সাঝের বাতি পর্ব-০৪

0
1033

#সাঝের_বাতি
#সাজিদ_হাসান
#পর্ব_৪

আশেপাশের সব মেয়েরা ব্যাহায়ার মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে।অথচ,সেদিকে তার কোনো হেলদোল নেই।তার দৃষ্টি আমাতে স্থির। পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন সেদিনের সেই ডাক্তারবাবু।সেই সাধা শার্ট তবে কালো পাইপিং করা আছে,কালো জিন্স,হাতে তার কালো সাদা ব্রান্ডের ঘরি,হালকা হলুদ ও কালো রঙের সু।

-এইযে মিস সিয়া!

ধ্যান ভাঙলো আমার। সেও চোখ সরিয়ে নিলো। কিছু বলার আগেই টাপুর বলে উঠলো,

-এনি হলেন আমার ভাইয়া।আমার কলেজটা ঘুরতে এসেছে।ভাবলাম এসেছেই যখন তোর সাথে মিট করিয়ে দি।আমার মূলত কাজিন হয়।ওনার নাম হলো….

-আকাশ তাইতো?

একদম বিস্ফোরিত চোখে তাকালো টাপুর।সে হয়তো আশা করেনি আমার বলা কথাটা।

-ত্ তুই চিনিস?

-না.. সেরকম কিছু না আসলে… ফেসবুকে আলাপ!

বাহ্ সিয়া!দারুণ বললি তো। হুট করে মুখ ফসকে কথাটা বললেও তা হয়তো কাজে দিয়েছে।কিন্তু উনি যদি সবটা বলে দেয়?আর টুসি যদি সবটা জানতে পারে তাহলে তো আমায়..
একটা শুকনো ডোক গিললাম।এখন তার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।উনি কি বলবেন সেই আশায়।কেমন ভয় ভয় লাগছে।একনজর টুসির দিকে তাকালাম ও দুজনকেই খুতিয়ে দেখছে।হয়তো হজম হয়নি কথাটা।

-হ্যা আমিও ওকে ফেসবুকেই প্রথম দেখেছি।ভাবিনি এভাবে দেখা হবে।বাই দা ওয়ে, কেমন আছো?

তার কথায় টুসি কেমন ঠোঁট টিপে হাসছে।আচ্শর্য,এভাবে কি হয়েছে।টুসিকে কি উনি আমার ব্যাপারে সবটা বলে দিয়েছে?কিন্তু উনি তো যানেনই না আমি এখানে আসবো।না! তাহলে কি আমার সাথে আলাপ করাতো?এটা হয়তো কো ইন্সিডেন্ট!মুখে হাসি ফুটেয়ে উত্তর দিলাম,

-আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

-ভালো!আজ আমার একটা রিকোয়েস্ট তোমাদের রাখতে হবে!

টুসি অবাক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেসা করলো,

-কি ভাইয়া?

-আজ কলেজ ছাড়ো।আমরা বরং কোথাও ঘুরতে যাই।

টুসির মুখে হাসির ফুলঝড়ি।ঘুরাটা ওর বড্ড প্রিয়।উৎফুল্ল হয়ে বললো টুসি,

-অনেক মজা হবে। যাওয়াই যায়,চল সিয়া ভাইয়ার সাথে ঘুরে আসি।

-আ্ আমি..?

-তা নয়তো কে আমি?তুই জানিস ভাইয়ার সাথে ঘুরতে গেলে সব খরচ ভাইয়া বহন করে।আর আজকে না করলাম ক্লাস তাতে কী? সুমন তো আছে। সুমন এর কাছ থেকে সব নোটস্ নিয়ে নেবো।

-কিন্তু…

-তোমার মেধাবি ফ্রেন্ড হয়তো যেতে চাইছে না।

এবার আকাশবাবুও বলতে লাগলেন।আর কি বলবো?তাই রাজিই হয়ে গেলাম,

-না..তেমন কিছু না চলুন!
:
:
:
-তোর কি হয়েছে বলবি তো? আজ তিনদিন ঘর থেকে বাইরে যাস নি কি হয়েছে আমাকে বল?তুই কি অসুস্থ বোধ করছিস?এভাবে থাকার মনে কি সিয়াম।তোমার কিছু হলে সরাসরি আমাদের বলো?

-আমি ঠিক আছি।আম্মু তুমি এখন বাইরে যাও।আমায় একা থাকতে দাও,প্লিজ।

অসুস্থ রোগীর মতো সুয়ে ছিলো সিয়াম। সেদিনের পর থেকে তাকে অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে।অপরাধী মনে হচ্ছে তাকে।অবশ্য এর কারন তার জানা নেই।

-কি বলবে ও!এতদিন সেকরার ঠুকঠুক ছিলো কিন্তু ও তো এবার কমারের এক ঘা দিয়েছে। কিছু বলার মুখ আছে ওর।প্রতিদিন সকালে যার ফোন আসতো সেতো আজ!এখনো!এ পর্যন্ত ফোন দেয়নি।কেনো বলোতো?শুধুমাএ তোমার এই ছেলের কারনে।!

দরজায় দাড়িয়ে আছেন ইবনান শেখ।সিয়াম ও তার মা ঘুরে তাকাতেই তিনি মিস.রেহেনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

-বলো তোমার ছেলেকে,আছে কোনো উওর?পারবে আমাদের সেই সিয়াকে ফেরাতে,পারবে!পারবে না।হ্য্,খালি পড়াশোনায় ভালো হলেই যে মানুষ ভালো হয় না রেহানা! হয় না।

কথাটা বলেই ঘর ত্যাগ করে ইবনান শেখ।তিনি যে তার একমাত্র ছেলে সিয়ামকে ঘৃণা করেছেন তা বুঝতে বাকি নেই।যথাসম্ভব চেষ্টায় ব্যাস্ত চোখের কোনে আসা পানিটুকু আটকাতে সিয়াম।শুধুমাএ ছেলেদের কাঁদা যায় না বলে,নাকি..ভেতরে জ্বলছে অগ্নিশিখায় অগ্নাত্বক কোনো প্রতিশোধের আগুন!

.

সামনে পরপর দুটো ফুচকার প্লেট সাজানো।দু ভাই বোন যে কি এতো কথা বলে কে জানে?এদিকে আমার মুখ দিয়ে লালা ঝড়ছে।এরা কি আদেও খাবে নাকি এভাবে গল্পই করবে?সেই কখন এসেছি একটা ফুচকার দোকানে।ফুচকাও দিয়েছে অথচ এদের…
টুসিকে অনেকক্ষণ যাবত চেয়ারের নিচ দিয়ে খোঁচাচ্ছি তবু কোনো হেলদোল নেই মেয়েটার।গল্পে মাতোয়ারা হয়ে রয়েছে, আশ্চর্য!

-আপনি খাওয়া কেনো শুরু করছেন না? ফুচকা খান না?

একেই নিজেরা গল্পে ব্যাস্ত অন্যদিকে আমায় বলছে!আরে ভাই তোমরা শুরু করলেই তো আমিও শুরু করছি।কথাগুলো মনেমনে বিরবির করে চলেছি। উনি আবার বললেন,

-কি হলো?কোনো সমস্যা হচ্ছে আপনার?

-না না কোনো সমস্যা নেই।আসলে আপনারা না শুরু করলে আমি কিভাবে করি বলুন।আর এমনিতেও ফুচকা আমার প্রিয়💙

-ও তাই তাহলে তো এবার শুরু করতেই হয়।

পেট পুরে ফুচকা খাওয়ার মজাই আলাদা।দু প্লেট ফুচকা খেয়ে কিছুটা সময় হেটে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।বাড়িতে এসে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি কারন,ঠিক সময়ে বাড়ি এসেছি।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় হেলান দিলাম।সেদিনের লাঠির আঘাতের কিছুটা ব্যাথা এখনো রয়েছে।সোজা অনলাইনে চলে আসলাম।না!কাউকেই এক্টিভ পেলাম না। তাই ইউটিউব এ নাটক দেখতে লাগলাম।নতুন বের হওয়া নাটকের নামটি ছিলো “এক্স_চেন্জ”। নাটকটি যখন প্রায় শেষের পথে তখনি একটি মেসেজ আসলো।একটু বাকি ছিলো তাই ভালো করে লক্ষ করিনি।আবার মেসেজ আসলো।মেসেজগুলো সিন করলাম,

-কি করো?,পৌছে গেছো?

আকাশবাবু মেসেজ করেছেন।রিপ্লাই দিলাম,

-hmm..

-কখন মেসেজ দিয়েছি এতক্ষণে রিপ্লাই।কি করো অনলাইনে..?

-নাটক দেখি!

-কি নাটক?

বলেই খালাস! উনি অনলাইন থেকে বের হয়ে গেছেন।তাই আর রিপ্লাই দিলাম না।কিছুক্ষণ পর ওনার আরও একটি মেসেজ আসলো,

-রিপ্লাই দিতে কষ্ট হয়??

ওনার কথার আগামাথা বুঝলাম না।উনি কি আমার উপর রাগ করলে? আর এতে আমার তো দোষ নেই।তাহলে?রিপ্লাই দিলাম,

-আপনি তো নেটে ছিলেন না তাই রিপ্লাই দেয়নি।

-ওহ্!আমি একটু ব্যাস্ত আছি তাই..

-আচ্ছা ঠিক আছে বায়।আমার একটু কাজ আছে।

-রাগ করেছো?

দেখেও রিপ্লাই দিলাম না।যার সাথে আজ নিয়ে মাএ দুদিন দেখা হয়েছে তার সাথে এত কিসের কথা।আজব!
বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজ। কিন্তু আজকে তো কারো আসার কথা নয়। তাহলে?বিছানা থেকে উঠে বাইরে যাওয়ার আগেই আমার ঘরে দুটো আগুন্তুকের আগমন।আসেই দুটো সোজা বিছানায়।আগুন্তুকের এই আগমনে আমি অতি আনন্দীত।

-কেমন আছো উষা।ফুপি কই?তোমরা কখন এলে?

-আমরা ভালো আছি তুমি কেমন আছো সিয়া আপু?আম্মু তো বাইরে মামার সাথে কথা বলছে।আর আমরা,আমরা কিছুক্ষণ আগেই এলাম।

[আমি জানিনা ফুপির মেয়ে আমায় কি বলে ডাকবে।হুদাই আপু দিসি😶]

-তা সবুজ তুমি এতো চুপচাপ কেনো?রাগ হয়েছে সিয়া আপুর উপর?

-রাগ তো হবেই তুমি কতদিন একটা ফোন দাওনা।শেষ কবে দিয়েছো তা হয়তো তোমারি মনে নেই।

-আচ্ছা ঠিক আছে এত রাগ করতে হবে না।আমি তোমাদের আজ আইসক্রিম খাওয়াবো।ওকে!

-ওকে ওকে ওকে!

রুম থেকে বেড়িয়ে বাড়ান্দায় গিয়ে দেখি ফুপি ও আব্বু কথা বলছে।দূর থেকেই ফুপিকে ডাকলাম,

-ফুপিইইইইই!!

এই ফুপি নামক একটা মানুষ যাকে আমি আমার সব কথা সেয়ার করি।কখনো কোনোকিছু লুকাই না তার কাছে।অবশ্য আমি লুকাতে চাইলেও পারি না কিভাবে যে বুঝে যায়..

ফুপি এগিয়ে এসে বললো,

-কেমন আছিস সিয়া?তুই কি করে পারলি এত বড় একটা কথা লুকাতে?তাও আবার আমার কাছে?তুই পারলি এটা করতে?

ফুপি কথাগুলো একপ্রকার জোরেই বললো।ফুপির পেছনে একবার উকি মারলাম।বাবা আছে কি না জানতে।না!নেই!একটা সস্তির নিশ্বাস নিলাম।ফুপিকে বললাম,

-কিভাবে জানলে তুমি।আমি আর মা ছারা তো কেউই জানে না তাহলে তুমি এসব খবরাখবর পাও কোথা হতে?

-কেনো?তুই লুকাবি বলে কি আমায় কেউ বলবে না।কেন রে?আমার ভাই বলেছে।তোর চাচাজান!

-ওও..আমি এমনিতে বাবাকেও কথাগুলো বলি নি।তোমার কাছ থেকেও লুকাতে চাইছিলাম আর তুমি সব আগে থেকেই জানো দেখছি।

-আপু চলো যাই।এবার দোকানই বন্ধ করে দেবে।

-আচ্ছা চলো সবুজ।ফুপি আমি আসছি।পড়ে কথা হবে।

ওদের আবদার মিটিয়ে ফুপির সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম।ফুপি রান্না করিয়ে খাইয়ে চলে গেলো।সাথে উষা আর সবুজও।

দিনগুলো এভাবেই কাটতে লাগলো।সময় তো আর কারো জন্য থেমে থাকে।সে নিজের নিয়মে চলছেই।ধিরে ধরে একটি বছর কোটে গেলো।টুসি আমায় আকাশবাবুর সাথে বন্ধুত্ব করিয়ে দিয়েছে।ওদের নিয়ে আরও একটি বছর কেটে গেলো।

দু বছর পর………

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে