সাঝের বাতি পর্ব-০৯

0
961

#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
#পর্ব_৯

কাচের গ্লাস থেকে শুরু করে রুমের সমস্ত সামগ্রী ভেঙে গড়াগুড়ি খচ্ছে হোস্টেলের ৩৫ নাম্বর রুমটায়।দরজা বন্ধ রুমের ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলছে আকাশের মনের ক্ষিপ্ত রাগ।ডেসিনের কাচের ভাঙা টুকরোগুলোয় রাগী মুখ ফুটে উঠছে তার।ভেতরের সেই জ্বলন্তক আগুন এখনো দগ্ধ হয়নি।বিছানার এক কোনে পিঠ হেলিয়ে মাথা ঠেস দিয়ে রেখছে আকাশ।মনে মনে ভাবছে সে,

-এতগুলো!এতগুলো মিথ্যা যাকে বললাম।নিজের প্রবাসী বন্ধুকে নিজের ভাই বানিয়ে এতগুলো বানিয়ে বানিয়ে গল্প বললাম।আর আঙ্কেল?আঙ্কেলকেও তো সব বানিয়ে বলেছি।সিয়ামকে উনি কিছুই বলেনি।সিয়াম আমার ভাইকে গুম করেছে এটা শোনার পরও সিয়া বলছে ওকে ভালোবাসে!আর যে মেয়েটার পেছনে দু বছর ঘুরলাম।যাকে নিজের করার ও সপ্ন দেখেছি।সে আমায় ঠকাবে?আমায়?এই আকাশকে?
কাল এর জবাব সিয়াকে দিতে হবে!দিতে হবেই!তুমি যদি আমার না হও তাহলে সিয়ামকেও হতে দিবো না!মেরে ফেলবো কিন্তু তোমায় কাউকে হতে দিবো না!
আজ সিয়া তুমি যা করেছো তার দ্বিগুণ মাশুল দিতে হবে তোমায়!আর এই শাস্তিটা পাবে সিয়াম!তোমার ভালোবাসা!তোমার ভালোবাসাকে শেষ করে দিয়ে তোমাকে আমার করবো!আমার করবো!
.
মেঝেতে পরে থাকা অবস্থায় সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।এভাবে নিজেকে মেঝেতে দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম।অতঃপর কাল রাতের ঘটলাগুলো একে একে সৃতিপট সামনে এনে দিলো।একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।….ফ্রেশ হয়ে নীচে আসতেই চোখদুটো সিয়াম ভাইয়াতে আটকে গেলো।উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কাল রাতের কথা মনে পরতেই মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।ভাবলাম ওনাকে ইগনোর করবো।যেমন ভাবা তেমন কাজ।চোখ সরিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম।নিচে এসে পাশ কটিয়ে চলে আসলাম।উনি এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে হয়তো কিছু বলতেও যাচ্ছিলেন তবে তাকে না দেখে আসায় আটকে গেলেন।আমি সোজা রান্নাঘরে গেলাম।দেখলাম চাচী চা ঢালছেন।আময় দেখে চাচী বললো,

-কেমন ঘুমিয়েছিস?নে এককাপ চা নে!

পেছনে একবার উঁকি দিয়ে দেখলাম,সিয়াম ভাইয়া সোফায় বসেছেন।আবারো একটা দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় এলো।

-হুম!অনেক ভালো ঘুম হয়েছে।Nestle কফি আছে চাচী?

আমি জানি সিয়াম ভাইয়া এটা খুব পছন্দ করে।আর তাই ওনাকে এটা দেখিয়ে দেখিয়ে খাবো।

-তুই হঠাৎ Nestle সন্ধান করছিস?কখনোই তো তুই কখনই বলিসনি তুই Nestle খাস।

-আজ খাবো চাচী তুমি বলো কই আমি বানিয়ে নিচ্ছি।

-থাক তোমায় আর বানাতে হবে না আমিই বানিয়ে দিচ্ছি।তুই এখানেই দারা।

-আচ্ছা।

একটু পর চাচী বানিয়ে দিলো।মগটা হাতে নিয়ে বেশ ভাব দেখিয়েই সিয়াম ভাইয়ার সামনাসামনি গিয়ে বসলাম।একবারও তাকাইনি।বেশ ভাব নিয়েই চুমুক দচ্ছি।জানি আমাদের মাঝে দূরত্ব,উনি দেখতে পাচ্ছে না তবে Nestle ঘ্রাণ বরাবরই বেশি।উনি বুঝলেন আমি কি খাচ্ছি!চারিদিকে ঘ্রাণে মাতোয়ারা।উনি বললেন,

-তুই Nestle খাচ্ছিস?

বেশ ভাব নিয়ে বললাম,

-হুমমম!

-কে করে দিলো তোকে?

-কেনো?কে আবার?চাচী!

-তোকে দিলো আর আমায় দিলো না আম্মু কি জানে না যে আমি এটা খুব পছন্দ করি!তুই আম্মুকে আমার বলে এনে নিজে খাচ্ছিস তাইনা?

-আমার বয়েই গেছে আপনার নাম করে আনার।আমি চাচীকে গিয়ে বললাম চাচী করে দিলো।এটুকুর জন্য আপনার নাম দেয়ার দরকার পড়ে না!

-তু্…

তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললাম,

-আমি কি জানি!আর এটা বলিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসছি।যার ইচ্ছে সে গিয়ে বানিয়ে আনুক।পারলে নিজে বানাক আর নিজে খাক!

-তুই আমার সাথে ফাজলামো করছিস?ওকে ডান!আজ তুই বানিয়ে আনবি আমার জন্য কফি।আন্ডারস্ট্যান্ড স্টুপিড!

কত বড় সাহস আমায় স্টুপিড বলে!না না না!আমায় শান্ত থাকতে হবে।জাস্ট ইগনোর জাস্ট ইগনোর!
বেশ ভাব নিয়েই পায়ের ওপর পা তুলে খেতে লাগলাম।উনি হা করে দেখছেন।

-তোকে আমি কিছু বলেছি সিয়া!

-কই কি বলছেন?না!আমার যদ্দুর মনে পরে আপনি তো আমায় কিছুই করতে বলেননি!আমার তো এমন কিছুই মনে পরছে না।কি্ কিছু বলেছিলেন বুঝি?আ’ম সরি ভাইয়া আমি শুনিনি!

-ওকে!আমি আবার বলছি আজ তুই আমার জন্য Nestle বানিয়ে আনবি।এবার শুনেছিস!নাকি মাইক নিয়ে বলবো?

-আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য কফি করতে।শুনুন মিস্টার আমি কারো মেইড নই যে আমি কফি করবো।আজব!আর আপনি আমায় কেনো বলছেন আপনার সার্ভেন্ট আছে তাকে বলুন।নয়তো আপনার আম্মুকে বলুন!

কথাটা বলেই সোফা থেকে উঠে হাটতে লাগলাম।উনিও উঠেছেন।তাতে আমার কি?আমি ওনার পাশ দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম বেশ ভাব নিয়ে।
পেছন থেকে হেঁচকা টান।সোজা সামনে গিয়ে দারালাম।দুজনেই সামনাসামনি!উনি চেয়াল খিচে রয়েছেন।তবে মুখে রাগ দেখছি না।হাতটা খিচে ধরেছেন।কড়া গলায় বললেন,

-আমার মাথা গরম করিস না সিয়া!তোকে যা করতে বলেছি তাই কর বুঝেছিস।নাহলে কিন্তু আমি জোর করতে বাধ্য হবো!কাল রাতে লাভ ডোজ কম হয়েছে নাকি?এখানেই তোর সাথে প্রেম করতে বলছিস?করবো?

কি মানুষ রে বাবা।নিজের বাড়িতে এত্ত মেইড আবার নিজের মা ও আছে তবুও এগুলো কথা বলছেন কি করে উনি?

-আপনি এসব বলতে পারেন না!

উনি কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,

-তুই চাইলে জি বাংলার সারেগামাপার মঞ্চে গিয়ে প্রেম করবো!সবার সামনে তোকে কিসও করবো।

কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেলেন উনি।আর ওনার কি সামান্য লজ্জাও নেই।

-কি হলো!

কথাটা উনি জোর গলাতেই বললেন।বেশ ভয় ভয় লাগছে এবার।কাঁপা গলায় বললাম,

-চ..চাচীকে তো বললেই…

-চুপ!আমি যখন বলেছি আমি তোর হাতে খাবো তখন তুই বানিয়ে আনবি।দু মিনিটে সামনে কফি চাই।আর হ্যা তুই বানিয়ে আনবি।তুই!আমি নিজের প্রেয়সীর কাছ থেকে খেতে চাই।আমার সিয়ার কাছ থেকে।আমার পাওয়া বড় প্রাপ্তির কাছ থেকে।

বলেই হাত ছেরে দিলেন।জোর পায়ে হেটে রান্নাঘরে গেলাম।চাচীকে কিছু না বলেই দুধ বসিয়ে দিলাম।চাচী আমায় বললো,

-কি রে!আবার দুধ বসাচ্ছিস যে?দুধ খাবি?

মুখে রাগী ভাব নিয়ে বললাম,

-না!

-তাহলে দুধ বসাচ্ছিস কেনো?

-চাচী তোমার ছেলের আদেশ এটা!এখন উনিও খাবেন Nestle।তাও আবার আমার হাতে!আর তখন থেকে ওসব কি যেনো আজেবাজে কথা বলছিলেন।

চাচীর দিকে তাকাতেই দেখলাম চাচী মুখে আঁচল দিয়ে হাসছে।ঠোঁটজোড়া খিচে বললাম,

-হাসো হাসবেই তো!
.
কফিও করলাম নিয়েও এলাম।ওনার মুখের সামনে কফির মগটা ধরে আছি।উনি মিটমিট করে হাসছেন।যাগগে উনাকে বললাম,

-এই নিন,আপনার কফি।

-হুমম..

উনি মগটা হাতে নিলেন।একচুমুক মুখে দিয়েই ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসি ফোটালেন।মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।

-ভালোই বানাস তো তুই কফি!মনটা ভরে গেলো।আহা কি স্বাদ!এই কফিটা আর এটা বানানোর ওর্নার শুধুই আমার!

মনটা চাইছিলো মাথা ফাটিয়ে দেই।ওয়েট!কি বললেন উনি?এই কফিটা তো আমি বানিয়েছি।তাই ওর্নার ও আমি।লজ্জায় মাটি ফাক করে ডুকে যেতে ইচ্ছে করছে।তারাতাড়ি করে দৌরে পালিয়ে আসলাম ওখান থেকে।কে জানি আরও যদি কিছুর হুকুম করে।কত সুন্দর ভাব নিয়ে প্লান মতো কাজগুলো করছিলাম।আর উনি আমার জালে আমাকেই ফেললেন।আমাকে দিয়েই কফি করিয়ে নিলেন।কই ভাবলাম এটিটিউট দেখাবো।ধ্যাত ভালো লাগে না।
রুমে এসেই দরজা বন্ধ করে দিলাম।বিছানায় পিট হেলিয়ে দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখি আকাশবাবু ফোন করেছে।রিসিভ করলাম,
ওপাশ থেকে উনি বললেন,

-কোথায় তুমি?

-সিয়াম ভাইয়ারদের বাসায়ই এখনো আছি!

-কখন ফিরবে?

-আজই!

-এনি ওয়ে,তোমায় একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম।আজ দুপুর বারোটার দিকে আমার সাথে দেখা করো।আমি মেসেজ করে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

-কিন্তু!হ্যালো,হ্যালো,হ্যালো…

ফোন কেটে দিয়েছেন উনি।হঠাৎ কেনো দেখা দেখা করতে চাইছেন উনি?!মেসেজ আসলো।উনি ঠিকানার সাথে ঠিক টাইমে আসতে বলেছেন।

-কে ফোন করেছিলো সিয়া?

সিয়াম ভাইয়ার কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম।দরজায় তাকাতেই উনাকে দেখালাম।দরজা!আমিতো দরজা বন্ধ করেছিলাম খোলা কি করে?উনি দরজা ভেঙে ভেতরে আসলেন নাকি?তাহলে শব্দ তো হওয়ার কথা।আমিতো কিছুই শুনিনি।উনি আবার বললেন,

-কে ফোন করেছিলো?আর কারিই বা মেসেজ আসলো?

এখনো ভেবেই চলেছি।ওভাবেই বললাম,

-আকাশবাবু!

-কি বললো ও?

-হেকা করতে!

-কিহ্??

ধ্যান ভাঙলো আমার।কি বলেছি আমি?

-না মানে দেখা করতে!

-আর কি মেসেজ করেছে ও?

উনি তেরে আসলেন।হাত থেকে ফোনটা কেড়ে মেসেজ চেক করতে লাগলেন।কিয়ৎক্ষন পর হাতে ফোন হাতে দিয়ে বললেন,

-ঠিক সময়ে পৌছে যাবি?দেরি যেনো না হয়!

কি ভাবলাম কি হলো?ভেবেছিলাম উনি হয়তো যেতে মানা করবেন কিন্তু উনিতো যেতে বলছেন।

-তোকে আম্মু ডাকছে নিচে ব্রেকফাস্ট এ আয়!

চলে গেলেন উনি!আমি উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি।
অত ভাবলে আমি ভ্যাবলা হয়ে যাবো আর ভেবে কাজ নাই নিচে আসলাম।সিয়াম ভাইয়া কোথায় জানি চলে গেলো।

-কি রে খেতে আয়।কি দেখছিস ও দিকে?

ডাইনিং থেকে চাচী ডাকছে।সেখানে যেতেই দেখলাম চাচ্চুকে,

-কেমন আছো চাচ্চু?তুমি তো আমার সাথে একবারও কথা বললে না!

-ওহ্!এ কয়দিন বড্ড কাজের চাপ।এত কাজ…

-হয়েছে হয়েছে😤

-ওরকম ফুসছিস তো!আমায় আজই ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে যেতে হবে আর এখন..

-আচ্চা ঠিক আছে!

🍁

সবেমাত্র রুমে আসলাম।কিছুক্ষণ আগেও আকাশবাবুর মেসেজ এসেছে ব্রেকফাস্ট এর সময়।আমি যেনো না ভুলি যাওয়ার কথাটা।

১১.৩০মিনিটে……

রেডি হচ্ছিলাম।এর মধ্যেই সিয়াম ভাইয়া অনেকবার মেসেজ দিয়েছে।বলেছে “ঠিক সময় মতো পৌছাবি সামান্য দেড়ি হলে তোর খবর আছে তাই তারাতাড়ি রেডি হচ্ছিলাম।হালকা টিয়া কলারের সালোয়ার কামিজ পরে নিলাম।চুলগুলো বাধিনি।ফোনটা হাতে নিয়ে বাইরে আসলাম।সোজা চাচীর কাছে গেলাম।চাচী সুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলেন।চাইনি ডিস্টার্ব করতে কিন্তু বলে তো যেতেই হবে,

-চাচী!

উনি চোখ বুজে ছিলেন তবে ঘুমোননি।আমার এক ডাকে উঠলো চাচী।চাচী বললো,

-কি?কিছু বলবি?আর তুই কোথায় যাচ্ছিস?

-বলবো বলেই তো এসেছি!আমি চলে যাচ্ছি চাচী।আমার একটু কাজ আছে কাজটুকু সেরে আমি বাড়ি চলে যাবো।

-কিন্তু তোর তো বিকেলে যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে এখন কেনো যাবি তুই?

-ওইযে বললাম একটু কাজ আছে।

-আচ্ছা।দাড়া আমি ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি ও তোকে নিয়ে যাবে।

গাড়িতে গেলে তো আমি ওখানে যেতেই পারবো না।আর আমায় ওখানে যেতেই হবে।বারবার দুজনেই যেতে বলেছে।না না গাড়িতে করে যাওয়া যাবে না।চাচীকে বললাম,

-আমার কাজ আছে আমি গাড়ি নিয়ে যেতে পারবো না।আর আমি একাই যেতে পারবো।

-তোর যখন কাজ আছে তখন আর আর কি করা যাবে যাগগে,তুই পৌছে একটা ফোন করিস।কেমন!

-আচ্ছা!

চচীকে একটা জাদুর ঝাপ্পি দিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে