সিক্রেট_এজেন্ট পর্বঃ ০৯ ( শেষ পর্ব)
– আবির খান
রূপা চোখ খুলে যাকে দেখে তাকে দেখে চিৎকার করতে নিলে সে রূপার মুখটা বন্ধ করে দেয় ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে। রূপা আফরানকে ওর চোখের সামনে দেখে ভিষণ ভয় পেয়ে যায়। তাই চিৎকার করতে নেয়। কিন্তু আফরান ওর ঠোঁট দিয়ে এই সুযোগে রূপার মিষ্টি ঠোঁটের স্বাদ নেয়। আফরান ঠিক সেদিনের মতো রূপার ঠোঁটের স্বাদ নিয়ে যাচ্ছে। রূপার নয়ন থেকে অশ্রু ঝরছে। তবে এটা খুশির নাকি দুঃখের তা অজানা। আজ এই স্বাদ নেওয়াটা বেশ জমে উঠেছে। কারণ আজ রূপাও মনের অজান্তেই আফরানকে সাড়া দিয়ে যাচ্ছে। দুজন যেন দুজনকে ছাড়ছেই না। দুজনার গরম নিঃশ্বাস একসাথে মিশে একদম একাকার অবস্থা। যেন দীর্ঘ দিনের ইচ্ছা আজ পূরণ হয়েছে। আফরান দুষ্টামি করে একটু কামড় দেয় রূপার ঠোঁটে। রূপাও দিয়ে দেয় এক কামড়। কিন্তু রূপা এতোটা মগ্ন ছিলো যে কামড়টা একটু জোরেই পরে। আফরান উহহ করে ব্যাথা পেয়ে রূপার নরম ভিজে ঠোঁটটাকে ছেড়ে দেয়। আফরান ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে,
আফরানঃ উফফফ….এভাবে কেউ কামড় দেয়??
রূপা তাড়াতাড়ি উঠে বসে ব্যস্ত হয়ে আফরানের ঠোঁট হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে দিতে বলছে,
রূপাঃ আহহ বেশি ব্যাথা পেয়েছেন?? আমি ইচ্ছা করে দেইনি। আপনি দিয়েছেন তাই আমিও দিয়েছি। সরি। অসহায় ভাবে।
আফরান রূপার মায়াবী মলিন অশ্রুসিক্ত নয়নের পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রূপা আফরানের তাকানি দেখে লজ্জায় শেষ। আফরান উঠে রূপাকে ওর সাথে জড়িয়ে ধরে। রূপা আর পারে না। আফরানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে দেয়। যেন কোনো বাচ্চার কাছ থেকে তার প্রিয় জিনিসটা কেউ কেড়ে নিয়ে গেছে সেভাবে কাঁদছে রূপা।
আফরানঃ আহহহা এভাবে কাঁদছো কেনো?? আমিতো আছি।
রূপা আফরানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
রূপাঃ আমাকে মাফ করে দিন। আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। বিশ্বাস করুন, আপনি যা কষ্ট পেয়েছেন তার থেকে কয়েকশত গুন বেশি কষ্ট আমি পাচ্ছি। আপনাকে না পাওয়ার কষ্ট। আপনাকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট।
আফরান রূপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
আফরানঃ আমাকে ভালোবাসো??
রূপাঃ হ্যাঁ অনেক বেশি। নিজের থেকেও অনেক বেশি। জীবন কি জিনিস বুঝি নি। ভালোবাসা কেমন তাও জানতাম না। কিন্তু আপনার স্পর্শে এসে বুঝেছি জীবন কতো সুন্দর আর ভালোবাসা সাথে থাকলে কতো ভালো লাগে। অনেক ভালোবাসি আপনাকে।
আফরানের মুখের দিকে তাকিয়ে নেশাকাতর কণ্ঠে বলল রূপা।
আফরানঃ আমাকে বিয়ে করবে?? আমার এই জীবনের সঙ্গী হবে??
রূপাঃ এ আমার সৌভাগ্য হবে আপনার মতো মানুষের স্ত্রী হওয়া।
আফরান খুশিতে রূপার ঠোঁটে আবার ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। দুজন আবার হারিয়ে যায় এক অন্য জগতে। সেখানে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
আফরান আর রূপা একসাথে বসে আছে। রূপা আফরানের বুকে মাথা রেখে আফরানকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আফরান গম্ভীর গলায় বলল,
আফরানঃ তোমার বাবা কোথায়??
রূপাঃ আমি বলবো না। আপনি তাকেও মেরে ফেলবেন।
আফরানঃ রূপা তার পাপের বোঝা যে অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। তাকে যে শাস্তি পেতেই হবে।
রূপাঃ আমাকে মাফ করবেন, আমি মেয়ে হয়ে আমার বাবার মৃত্যু আমি চাই না। তাকে মাফ করে দেন না প্লিজ।
আফরানঃ কি করে করবো বলো?? সেতো তার পাপ কাজ চালিয়েই যাচ্ছে। সে বেঁচে থাকলে দেশের মানুষের অনেক ক্ষতি হবে।
রূপা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
রূপাঃ আমার বাবাকে না মেরে অন্য শাস্তি দেওয়া যায়না?? অসহায় ভাবে।
আফরানঃ তার অপকর্মের শাস্তিতো একটাই, মৃত্যু। আর সেটা আমার হাতেই। অনেক মানুষকে নিরীহভাবে তোমার বাবা মেরেছে। কি করে তাকে অন্য শাস্তি দি বলো??
রূপাঃ আপনাকে আল্লাহর দোহাই লাগে আমার বাবাকে মেরেন না প্লিজ।
আফরানঃ আচ্ছা, তাহলে কিন্তু তোমার বাবাকে সারাজীবন কারাগারে থাকতে হবে। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
রূপাঃ হ্যাঁ আমি এতেই রাজি।
আফরানঃ তাহলে বলো কোথায় তোমার বাবা??
রূপাঃ আগে প্রমিজ করেন, বাবার কোনো ক্ষতি হতে দিবেন না??
আফরানঃ আচ্ছা প্রমিজ। তোমার বাবার কোনো ক্ষতি হবে না।
রূপাঃ আমি সাথে নিয়ে যাবো আপনাদের।
আফরানঃ আচ্ছা। তাহলে কাল তোমার বাবার রাজত্ব শেষ। আর আমাদের নতুন জীবন শুরু হবে। মাকে তোমার কথা বলেছি। মা রাজি। তোমাকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে যাবো। তারপর অনেক আদর করবো।
রূপাঃ যাহ….আপনি অনেক দুষ্ট।
আফরানঃ হুম তোমার জন্য। আচ্ছা আমি যাই। কাল তোমার বাবাকে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
আফরান চলে যেতে নিতে রূপা ওর হাত ধরে টান দিয়ে বলে,
রূপাঃ বাবার কিছু হবে না তো?? অসহায় ভাবে।
আফরান রূপার হাতের উপর হাত রেখে বলে, কিচ্ছু হবে না।
হ্যাঁ রূপা জাফর খানের একমাত্র মেয়ে৷ জাফর খান তার নিজ মেয়েকে পাঠিয়ে ছিলো আফরানকে মারতে। কিন্তু তার মেয়ে আফরানের ভালোবাসায় জড়িয়ে পরে। তাই আর মারতে পারেনি।
আফরান ওর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে ওর সিক্রেট বেইসে চলে যায়। হাসান সাহেবকে ফোন দেয়।
আফরানঃ আঙ্কেল কাল জাফর খানকে ধরবো। তবে আমি ওকে মারতে পারবো না। ওকে যাবতজীবন কারাদন্ড দেওয়ার জন্য আমার ফরিয়াদ থাকবে৷
হাসান সাহেবঃ কিন্তু বাবা, ওকে পেলেতো ফাসি দিবে।
আফরানঃ আমি জানি না আঙ্কেল। আপনি কিছু করেন।
হাসান সাহেবঃ আচ্ছা বাবা আসল সমস্যাটা কি খুলে বলোতো??
আফরান এরপর সব খুলে বলল।
হাসান সাহেবঃ আচ্ছা। তাহলে ওকে আমাদের স্পেশাল কারাগারে রাখা হবে। কেউ জানবে না ওর কি হয়েছে। ওখানে একা একা থেকে মরবে৷
আফরানঃ হুম। আঙ্কেল, কাল আপনাদের ফোর্স রেডি রাখবেন। আপনারা বাড়ির চারদিক ঘিরে রাখবেন। আমি ওকে ধরে নিয়ে আসবো।
হাসান সাহেবঃ আচ্ছা।
আফরানঃ তাহলে রাখি আঙ্কেল। বাকি ডিটেইলস আমি ম্যাসেজ করে দিবো।
হাসান সাহেবঃ ওকে।
ফোন রেখে আফরান ওর বন্ধুদের কল দেয়।
আফরানঃ শোন, জাফর খানের আস্তানার সন্ধান পেয়েছি। কাল অ্যাটাক করবো। তোরা রেডি থাক।
নিলয়ঃ হ্যাঁ দোস্ত কাল ও শেষ।
আফরানঃ না, রূপার জন্য পারবো না। ওকে যাবতজীবন কারাদন্ড দেওয়া হবে। সবাই জানবে ও আর নাই।
সবাইঃ ওহহ….
আফরানঃ আমি সব ডিটেইলস পাঠিয়ে দিচ্ছি তোরা পড়ে নিস৷
সবাইঃ ওকে।
পরদিন সকালে,
আফরান সবাইকে নিয়ে জাফর খানের আস্তানায় চলে যায়। সাথে রূপাও ছিলো তবে গাড়িতে। রূপা গাড়িতে বসে কাঁদছে। হাসান সাহেব তার ফোর্স নিয়ে বাড়ির আশপাশ সব ঘেরাও করে রেখেছে। আফরান আর ওর বন্ধুরা মিলে ব্যাটেলিয়নদের মতো অ্যাটাক করে। ৬ জনে বাসার ভিতরে ঢুকেই স্মোকিং বোমা মেরে সব গুন্ডাদের নিমিষেই নামিয়ে দেয়।
লোকঃ স্যার আমাদের উপর হামলা হয়েছে। চারদিকে পুলিশ। বাঁচার আর কোনো রাস্তা নেই।
জাফর খানঃ রূপা…হায়রে রূপা কি করলি এটা মা।
আফরান জাফর খানের সামনে ওই লোকটা মানে গুন্ডাকেও মেরে ফেলল। ধোঁয়াও শেষ। জাফর খান দেখলো ৬ জন সৈনিক। হাতে অশ্র। বাঁচার আর কোনো রাস্তা নেই। আজ জীবন এখানেই শেষ।
জাফর খানঃ কি হলো মারছিস না কেন?? মার আমাকে??
আফরানঃ তোকে তো এই বন্দুকের সবগুলা গুলি তোর শরীরে মারতাম। কিন্তু তোর ভাগ্য ভালো তোর মেয়েটাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তাই তোর জান ভিক্ষা দিয়েছি ও কথায়। তাই বলে ভাবিস না বেঁচে গিয়েছিস। যাবতজীবন কারাদন্ড হবে তোর। সেখানে মরবি তুই।
জাফর খান চুপ হয়ে আছে। কিছু বলার আর তার নেই। রাফি আর মামুন মিলে জাফর খানকে ধরে নিচে নিয়ে আসে। হাসান সাহেব আর রূপা দাঁড়িয়ে আছে। আফরান মাফিয়ার রাজা জাফর খানকে হাসান সাহেবের হাতে তুলে দিলো। জাফর খান তার মেয়ে রূপার দিকে তাকিয়ে আছে। রূপা অঝোরে কাঁদছে আর কাঁদছে। হাসান সাহেব জাফর খানকে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎই জাফর খান হাসান সাহেবের পিস্তলটা বের করে হাতে নেয়। সবাই সবার বন্দুক জাফর খানের দিকে তাক করে।
রূপাঃ বাবা এ তুমি কি করছো?? ভীতু হয়ে।
জাফর খানঃ মারে, জীবনে অনেক পাপ করে ফেলেছি। আমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে। সারাটা জীবন কষ্ট করে মরার চেয়ে একবারে মরে যাওয়া ভালো। বাবা আফরান, আমার মেয়েটার খেয়াল রেখো ওর সব দায়িত্ব তোমার। রূপা মা, আমাকে মাফ করে দিস। বিদায়।
রূপাঃ বাবায়ায়ায়ায়ায়ায়া……
আফরানঃ নায়ায়ায়া….
ঠাসসস……বিকট এক গুলির আওয়াজ। একটা রক্তাক্ত নিথর দেহ। আর সবার নিস্তব্ধতায় বাবা হারানো এক মেয়ের কান্নার মাঝে শেষ হলো সিক্রেট এজেন্টের গল্প।
– সমাপ্ত।
© আবির খান।
কেমন লেগেছে পুরো গল্পটা জানিয়ে একটি গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি আপনাদের কাছে।
জোশ bhiya অসাধারন একটা লেখা পড়লাম এই গল্পের season 2 নিয়ে আসবেন আবীর ভাইয়া plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz ? ? ? ? ? ? ? ? ? ? ? ? ? ? ? ? ?