শখ করে বিয়ে করেছিলাম ইন্টারের সাইন্সে পড়ুয়া এক মেয়েকে।
বিয়ের প্রথম রাত থেকেই তার সাইন্টিস্ট কথা শুনতে শুনতে আধমরা হয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি।
বাসর ঘরে ডুকতে না ডুকতে বউ বলে উঠলো – বিপরীত ধর্মী আধান একে অপরকে আকর্ষন করে।
— মানে?
— মানে হলো আপনি আমার আর আমি আপনার প্রতি আকর্ষিত হয়েছি।যার ফলে আমাদের বিয়ে হয়েছে আর এখন বাসর হবে।
কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে কোনো কিছু বের করতে পারলাম না?
কিছুক্ষণ পর বউ আবার বললো – এই যে শুনেন,আমাদের মেয়ে সন্তান হলে কিন্তু আপনি আমাকে বকা দিতে পারবেন না!
— আমি তোমাকে বকা দিবো কেন?
— এই যে মেয়ে সন্তান অনেকের পছন্দ না তাই,,, আর মেয়ে হলে কিন্তু দোষটা আপনারই হবে।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম– আমার দোষ হবে কেন?
— কারন মেয়েদের হোমোগ্যামেটিক হলো XX আর ছেলেদের হোমোগ্যামেটিক হলো XY,,মেয়েরা শুধুমাত্র X ডিম্বাণু উৎপন্ন করে কিন্তু ছেলেরা X ও Y দুই রকমের শুক্রাণু উৎপন্ন করে,,যার ফলে X বাহি ডিম্বাণুর সাথে X বাহি শুক্রাণুর মিলন হলে মেয়ে সন্তান হয় আর X বাহি ডিম্বাণুর সাথে Y বাহি শুক্রাণুর মিলন হলে ছেলে হয়। এখন X ও Y আপনার কাছে,, অতএব মেয়ে হলে আমার দোষ দিলে কিন্তু খবর আছে।
কিছু না বুঝেও ভয়ে ভয়ে বললাম — আচ্ছা আচ্ছা আমারই দোষ।
বউ হেঁসে বললো — এইতো আমার লক্ষি সোনা,,আসো কাছে আসো,তোমাকে ইয়ে দেই?
কাছে যেতে না যেতেই বউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে নিচে ফেলে দিলো,, রাগের ঠেলায় কিছু বলতে যাবো এমন সময় বউ বললো — আরে আরে রাগেন কেন?
অভিকর্ষজ ত্বরনের প্রভাবে আপনি নিচে পরে গেলেন,এতে আমার দোষ কোথায়?
— মানে?
— মানে হলো পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে সকল বস্তুকে আকর্ষন করে,,এই যে আমি আপনাকে ধাক্কা দিলাম আপনি তো উপরেও যেতে পারতেন কিন্তু তা না যেয়ে আপনি নিচে পরে গেলেন, সুতরাং পৃথিবী আপনাকে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষন করছে তাই আপনি নিচে পরে গেছেন,,আর ভূমিতে অভিকর্ষজ ত্বরনের মান 9.8ms~2 বুঝছেন?
শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে মনে মনে বললাম — ঘুড়ার ডিম বুঝছি।
তখনি ভাবছিলাম যে এই মেয়েকে বিয়ে করে আমার জীবন তেজপাতা ?
ভোর সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলে বিজ্ঞানের মতে রাতে ৬ ঘন্টা ঘুমানো বেটার,,এত ঘুমান কেন,,যান তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেন।আর শুনুন আপনি যে টুথপেস্ট দিয়ে দাত ব্রাশ করবেন সেটি কিন্তু রসায়নের অন্তর্ভুক্ত।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রসায়ন অনেক কাজে লাগে বুঝছেন?
মাথা নাড়িয়ে কোন মতে চলে আসলাম।
খাবার টেবিলে মন ভরে বিরিয়ানি খাচ্ছিলাম এমন সময় বউ বলে উঠলো — এই এই এতো বিরিয়ানি খান কেন?
— মানে কি?খাওয়ার জিনিষ খাবো না?
— খাবেন তবে সীমিত,, বিরিয়ানিতে তেল চর্বি ব্যবহার করা হয়েছে আর অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো না,,এই জন্যই তো দিন দিন ভুড়ি ফুলে ফুটবলের মতন হচ্ছে।
বউয়ের কথায় মা বাবাও সায় দিলো,মা বললো -; বউমা তো ঠিক কথাই বলছে,,এত খাওয়া কি ঠিক,,আমরা না হয় মূর্খ কিন্তু বউমা তো শিক্ষিত, তাই সে তর ভালোর জন্যই খেতে না করছে, অনেক খাইছিস এবার হাত ধুয়ে নে আর এখন থেকে বউমার কথামতো চলবি,ফিরবি খাবি।তুই তো এত কিছু ভালো মন্দ বুঝিস না।
বউ হেঁসে বললো – বুঝবে কি করে আম্মা,আপনার ছেলে তো সাইন্স পরেনি,তাই কিছু জানেও না করতেও পারেনা।
মনে মনে বলি শ্বশুরের ঘরের বউ আমি সাইন্স পারিনা,,আমারে সাইন্স শিখাও,আমিও একসময় সাইন্স পরে আসছি,খালি একবার সুযোগ পাই আমিও সাইন্সের মেইন পয়েন্ট শিখিয়ে দিবো।
বিয়ের প্রায় এক মাস পার হয়ে গেছে,আর এদিকে এই সাইন্টিস্ট বউ আমারে পাগল বানিয়ে ছাড়ছে,,উঠতে গেলে সাইন্স,বসতে গেলে সাইন্স,খাইতে গেলে সাইন্স, সকল ক্ষেত্রেই সাইন্সের প্রয়োগ আর ব্যাখ্যা। মা বাবাও তার সাইন্টিস্ট বউয়ের কথায় চলে,,তাই ভয়ে বউকে কিছু বলতেও পারিনা?
হঠাৎ করে একদিন মা বাবা ডাক্তারের কাছে গেলো,,বাসা পুরাই ফাকা,,বাসায় শুধু মাত্র আমি আর আমার বউ।
বুদ্ধি করে,বউয়ের আজকের রান্না ভালো হয়নি বলে বউয়ের সাথে তুমুল ঝগড়া বাজিয়ে দিলাম।
এক পর্যায়ে বউ আমাকে ঠাসসসসস করে গালের মধ্যে থাপ্পড় মারলো,,কি থাপ্পড় রে মাইরি, মেয়ে মানুষ তাও থাপ্পড়ের জোর কত।
রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আমিও বউকে ঠাসসসসস করে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দিলাম আর বউকে বললাম — নিউটনের গতির ৩য় সূত্র হতে পাই,প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে,,,অতএব তুমি আমাকে একটা থাপ্পড় মারছো আমিও সুধে আসলে ফেরত দিছি।
এছাড়াও কি আরও ব্যাখ্যা দিবো?
বউএর মুখ চোখ লাল হয়ে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল আর ম্যা ম্যা করে কান্না করতে লাগলো।
তা দেখে আমি বললাম — নিউটনের গতির ২য় সূত্র হতে পাই,কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল তার ভর ও ত্বরনের গুনফলের সমান,,I mean {F=ma}….
অতএব আমি তোমার উপর F বল প্রয়োগ করছি আর তুমি ম্যা(ma)ম্যা(ma) করে কান্না করছো,,তাই আমার প্রয়োগকৃত বল আর তোমার কান্না সমান,,,সুতরাং প্রমাণিত এই যে F=ma…..
বউ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো — আপনি এগুলা জানেন কি করে?
বউকে চোখ টিপ মেরে বললাম — তুমি সারাবছর পড়ে যা জানো আর আমি সারাবছর না পড়েও তাই জানি,,,তাই এখন থেকে আর আমার কাছে বা কাজে সাইন্টিস্ট হওয়ার চেষ্টা করোনা।
বউ চোখের পানি মুছতে মুছতে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো – আচ্ছা,,কিন্তু সারাবছর না পড়েও এগুলা জানলেন কেমনে?
বউকে কোলে নিয়ে ঘুরানি দিয়ে বললাম — এটাই সাইন্স???
#সাইন্টিস্ট_বউ
#Shohag_Hasan_Niloy