#সাইকো_বরের_রোমান্টিক_অত্যাচার
#পর্ব:২
লেখিকা -তাসদিদ সরকার আরিনা
আমি বসে বসে কাদতে লাগলাম। এই মেঘ কি সেই মেঘ যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। মেঘকে আর কি দোষ দিবো। আমি ওর সাথে যে ধরণের বিহেভ করেছি, তাতে আমার সাথে ওর ভালো বিহেভ করার প্রশ্নই আসে না। ভালোবাসাও একটা সময় ঘৃণায় পরিণত হয়। আর আমি তো মেঘকে সবসময় অবহেলা করে এসেছি, তার ভালোবাসাকে সবসময় প্রত্যাখান করে এসেছি।
তার থেকে আমার এমনই বিহেভিয়ার পাওয়া উচিত। সব দোষ আমার, আমি কেনো ওকে এতো ইগনোর করতাম, যদি ওর প্রপোজাল টা মেনে নিতাম তাহলে আজ আমার এই অবস্থা হতো না। না আমি কাঁদবো না। আমার সাথে এমন হওয়াই উচিত। এটা আমার নিয়তি। আমাকে আমার মা বাবার কথা ভেবেই এগুলো মেনে নিতে হবে।
আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে একদিন না একদিন ঠিক ওর মনে আবার জায়গা করে নিবো। আমি চোখ মুছে ফার্স্ট এইডের বক্সটা খুজে বের করলাম। রক্তটা মুছে মলম লাগিয়ে একটা ওয়ান টাইম বেন্ডেজ লাগিয়ে নিলাম।
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো, পিছনে ঘুরতেই দেখি মেঘের ছোট্ট বোন দাড়িয়ে আছে।মেঘের একটা মাত্র বোন। ওর নাম বৃষ্টি।
বৃষ্টি– কি ভাবি, ভিতরে আসতে বলবে না, বুঝি?
আমি হেসে দিয়ে বললাম,
অথৈ– ও মা,, রুমে আসতে পারমিশন নিতে হয় নাকি। সোজা চলে আসবে। আমি আসাতে তোমার নিয়মের কোনো পরিবর্তন হবে না।।
কথাগুলো বলতে বলতে বৃষ্টিকে টেনে এনে সোফায় বসালাম। তারপর দুজনেই হেসে দিলাম।
বৃষ্টি আমার কপালের দিকে তাকিয়েই আবাক হয়ে গেলো।।
বৃষ্টি– ভাবি,, তোমার কপালে কি হয়েছে?
আমি চুল দিয়ে ঢেকে দিলাম,ক্ষতটা।।
অথৈ– না কিছু না। পড়ে গিয়ে একটু কেটে গেছে আর কি।
বৃষ্টি– কি কিছু না। আজকেই তোমাকে ব্যাথা পেতে হলো। একটু পড়েই সব মেহমান রা আসতে শুরু করবে। তোমার বাড়ি থেকেও তো সবাই আসবে।। আর ওরা এসে যদি তোমার কপাল কাটা দেখে তাহলে ভাববে তুমি আসতে না আসতেই আমরা তোমার পর অত্যাচার শুরু করে দিয়েছি।
ওর কথা শুনেই আমি হেসে দিলাম আমার সাথে বৃষ্টিও হেসে দিলো।
তারপর আমার হাতে কতোগুলো ব্যাগ ধরিয়ে দিলো।
বৃষ্টি– ভাবি, এইগুলো মা পাঠিয়েছে।আজকে পড়ার জন্য। একটু পর আমি এসে তোমাকে সাজিয়ে দিবো।।
“তোর সাজাতে হবে না, উনি নিজেই আটা ময়দা মাখতে এক্সপার্ট। ”
কাথাটা শুনেই আমরা দরজার দিকে তাকালাম। মেঘ দাড়িয়ে আছে।
বৃষ্টি একটু হেসে দিলো।।
বৃষ্টি– ভাইয়া তুই মেয়েদের কথার মধ্যে কথা বলবি না। ভাবি নিচে চলো, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
কথাগুলো বলেই বৃষ্টি আমার হাত ধরে টানতে লাগলো।
অথৈ– আরে বৃষ্টি,, একটু দাড়াও। বলেই আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে কপালের ব্যান্ডেজ টা খূলে নিলাম। কারন ব্যান্ডেজ দেখলে নানান জনে নানান কথা বলবে। অল্পই কেটেছে তাও আবার চুল দিয়ে লোকানো যাবে এমন একটা জায়গায়। তাই আমি চুল দিয়ে আবার লুকিয়ে নিলাম সাথে মাথায় কাপড় ও দিলাম যাতে বুঝা না যায়। তারপর বৃষ্টির কাছে গিয়ে বললাম
অথৈ– এবার চলো।
মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বৃষ্টি– বাহ্ ভাবি,, চলো।।
আমি নিচে নামতেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো।। বৃষ্টি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আর আমি সালাম করতে লাগলাম।।উফফ,, এর মামা মামি, চাচা চাচি কত্তো মানুষ। সালাম করতে করতে আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে গো।।তবে মানুষগুলো খুব ভালো, খুব মিশুক। এরই মধ্যে আমার শাশুরি চলে আসলেন। আমি ওনাকে সালাম করলাম। ওনি আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি জিজ্ঞাস করলেন।তারপর খাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে বসিয়ে দিলেন। আমার সামনের চেয়ারটাতে মেঘ বসে খাচ্ছে। বৃষ্টি আমার সাথে বসে খাচ্ছে। সবাই খাচ্ছে কিন্তু আমার গলা দিয়ে তো খাবার নামছে না। আম্মু আব্বু আর ভাইয়ের কথা কথা মনে পড়ছে খুব।। অল্প খেয়েই উঠে পড়লাম, নতুন বউ বলে নয়,, আমার মন বলছে আমার বাড়িতে কিছু হয়েছে। আমি উঠে পড়াতে বৃষ্টি ও উঠে পড়ে। আমি বৃষ্টিকে বললাম যে আমি একটু বাড়িতে কথা বলতে চায়। বৃষ্টিকে নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। আম্মুকে কল দিলাম।
অথৈ– হ্যালো,, আম্মু,,
আব্বু ফোন ধরলো।
আব্বু– অথৈ, কেমন আছিস মা??
অথৈ– ভালো আছি বাবা, তুমি কেমন আছো? আম্মু কেমন আছে?
আব্বু– আমরা ভালোই আছি।
অথৈ– আম্মু কোথায়,, আম্মুর ফোন তুমি ধরলে কেনো??
আব্বু — তো, তোর আম্মু একটু অসুস্থ।
আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি জানতাম।। একটু না অনেকটাই অসুস্থ।
অথৈ– আমাকে বলোনি কেনো? কখন হয়েছে এমন??( কান্নার কারনে কথায় বলতে পারছি না)
আমি কান্না করছি দেখে বৃষ্টি আবাক হয়ে গেলো। সে আমার পাশে বসে বলতে লাগলো,,”ভাবি কাদছো কেনো??”
আমি তো কেদেই চলছি।। আব্বু ওপাশ থেকে আমাকে বুঝালো যে আম্মু ঠিক আছে। একটু অসুস্থ হয়েছে।তারপর ফোন কেটে দিলো।
বৃষ্টি– ভাবি কি হয়ছে কান্না করতাছো কেনো??
আমি বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে আবার কেদে দিলাম।
অথৈ– আ আমার আম্মু খুব অসুস্থ।
বৃষ্টি– ভাবি দাড়াও আমি আম্মুকে এখনি গিয়ে বলছি।
বৃষ্টি উঠে চলে যেতে চাইলে আমি বৃষ্টির হাত ধরে ফেললাম। আমি ওকে মাথা নেড়ে না করলাম এই কথা বলার জন্য। বৃষ্টি আমার পাশে বসে পড়লো,
বৃষ্টি– ভাবি,,
বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আমার চোখের পানি মুছে ফেললাম।
অথৈ– দেখ আজ এই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান। এই কথা শুনলে সবাই বলবে আমাকে চলে যাওয়ার জন্য। তাতে সবার মন খারাপ হবে। তার থেকে কাউকে না বলাই ভালো।
বৃষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এর মধ্যেই মেঘ রুমে ডুকলো।
বৃষ্টি– ভাবি তুমি এখানেই থাকো। কেউ তোমাকে ডিস্টার্ব করবে না। আমি সামলে নিবো সবাইকে।।
কথাগুলো বলে আমার চোখ মুছিয়ে দিলো বৃষ্টি।। তারপর চলে গেলো।
মেঘ অনেক্ষন আমাকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলো। তারপর আমার পাশে বসে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে খেতে লাগলো।। সিগারেটের ধোয়া আমার মুখের উপরে ছাড়তে লাগলো। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। তাই এখান থেকে উঠে গেলাম বেলকুনিতে দাড়ালাম। আমার ভাগ্যটাই খারাপ। এমন একটা স্বামী পেলাম যে কিনা আমার কষ্ট গুলো বুঝেই না, উল্টো আরও কষ্ট দিবে।
বেলকুনিতে বসে আছি। হঠাৎ বৃষ্টি এর কয়েকজন মেয়ে এলো। ওরা আসতেই মেঘ রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ওরা সবাই আমাকে সাজিয়ে দিলো। বৃষ্টিও সাজলো। তারপর অন্যরা চলে গেলেও বৃষ্টি গেলো না। ও আমার পাশেই বসে থাকলো। আমি অনেকবার বললাম তারপরেও গেলো না। আমি একা থাকলে মন খারাপ করবো বলে।একটু পর নিচে নামলাম।। দেখি সবাই এসে গেছে।
সবাই আমার সাথে ছবি তুলছে।। কথা বলছে।।
হঠাৎ আমার চোখ গেলো মেঘের উপর।। অনেক সুন্দর লাগছে মেঘকে। মেরুন রংয়ের পাঞ্জাবী তে অসাধারন লাগছে।। মেঘ আমার পাশে এসে বসলো।।
মেঘ– ওই বউ,, কি হয়েছে তোমার?? একটু হাসো না।।
অথৈ– হুম।।
মেঘ– কি ভাবছো??
আমি মেঘের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।।
অথৈ– নাহ্ কিছু না।।
মেঘ মুচকি হেসে
মেঘ– আমি কিন্তু ভেবে রেখেছি আজ রাতে কি কি হবে??
আমি মেঘের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। সবাই আমার আর মেঘের ছবি তুলছে।।
এর মধ্যে ভাইয়া আর আমার কাজিনরা চলে আসলো। বাবা আসে নি।। আমি ভাইয়া কে বললাম আজকে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে কিন্তু ভাইয়া বললো কালকে যেতে।। সবাই চলে গেলো।। আমি রুমে এসেই একটু শুয়ে পড়লাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে। বৃষ্টি এসেছিলো। কিন্তু শুয়ে আছি বলে চলে গেলো।। আমার ননদটা খুব ভালো। জামাইটার মতো হারামি না।
চলবে,,,
Golpo ta onek onek valo lagche but porer link pai na
porer link gulo koi ektu diben plz
Pore Link paina