সুখপাখি পর্ব ১

0
3666

সুখপাখি পর্ব ১
লেখা_আলভী_আহম্মেদ

: আমি রাজশাহীতে আসছি। তুমি দেখা করতে
চেয়েছিলে। আজ বিকালে দেখা করবে?
: হুম জানি। আপনার পোস্ট দেখেছি। আমিই আজ নক করতে চেয়েছিলাম।
: ও আচ্ছা
: আজ বিকাল ৪ টায় দেখা করবেন?
: আচ্ছা। কিন্তু কোথায়?
: আমি ঠিকানাটা একটু পরে টেক্সট করে দিব। : ওকে।
.
এটা হলো রোদেলা আর আজমানের কনভারসেশন। প্রায় ১
বছর আগে, হঠাৎ করেই আজমানের কাছে একটা মেয়ের
মেসেজ রিকোয়েস্ট আসলো… : রিকোয়েস্ট টা এক্সেপ্ট করবেন প্লিজ? খুব দরকার
ছিলো আপনার সাথে।
:জি বলেন। কে আপনি?
: আপনি আমাকে চিনবেন না। আমি আপনাকে চিনি।
: ওহ আচ্ছা। কি দরকার বলুন। : এভাবে বলতে পারবো না। আমি আপনার সাথে দেখা
করে সব কিছু বলতে চাই।
: কিন্তু কি এমন দরকার।
: দেখা হলেই বলবো। আপনি এখন কোথায় থাকেন?
ঢাকাতে নাকি ময়মনসিংহে? : ঢাকায়। আপনার বাসা?
: আমি রাজশাহীতে থাকি।
: রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসে আমার সাথে দেখা করতে
চাচ্ছেন?
: জী। কিন্তু আমি তো এখনও ছোট। একা একা আসতে পারবো না। একটু বড় হলেই আসবো ঢাকা।
: হা হা হা। আপনি ছোট?
: জী
: কিসে পড়েন?
: ক্লাস নাইনে। : কিন্তু তুমি দেখা করতো চাচ্ছ কেন? তা তো বুঝতে
পারছি না।
: বললাম তো, দেখা হলে বলবো। আচ্ছা আপনি যদি কখনও
রাজশাহীতে আসেন তাহলে কিন্তু আমাকে জানাবেন।
ওকে? : ওকে।
এভাবেই পরিচয়ের শুরুটা রোদেলার সাথে। তারপর থেকে
মাঝে মাঝেই কথা হতো ওর সাথে।কিন্তু এখনও
রোদেলার ব্যাপারে কিছুই জানে না আজমান। প্রতিবার
কথা হওয়ার সময় রোদেলা জানতে চাইতো, আপনি কবে আসবেন রাজশাহীতে, আপনার সাথে দেখা করাটা খুব
দরকার।
আজমান দুদিন ধরে রাজশাহীতে আছে। অফিসের একটা
কাজে রাজশাহীতে আসছে। কাজটা শেষ। কালই ঢাকায়
ব্যাক করবে। আজমানও রোদেলার সাথে দেখা করে এটা বুঝতে চায়, কি এমন দরকার থাকতে পারে মেয়েটার ওর
সাথে।
.
বিকাল ৪ টা
আজমান পার্কের বেঞ্চটাতে বসে আছে। আজমান রোদেলাকে এখনও দেখে নাই। কিন্তু রোদেলা ফেবুতে
আজমানের অনেক ফটো দেখেছে। তাই তো রোদেলার
চিনতে ভুল হবার কথা না।
৪ টা ১৫
: সরি ভাইয়া, স্কুল থেকে আসছি তো তাই একটু লেট হয়ে গেলো।
: রোদেলার গলা শুনে পিছনে তাকালো আজমান। স্কুল
ড্রেস পড়া ছোট্ট একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ওর সামনে।
মেয়েটা হাপাচ্ছে। হয়তো খুব দ্রুত আসছে তাই জোরে
জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মেয়েটার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। গালের তিলটা খুব স্পষ্ট দেখাচ্ছে।
: ভাইয়া, আমি রোদেলা। এটা বলতে বলতেই পাশে এসে
বসলো আজমানের।
: হুম। আমাকে তুমি কবে থেকে চেনো?
: প্রায় পাচ বছর : কিন্তু কিভাবে?
: এর উত্তরে রোদেলা একটা শুকনো হাসি দিলো।
ভাইয়া, আপনাকে একটা গল্প বলি?
: কিসের গল্প?
: আমার গল্প। : এটা বলার জন্য দেখা করতে চেয়েছিলে?
: হুম( মাথা নিচু করে)
: আচ্ছা বলো।
: আমার বয়স যখন ২ বছর তখন আমার বাবা মা একটা
এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর থেকে আমি নানু বাড়িতে থাকতাম। আমার বয়স যখন ৭ তখন নানুও মারা
যায়। বাবা মা কি তা আমি তখন বুঝতাম, তাই তাদের চলে
যাওয়াটাও তেমন অনুভব করতে পারি নি। হয়তো নানু সেই
শূন্যতা কখনও বুঝতে দেয় নি। কিন্তু নানু চলে যাওয়ার পর
বুঝতে পারলাম, এই পৃথিবীতে আমার জন্য আর কেউ নেই.। আমার মা বাবা নেই। মা বাবা হারানোর কষ্ট টা
আমাকে আকড়ে ধরলো। আমার নতুন জীবন শুরু হলো বড়
মামার বাসায় রাজশাহীতে।
: তোমার আর কোনো ভাই বোন নেই? আর তোমার দাদুর
বাড়ির কেউ কখনো খোজ নেই নি? : না। আমিই ছিলাম বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। দাদু
বাড়ির কেউ কেউ মাঝে মাঝে একটা বিস্কুটের প্যাকেট
কিংবা জুস নিয়ে আমাকে দেখতো আসতো। তারা
দায়িত্ব হিসেবে এটাই পালন করেছে।
: হুম। তারপর? : বড় মামার ২ ছেলে ১ মেয়ে ছিলো। মামি সবসময় এটা
বুঝাতেন, আমি ওদের ঝামেলা ছাড়া কিছুই না। সবটা
বুঝতে পারতাম, কিন্তু কিচ্ছু করার ছিলো না আমার।
আমার মামাতো ভাই বোনেরা পড়াশোনা করতো কেজি
স্কুলে আর আমি পড়তাম প্রাইমারীতে। এভাবেই চলছিলো সবকিছু।
: কিছু খাবে?
: না
: আচ্ছা, তারপর বলো
: মামাতো ভাই বোনদের পড়ানোর জন্য একটা প্রাইভেট টিউটর রাখা হলো। ঐ টিচার বুবুটা খুব আদর করতো আমায়।
বুবু তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ছাত্রী।
আমার অনাদর অবহেলা গুলা, বুবু খুব কাছে থেকে
দেখলো। আমিও খুব বেশিই নির্ভর হয়ে গিয়েছিলাম
বুবুটার প্রতি। বুবু প্রতিদিন পড়াতে আসার সময় আমার জন্য খাওয়ার কিছু নিয়ে আসতো। আর বলতো, কোনো
দরকার হলে আমাকে বলবা তুমি।
তারপর একদিন, মামি আমাকে খুব মারলো। ফ্লোরে পানি
ফেলেছিলাম, আর সেই পানিতে স্লিপ খেয়ে আমার
মামাতো ভাই পড়ে গিয়েছিলো তাই। বিকালে বুবু পড়াতে এসে দেখলো, আমার জ্বর এসে
গেছে। তারপর বুবুই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে
গিয়েছিলো। মামা খুব আদর করতো আমায়। কিন্তু
মামিকে কিছু বললেই তো সংসারে অশান্তি। তাই
মামাও চুপ থাকতেন। বুবু মামার সাথে কথা বলে আমাকে ওর সাথে নিয়ে গেলো। পার্মানেন্টলি বুবুর সাথে
থাকতে পেরে আমিও খুশি। আমি চলে আসার সময় মামি
বলেছিলো, আহ ঢং। দেখবো তো এসব ভালোবাসা কয়দিন
থাকে। আর এই যে মেয়ে, তোমার জন্য কিন্তু মামা
বাড়ির রাস্তা চিরদিনের জন্য বন্ধ। আমাকে যখন সবার সামনে খারাপ বানিয়ে বাইরের একটা মেয়ের সাথে চলে
যাচ্ছো। তাহলে আমি খারাপই থাকবো। আর ঢুকতে দিবো
না আমার বাসায়। এর উত্তরে বুবু একগাল হাসি দিয়েছিল।
: তো এখন তুমি তোমার বুবুর সাথে থাকো এখন?
: হুম। : এগুলার সাথে আমার সম্পর্ক কি?
: আমার কথা তো শেষ হয় নি।
: আচ্ছা। বলো
: বাদাম খাবেন ভাইয়া? আমার ব্যাগে বাদাম আছে।
খোসা ছাড়ানো বাদাম। আপনি তো বাদাম খুব পছন্দ করেন।
: তা ঠিক কিন্তু তুমি কি করে জানো?
: আমি আরও অনেক কিছুই জানি।
: আচ্ছা বলো। কি কি জানো তুমি।
: বলবো। কিন্তু আগে আমি আমার বুবুর কথা বলতে চাই। : আচ্ছা বলো।
: বুবু ক্লাস ফাইভে থানা লেভেলে ৩য় স্থান অধিকার করে
হাই স্কুলে ভর্তি হল। বুবুর মন খুব খারাপ কারণ সে ১ম স্থান
নিতে পারে নি। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে স্বভাবতই
খুব আদরের ছিল। ক্লাস এইটেও থানা লেভেলে ৫ম স্থান অধিকার করে ক্লাস নাইনে উঠলো। তারপর শুরু হলো বুবুর
নতুন জীবন। আমার বুবু প্রেমে পড়লো। জীবনের প্রথম
প্রেম।
: তুমি কার কথা বলছো?( কাপা কাপা কন্ঠে)
:আমার বুবুর কথা শুনে যার কথা মনে পড়ে আপনার কন্ঠ কাপছে আমি তার কথাই বলছি, আজমান আহম্মদ।
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে