর কে ও আগে কখনো দেখেনি। ধারা বিস্মিত হয়ে কোনো রকম তোতলাতে তোতলাতে বললো,
“আ-আ-আ-আপনি!”
অঝোর ও এবার মজা করে ধারার মতো করে বললো,
“হুম, আ-আ-আ-আমি ।”
ধারার মনে পড়লো শাড়ির কথা, চিরকুটের কথা। হ্যাঁ এইবার মনে পড়ল চিরকুটের লেখার সাথে ও কিসের মিল খুঁজে পাচ্ছিল। আরে ও তো একদিন অঝোরকে ফেসবুকে কিছু একটা লিখে পাঠিয়েছিল, সেটার উত্তরই লেখা ছিল বোধ হয় ওই চিরকুটে। ওই শাড়ি, চিরকুট কি তবে অঝোর দিয়েছে? ধারা আবার ও অদ্ভূত ভাবে বললো,
“শাড়ি…শাড়ি…”
“হ্যাঁ শাড়ি। সে কি এরই মধ্যে তুমি তোমার ইচ্ছাটাও বদলে ফেলেছো ? সবুজ শাড়ি পরে রূপসা নদীর তীরে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা কি নেই আর এখন ? নাকি আমার সাথে সাথে সব ইচ্ছা, স্বপ্ন ভুলে গিয়েছো?
ধারা কী থেকে যে কী বলবে কিছু ভেবেই পাচ্ছে না। ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না, ঠোঁট কাঁপছে, গলা কাঁপছে। প্রচণ্ড গরম ও লাগছে। ধারা আগের মতোই বললো,
“না মা…মানে…”
ধারা আর কিছু বলতে পারল না। কী বলবে সেটা যেন খুঁজেই পাচ্ছে না।
অঝোর বললো,
” তো কী যাবে আমার সাথে রূপসার তীরে ? এখন সবুজ রঙের শাড়ি পরে আমার সাথে রূপসার তীরে যেতে আপত্তি নেই তো তোমার?”
অঝোরের কথা শুনে ধারার এখন প্রচুর পানির পিপাসা পেয়েছে, মনে হচ্ছে এক পুকুর পরিমাণ পানি ও এখন এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেলতে পারবে। এসব কী শুনছে ও? কারো স্বপ্নও তো মনে হয় এত রঙিন হয় না, ওর বাস্তবটা এত রঙিন হলো কীভাবে?
ধারাকে চুপ করে থাকতে দেখে অঝোর আবার বললো,
“কি আমার সাথে আর যাওয়ার ইচ্ছা নেই তাই তো?”
ধারা এখন কী বলবে? একটা কিছু তো বলতেই হবে! ধারা একটু ইতস্তত করে বললো,
“না মানে…আপনার সাথে গেলে মানুষ দেখলে কী বলবে?”
ধারার কথা শুনে অঝোর শব্দ করেই হেসে ফেললো।বললো,
“তা সেদিন তোমার মানুষের চিন্তা কোথায় ছিল?”
ধারা আমতা আমতা করে বললো,
“না আসলে সেদিন তো আমি এত কিছু বুঝিনি আর ভাবি ও নি ।”
” তা আমার হবু বউয়ের তো দেখি ভালোই বুঝ, বুদ্ধি হয়েছে। আমার হবু বউটা এখন কত কী ভাবছে।”
কথা গুলো বলে অঝোর আবার ও হেসে ফেললো।
ধারার মনে হলো ও এই মাত্র কারেন্টে শক খেয়েছে। যা শুনছে ঠিক শুনছে তো? ধারা বিস্ময়ে বলেই ফেললো,
“হবু বউ মানে ?”
“কিছু দিন পরেই তুমি আমার বউ হবে, তোমাকে তো হবু বউই বলবো না কি? আমাকে তোমার সারাদিন দেখতে ইচ্ছা করে। এখন যদি আমি অন্য কাউকে বিয়ে করি, তারপর তুমি যদি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকো, তাহলে আমার বউ তো আমায় ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে। তাই আমি ভাবলাম ডিভোর্স কেস না খেয়ে যে আমায় সারাজীবন দেখতে চায় আমি সেই বাচ্চা বাচ্চা মেয়েটাকেই বিয়ে করি।”
ধারা আর ঠিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, মনে হচ্ছে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। অঝোর ওকে বিয়ে করবে? সত্যি তো? বেশ কৌতূহলি হয়ে জিজ্ঞেসই করে ফেললো,
“আপনি সত্যি সত্যি বিয়ে করবেন আমায়? নাকি মজা করছেন?”
“আরে পাগলি আমাদের বিয়ে কিছু দিন আগেই ঠিক হয়ে গেছে, দুই পরিবারের সম্মতিতে।
আমার চাকরি হওয়ার পরেই আমার আম্মু তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। এমন কী তুমি যে আমাকে পছন্দ করো সেটাও তোমার আম্মুর কাছে বলেছে। তোমার আম্মুর কোনো আপত্তি ছিল না, তার নাকি পছন্দের ছিলাম আমি। কিন্তু তোমার আব্বু রাজি ছিল না। তোমার আম্মু অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করিয়েছে। এই তো কয়টা দিন আগেই আমাদের বিয়ে ঠিক হলো। তোমার আব্বু তোমার ভালো থাকাটাকে শেষমেশ প্রাধান্য দিয়েছে। সবাই জানতো শুধু তুমিই জানতে না এই ব্যাপারে। আমিই নিষেধ করেছিলাম তোমাকে কিছু না জানাতে। আমি নিজের মুখে বলেই তোমায় চমকে দিতে চেয়েছি। এত দিনের কষ্ট আমি এক নিমিষে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছি।
কষ্ট গুলো কি তোমার এখনও মনে আছে ধারা? ভুলে যাওনা সব কষ্ট।
ধারা আমি ও কিন্তু খুব কষ্টে ছিলাম তোমার জন্য। তোমায় ভেবেই আমার প্রত্যেকটা মুহূর্ত কেটেছে, তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে সব সময় অস্থির ছিলাম! তোমাকে পাওয়ার জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম, আমি ও যে তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি ধারা।”
হঠাৎ ই আবার ঝুম বৃষ্টি শুরু হয় গেল। একটু আগেও ছিটে ছিটে বৃষ্টি ছিল।
এত এত চমক ধারার জন্য অপেক্ষা করেছিল, ও তা আগে থেকে একটুও টের পেল না। অঝোর ওকে ভালোবাসে? ওকে পাওয়ার জন্য অঝোর এতটা পাগল ছিল? আর ও অঝোরের অনুভূতি গুলো বুঝতেই পারল না!
ধারার আবেগে, আনন্দে চোখে পানি চলে এলো। ও সেদিন অঝোরের কোনো কথাই বুঝতে পারেনি, কিন্তু আজ কেন জানি অঝোরের কথা গুলো পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ওর মানুষটা ওরই আছে, ওর জীবনেই থাকবে সারাজীবন। ধারা আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না, কেঁদেই ফেললো।
ধারাকে কাঁদতে দেখে অঝোর বললো,
“আজকেও তোমার চোখে পানি কেন ধারা? আমি এই চোখে কান্না দেখতে পারবো না। আজ আর এই চোখ থেকে অশ্রু না ঝরুক, আজ শুধু প্রকৃতির বৃষ্টিই ঝরে পড়ুক।”
ধারা কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“কাঁদতে দিন আমায়। আজকের এই কান্না সুখের কান্না, আমার স্বপ্ন পূরণের কান্না।
দেখুন না আজকের এই বৃষ্টিরাও আমার আনন্দের সাথে শামিল হয়েছে। আমার আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে আজ এই বৃষ্টিরাও সুখময় বৃষ্টি হয়ে অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছে।”
অঝোর ধারার কথা শুনে এক চিলতে সুখের হাসি হাসলো। তারপর আনন্দের সাথে বললো,
“হ্যাঁ আজকের এই শ্রাবণের বৃষ্টিরা আমাদের জীবনে অঝোরে ঝরে পড়া সুখময় বৃষ্টি ধারা।”
#বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আজ দুটো মানুষ মনের আনন্দে ভিজে যাচ্ছে অনবরত। আজকের এই সুখময় বৃষ্টি মানুষ দুটোর জীবনের সকল দুঃখ কষ্টকে ধুয়ে মুছে দিয়ে যাচ্ছে।
——-সমাপ্ত——
??Aaoge jab tum o saajana (2)
Angana phool khilenge
Barsega sawan
Barsega sawan jhoom jhoom ke
Do dil aise milenge
(Song ta story tar sathe akdom prefect)