#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
#অম্তিম_পর্ব
__ঠাসসস….
মাথা তুলে তাকাতেই আবারো ঠাসস…
-তুই এখানে সিয়াম?
কটমটে মুখ নিয়ে নিয়ে তাকিয়ে আছে সিয়াম ভাইয়া।মনে করিনি উনি আসবেন!একটু আগে উনিই আকাশবাবুকে পেছন থেকে এক ঝটকায় সামনে এনে দুটো চড় বসিয়ে দিয়েছেন।আর তখন থেকে আমি ঠাই দাড়িয়ে আছি!কি হচ্ছে?আকাশবাবু কিসব বলছেন?এখানেই বা কি হচ্ছে?কেনো হচ্ছে কিছুই বুঝছি না!সব মাথার উপর দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
-তুই কোন সাহসে আমায় চড় মারলি সিয়াম?তুই এখানেই বা কি করে আসলি?
আকাশবাবু আবার দু পা আমার দিকে এগিয়ে আসলেন।একটু ঝুকে বললেন,
-তুমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছো না!আমার কলস্ আমার এস এম এস সব তুমি ওকে দেখিয়েছো তাইতো?
শেষের কথাটা উনি জোরেই বললেন।একটা শুকনো ঠোক গিললাম।পেছন থেকে সিয়াম ভাইয়া ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
-তোর ব্রেভ কি করে হয় সিয়ার শরীরে হাত দেয়া?আর তুই তো…
-হা হা হা!হাসালি সিয়াম!ও আমার,অনলি মাইন!আন্ডারস্ট্যান্ড ইউ!
-আর একটা কথা বললে আমি তোর….
হাত তালি দিলেন আকাশবাবু!আশেপাশে থেকে কিছু লোক ঘিরে ধরলো আমাদের।এতক্ষণ যেখানটা জনমানবশূন্য হয়ে ছিলো আর হঠাৎ করে প্রায় বারো তেরোটার মতো লোক বেড়িয়ে এলো।সয়তানি হাসি নিয়ে আকাশবাবু বললেন,
-আমি আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি ডিয়ার ফ্রেন্ড!যদি!যদি ঘুনাক্ষরেও কেউ টের পায় যে সিয়া এখানে এমন জায়গায় আসবে তাহলে কেউই ওকে একা ছারবে না।আর তুই হলে তো কথাই নেই।যাগগে,দুটোকে বাধ তোরা।
সবাই একে একে এগিয়ে এলো।সিয়াম ভাইয়া অনেক চেষ্টা করেও পারেনি কাউকে আটকাতে।দুটো চেয়ারে বেঁধে দিলো আমাদের।তবে আশ্চর্য জনক ব্যাপার এটা যে মুখ বাধার আগে সিয়াম ভাইয়া একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়েছিলো।তারপর উনি শরীর ছেরে দেন।বেধে নিতে দেন তাকে আর আমাকে।তবে সেই হাসিটা আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।কেনো সেই হাসি দিলেন উনি?কেনো?
-দুটোকে এতটুকুও চোখের আরাল করবি না!আমার একটু কাজ আছে।আমি যাচ্ছি আররর মাই সি…
“সি” বলতে উনি আমায় বুঝিয়েছেন।পুরোনো চেয়ারের দুটো হাতলেই হাত দিয়ে হেলে বললেন,
-আমি আসছি সিয়া!তারপর এই সিয়ামের একটা ব্যবস্হা করে আমরা দুজনে…
তার কথার মাঝেই উমমম উমমম করতে লাগলাম।উনি সান্ত স্বরে বললেন,
-আস্তে আস্তেএএএ,এত তেজ?এতদিনে তো এটা আমার অজানা ছিলো।এনি ওয়ে,আমি আসছি সুইটহার্ট!
চলে গেলেন উনি।সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।কড়া নজরে!
.
এখনো নিশ্চিন্ত মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন সিয়াম ভাইয়া।এত বড় বিপদেও উনি ইনোসেন্ট মুখ নিয়ে তাকিয়ে?কিন্তু কেনো?শুধু আকাশবাবুর আমার সাথে করা কিছু কর্মকান্ডেই উনি রেগে যাচ্ছেন!
-তুই জানিস সিয়াম?আজই হয়তো তোর শেষ দিন!
এবার তিব্র রাগ হলো আমার।উনি মানুষ ও মারেন?এতটা জঘন্য মানুষ উনি?সিয়াম ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি নিশ্চিন্ত মুখ নিয়ে বললেন,
-কে জানে কার ভাগ্যে কি লেখা আছে।তবে মনে রাখিস ওস্তাদের মার শেষ রাতে!
-বন্দি থেকেও এতটা কনফিডেন্সে?ভালো!তবে,এটা কোনো কাজেই আসবে না।
সিয়াম ভাইয়া একটা অদ্ভুত হাসি দিলেন তারপর বললেন,
-বললামিই তো!আমার খেলা হবে শেষে।খেলাটা তুই শুরু করেছিস না?কিন্তু শেষটা আমিই করবো!
আকাশবাবু রাগি মুখ নিয়ে ঠাসসস করে একটা থাপ্পর দিলেন।সাদা ধবধবে ফর্সা মুখটা কেমন লাল রং ধারন করেছে ইতিমধ্যে।তবুও উনি নরমাল ফেস নিয়ে আছেন।এই জিনিসটাই খুব আশ্চর্যের।গালদুটো টিপে ধরলেন আকাশবাবু সিয়াম ভাইয়ার।রাগী কন্ঠে বললেন,
-সাট আপ ইওর মাউথ!কথাটা কম বল নাহলে যেটুকু সময় তোর জন্য বরাদ্দ রেখেছি সেটুকুও থাকবে না।
সিয়াম ভাইয়া ওভাবেই বললো,
-জন্ম মৃত্যু তো সম্পূর্ণটাই আল্লাহ তায়ালার হাতে।দেখা যাক কি হয়!
গাল ছেরে দিলেন উনি।দুটো অঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।পেছন ঘুরে আবারো কোথায় যাচ্ছিলেন আকাশবাবু।সিয়াম ভাইয়া আটকে দিয়ে বললেন,
-তোর হয়তো শেষ সময় নোয় কিন্তু তোর শাস্তির সময় ঘনিয়ে এসেছে।
উল্টোদিক হয়েই কথাগুলো শুনছিলেন উনি।কোনো রিয়েক্ট না করেই আবারো এক পা এগোলেন উনি।সিয়াম ভাইয়া চিৎকার দিয়ে বললো,
-আসুন অফিসার!
চমকে উঠলাম!উনি কাকে আসতে বললেন?অফিসার মানে পুলিশকে?তাই উনি এতটা স্বাভাবিক?আর এসব এসব উনি আগে থেকেই প্লান করে রেখেছিলেন!
এদিকে আকাশবাবু সিয়াম ভাইয়ার সামনে এসে দারিয়েছেন।আমি এখনো ভেবেই চলেছি।ভাবনায় বাধ দিয়ে আকাশবাবু বললেন,
-কি বললি তুই?তুই পুলিশকে এখানে ডেকে এনেছিস!তোকে তো..
-রিলাক্স মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড!তুই নিজেই দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছিস।
-তার মানে?
সিয়াম ভাইয়া অট্টহাসি দিয়ে বললেন,
-সপু,চন্দন তোরা সামনে আয়!
আশেপাশে তাকালাম!আকাশবাবুর পোষা গুন্ডাদের মধ্যে দুটো লোক সামনে এলো।উনি আবার বললেন,
-তুই যেমন ভেবে রেখেছিলি আমাদের বন্দি করবি ঠিক তেমনি আমারও সবটা আগে থেকেই চিন্তা করা ছিলো।আর এই সপু আর চন্দন এখানে আমি এদেরকে তোর চেলাদের দলে ডুকিয়ে দেই।অবশ্য আমি আগেই সবটা বলে রেখেছিলাম এদের।আর আমার ইসারায়ই আমাদের বাধা অবস্থার পিক মেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো পুলিশ স্টেশনে।
হঠাৎই চারিদিকে পুলিশের আগমন।মাথাটা কেমন ঘুরছে।চারপাশ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।আকাশবাবু বললেন,
-তোকে তো…
-স্টপ!আপনি কিডন্যাপের মতো বড় অপরাধ করেছেন!হাবিদার এরেস্ট করুন।
উনাকে এরেস্ট করলেন একজন হাবিলদার আর বাকি গুলো ভয় দেখিয়েই নিচে নিয়ে গেলো।আমাদের বাধন খুলে দেওয়া হলো।সিয়াম ভাইয়া আমার হাতটা শক্ত হাতে ধরলেন।মাথাটা বনবন করেই চলেছে।আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না ঠলে পরলাম সিয়াম ভাইয়ার বুকে।
………..🥀
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে কোনে রুপে আবিষ্কার করলাম।আশেপাশে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সবার মাঝে চোখদুটো সিয়াম ভাইয়াকে খুজছিলো।তবে আশ্চর্যের ব্যাপার আমি এভাবে কেনো?কার সাথে আমার বিয়ে?অনেকের ভিরের মাঝে টুসি সামনে এসে দাড়ালো।বেচারীর চোখদুটো ফুলে গেছে।হয়তো কেঁদেছে কোনো কারনে!কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,
-আমায় মাফ করে দিস সুয়া!আমি…
-কিন্তু কেনো?আর আমি এভাবে কোনে সাজে কেনো?
-আমি তোকে আকাশ ভাইয়ার সাথে দেখা করিয়েছিলাম।সেদিন যদি আমি বুঝতাম তাহলে আজ হয়তো তোকে..
-এতে তোর কোনো দোষ নেই।পাগলি আমি তোকে কেনো দোষারোপ করবো তুইও তো জানতিস না উনি আমায়…
-জানতাম আমি!আকাশ ভাইয়া আমায় বলেছিলো তোকে ভালোবাসে।কিন্তু আমি জানতাম না তুই সিয়াম ভাইয়াকে ভালোবাসিস।তাই কিছুই বলিনি!
-তুই না যেনে এটা করেছিস এতে তোর কোনো দোষ নেই।আচ্ছা এটা বল,আমায় এরকম কোনে কে সাজালো?
সবার মুখেই মিটিমিটি হাসি।চাচ্চু,আব্বু,আম্মু,চাচী সবাই এগিয়ে এলো আমার দিকে।আমি জিজ্ঞেসুক মুখ নিয়ে বললাম,
-কি হলো তোমরা হাসছো কেনো?আর আমি..
আমায় থামিয়ে চাচী পাশে এসে বসে বললেন,
-আমার ঘরের বউমা তুমি!বিয়ে হবে তোমার!বিয়েতে কি কোনে সাজে না?আর আমাদের বাড়ির বউ বলে কথা তাকে তো আরও স্পেশাল দেখাতে হবে!
-ক..কি বলছো তুমি চাচী?আ আমি তোমার বউমা মা..মানে?
-ও মা!তুই এখনো কিছুই বুঝিসনি?নাকি লজ্জায় বলতে পারছিস না!হুমমম!
-আমি স….
আব্বু এগিয়ে এসে বললেন,
-বেশি কথা বলার দরকার নেই!আমি ওকে সবটা বুঝিয়ে বলছি ভাবি!শোন সিয়া!
আমরা তোর সাথে সিয়ামের বিয়ে ঠিক করেছি।আর আমার মনে হয় এতে তোমার কোনো আপত্তি নেই।
-কিন্তু উনি তো কিছুতেই রাজি হবেন না!উনিতো আমায় মটেই পছন্দ করেন না!
এবার চাচ্চু বললেন,
-তোর এখনো এটা মনে হয়?আর ও নিজেই আমাদের তোদের বিয়ের কথা বলেছে।আর বাধা কিসের ওকে কিছু খাইয়ে বিয়ের মন্ডবে নিয়ে এসো।
কথাটা বলেই চাচ্চু চলে গেলেন।আমি সবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আজই আর এখনি বিয়ে?
আম্মু আর চাচী একসাথে হুমম বললো।আমি এখনো হ্যাবলার মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছি।
-জানো সিয়া আপু আমাদের এখানেই আসতে দিচ্ছিলো না।এই মাত্র আসতে দিলো।কেনো গো?
-হুমম কেনো বলোতো সিয়া আপু।তোমার বিয়ে আর আমরা আসবো না?উফফ!
পাশে তাকালাম।সবুজ আর উষা দুজনেই আমার হাটু জরিয়ে ধরেছে।কাঁদোকাঁদো মুখ করে রয়েছে তারা।দরজার দিকে তাকাতেই ফুপিকে দেখলাম।হাতে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আমার দিকেই আসছে।বিষন্ন মুখ নিয়ে বললাম,
-তাহলে তোমরা সত্যিই আমায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো?
-হুমম দিচ্ছি!আমাদের অতো টাকা পয়সা নেই যে আমরা বাড়িতে মেয়ে পুষে রাখবো।
ফুপি খাওয়াতে লাগলো।আমি খেতে খেতেই বললাম,
-ঠিক আছে!দাও বিয়ে আমায়!আর যখন কোনোদিন আসবো না তখন বুঝবে!
ফুপির এক চিলতে হাসিই আমায় বুঝিয়ে দিলো এগুলো মন থেকে বলেনি ফুপি।
★
আমায় খাইয়ে আবার কিছুটা সাজিয়ে বাইরে নিয়ে আসলো টুসি।চারিদিকে আলোয় ঝকমক করছে।পুরো গার্ডেনটা ফুলে মোড়ানো। এত তারাতাড়ি এত আয়োজন।মানুষজন পিপীলিকার মতো কিলবিল করছে।এত আত্মীয়ওকেও নেমত্রন করা হয়ে গেছে?আমায় টুসি ঠেলতে লাগলো।ওর দিকে তাকাতেই ও ইসারায় এগিয়ে যেতে বললো।মণ্ডপে নিয়ে গেলো আমায়।সবুজ আর উষা দুজনেই সিয়াম ভাইয়ার সাথে বসে আছে।সাদা শেরওয়ানিতে অনেক কিউট লাগছে সিয়াম ভাইয়াকে।আমায় উনার পাশে বসিয়ে দিলো টুসি।লজ্জায় লেহেঙ্গার ওরনাটা খামচে ধরেছি।
….সব কাজ শেষে,,,,,
কাজি উনাকে কবুল বলতে বললেন।উনি একটু সময় নিয়ে বললেন,
-কবুল..কবুল..কবুল!
এবারতো আমার পালা!কি করে বলবো?শুকনো ডোক গিলতেই পারছি না।কিন্তু…
-মা এবার তুমি বলো!
কাজি সাহেব আমায় বলতে বলছেন!মনটা চাইছে মাটি ফাঁক করে ঠুকে যাই।আস্তে আস্তে বললাম,
-কবুল!
সিয়াম ভাইয়া আমার হাতটা ধরলেন।এবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি।উনি কানে ফিসফিস করে বললেন,
” চিরদিন একসাথে থাকবো!কখনো ছাড়বো না একে অপরকে!ঠিক আছে? ”
অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি ইসারায় বলতে বললেন।আমিও উনার কানে ফিসফিস করে বললাম,
” শুধু এ জিবনেই নয়।মৃত্যুর পরও যেনো একসাথে থাকতে পারি।তাই গড়তে হবে ইসলামিক দাম্পত্য জীবন।তাই রাজি তো নামাজ,রোজা,আর তাহাজ্জুদ এর মতন ভালো কাজের জন্য ”
উনি হুমম বলে সায় দিলেন।দুজনেই এক চিলতে হাসি দিলাম😊😊।
………………………..সমাপ্ত…………………….