সাংসারিক রাজনীতি পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
2904

#সাংসারিক_রাজনীতি
#পর্ব_৩ (শেষ)
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

সুভা আর কিছু ভাবতে পারছে না। তার মাথা ঘুরছে। তার কাকিমা? তার কাকিমা এইসবের পিছনে দায়ী? কিন্তু কাকিমা তো তাকে ভালোবাসে। রাজিবকেও ভালোবাসে। তাহলে সে এইরকম কেন করেছে? কি তার উদ্দেশ্য? সুভা একবার তার কাকিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো, তার চোখ মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে। সুভা ভালোভাবেই বুঝতে পারে, তার শ্বশুরের কথাই সত্য। কিন্তু এতে কাকিমার কি লাভ হলো। সে কিছু বলতেই যাবে, কিন্তু তার আগেই খান সাহেব বলে,”শুধু তোমার স্ত্রীই দোষী না। দোষী তোমরাও।”
সুভার কাকা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”আমরা? আমরা কি করেছি?”
“তোমাদের বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ আজকের এই দিনটার জন্য দায়ী।”
উপস্থিত সবাই বেশ অবাক। সুভার বড় কাকা এইবার বেশ রেগে গেছেন। শুধুমাত্র বউয়ের বড় ভাই আর ভাইজির শ্বশুর বলে এখন ও চুপচাপ ছিলেন উনি। কিন্তু এখন উনি সবাইকেই দোষারোপ করছেন। উনি বেশ রেগেই বললো,” বেয়াই সাহেব, যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন। এইখানে সবাই আছে। সবাই জানতে চায় কি এমন কারণ, যার কারণে আপনি আমার ভাতিজি কে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এখন আপনি আবার আমাদের উপর দোষ দিচ্ছেন। জানিনা, কি অন্যায় করেছি। তবে, দয়া করে, জল আর ঘোলা করবেন না। সবাই দেখছে। সম্মান তাতে কমবে বৈ বাড়বে না। মেয়ের জামাইরা আছে। আসল দোষী কে আগে তাই বলুন।”
“আসল দোষী তো আপনার বাবা হক সাহেব।” খান সাহেবের শান্ত গলায় বলা কথাটাই যেন সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সুভার কাকা রেগে গিয়ে উঠে বললেন,” কি যা তা বলছেন আপনি? আমার মৃত বাবাকে নিয়ে? জানেন আপনি কি বলছেন? আপনার ধারণা আছে?”
সুভার বাড়ির সবাই যেন মুহুর্তেই রেগে গেল। বিশেষ করে সুভার মা। শ্বশুর নামের লোকটাই যে তার সম্বল ছিল। সে রেগে বললো,” ভণিতা ছেড়ে আসল কথাটাই বলুন না বেয়াই।”
খান সাহেব এইবার গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,”রান্না ভালো না হলে, বাড়ির বউকে বের করে দেওয়ার নিয়ম তো আপনাদের ই বানানো। তাইনা?”
সুভার চাচা অপ্রস্তুত হয়ে বলে, ” আমাদের মানে?”
” মনে নেই তোমার? আমার বোনকেও একবার রান্নায় অতিরিক্ত ঝাল দেওয়ার কারণে বাইরে বের করে দিয়েছিলে? ভুলে গেছো?”
সুভার বড় কাকা স্মৃতি হাতড়ে খুঁজতে থাকে সেই দিনটি কবে ছিল। নাহ! খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি তাকে সেটা মনে করার জন্য। একবার নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালো সে। চোয়াল নিজের অজান্তেই শক্ত হয়ে উঠলো। রুমের সব মেয়ে বউরা কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। তাহলে কি খান সাহেব নিজের বোনের সাথে হওয়া অপমানের বদলা নিলো?
সুভার বড় কাকা বেশ ঠান্ডা মাথার মানুষ। টেবিলে থাকা একটা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললো। সে জানে, সবার মনের মধ্যে এখন কি চলছে। সেটা যে ভুল সেটা তাকে প্রমাণ করতে হবে। তার জন্য এখন তার মাথা ঠান্ডা রাখা প্রয়োজন। সে খান সাহেবের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,” তাহলে, আমার ভাইজিকে তাড়ানোর পরিকল্পনা আপনাদের দুই ভাইবোনের? কবে থেকে?”
“সেইদিন থেকেই, যেদিন আমার আদরের ছোট বোনটা কেঁদে কেঁদে আমার কাছে এসে তার সাথে হওয়া অন্যায় টার কথা বলেছিল। সে চেয়েছিল আপনাদের বাড়ির সবাই যেন সেই কষ্ট টা অনুভব করতে পারে। তাই তো, আমি আর আমার বোন মিলে আপনাদের মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে এনেছিলাম। আমি প্রথমেই চেয়েছিলাম, আপনাদের মেয়ের সাথে এই ব্যবহার করতে। কিন্তু, কিছু মানুষ আছে, জানেন তো, যাদের সাথে চাইলেও রাগ করা যায় না। সারাদিন হাজারো পাগলামি আর বায়না করতো আপনাদের মেয়ে। কিন্তু আমি সেই উছিলাতেও আপনাদের মেয়েকে বের করে দিতে পারিনি। মায়া পড়ে গিয়েছিল যে বড্ড।কিভাবে পারতাম? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু, কিছু দিন আগেই আমার বোন আমার কাছে এসে আমার প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। তাইতো, নিজের বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে, আপনার বাবার মতোই অমানুষিক কাজ টা করেছিলাম।” এইটুকু বলেই থামলো সে। একটু দম নিয়ে আবার বলতে লাগলো, ” কিন্তু, আমি যে আপনাদের মেয়ের সাথে সাথে আমার বংশের বাচ্চাদের ও দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম। আর বাকি রইলো সুভা। সে তো আমার আরেকটা মা। তার কাছে আমার ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।” বলেই চোখ মুছলো খান সাহেব।
উপস্থিত সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলো। অনেকে তো চোখ ও মুছলো। সবার মনেই হক পরিবারের প্রতি ঘৃণা জেগে উঠলো। কিন্তু, সেগুড়ে বালি। সবাই আবার হকচকিয়ে উঠলো যখন সুভার বড় কাকা তার স্ত্রীর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগালো। সে ছিটকে পড়লো একটু দূরে। পড়ে গিয়েই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।
সুভার কাকা খান সাহেবের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” আমি তো আপনাকে বিচক্ষণ মানুষ ভাবতাম। কোনো কাজ করার আগে, দশবার ভাবা উচিত। জানেন না? আপনি কি একবারও খোঁজ নিয়েছিলেন, কেন আমার বাবা আপনার বোন কে বের করে দিয়েছিল? আপনার বোনের আসল দোষ কি?আর শুনুন, আপনার বোনকে কেউ বের করে দেয় নি। তাকে দুয়ারে যেতে বলা হয়েছিল। যেখানে তাকে নিয়ে বিচার বসেছিল। কারণ, সে যা করেছিল, তা ছিল ক্ষমার অযোগ্য। ”
“কি করেছিল আমার বোন?” বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো খান সাহেব।
সুভার বড় কাকা তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি বলবো? নাকি তুমিই নিজের মুখে নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করবে?”
সুভার কাকি মাথা নত করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই দেখে বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে সুভার কাকাই বলতে শুরু করে,”হ্যাঁ, আমার বাবা আপনার বোনকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। কারণ সে রান্নায় অতিরিক্ত ঝাল দিয়েছিল। কিন্তু, সেটা তার দোষ হতো না যদি না রান্নাটা তার নিজের হতো। সেদিন তরকারি রান্না করেছিল তো সুভার মা। আর আপনার বোন কি করেছিল জানেন? সেই রান্নায় ঝাল মিশিয়েছিল অতিরিক্ত পরিমাণে। কিন্তু, বলে না, উপরে একজন আছে? মাঝে মাঝেই সে এমনটা করতো। কিন্তু কেউ কিছু বলতো না সুভার মা কে। কারণ, নতুন বউ ছিল সে। সবাই তো ভাবতো সুভার মায়ের হয়তো রান্না ভালো না। কিন্তু, সেদিন সুভার মা রান্নার পর আমার মাকে তরকারি আলাদা খেতে দিয়েছিল। কারণ, তার সন্দেহ হয়েছিল কেউ হয়তো তার রান্নায় কিছু একটা বেশি প্রতিদিন ই মিশাচ্ছে। আর ঐদিন ই রান্নায় মরিচের গুড়া মিশাতে তাকে দেখে ফেলে আমার বাবা। কিন্তু, সে চুপচাপ ছিল। রাতে খাওয়ার সময় আমার বাবা প্রতিদিনের মতো জিজ্ঞেস করেছিল, “রান্না কে করেছে? ” সুভার মা বলেছিল, “আমি। ” বাবা তাকে একটা ধমক দিয়ে বলেছিল,” রান্নার সময় মন কই গিয়ে থাকে? নুন ঝাল তো কিছুই হয়নি। আমরা কি কিছুই আনিনা বাজার থেকে? ভালোমতো বেশি করে একটু দিতে পারো না?” তখন আপনার বোন আগ বাড়িয়ে বলেছিল,” নুন ঝাল হয়নি বাবা? একটুও হয়নি? ঝালও হয়নি? তাও ভালো যে আমি রান্নার পরে একটু দিয়েছিলাম। তা না হলে তো খেতেই পারতেন না।”
সবাই যখন আমরা খাবার মুখে দিলাম, তখন বুঝেছিলাম আসল কাহিনি। মা তরকারি একটু মুখে দিয়ে আপনার বোনের দিকে তাকিয়ে বলেছিল,” তাহলে তুমিই এইসব করো বউমা?”
আমি তো আপনার বোনকে মারতেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার বিচক্ষণ বাবা আমাকে থামিয়ে দিয়ে আপনার বোনকে বাইরে দুয়ারে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতে বলেছিল। সেদিন সেই অতিরিক্ত ঝাল তরকারি দিয়েই আমার বাবা ভাত খেয়ে উঠেছিল। আমরা পারিনি খেতে। কিন্তু বাবা খাবার কখনোই ফেলতেন না। তার কথা ছিল, রিজিকে যা আছে, তাই খাবো। এক বিন্দু বেশিও না। কমও না। আর তখন আমাদের বাড়িঘর তো আর এখন কার মতো ছিল না। বাড়ির সবাই কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে দুয়ারে গিয়েই করতাম। সেদিন আমার বাবা তাকে শুধু বলেছিল এইভাবে খাবারের অপচয় না করতে। অনেকে তো খাবার পায়না। ব্যস এইটুকুই। আমরা আপনাদের কেও জানাইনি। মূলত আমার বাবা জানাতে মানা করেছিল। কারণ, সে ছিল আমাদের বাড়ির বউ। ঘরের খবর বাইরের মানুষ জানুক, তিনি না চাননি। আর আপনি আমার বাবাকে নিয়ে এইসব বলছেন? এইবার বলেন আসল অপরাধী কে? আমার বাবা নাকি আপনি আর আপনার বোন?”
ঘরের উপস্থিত বাকি সবার মতো খান সাহেবের চোখে মুখেও রাজ্যের বিস্ময়। তার বোন এমনটা করেছে? নাহ! সে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে তার বোনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, ” এইসব কি সত্যি বেণু?”
কিন্তু সে কিছু না বলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো। এবার খান সাহেব বেশ জোরে একটা ধমক দিয়ে বললো,”বল, এইসব কি সত্যি? ”
ভাইকে সুভার কাকি ভালোমতোই চিনে। তাকে যেমন ভালোবাসে, তেমন রেগে গেলে তাকে মারতেও দুবার ভাববে না। তাই সে কান্না থামিয়ে বলে,” হ্যাঁ, আমিই এইসব করেছি। সব আমি করেছি। আমি এই খান বাড়ির মেয়ে। আমাকে ঐ বাড়ির লোক দেখেশুনে নিয়ে গিয়েছিল। আর সুভার মা? সে তো জাত পাত ছাড়া ঘরের মেয়ে। গরীব ঘরের মেয়ে। বাপের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে পালিয়ে এসেছিল। কিছুই নিয়ে যায় নি। আর আমি? সবকিছু নিয়েছিলাম এই বাড়িতে থেকে। তাহলে কেন? কেন সুভার মায়ের আমার চাইতে বেশি কদর থাকবে? শ্বশুর, ভাসুর,দেবর, ননদ এমনকি শাশুড়ী যে প্রথমে তাকে মেনেই নেয়নি তাকে পর্যন্ত বশ করে নিয়েছিল সুভার মা। আমার কোনো মূল্যই যেন ছিল না। তাই আমি এমনটা করেছিলাম।”
“তাহলে আমার ছেলেকে কেন এর সাথে জড়ালে?আমার ছেলের জীবন টাও তো তার সাথে জুড়ে দিলে। আমার ছেলে তোমার কারণে বাড়িছাড়া হলো।” রাজিবের মা প্রশ্ন করলো।
” তার কারণও তুমি ভাবি। আমি ছিলাম এই বাড়ির মেয়ে। কিন্তু তুমি আসার পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। আমার মূল্যও কমে গেল। তুমি সবাইকে নিয়ে বাড়ি মাতিয়ে রাখতে। আর আমার দিক থেকে সবার মনোযোগ চলে গেল। এমনকি আমার মাও। আমার মাও উঠতে বসতে বড় বউমা, বড় বউমা করতে থাকতো। আমার মাথা গরম হয়ে যেত। তাই তো তোমার ছেলের জীবন ও জুড়ে দিয়েছি সুভার সাথে।”

এক ঘর ভর্তি মানুষের সামনে কথা গুলো বলে হাঁপাতে লাগলো সে। খান সাহেব রোবটের মতো বসে আছেন। সে নড়তেও পারছে না। সুভার দিকে তাকিয়ে বললো, ” আমার ভুল হয়ে গেছে মা। এই বুড়ো ছেলে টাকে পারলে ক্ষমা করে দিস।” বলেই কান্না করে দিল সে।
খান সাহেবের মা হুইল চেয়ার সামনের দিকে নিয়ে তার বড় ছেলের দিকে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” বোকা ছেলে আমার। তুই কেন এইসবের মধ্যে নিজেকে জড়িয়েছিস? তুই তো ছেলে মানুষ। এই সংসার টা বিশাল একটা রাজ্য। যে রাজ্যের রাজা আর রানী, দুইজন ই মেয়েরা হয়। ছেলেরা শুধু এইখানে অতিথি মাত্র। যারা সারাদিন খেটেখুটে রাতে বাড়ি ফিরে এসে ঘুমুবে মাত্র। তাদের দায়িত্ব রাজ্যের রানীর খেয়াল রাখা। রানীর মর্যাদা ধরে রাখা। রাজকার্যে নাক গলানো না। বুঝলি? আমার মেয়ে আমাকে এসেও এইসব বলেছিল।কিন্তু আমি তো জানি, ওর কোনো রাজ্যের রানী হওয়ার ক্ষমতা নেই। ও তো চায় শুধু মানুষকে কষ্ট দিতে। আর চায়, সবাই ওকে গুরুত্ব দিক। ও কাউকে দিবে না। বুঝলি? আমি মা হয়ে ওর আবদার মানিনি। আর তুই ভগ্নিস্নেহে অন্ধ হয়ে নিজের গর্ভবতী ছেলের বউকে বাড়িছাড়া করেছিস? বোকা ছেলে আমার।”

রাত তিনটার দিকে হুমায়রা আর হুজাইফা ঘুমিয়েছে। নতুন জায়গা তাই ঘুমুতে চাইছে না। রাজিব আর সুভা দুজনই চুপ করে আছে। নীরবতা ভেঙে রাজিবই আগে বললো,” ফুপিকে কিন্ত ধন্যবাদ দিতে হবে।”
সুভা অবাক হয়ে বলে,” মানে?”
“ফুপি এতো ছক না কষলে আমি তোমায় পেতাম কোথায়?” বলেই দুহাতে আগলে নিল নিজের প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে। সুভাও মুচকি হেসে আবদ্ধ হলো স্বামীর বাহুডোরে।

আজ বহুবছর বাদে সিগারেটের পিপাসা পাচ্ছে খান সাহেবের। শেষ কবে সিগারেট খেয়েছিল মনে নেই তার। রাগে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে তার। কি করে করলো সে এতো বড় ভুল? তার কি একবারও উচিত ছিল না সত্য-মিথ্যা যাচাই করা? সারাজীবন রাজনীতি না করেও রাজনৈতিক নেতাদের হাতের মুঠোয় রেখেছে সে। তার টাকা আর ক্ষমতার জোরে। আর আজ? সবার সামনে সে কতটা অবিবেচক মানুষ, তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। তার নিজের নাতি-নাতনীদের দূরে সরিয়ে রেখেছে সে। তার নাতি-নাতনি ভেবেছে, দাদা মানে অন্য কোনো প্রাণী। সেও যে মানুষ, তা জানে না তারা। এর চাইতে কষ্টের আর কি আছে?
তার ভাবনার মাঝে ব্যঘাত ঘটিয়ে তার সামনে চায়ের কাপ ধরে তার স্ত্রী। সে প্রশ্নসূচক চাহনি দিলে তার স্ত্রী বলে,” রাত জাগছেন ভালো কথা। চা খেয়ে নিন। না হলে আবার মাথা ব্যথা করবে।” বলেই সে চলে যায় বিছানায় ঘুমুতে।

খান সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের স্ত্রীর দিকে। নাহ! তার মা ঠিকই বলেছে। এই সংসারের রানী মেয়েরাই। যেমন তার এই সংসারের রানী তার স্ত্রী। সে জানে, কখন কার কি লাগবে। কার কি দরকার। তার মোটেই উচিত হয়নি রাজত্বের দিকের দায়িত্ব পালন করতে। থাকুক না তার স্ত্রী তার রাজ্য নিয়ে। তাতে যদি সবার মঙ্গল থাকে, তাহলে ক্ষতি কি তার?

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে