সিক্রেট_এজেন্ট পর্বঃ ০৪

0
2299

সিক্রেট_এজেন্ট পর্বঃ ০৪
– আবির খান

আফরানের কথা মতো পানি এনে মেয়েটার মুখে পানির ছিটে দেওয়া হলে একটুপরই মেয়েটার জ্ঞান ফিরে আসে। আর জ্ঞান ফিরে আসতেই সে ভীতু ভাবে সবার দিকে তাকায়। আফরান বলে উঠে,”ভয় পাবে না। তুমি এখন সেইফ আছো। এখানে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না।” মেয়েটা মলিন চোখে আফরানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আফরান বলল,”কি হয়েছে তোমার?? এভাবে আমার কাছে এসে অজ্ঞান হয়ে গেলে??” মেয়েটা এবার ফেল ফেল করে কেঁদে দিলো। আফরান সহ বাকিরা বলল,”এই মেয়ে এভাবে কাঁদছো কেনো??বলো কি হয়েছে??” অনেকক্ষন কান্না করার পর অনেক রিকোয়েস্ট করার পর মেয়েটা মুখ খুলে বলল,”আমার সব শেষ।” মেয়েটার এ কথা শুনেই আফরানের বুকে যেন দুম করে একটা বারি লাগলো। আফরান অনেকটা চিন্তিত হয়ে বলল,”সব শেষ মানে?? কি হয়েছে??” মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,”আমার মাকে মেরে আমাকে এখানে অপহরণ করে নিয়ে আসে। কোনো রকম ওদের হাত থেকে অন্ধকারে পালিয়ে আসি। আমার এখন আর কেউ নেই। আমার মায়ায়ায়া….” আফরান হাপ ছেড়ে বাঁচলেও মেয়েটার জন্য ওর বড্ড খারাপ লাগছে। আফরান বলল,”তোরা ওর জন্য নিচ থেকে খাবার নিয়ে আয়। আমি দেখছি ওকে।” বাকিরা বিষ্ময়কর ভাবে আফরানের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। ওরা যেতে যেতে বলে,”ব্যাপার কিরে???আফরান এই মেয়েটার প্রতি এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেনো??” সালমান বলে উঠে, “আমাদের বন্ধু মনে হয় প্রেমে পরেছে।” বাকিরা হাসতে হাসতে বলে,”মনে হয়। হাহাহা”

এদিকে,

আফরান মেয়েটার কাছে গিয়ে বসে। মেয়েটার হাত দুটো ওর হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে বলে,”মন খারাপ করো না। আর কেঁদো না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকেই এই দুনিয়া থেকে নিয়ে যাবে। তোমার আম্মাকেও নিয়ে গেছেন। তিনি ভালো কাজ করে থাকলে অবশ্যই ভালো থাকবেন। তুমি আর কেঁদো না প্লিজ।” মেয়েটা আফরানের অনেক কাছেই ছিলো। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “এ দুনিয়ায় আমার আর কেউ নেই। কি নিয়ে এখন আমি বাঁচবো??” আফরানের খুব কষ্ট হচ্ছে মেয়েটাকে দেখে। মেয়েটাকে মনের অজান্তেই কাছে টেনে বুকের সাথে লাগিয়ে বলল,”কেঁদো না। আমি আছি। আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না।” মেয়েটা এত্তোক্ষন কাঁদছিলো। এখন কান্নাটা একটু ধীর করে বলল,”আপনি কে??আপনাকেতো চিনিনা। কি করে আপনাকে বিশ্বাস করবো?? আপনিও যদি ওদের মতো হোন।” আফরান মেয়েটিকে ওর চোখের সামনে এনে বলে,”দেখোতো, আমার চোখে কি তোমাকে ভোগ করার কোনো বিন্দুমাত্র ইচ্ছা দেখতে পাচ্ছো?? দেখো।” মেয়েটা কিছূক্ষন আফরানের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। আর বলে,”আমি একটু পানি খাবো।” আফরান দ্রুত উঠে পানি নিয়ে আসে। এনে মেয়েটাকে খেতে দেয়। মেয়েটা পানি পেয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়৷ আফরান বলে,”আর একগ্লাস দিবো??” মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে না বলে। আফরান আস্তে করে বলে,”তোমার নামটা জানতে পারি??” মেয়েটা কাঁদো কণ্ঠে বলল,”রূপা।” আফরান বলল,”বাহ!! খুব সুন্দর নাম ঠিক তোমার মতো।” রূপা আফরানের দিকে তাকালো। আফরান দেখলো রূপার চোখটা ভেজা। মুখটা মলিন। কিন্তু রূপার চোখ ও পড়তে পারছে না। আফরান বলল,”দেখো রূপা, বাবা-মা চিরকালের জন্য না। যার ভাগ্যে বাবা-মা যতটুকু সময়ের জন্য লেখা থাকে সে ততটুকু সময়ই বাবা-মাকে পাশে পায়। তাই আর কষ্ট পেয়েও না। আর তোমার যারা ক্ষতি করতে চেয়ে ছিলো তাদের আমি ছাড়ছি না। তুমি আর কেঁদো না প্লিজ। আমি আছি।” রূপা এমন এক দৃষ্টিতে আফরানের দিকে তাকালো যেন আফরানই এখন ওর শেষ সম্বল। হঠাৎই আফরানের বন্ধুরা খাবার নিয়ে চলে আসে। আফরান ওদের উদ্দেশ্য করে বলে,”তোরা বস আমি একটু আসছি।” বলেই হনহন করে চলে যায় আফরান। আফরানের এমন অদ্ভুত আচরণে অবশ্য ওর বন্ধুরা একটু বিচলিত হচ্ছিলো। আফরানের বন্ধুরা রূপার সামনে বিছানায় সবাই বসে রূপাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— শোনো, তুমি মোটেও ভয় পাবে না। এই যে দেখছো এখানে সবাইকে, আমরা সবাই তোমার ভাইয়ের মতো। তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না। তুমি নিশ্চিত থাকো। ঠিক আছে??

রূপা আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ওপাশ থেকে শামিম বলে উঠে,

— আরে ওর নামটাইতো জানা হলো না। তোমার নাম কি??

— রূপা। আস্তে করে বলল।

— বাহ!! খুব সুন্দর নাম। আমি হলাম তোমার শামিম ভাইয়া, ও হলো, সালমান,নিলয়,মামুন আর রাফি ভাইয়া।

এরমধ্যেই আফরান চলে আসলো।

— আর এইহলো তোমার আফরান ভাই….না শুধু আফরান। হাহাহা।

সবাই হেসে দিলো। রূপা মাথা নিচু করে আছে। আফরান কিছুই বুঝলো না।

— এই নেও এখানে কিছু জামা আছে তোমার জন্য। এখন থেকে এগুলো পরো। কাল আরো কিনে এনে দিবো তোমাকে নিয়ে।

আফরানের বন্ধুরা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। রূপাও বেশ অবাক হয়েছে।

— কিরে তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস যে?? চল বাইরে চল কথা আছে। আর তুমি জামা চেঞ্চ করে এই খাবারটুকু খেয়ে নেও আমরা আসছি। (আফরস্ন)

রূপা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

আফরান ওর বন্ধুদের নিয়ে বাইরে আসে।

— কি রে কাহিনি কি বলতো?? তুই তো মেয়েদের সাথে কখনো কথাই বলতি না আজ প্রথম দেখাই এই রূপাকে একদম আপন করে নিলি। বলতো কাহানি কি??(সালমান)

— সত্যি বলবো দোস্ত??

— হ্যাঁ সত্যিই বল। সবাই বলল।

— রূপার প্রেমে পরে গেছি মনে হয়। ওরতো কেউ নেই। তাই ভাবছি ওকেই আমি বিয়ে করবো। তবে…

— খুব ভালো কথা। আবার তবে কিসের??(শামিম)

— আমার ইচ্ছা আগে ওর সাথে প্রেম করবো। এ জীবনে যদি একটা প্রেমের স্বাদ না পাই তাহলে আর কি হলো। এই তিক্ত জীবনে একটু ভালোবাসার স্বাদ পেতে চাই। রূপাকে আমার ভালোবাসার কথা বলে ওকেই বিয়ে করে জীবনসঙ্গী করবো। ওকে সাথে নিয়ে ওর ভালোবাসা নিয়ে বাকিটা জীবন পাড় করবো।

— বাহ দোস্ত সেইতো। হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হবে। সবাই বলল।

— আচ্ছা শোন তোরা যা। দেখি তোর ভাবি কি করে।

— ভাবি?? বন্ধু রাতে আবার… উহুম উহুম। মজা করে। (রাফি)

— আরে আমি ওমন নাকি। যাতো তোরা।

— আচ্ছা। সবাই বলল।

আফরানের বন্ধুরা ওদের রুমে চলে গেলো। রুপা আফরানের সাথে আফরানের রুমেই থাকবে। আফরান চায়না রূপা ওর চোখের আড়াল হোক। আফরান দরজায় নক দিয়ে বলল,

— ভিতরে আসতে পারি। (আফরান)

ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো।

— জ্বি আসুন। (রূপা)

আফরান ভিতরে ঢুকে দেখে রূপা আফরানের কেনা জামাটা পরে আছে। খুব সুন্দর লাগছে রূপাকে। নীল একটা জামা পরে আছে রূপা। নীল আফরানের অনেক পছন্দ। তাই রূপার জন্য নীল জামা কিনে আনা। রূপাকে এখন একদম নীল পরী লাগছে। আফরান দেখে রূপা মুখ মলিন করে চুপচাপ বসে আছে বিছানায়। পাশে খাবারটাও আগের মতো পরে আছে। তাই আফরান বলে উঠলো,

— কি হলো খাবার খেলেনা যে।

— খাবো না ভালো লাগছে না। মায়ের কথা খুব মনে পরছে। (রূপা)

আফরান রূপার সামনে বসে। রূপা মাথা নিচু করে ছিলো। আফরান রূপার হাতের উপর ওর হাত রাখে। রূপা আফরানের দিকে তাকায়। আফরান রূপার মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

— আমি আছি সবসময় তোমার সাথে। আজ থেকে তোমার সব দায়িত্ব আমার৷ তুমি আর একা নও। আমি আছি।

— একটা অচেনা মেয়েকে এভাবে এতো তাড়াতাড়ি আপন করে নিচ্ছেন??কেনো??

— সব কিছুর কারণ থাকে না। কিছু কথা কিছু জিনিস মন থেকে করতে হয়। তাই করছি।

— হুম।

— হয়েছে আর মন খারাপ করতে হবে না। এখন খাবে চলো।

— না আমার খিদে নেই।

— বুঝেছি।

আফরান ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে খাবার বেড়ে প্লেটে নিয়ে রূপার কাছে গিয়ে বসে বলে,

— নেও হা করো।

রূপা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে। এ মানুষটাকে যতই রূপা দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। এতো ভালো মানুষ যে এখনো দুনিয়াতে বেঁচে আছে রূপার জানা ছিলো না। রূপা আফরানের দিকে তাকিয়ে হা করে খাবার খায়। খেতে খেতে রূপার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে।

— আহা কাঁদছো কেনো??

— জানি না। মনের অজান্তেই কান্না আসছে।

— আচ্ছা আর কেঁদো না। এইযে খাওয়া শেষ।

— আমার মাও আমাকে একসময় এভাবে খাইয়ে দিতো। তিনি আজ নেই।

— থাক আমি খাইয়ে দিবো নে তোমাকে এভাবে।

— না আমার লজ্জা করে। অামি একা খেতে পারবো। আপনি অনেক ভালো মানুষ। একটা সুন্দরী যুবতী মেয়ে সাথে থাকতেও আপনি তার কোনো ক্ষতি না করে বরং তার যত্ন করছেন। সত্যিই আপনি অনেক ভালো।

আফরান রূপার মুখে খাবার দিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল,

— আমি ভালোদের জন্য ভালো আবার খারাপদের জন্য অনেক খারাপ।

— আচ্ছা আপনি কি করেন??

— আমি…আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি সাথে আমার বন্ধুরাও।

— আচ্ছা।

— দেখেছো খাওয়া শেষ। তুমিতো খেতেই চাচ্ছিলে না। চলো মুখ ধুয়ে আসবে৷

— হুম।

রুপা মুখ ধুয়ে ওর বিছানায় এসে বসে। আফরান হাত ধুয়ে একদম ফ্রেশ হয়ে নাইট ড্রেস পরে ঘুমাতে আসে। আফরান বাইরে এসে বলে,

— ঘুমিয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে। কাল তোমাকে নিয়ে বের হবো। আর মন খারাপ করো না। সব ভাগ্য ভেবে ঘুমিয়ে পরো।

— আচ্ছা।

রুপা চুপচাপ শুয়ে পরে অন্যদিকে ফিরে। আফরানের মনে কেন জানি অনেক শান্তি লাগছে। ভালোবাসার মানুষটা একদম ওর কাছে। শুধু ছুতে পারছে না। এরপর আফরানও শুয়ে পরে। শুয়ে শুয়ে রূপার কথা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু হঠাৎ মধ্যেরাতে আফরান…

চলবে….

গল্পটির প্রতি মোড়ে মোড়ে থাকছে ভিন্নতা। যা আপনাকে অন্যরকম আনন্দ দিবে। তাই সাথে থাকুন। আর কেমন লেগেছে জানিয়েন কিন্তু।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে