সিক্রেট এজেন্ট পর্বঃ ০৩

0
2466

সিক্রেট এজেন্ট পর্বঃ ০৩
– আবির খান

— স্যার একটা ইনফরমেশন পাইছি। (লোক)

— কি?? (জাফর খান)

— সিক্রেট এজেন্টের নাম জানতে পারছি। আর সিসি টিভি ফুটেজ থেকে ওর একটা ছবিও পাইছি।

— বাইচা গেলি এবার। তাড়াতাড়ি ক নাম কি ওর।

— স্যার, আফরান। আর ছবি আমি পাঠাইতাছি।

— হুম পাঠা। ওর শেষ আইসা পরছে এই ছবির সাথে। ওরে আমার হাত থেকে অার কেউ বাঁচাতে পারবে না। কেউ না। হাহাহা।

রাতে,

“মা….মা…কই???” আফরান ওর মাকে ডাকছে আর ব্যাগ গুছাচ্ছে। পাশের রুম থেকে আফরানের মা তাড়াতাড়ি আফরানের রুমে ঢুকলো আর দেখে আফরান ব্যাগ গুছাচ্ছে। “কি রে খোকা কই যাচ্ছিস??” আফরানের মা অবাক স্বরে বলল। আফরান মায়ের কাছে গিয়ে মাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে বলল,”মা, আফিসের কাজে কদিনের জন্য কক্সবাজার যাচ্ছি। তুমি কোনো টেনশন করোনা। শুধু আমার জন্য দোয়া করো।” আফরানের মা অসহায় ভাবে আফরানের দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,” আচ্ছা যা। কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরিস বাবা। আর এবার ফিরে কিন্তু বিয়েটা করতেই হবে।” আফরান মুখে হাসি টেনে বলল,” আচ্ছা মা এবার সত্যিই যাও ফিরে এসে বিয়ে করবো।” আফরানের মা অনেক খুশি হয়ে গেলেন আর বললেন,” আচ্ছা যা তাহলে। রওনা দিবি কখন??” আফরান বলল,”এইতো একটু পর।” “কি বলিস এতো রাতে??” আফরানের মা অনেক অবাক হয়ে বলল। “হ্যাঁ মা, এখন রওনা না দিলে সকালে পৌঁছাবো কি করে বলো??” আফরান বলল। “আচ্ছা যা। আল্লাহ তোর মঙ্গল করুক।” আফরানের মা ওর মাথায় হাত দিয়ে বলল। এরপর আফরান মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য।

যথারীতি সকালে গিয়ে পৌছায় আফরান এবং ওর বন্ধুরা। সবাই গাড়ি নিয়ে একসাথে আগে ওদের সিক্রেট বেইসে চলে যায়। সেখানে গাড়ি পার্ক করে আর্মস সহ যাবতীয় যা যা ঢাকা থেকে আনা হয়েছিলো সব আনলোড করে সিক্রেট বেইসে রাখা হয়।

আফরান ওর বন্ধুদের বলল,”শোন, আমরা এখান থেকে দুটো গাড়ি নিবো। একটায় শুধু আমি। আর একটায় তোরা সবাই। ঠিক আছে??” বাকিরা বলল,”ওকে দোস্ত। কোনো সমস্যা নেই। ” আফরান হাসি দিয়ে বলল,”গুড, আরেরকটা খুশির খবর হলো আমরা এখানে কদিন মজা করবো। তাই আগে আগেই এসে পরেছি।” বাকিরা অনেক খুশি হয়ে বলে,”কি বলিস সত্যিই। চল চল তাড়াতাড়ি চল।” আফরান বলল, “হুম যাবো তার আগে এগুলো ধর। এগুলো সব রাশিয়ান। তোদের সিকিউরিটির জন্য৷ ছোট বাট অনেক পাওয়ার ফুল। বাইরে বের হলে সবাই এটা সাথে রাখবি।” সবাই আফরানকে জড়িয়ে ধরে বলল,”সত্যিই ভাই তোর মতো কেউ হয়না। তুই কখনোই নিজের কথা ভাবিস না। সবসময় আমাদের কথা ভাবিস। তুই না থাকলে আমরা কিচ্ছুনা।” আফরান কিছুটা হেসে বলল,”বোকারা, তোরা বুঝিস না কেন। তোরা হলি আমার শরীরের অঙ্গ। তোদের কোনো ক্ষতি হওয়া মানেই আমার ক্ষতি হওয়া। তাই তোদের নিরাপত্তা সবার আগে। এবার চল মজা করতে যাই।” বাকিরা খুশি হয়ে বলল,”হ্যাঁ হ্যাঁ চল।”

এরপর ওরা সবাই হোটেলে চলে আসে। সবার জন্যই আলাদা রুম নেওয়া হয়। সবার রুমেই একটা বেড ছিলো। শুধু আফরানের রুমে দুটো বেড ছিলো। আর অনেক বড়ও ছিলো। কারণ আফরান জানতো ওর বন্ধুরা ওর কাছে এসেই থাকবে সারাদিন। শুধু রাতে নিজেদের রুমে গিয়ে ঘুমাবে। তাই এতো বড় রুম নেওয়া। আফরানের রুমটা একদম বিচের সাথে। বারান্দায় দাড়ালে সমুদ্র দেখা যায়। খুব সুন্দর ভিউ।

এরপর সবাই সবার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অনেকক্ষন বিশ্রাম নেয়। দুপুরের একসাথে খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে সবাই বিচে ঘুরতে বের হয়। পরন্ত বিকেল সূর্য মামাও বাড়ি যাবে একটু পর। আকাশে লাল আভা। খুব সুন্দর লাগছে। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ, তার শব্দ সব মিলিয়ে একটা অস্থির পরিবেশ। আফরান আর বন্ধুরা মিলে আগে বিচ’টা ভালো করে ঘুরে ঘুরে দেখছে। হঠাৎ আফরানের চোখ গেলো একটা বৃদ্ধ মহিলার দিকে। একা এক কোনায় কিছু শামুক আর ঝিনুক দিয়ে বানানো মালা নিয়ে বসে আছে। আফরান তার কাছে এগিয়ে গেলো সাথে ওর বন্ধুরাও।

আফরান বলল,” ভালো আছেন চাচি?? আপনি এই বয়সে এখানে??” মহিলাটা অসহায় ভাবে বলল, “কি করবো বাবা। পেটের যন্রনায় এসব কুড়িয়ে বিক্রি করে একবেলা ভাত খাই।” আফরান সহ বাকিদের মন অনেক খারাপ হয়ে গেলো। আফরান বলল, ” চাচি চলেন, আজকে আপনাকে নিয়ে একসাথে খাবো। আর এগুলো সব আমরা কিনে নিবো। চলেন।” মহিলাটা খুশি হয়ে বলল,”আরে খাওয়ান লাগবো না। এগুলো কিনলেই হবে।” আফরান অনেক খুশি হয়ে বলে,”চাচি আপনি আমাদের মায়ের মতো প্লিজ চলেন। না কইরেন না। ” এরপর অনেক অনুনয় বিনয় করার পর চাচিকে নিয়ে ওরা ওদের ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে যায়। সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাচি বেশ খুশি আর অবাকও হচ্ছে এত্তো বড় হোটেল দেখে। সে নাকি তার জন্মেও এসব দেখেনি। ওরা সবাই খেতে বসলে হোটেলের ওয়েটার’রা অনেক খুশি হয়ে ওদের অনেক খাবার এনে দেয় আর বলে,” স্যার, আমি আজ ৫ বছর এখানে কাজ করি। কিন্তু আপনাদের মতো মহৎ মানুষদের আগে কখনো দেখেনি। সত্যিই আপনারা মানুষের মতো মানুষ। নাহলে এদের কথা কজন ভাবে। আপনাদের যা লাগে বলবেন। আমি সব এনে দিবো” সবাই অনেক খুশি হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো। “বাবা আমার জন্মে তোমাদের মতো ভালো মানুষ আগে কখনো পাইমাই। আমি তোমাদের মায়ের মতো। আমি মা তোমাদের জন্য দোয়া করি। জীবনে যেন কোনো দিন তোমাদের কোনো ক্ষতি না হয়। তোমাদের সবার মনের ইচ্ছা যেন পূরণ হয়।” চাচি বলল। আর সবাই একসাথে আমিন বলে উঠলো। আফরান বলল,”চাচি এই ৫০০০ টাকাটা রাখেন। আপনি গরীব মানুষ যখন দরকার হবে টাকাটা ব্যবহার করবেন। আর এই কার্ডটাও রাখেন। কোনো সময় টাকার প্রয়োজন হলে শুধু একটা কল দিবেন।” মহিলাটা জোর দিয়ে বলে,”না বাবা না। আজকে যা করছো তাই অনেক। এসব লাগবে না বাবা। ” আফরান চাচির হাতে টাকা চেপে দিয়ে বলল,”ছেলে বলছেন না। না করবেন না। ছেলে হিসেবেই দিয়েছি। কোনো সমস্যা হলে শুধু একটা ফোন দিবেন। ” চাচি অনেক খুশি হয়ে বলল,”তোমরাও না। সত্যিই আল্লাহ তোমাদের সবসময় মঙ্গল করুক। ভালো থাকো বাবা তোমরা।” এরপর চাচিকে বিদায় দিয়ে আফরান ওরা হোটেলে ফিরে একটা ঘুম দেয়। ঘুম দিয়ে সবাই ওঠে রাত ৮ টার দিকে। সবাই ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে একসাথে বসে ব্লাক কফি খাচ্ছে। আজ রাতে আর কিছু খাবে না ওরা। দুপুরে আজ একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছে। শামিম বলল,”দোস্ত চল একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসি। দুপুরের খাবার এখনো হজম হয়নায়। ” সবাই হাসি দিয়ে বলল,”আচ্ছা চল।”

এরপর প্রায় রাত ৯ টার দিকে ওরা বিচে ঘুরতে বের হলো। মানুষ জন খুব কম। রাত হলে বিচে খুব কম মানুষই থাকে। কারণ ছিনতাই কারী অনেক বেশি। আফরানদের কোনো ভয়নাই। বরং এদের ছিনতাই কারী ধরলে আরো ভালো। শায়েস্তা করা যাবে।

আফরান আর ওর বন্ধুরা মিলে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাঁটছে। ঠান্ডা বাতাস এসে ওদের স্পর্শ করে যাচ্ছে। ওরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে। ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরেই চলে যায়। হঠাৎ আফরানের বুকে এসে কেউ জড়িয়ে ধরে অজ্ঞান হয়ে যায়। আফরান ফিল করে অনেক নরম কোনো বস্তু। বড় চুল। আফরান কোনো ভাবে তাকে ধরে নিচে বসে পরে। বাকিরা তাড়াতাড়ি ফোনের লাইট অন করে আফরানের দিকে মারে। আফরান এখন একটু আগে ওকে জড়িয়ে ধরে যে অজ্ঞান হলো তাকে ভালো করে দেখে। আফরান দেখে এ যে একটা মেয়ে। আফরান তার মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। আফরান মেয়েটিকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। এত্তো মায়াবী মায়াময় মুখ আফরান আগে কখনো দেখেনি। প্রচন্ড রকমের রূপবতী মেয়েটা। আফরান মেয়েটার ঘোরে পরে যায়। কিন্তু ওর ঘোর ভাঙে পাশ থেকে বলা সালমানের কথায়। সালমান বলে,”দোস্ত মেয়েটা কোনো বিপদে পরেছে। দেখ ওর জামা হাতার কাছ থেকে ছিড়া৷” আফরান এবার মেয়েটাকে ভালো করে দেখে। হ্যাঁ আসলেই কেমন জানি মেয়েটার অবস্থা। আফরান জোর দিয়ে বলল,” এত্তো গুলো লাইট জ্বালিয়েছিস কেন। বন্ধ কর। আর তোরাও কেমন এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছিস কেন অন্য দিকে তাকা।” সবাই ভয়ে লাইট অফ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আফরান ওর গায়ের শার্টটা খুলে মেয়েটাকে পরিয়ে দেয়৷ তারপর মেয়েটাকে তুলে কোলে নিয়ে নেয়। আফরান বলল, “হইছে চল।” বাকিরা ঘুরে আফরানকে দেখে অবাক। তবে ওরা খুশিও। কারণ একটা মেয়েকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। আফরান মেয়েটাকে নিয়ে সোজা হোটেলে চলে আসে। আফরানের এক্সট্রা বেডে মেয়েটাকে শুয়ে দেওয়া হয়। রাফি বলে উঠে, “দোস্ত এখন কি করবি??” আফরান বলল,”পানি দে। মুখে ছিটে দিয়ে দেখি জ্ঞান আসে কিনা।” আফরানের কথা মতো পানি এনে মেয়েটার মুখে পানির ছিটে দেওয়া হলে একটুপরই মেয়েটার জ্ঞান ফিরে আসে। আর জ্ঞান ফিরে আসতেই…

চলবে….

© আবির খান।

সবার ভালো সাড়া চাই তাহলে পরের অংশ তাড়াতাড়ি আসছে। আর কেমন লেগেছে জানিয়েন কিন্তু।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে