সাঝের বাতি পর্ব-১০

0
895

#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
#পার্ট_১০

অনেকদিন বন্ধ থাকা বিল্ডিংটার তিনতলায় এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কাঠগুলোর মাঝে দুজনে চেয়ারে বাধা রয়েছি।মুখবাধা অবস্থায় একে অপরের দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে আছি।হাত মুরিয়ে চেয়ারের পেছনে বাধা।পা দুটোও একসাথে করে বাধা।নরবার মতোও ফাঁক দেয়নি।পাশের চেয়ারে বাধা লোকটার কোনো হেলদোল নেই।তখন থেকে আমি একাই ছোটার জন্য ব্যস্ত।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।ঘামে নেয়ে গেছি দুজনে।সিয়াম ভাইয়ার খয়েরি রঙের শার্টটা ঘামে রং পালটিয়েছে।হ্যা আমরাই দুজনে বাধা!কি করে এতটা ভুল হলো মানুষ চিনতে!এতটাই বোকা আমি!একটা মানুষ এতটা অভিনয় কিভাবে পারে?দুটো বছর অভিনয় করেছে।সাদাসিধে মানুষের অভিনয়!যা বড্ড কঠিন!নিজের আসল রুপ লুকিয়ে,এতদিন,কিন্তু কেনো?এতদিনের বন্ধুত্বের এই দান।

-কি ভাবলে সিয়া?সরি! তোমরা?

পেছনে অতি আলো থাকায় সামনে শুধু তার কালো ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে।তবে কন্ঠ চেনা।চিনি এই নরকিট মানুটাকে।ভালোমানুষের মুখোশ পরে ছিলো এতদিন।আজ উনি ওনার আসল রুপ দেখালেন।
সেই কালো ছায়া থেকে ধিরে ধিরে এগিয়ে আসতে লাগলেন সামনে উনি।সাথে সাথে তার মুখেও আলোয় পরিষ্কার হতে লাগলো।জ্বলজ্বল করেছে ওই ঘৃন্য আকাশবাবুর মুখটা।মুখে বাকা হাসি তার।সামনে এসে দাড়ালেন উনি।তার দারানোয় দুজনে ছটপট করতে লাগলাম।সিয়াম ভাইয়া উমম উমম করে কিছু বলছেন।তবে মুখ বাধা থাকায় অস্পষ্ট।

-আহা!আস্তে আস্তে!অত ছটফট কিসের?এখনো তেজ যায়নি দেখছি।আরো ডোজ দিতে হবে?তুই চিন্তা করিস না।তোকে বেশি কষ্ট দিয়ে মারবো না!

-উমমম উমমম!

-এই কে কোথায় আছিস মুখটা খুলে দে!বেচারাদের অবস্থা কাহিল!

কোথ থেকে একটি লোক এসে মুখটা খুলে দিলো।সিয়াম ভাইয়া চেচিয়ে বললো,

-হারামজাদা!একবার ছেরে দে তারপর দেখ তোর কি অবস্থা করি।

-কুললল!কললল!বন্দীদের এতটা ছটফট করা উচিত নয়।শনলাম তুই নাকি একবারও ছোটার চেষ্টা করিসনি।আর আমি আসাতেই মুখ দিয়ে খই ফুটছে?

কেউ যেনো কাটা বেধে দিচ্ছে এই যঘন্ন কথাগুলোয়।আমি বললাম,

-আপনি এতটা নিকৃষ্ট?নিজেরি অজান্তে আপনার মতো মানুষকে বন্ধু,নিজের বন্ধু করেছি।নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে এখন!ছেড়ে দিন আমাদের!কেনো বেধে রেখেছেন আমাদের?

উনি আমার দিকে ঝুকে পরলেন।সিয়াম ভাইয়া আরও ছটফট করতে করতে বললো,

-তুই সিয়াকে টাচ ও করবি না।নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

আকাশবাবু সিয়াম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-চুপপ!একদম চুপ!এখনো তো কিছুই করিনি।আমাদের বিয়ে হবে বাসর হবে।কিন্তু তুই এগুলোর কিছুই দেখতে পাবি না।কারন তার আগেই..

উনি আমার দিকে ফিরলেন।ন্যাকা কান্নার মতো করে বললেন,

-তুমি!তুমি এভাবে বলো না আমায়!আমি..আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।খুউউব!আর এসব আমাদের জন্যই করা।এই সিয়ামকে শেষ করে দিয়ে দুজনে একসাথে থাকবো।খুব ভালো থাকবো!

আজনা কষ্ট ঘিরে ধরলো ওই কথাটায়।কি বললেন উনি?সিয়াম ভাইয়াকে শেষ করে মানে?শেষ মানে?আর আমরা দুজনে?তাও আবার একসাথে?কোনদুঃখে!কি করনে?ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,

-কি বললেন?আপনার সাথে আমিই?মরে গেলেও তো আমি আপনার সাথে থাকবো না!আর….

-সুউউউ!চুপ!ওসব বলতে নেই!না হলে যে আমাদের শান্তির জিবনে ঝড় আসবে।দাম্পত্য জিবনে এসব আমি একেবারে এলাও করবো না।

-কিসের দাম্পত্য জীবন?কি জাতা বলছেন আপনি?
দেখুন আমাদের ছেরে দিন!না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।আর এসব আপনার প্লান করা তাইতো?

-হা হা হা হা!এই জন্যই তো আমি তোমাকে পছন্দ করি।ঠিক ধরেছো!একদম ঠিক ধরেছো!মেঘ বলে আদেও কেউ নেই।আর আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই মিথ্যা বলেছি।আর এই সিয়ামের প্রতি অনেকদিন থেকেই আমার রাগ ছিলো।কথায় কথায় টাকা দেখাতো।ও সবসময় বন্ধুদের ট্রিট দিতো।আর আমি…

একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।উপরে তাকালাম।……………….
কিছুক্ষণ আগে..

রিকসা নিয়ে মেসেজে দেয়া ঠিকানায় পৌছালাম।অবাক হলাম,অনেকদিন বন্ধ হয়ে থাকা বিল্ডিং এ কেনো ডাকলেন আকাশবাবু?এখানে অনেকদিন কেউ আসেও নি।চারপাশে গাছের পাতা এক হাটু সমান।চারিদিকে একদম শুনশান!কোনো পোকামাকড় ও এখন অব্দি চোখে পরেনি পর্যন্ত।ফোনটা হাতেই ছিলো।খামচে ধরে ছিলাম ওটাকে।কেমন গা ঝমঝমে জায়গা।ভয় করছে!হঠাৎ মেসেজের শব্দে চমকে উঠলাম!মেসেজটা আকাশবাবু দিয়েছেন।উনি ভেতরে আসতে বললেন ওই মেসেজে!একটা শুকনো ডোক গিললাম।কাঁপা কাঁপা পায়ে এগোতে লাগলাম।বিল্ডিং এর কাজ অনেকদিন বন্ধ থাকায় কেমন কালচে দাগে লেপ্টে গেছে পুরো বিল্ডিংএ।বিল্ডিংটায় পা দেয়া মাএ একটা সজোরে বাতাস বয়ে গেলো উপর দিয়ে।কেমন গুমট গন্ধ ও আসছে।আবার মেসেজ আসলো,

“তারাতাড়ি ভেতরে এসো ভয়ের কিছু নেই!”

মনে সাহস নিয়ে জোর পায়ে হাটা লাগালাম।বিল্ডিংটা অনেক বড় জায়গা জুরে তাই প্রথম তলাটাও বেশ বড়ো। সিঁড়ি খুজতে একটু সময় লাগলো তার পর দোতলায় গেলাম আবার মেসেজ আসলো,

“তিনতলায় এসো”

আমায় কি উনি দেখতে পাচ্ছেন নাকি?আর সবথেকে বড় কথা উনি এতদূর আর এখানেই কেনো আনলেন?তিনতলায় যাওয়ার জন্য এগোলাম।গুমট গন্ধটা অনেক কমে গেছে।চারিদিকে কোনো দেয়াল দিয়ে ঘেরা নেই।তিনতলার দিকে হাটা লাগালাম।সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় কারো গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।তৃতীয় তলার পশ্চিমের এক কোনে পকেটে হাত গুজে উল্টোদিক হয়ে দাড়িয়ে আছেন আকাশবাবু।

-এসেছো তাহলে??

আগের মতো এবারও দেখতে পেলেন আমায় কিন্তু কি করে?

-অত ভাবনা চিন্তা করার কিছুই হয় নি।তোমার পায়ের আওয়াজ পেয়েছি তাই না দেখেই বললাম।

-কেনো ডেকেছেন আপনি এখানে আমায়?

উনি আমার দিকে ফিরলেন,

-এতদিন বলতে চেয়েও পারিনি তাই দেরি হয়ে গেছে।তবে আজ যা বলার সব কোনো দ্বিধা ছারা বলবো!

-কিন্তু সেই কথাগুলো কি?

-ভালোবাসি!ভালোবাসি তোমায়!হ্যা ঠিকিই শুনেছো ভালোবাসি তোমায়।বড্ড ভালোবাসি!যেদিন প্রথম তোমার ওই কপালে,ঠোঁটে কেটে যাওয়া মুখটা দেখেছিলাম।সেদিন থেকেই আমি তোমায় আমার ভালোলাগতো।তারপর টাপুরকে দিয়ে দেখা করলাম।আরও উতলা হয়ে উঠলো এই মন।দেখা বাড়ালাম,কথা বড়ালাম এসবের কারন শুধু বন্ধত্ব?না!ভালোবাসতাম তোমায় আমি ভালোবাসতাম।তারপর হঠাৎ যখন তুমি আবার সিয়ামদের বাসায় গেলে আমিও ছুটে গেলাম।ওর সাথে ঝগড়াও করলাম।আর তুমি কিনা ওকে ভালোবাসো?আমি এটা কিছুতেই হতে দিবো না সিয়া!তুমি শুধু আমার!ইউ’র ওনলি মাইন!

ভেতরটা কেমন ধুকধুক করছে।এসব কি বলছেন উনি?সেদিন সিয়াম ভাইয়ার বলা কথাগুলো তাহলে মিথ্যা নয়!উনি সত্যিই আমায়!

-এসব কি বলছেন আপনি?আর একদিনে যে বলছেন না ভালোবেসেছেন ওটা ভালোলাগা ছিলো ভালোবাসা নয়।একদিনের দেখায় ভালোবাসাটা হয় কিভাবে।

-আমি সত্যিই বলছি।প্রথম দিনিই আমি তোমায় ভালোবেসেফেলেছি।তাইতো দুটো বছর আমি তোমার পিছুপিছু ঘুরেছি।আশা করি এবার তুমি সবটা বুঝেছো!

-না!না না না!কিছুই বুঝিনি আমি!আর বুঝতেও চাই না!ভালোবাসি না আপনাকে আমি।আর এসব আসছেই বা কোথথেকে।পাগলের মতো কি জা_তা বলছেন আপনি?

উনি আমার দিকে তেরে এলেন।রাগি গলায় বললেন,

-কি বললে তুমি?কি বললে আরেকবার বলো?ভালোবাসো না আমায় তাই তো?দেখো এতদিন আমি তোমায় অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি!তবে আজ বলছি,আই লাভ ইউ সিয়া!লাভ ইউ টু মাচ!

উনি আমার অনেকটাই কাছে চলে এসেছেন।অসস্তি লাগছিলো।তাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললাম,

-পাগল হয়ে গেছেন আপনি?

উনি আমায় পরপর দুটো চড় বসিয়ে দিলেন।গালে হাত দেয়া অবস্হাতেই উনি মুটা সজোরে টিপে ধরলেন।

-হ্যা পাগল হয়ে গেছি শুধু তোমাতে পাগল হয়ে গেছি আমি!

মুখটা ছেড়ে দিলেন।এসব কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিলেন উনি।এদিকে আমি পেছোতে ব্যাস্ত।উনি আবার বললেন,

-আজ তোমাকে আমার করে নিবো সিয়া।

-একদম এগোবেন না আমার দিকে!কি চাইছেন আপনি?

-তোমায়!

উনি একদম কাছাকাছি চলে এসেছেন।এদিকে দেয়ালে পিঠ ঠেকানো আমার।উনি আমায় ছোবেন ঠিক তখনি পেছন থেকে……

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে