#সাদা_মেঘের_আকাশ
(১৮) শেষ পর্ব
লেখক: হানিফ আহমেদ
আমিনা শত চেষ্টা করছেন কান্না আটকানোর। কিন্তু কোনো ভাবেই পারছেন না কান্না আটকাতে, তবুও চেষ্টা করছেন তিনি। আজ উনার বুক ফেটে যাচ্ছে। এই পৃথিবীতে প্রিয় বলতে তার নিজের দুই সন্তানই। ১০ মিনিটের জন্য দেখা করার সুযোগ পেয়েছে ওরা। কান্না করছে বায়েজিদ এবং মালিহা। পৃথিবীতে একজন মায়ের সব থেকে কষ্ট হলো নিজের সন্তানের চোখের পানি দেখা। আমিনা সহ্য করতে পারছেন না। কোনো ভাবেই এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছেন না।
আম্মু তুমি বাড়ি কবে আসবে? বাড়িটা খুব একা লাগে আম্মু। রাতে ঘুম হয় না আমার। গলা দিয়ে ভাত নামে না আম্মু। চলো না আমাদের সাথে।
মালিহার কথাগুলো সহ্য করার ক্ষমতা তিনি পাচ্ছেন না। এই তো মনে হচ্ছে, এই বুঝি বুক ফেটে মা’রা যাবেন তিনি। শুধু বললেন,
মারে আমি যে আজ বন্দী, আমি আজ বন্দী কারাগারে। এখানে যেমন অপরাধী এবং নিরপরাধী মানুষের পঁচতে হয়। আর আমি তো একজন অপরাধীরে মা। আমি কী আর কখনো খোলা আকাশ দেখতে পাবো?
মায়ের কথা শুনে দুজনই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বায়েজিদ শুধু দাঁড়িয়ে নিজের মায়ের মলিন মুখটা দেখে যাচ্ছে। আমিনা বললেন,
তোদের কপালে যদি আমি থাকি, তাহলে হয়তো কখনো ফিরবো তোদের মাঝে।
মালিহা বলল,
আম্মু আমি তোমার সাথে থাকবো। তোমার কাছে আমি ভালো থাকবো আম্মু। আমাকে তোমার কাছে রেখে দাও।
আমিনা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিলেন। মনের মধ্যে ছোট্ট একটি কথা ফুটে উঠে।
এভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার পূর্বে একবার হলেও সন্তান দুটোর কথা ভাবতে পারতেন।
আমিনা আজ ভালো নেই। প্রতিশোধ নিয়ে ভালো থাকলেও তিনি আজ ভালো নেই। কলিজা দুইটার জন্য আজ তিনি ভালো নেই।
সময় শেষ হয়ে যায়। বায়েজিদ এবং মালিহাকে বিদায় নিতে হয়। মালিহা কান্না করছিল, যেতে চাচ্ছিল না। আমিনা দেয়ালে পিট ঠেকিয়ে কান্না করছেন। আজ ওরা ভালো নেই। আইন ঠিকই আজ তাকে চারদেয়ালে বন্দী করেছে। কিন্তু সেদিন যদি চৌধুরী পরিবারকে আইন নিজের হাতে নিয়ে নিতো। তাহলে আজ কতো মানুষ হাসতো, পুড়তো না কারো অন্তর।
কেন তাহলে এই আইন? যে আইন একটু টাকায় নিচুতে নেমে যায়।
নাওশিন হ্যাঁ বলতে ২টা মাস সময় নিয়ে নিলো।
নাওশিনের বয়স এখন আঠারো বছর তিন মাস।
আজ নাওশিনের বিয়ে। খুব সাধারণ ভাবে নিয়াজের সাথে তার বিয়ে হচ্ছে।
নাওশিনের পরনে আজ নিজের মায়ের বিয়ের শাড়ি। যা কিনে দিয়েছিলেন তার বাবা। এই শাড়ি দিয়েই স্বার্থপর মহিলাটি দ্বিতীয় বার বিয়ের স্বাদ নিয়েছে।
একটু পর পর নাওশিনের চোখ ভিজে যাচ্ছিল। আজ তার বিয়ে, কিন্তু তার আপন বলতে কেউ নেই। নেই কোনো র’ক্তের মানুষ। কিছু মানুষ বিশ্বাস করাতে বাধ্য করল, র’ক্তের না হয়েও খুব আপন হওয়া যায়। ব্যথায় ব্যথিত, সুখে সুখী, কান্নায় কান্না, সব কিছুতেই তাল মিলাতে পারে এই আপন হওয়া মানুষগুলো।
নাওশিন বউ সেজে বসে আছে নিজের বাবার রুমে। চোখে ফোটা ফোটা জল। একটুও সাজেনি নাওশিন। সাজতে তার ইচ্ছেও নেই, কী হবে এতো সেজে? কষ্ট বুকে নিয়ে কী নিজেকে সাজানো যায়?
নাওশিন বিয়েতে এমনি এমনি রাজি হয় নি।
অনেক গুলো শর্তের মাধ্যমে নাওশিন রাজি হয়েছে। এইজন্যই দুইটা মাস চলে যায় শুধ্য রাজি হতেই তার।
বিয়ের পর নিয়াজকে নিয়ে সে নিজের বাবার বাসায় থাকবে। এটাই তার সব শর্তের মা। আদিব সহ সবাই মেনে নেয় শর্তটি।
কিন্তু নিয়াজ, না নিয়াজ কোনো ভাবে এই শর্তে রাজি হয় নি। তবে তাকে রাজি করানো হয়েছে। নিয়াজের একটিই কথা।
নিজের ভাইদের ছেড়ে কোথাও যাবে না সে। তবুও তাকে রাজি করিয়েছে সবাই মিলে।
নিয়াজ রাজি হয়েছে। সে এটাই ভেবে রাজি হয়েছে যে,
বিয়ের পর নাওশিনের মনকে সে এমন ভাবে ভালো করবে, এতো ভালোবাসবে। এসব কিছুর জন্যই আস্তে আস্তে নাওশিন অতীত ভুলবে। অতীত তখন হবে শুধুই অতিথি। অতিথি যেমন হঠাৎ অসময়ে আসে বাড়িতে। নাওশিনের অতীতও হবে অসময়ে আসা অতিথি।
নিয়াজ কবুল বলে নিলেও নাওশিন তিন কবুল বলে দুইটা মিনিট নষ্ট করে নেয়। কারণ কান্নার জন্য সে কথা বলতে পারছিল না।
বিয়ের কাবিন মাত্র ১লক্ষ টাকা চেয়েছে নাওশিন। কোনো ভাবেই বেশি কাবিন চায় নি সে। একটি সম্পর্ক যদি ভালোবাসায়, বিশ্বাসে ভরে সুন্দর একটি সম্পর্ক হয়। তাহলে কী হবে এতো টাকা কাবিন নিয়ে।
নাওশিন এর বিদায় নেওয়ার সময় হয়। ছোটবেলায় অনেক বিয়ে দেখেছে সে। বিয়ের কনে নিজের বাবা, মা, ভাই এদের গলা জড়িয়ে কান্না করে বিদায় নেয়। কিন্তু আজ সে কার গলা জড়িয়ে কান্না করবে। কে আছে তার? বাবার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে আজ, যদিও ফিরে আসবে আবার, তবুও বিয়ের নীতিতে আজ সে বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়ি যাচ্ছে। কারো গলা জড়িয়ে কান্না করার মতো এমন কাউকেই নাওশিন পায় নি। নীরবে শব্দ ছাড়া কান্না করছে সে, চোখ থেকে জল পড়লেও, কোনো শব্দ নেই এই বিদায়ের কান্নায়। তবে এই বিদায়ে তার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।
নিয়াজ চুপটি করে বসে আছে নাওশিনের পাশে। সবাই আজ খুব খুশি৷ এমন একটি মিষ্টি মেয়েকে নিয়াজের বউ হিসেবে পেয়ে। নাওশিন বিছানার মধ্য জায়গায় বসে আছে একটি সাধারণ শাড়ি কাপড় পরে। রাত ১১টা ছুঁইছুঁই। নিয়াজ প্রথমেই বলল,
আজকেও কী তোমার মন খা’রাপ?
নাওশিন শুধু নিজের স্বামীর প্রশ্নটি শুনল, কোনো উত্তর দিলো না।
নিয়াজ এবার নাওশিনের হাতটি নিজের মুঠোয় নেয়।
এই যে হাতটি আমি ধরতে পেরেছি। এই অধিকার কী আমার বা আর কারো ছিলো নাওশিন? না ছিলো না, কিন্তু আজ সেই অধিকার আমি পেয়েছি। আজ আমি তোমার স্বামী।
নাওশিন চোখ তুলে তাকায়। এই মানুষটিকে তো সে খুব রাগী জানতো। তাহলে আজ কোথায় সেই রাগ?
নিয়াজ আবারও বলতে শুরু করে।
বিয়ে এমন একটি সম্পর্ক। যে সম্পর্কে দুইজন অপরিচিত মানুষ এক বিছানায় থাকে। সারাটা জীবন কাটানোর শপথ করে।
নাওশিন বলল,
আমার কেউ নাই জেনেও আপনি আমাকেই বিয়ে করলেন?
নিয়াজ হাসলো। আর বলল,
যার কেউ নাই, আজ তার সব আছে। তোমার আজ আমরা সবাই আছি। এই প্রশ্নটি যেন আমি আর কখনো কোনো ভাবেও না শুনি৷ ভুলেও যেন এমন প্রশ্ন না আসে মুখে।
নাওশিন চুপ থাকে। কিন্তু নিয়াজ আজ চুপ নেই।
তুমি আমার স্ত্রী। আর আমি তোমার স্বামী। আমি একজন পুরুষ হয়ে কখনো নিজের স্ত্রীর মন খা’রাপ দেখতে কখনো চাইবো না। তোমাকে এখনই হাসতে হবে। আর যদি না হাসো, তাহলে আমি,,
নাওশিন ভয় পেয়ে বলে উঠে,
তাহলে কী?
নিয়াজ মুচকি হেসে বলল,
এই মুখে যদি এখনই আমি হাসি না দেখি, তাহলে চিমটি দিয়ে কাঁদিয়ে দিবো। মন খা’রাপ করার থেকে কান্না করা ভালো।
নাওশিন নিজের অজান্তেই হেসে দেয়।
সত্যিই একটি সম্পর্ক খুব সুন্দর হয়। সুন্দর সম্পর্ক আরো সুন্দর হয় দুজন দুজনকে সম্মান করার মাধ্যমে। এই পৃথিবীতে সম্মান একটি উচ্চ আসন।
নিয়াজ সেই হাসি দেখছে। এই হাসিটি কখনো সে বিলীন হয়ে দিতে দিবে না। সে ভালোবাসবে। এতোটা ভালোবাসবে। নাওশিন যেন সারাক্ষণ তাকেই ভাবে। তাকেই যেন নিজের আকাশ বানাতে বাধ্য হয় নাওশিন।
নিয়াজ বলল,
যে কয়বার তোমার অতীত মনে হবে, ততবারই আমাকে বলবে আমার অতীত মনে হয়েছে আজ। তখন আমি এই মন খা’রাপের চেহারাকে কান্নায় রূপান্তরিত করব। কান্না করানোর হাজারো পদ্ধতি আমি জানি। হাসিখুশির দায়িত্ব ছেড়ে তখন কান্না করিয়ে অতীত ভুলিয়ে দিবো।
নাওশিন বলে উঠল,
না না আমি চিমটি খেতে পারবো না।
নিয়াজ হেসে দেয়। কষ্টে থাকা মানুষকে হাসানোর দায়িত্ব নিয়েছে। এভাবেই হাসাবে, চোখজোড়ায় খরা নামবে নাওশিনের। দুনিয়ার সব খরা হবে নাওশিনের ওই দুই চোখে।
আজ পত্রিকা জোড়ে একটিই খবর। চৌধুরী পরিবারের ৬জনের ফাঁ’সির রায় হয়েছে। এই খবরটি শুনে আজ সবাই খুব খুশী। এতোটা বছর পর আইন যেন তার পূর্ণতা পেয়েছে সঠিক বিচার করে। সেই ছয়জন জালাল চৌধুরী সহ তার পাঁচ চাচাতো ভাই৷ অন্যদের দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শাস্তি। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে কয়েকজনকে।
নিয়াজ এই খবরটি পড়ে শোনায় নাওশিনকে।
নাওশিন পেটে হাত দিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে এসে নিজের স্বামীর পাশে বসে। নাওশিন আজ খুশী। কিন্তু নিয়াজের দুই চোখে পানি। কারণ আজ তার পরিবারের খু’নিদের ফাঁ’সির রায় হয়েছে। এই পানি আনন্দের পানি।
বিয়ের চার বছর পর নাওশিন প্রেগন্যান্ট হয়েছে৷ অনেক অপেক্ষার পর নাওশিন এখন মা হতে চলছে।
নাওশিন নিজের বাবার বাসা থেকে দুই বছর পূর্বেই চলে এসেছে নিয়াজদের বিশাল বাসায়। আতিকার মৃ’ত্যুই ছিলো ওইখান থেকে চলে আসার কারণ। হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন আতিকা। নিজের একমাত্র সন্তানের জন্য চিন্তা করতে করতে মৃ’ত্যুর মুখেই ধাবিত হন তিনি। উনার অপেক্ষা শেষ হয় নি। আনিক ফিরেনি৷ হয়তো আর কখনো ফিরবে না। এতো অভিমান, রাগ আর প্রতিশোধ তাকে হারিয়ে দিয়েছে নিজের মায়ের থেকে।
আতিকার অপেক্ষার সমাপ্তি হয় নিজের পৃথিবী ত্যাগ করার মাধ্যমে। অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থেকে শুধুই একটি খবরের অপেক্ষা করতেন। এই বুঝি ছেলের কোনো খবর পাবেন। কিন্তু অপেক্ষাটি পূর্ণতা পায়নি। সব অপেক্ষা যদি পূর্ণতাই পেতো, তাহলে অপেক্ষা বলতে কিছুই থাকতো না।
আজ সাতটা ভাই মিষ্টি মুখ করছে। কারণ খু’নিদের শাস্তি হচ্ছে৷ নাওশিন এসব দেখছে। তার মনে শান্তি নাই। গর্ভে একটু একটু করে বড় হচ্ছে নিজের সন্তান।
তাকে সবাই মাথায় তুলে রাখছে। তবে তাকে একা না। সাথে সাইফের স্ত্রীকেও একই ভাবে যত্ন নিচ্ছে, সাইফের স্ত্রীও মা হচ্ছে।
সবাই আজ কতো খুশী। কিন্তু নাওশিন মনে মনে এতোটা খুশী না।
এতো এতো বিচার হচ্ছে। কিন্তু তার মায়ের কোনো বিচার হচ্ছে না এখনো। সেও তো চায় বাবার খু’নির শাস্তি হোক। কিন্তু এখনো কোনো কিছুই হচ্ছে না। এতোটা বছর চলে যায়, কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। তাহলে কী উনার শাস্তি হবে না?
যখন আকাশ লালচে হয়। তখন নীল আকাশ ভালোবাসার মানুষটিও বলে উঠে, আমি এই লালচে আকাশ ভালোবাসি।
মানুষ চোখে যা দেখে তাই তখন ভালোবাসে বা করতে চায়।
সাজেদা খা’রাপ পথে ছিলেন, তিনি সেটাই ভালোবেসেছেন। এখন যখন আকাশ লাল হওয়ার মতো উনার জীবনের পরিবর্তন হলো, তখন তিনি ভালো হতে চান।
আজ সাজেদা বুঝতে পারছেন, একটি সুযোগ পেলে তিনি একবারেই ভালো হয়ে যাবেন৷ আকাশের মতোই নিজেকে পরিবর্তন করতে চান। যেই আকাশকে সবাই ভালোবাসে, সেই আকাশের মতোই নিজেকে গড়তে চান।
কিন্তু উনার এই ইচ্ছেটা পূর্ণ হবে না। উনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। বন্দী চারদেয়ালে পঁচতে হবে উনাকে।
এই খবরে নাওশিন একবারেই খু’শি না। কারণ সে চায় না তার বাবার খু’নি বেঁচে থাকুক এই পৃথিবীতে।
কিন্তু এটা ভেবে নিজেকে সান্তনা দেয় নাওশিন।
একটু একটু কষ্ট পেয়ে মানুষটি মৃ’ত্যুর দিকে যেতে থাকুক।
তার বাবার খু’নির শাস্তি হয়েছে। সেটা যাবজ্জীবন।
নাওশিন চুপ করে বসে এসব ভাবছিল, নিয়াজ এসে পাশে বসে। নাওশিন মাথা রাখে তার কাঁধে।
নিয়াজ নিজের হাত রাখে নাওশিনের মাথায়।
তোমার মায়ের যাবজ্জীবন হয়েছে।
উঁহু উনি আমার মা না। আমার মা তো আমার বাবার মৃ’ত্যুর দিনেই হারিয়ে গিয়েছেন।
নিয়াজ কিছু বলল না। তবে অনুভব করল নাওশিন কান্না করছে। নাওশিনের দিকে তাকিয়ে দেখল সে, হ্যাঁ নাওশিন কান্না করছে।
একদম কান্না করবে না।
কিন্তু নাওশিন কথা শুনলো না। এবার শব্দ করে কেঁদে দেয়।
নাওশিন কান্না করলে আমি সবাইকে ডেকে তোমার কান্না দেখাবো সবাইকে।
নাওশিন ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়। কিন্তু তবুও চোখে পানি আছেই।
কেন কান্না করছো?
আচ্ছা বলো তো, আমি কেন কোনো খা’রাপ মায়ের গর্ভেই জন্মালাম।
নিয়াজ নাওশিনের একটি হাত নিজের হাত জোড়ার ভিতর নিয়ে বলল,
নাওশিন কোনো মা কখনো খা’রাপ হয় না। মা হলো নারী জাত, আর সেই নারী জাতে কিছু নারী খা’রাপ হয়৷
তুমি ভুল বললে। আমার মা ভালো সেটা আমি মনের মধ্যেও নিয়ে আসলে মনে হয় আমার মন মিথ্যে বলে।
নিয়াজ হেসেই বলল,
তুমি যখন শিশু ছিলে তখন তোমার মা তোমায় দুধ পান করিয়েছে। কই তখন তো উনি খা’রাপ ছিলেন না। হয়তো তিনি শেষে খা’রাপ হয়েছেন। কিন্তু প্রথমে তো ভালো ছিলেন।
নাওশিন কিছু বলল না। তার ভালো লাগছে না। সেও মা হতে চলছে। তাকে হতে হবে একজন ভালো মা। খুব খুব ভালো একজন মা।
আমিনা ভেবেছিলেন। সন্ধ্যের বক পাখি হয়ে ফিরবেন নিজের বাসায়। সাগরের ঢেউ হয়ে ভিজিয়ে দিবেন পাড়। কিন্তু ভাবনা ভাবনাই থেকে যায়। সবার রায়ের পর উনার রায়ও হয়েছে। আর সেটা ফাঁ’সি।
ফাঁ’সির রায়ে একটুও কষ্ট পাননি৷ কষ্ট পেয়েছেন দুইটা সন্তানের জন্য। যদিও ওরা এখন আর কাঁদে না। কিন্তু চোখগুলো খুব লাল থাকে। দুজনই যথেষ্ট বড় হয়েছে। মায়ের সামনে চোখের পানি ফেলা যাবে না সেটা বায়েজিদ অনেক পূর্বেই বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু মালিহা বুঝেছে এখন।
ওরা মায়ের সামনে কোনোভাবেই কাঁদে না। উকিল ধরেছিল বায়েজিদ নিজের মামার মাধ্যমে। কিন্তু কোনো কাজ হয় নি। যাবজ্জীবন হোক, কিন্তু ফাঁ’সি না। কিন্তু রায় হলো ফাঁ’সি।
আমিনা তাকিয়ে আছেন নিজের দুই সন্তানের দিকে। ফাঁ’সি হয়ে গেলে ওরা থাকবে কীভাবে। এতো কষ্ট ওরা সহ্য করতে পারবে? আমিনা শুধুই এখন ফাঁ’সি কার্যকর হওয়ার দিন গুনছেন। চৌধুরী পরিবারের ওদের ফাঁ’সি হবে প্রথম। তারপর উনার।
আমিনার এখন বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছে জাগছে। কিন্তু ইচ্ছেটা ইচ্ছেই রয়ে যাবে।
শাস্তি তাকে পেতেই হবে। কোনো ভাবে যদি বেঁচে যাওয়ার একটি পথ পেতেন। তাহলে হয়তো সেই পথেই হাটতেন। দুইটা সন্তানের জন্য তিনি বেঁচে থাকার দোয়া করতেন। কিন্তু তিনি যে অপরাধী।
চৌধুরী পরিবার, অহংকারী পরিবারের পতন হয়েছে। অ’ত্যাচারী পরিবারটি এখন পতনের মুখে। এই পরিবারের হাহাকারে আজ তাদের কেউ পাশে নাই। চাপা কান্নার সঙ্গী কেউ হচ্ছে না। কিন্তু মানুষ তো মানুষের জন্যই। অনেক সময় অনেকেই মিশে তাদের সাথে। একটু সঙ্গ পাওয়া জরুরী। যতোই হোক খোলা আকাশের নিচে থাকা চৌধুরী পরিবারের মানুষগুলো নিরপরাধ।
অ’ত্যাচারী মানুষ অ’ত্যাচার করবার পূর্বে কখনো ভাবে না, পতন বলে কিছু আছে।
লোভী মানুষ বুঝতেই পারে না লোভ মানুষকে শেষ করে দেয়।
পরকীয়ায় থাকা মানুষ যদি জানতো, সত্য একদিন প্রকাশ পাবে।
প্রতিশোধ নেওয়া মানুষ গুলো যদি জানতো, প্রতিশোধ নেওয়ার পর তাদের শাস্তি হবে। বাচ্চা বা আপনজন একা হয়ে যাবে।
রাগের মাথায় বাড়ি ছাড়া মানুষগুলো যদি জানতো, তাদের জন্য কেউ অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত হয়ে মৃ’ত্যুর মুখে চলে যায়।
কিন্তু মানুষ জানতে চায় না। রাগ দেখাবে, কেউ কষ্ট পাচ্ছে সেটা তারা দেখতে চায় না। মানুষ মানুষের জন্য। কেউ তার প্রমাণ দেয়। আবার কেউ দূরে সরিয়ে দেয়।
সুন্দর সবাই খুঁজে। কিন্তু নিজেকে , আশেপাশকে সুন্দর করতে ভুলে যায় মানুষ।
অপরাধ আড়ালে কিংবা সামনে হোক। তার শাস্তি হবেই। এটাই সত্য। কিন্তু আমরা অপরাধ করার পূর্বে সেটা ভুলে যাই।
কষ্টের পর সুখ আসে, যেমনে কান্না করা শিশুটি বাবা বা মায়ের কোলে যেয়ে হেসে দেয়।
কষ্টে থাকলেই আ’ত্মহত্যা করতে হবে, জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া মানুষ তখন তাই ভাবে। বেঁচে দেখুন না, নাওশিনের মতো কীভাবে জীবনটা সুন্দর হয়।
বাঁচতে হবে, বাঁচার জন্য আমরা বেঁচে থাকি। ম’রে যাওয়ার জন্য কেউ কখনো বাঁচে না। মানুষ চায় বাঁচতে, বাঁচতেই হবে। তাই তো আমাদের এতো জয় পরাজয়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,