সম্পৃক্ততা – পঞ্চম পর্ব।
রিফাত হোসেন।
তাহমিদ ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে করুণ গলায় তানিশা বলে উঠল,
– তাহমিদ, আমি একটা সমস্যায় পড়ে গেছি।
সমস্যার কথা শুনে তাহমিদ আশেপাশে তাকালো। বন্ধুমহলের প্রায় সবাই তাকিয়ে আছে ওর দিকে। স্ক্রিনে তাকিয়ে সময়টাও দেখে নিলো একবার। এরপর ফোনটা কান থেকে সরিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
– তোরা তাহলে থাক, আমি বাড়ির দিকে যাচ্ছি।
সবার মুখটা কালো হয়ে গেল তাহমিদের কথা শুনে। বিয়ে এখনো ঠিকই হলো না, অথচ তাঁদের বন্ধু এখনই হবু বউয়ের ফোন পেয়ে আড়াল হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা হজম করতে পারল না কেউ। কিছু বলার সুযোগও পেলো না। তাহমিদ দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল। ওদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে এসে আবার ফোনটা কানে ধরল। বলল,
– কী সমস্যায় পড়েছিস তুই?
তানিশা ইতস্ততভাবে বলল,
– না মানে, আমি তোদের বাড়িতে গিয়েছিলাম ঠিক, কিন্তু কিছু বলতে পারিনি।
একটু থেমে তানিশা আবার বলল,
– খুব লজ্জা করছিল। তাই আর বিয়ের কথাটা তুলতে পারিনি। ভাইয়া, ভাবী, তুলি সবার সাথে গল্পগুজব করে তোদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি।
কথাগুলো শুনে তাহমিদ শব্দ করে হাসতে লাগল। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকগুলোর মধ্যে কেউ কেউ ভ্রু-কুঁচকে দেখল তাহমিদকে। আবার পাত্তা না দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে যেতে শুরু করল। তাহমিদ হাসতে হাসতে তানিশাকে বলল,
– তো এখানে সমস্যাটা কোথায় শুনি? ভালোই তো হয়েছে।
রাগে টগবগ করে তানিশা বলল,
– কিচ্ছু ভালো হয়নি। খুব আফসোস হচ্ছে আমার। ক্ষিধে পেয়েছে প্রচণ্ড। এখন খেতেও পারছি না। নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে। রাগের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সাথে খুব কান্নাও পাচ্ছে।
– রাগ হলে কী তোর সবসময়ই কান্না পায়? নাকি আজই শুধু কান্না পাচ্ছে।
কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল তাহমিদ। যেন এটা জানা তাঁর ভীষণ প্রয়োজন। তানিশা গোমড়া মুখ করে উত্তর দিলো।
– রাগ মাত্রাতিরিক্ত হলে কান্না পায় আমার। আর রাগটা যদি হয় নিজের প্রতি, তাহলে কান্নার মাইরে বাপ; ওকে ঠেকায় কে!
তাহমিদ এবারও খুব জোরে জোরে হেসে উঠল। আশেপাশের লোকজন নিশ্চয়ই ওকে এবার পাগল ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না! ও কাউকেই পাত্তা দিলো না সেভাবে। নিজের মনোভাব বজায় রেখে হাস্যজ্বল মুখ করে বলল,
– তুই মামা আসলেই একটা সেই লেভেলের জিনিস। তোর মুখেই প্রথম শুনলাম রাগ হলে কেউ কেঁদে দেয়। রাগ হলে আমি তো গর্জন দিয়ে উঠি; আর তুই কান্না করিস। হা হা হা।
তাহমিদের হাসির শব্দ শুনে তানিশা খুব একটা না ক্ষেপলেও ওর কণ্ঠে ‘মামা’ শব্দটা শুনে মারাত্মক ক্ষেপে গেল তানিশা। করুণ মুখটা পরিবর্তন করে হুংকার ছেড়ে বলল,
– ওই, মামা কী হুহ্! এখবার বোন বানাচ্ছিস; আবার মামা বানাচ্ছিস। এগুলো কোন ধরনেই কথা শুনি? বোন বলেছিস তাও মনকে মানিয়ে নিয়েছি, কিন্তু মামা ডাকটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না।
তাহমিদ হাসি থামিয়ে বলল,
– এইজন্যই প্রেম-ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকে দূরে রেখেছি এখন। মজা করে বন্ধুকে মামা ডেকেছি ; তবুও তোর মানা না মানার কথা ভাবতে হচ্ছে।
– তুই চুপ করবি প্লিজ। আমি আছি আমার টেনশনে। ইশ, কেন যে ভাবীকে বললাম না, ভাবী, তোমার ভাইটাকে আমার সাথে বিয়ে দিবা! সত্যি বলছি, তুহিন ভাইয়া না থাকলে আমি নির্ঘাত এতটুকু বেহায়া হতাম।
– আরও লজ্জায় পড়তি; যখন শুনতি আমিই বিয়েতে রাজি হচ্ছি না।
– রাজি হবি না কেন? আমার মধ্যে কী কম আছে শুনি?
তাহমিদ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
– তোর মধ্যে কোনোকিছুর কম নেই। তুই পরিপূর্ণ একজন নারী। কিন্তু আমার মধ্যে কিছু কম আছে।
তানিশা ফিক করে হাসল। কিছু সুরেলা কণ্ঠে বলল,
– তুমি কী এখনো বালক রয়ে গেছ? তা বালক, পরিপূর্ণ পুরুষ হতে তোমার আর কতদিন সময় লাগবে শুনি?
তাহমিদ ধমক দিয়ে বলল,
– চুপ। আমি ওই কথা বলিনি।
ধমক শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল তানিশা। একটু কেঁশে নিজের গলা ঠিক করে নিলো। কিছু বলতে যাবে, তাঁর আগেই তাহমিদ বলে উঠল,
– আচ্ছা শোন, তুই বারান্দায় এসে দাঁড়া, আমি এক্ষুনি আসছি।
এ-কথা বলে ফোন রেখে দিলো তাহমিদ। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটা দিলো। কিছুটা সামনে যাওয়ার পর রিকশা নিলো। রিকশাওয়ালাকে ঠিকানা বলে সে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসল।
১২.
– নুপুর, তখন ওভাবে কথাটা বলে আমি ভুল করছি। সেজন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি এখন।
নুপুর ঘরে বসে বই পড়ছিল। সেসময় দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সজল। দুপুরের পর আর নুপুরের সাথে কথা হয়নি তাঁর। সজল তখন একটু কড়া করে একটা কথা বলেছিল। তাই বোধহয় নুপুর সারাক্ষণ মুখটা গম্ভীর করে রেখেছিল। ব্যাপারটা সজলকেও ভাবাচ্ছিল। তাই অপরাধবোধ দূর করতে চলে এসেছে এখানে।
নুপুর সজলের কথা শুনে বই রেখে দরজার দিকে তাকালো। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,
– ওহ্ তুমি। এসো, ভিতরে এসো।
সজল ভিতরে এলো। বিছানার উপর বসে বইটা হাতে তুলে নিলো। বইটার নাম ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’। লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বইটা সজল পড়েছে আগেও। এখানে একটা ব্যর্থ প্রেমের গল্প আছে। ছেলে-মেয়ে, দু’জনের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। তবে ভিলেন ছিল মেয়েটার বাবা। সে মেয়েকে কিছুটা জোর করেই খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়। বইটা পড়ে সজলের চোখের সামনে প্রথমে আসমার মুখটা ভেসে এসেছিল। মনে মনে ভীষণ দুঃখ পেয়েছিল সে। যদি তাঁর সাথেও এইরকম কিছু হয়, তাহলে সে বাঁচবে না।
কিছুক্ষণ পর নুপুর বড় করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
– ক্ষমা চাচ্ছো কেন? তুমি অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছ তখন। নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত ছিলে। তাই একটু কড়া করে বলেছিলে। তাছাড়া আমারও বুঝা উচিত ছিল; তুমি বেশ কয়েকটা বছর এ বাড়িতে ছিলে। প্রতিটি কোণা তোমার চেনা। আমি অযথা তোমাকে ঘরে পৌঁছে দিতে যাবো কেন?
সজল মৃদু হাসল। কিছু বলল না আর৷ নুপুরের সামনে এমনিতেই সংকোচবোধ করছে সে।
নুপুর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
– তোমার বাবা-মা কেমন আছেন?
– ভালো।
দু’জনের মধ্যে নীরবতা নেমে এলো আবার৷ সজল আড়চোখে বারকয়েক তাকালো নুপুরের দিকে। নুপুরের মুখটা বিব্রত হয়ে আছে। খুব লজ্জা পাচ্ছে বোধহয়। কিছু যেন বলতেও চাচ্ছে। সজল জিজ্ঞেস কলল,
– তুমি কী কিছু বলতে চাচ্ছ?
নুপুর আহত ভঙ্গিতে বলল,
– হ্যাঁ। তোমাকে আমি প্রায়ই ফোন দিতাম। কিন্তু তুমি রিসিভ করতে না। কেন করতে না?
– আসলে আমি অপরিচিত নম্বরের কোনো ফোনকল রিসিভ করি না। আমার নম্বর চেঞ্জ করার পর আর তোমার নম্বর সেভ করা হয়নি।
– কিন্তু তুমি তো জানতে ওটা আমার ফোন নম্বর। তোমার মা অসংখ্যবার তোমার ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে; বলেনি?
সজল মাথা নাড়ল শুধু। সে ইচ্ছে করেই নুপুরের সাথে কথা বলতো না। নুপুর ভালো মেয়ে; কিন্তু সে যে ভাবনা মনে পুষে রেখেছে, সেটা ঠিক না। সজল সোজাসাপটা বলল,
– নুপুর, তুমি যা চাচ্ছো, তা আসলে সম্ভব না।
– কেন সম্ভব না?
– কারণ আমি একজনকে ভালোবাসি। তুমি সেটা ভালো করেই জানো। আমার মা নিশ্চয়ই তোমায় বলেছে। আজ আমিও বলছি; আমি একজনকে ভালোবাসি।
নুপুরের চোখ দু’টো ছলছল করছে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো সজলের দিকে। ভারী কণ্ঠে বলল,
– আমি তো বলছি না আমাকে বিয়ে করো, বা ভালোবাসো। ইনফ্যাক্ট আমি এ প্রসঙ্গে কোনো আলোচনাই করতে চাই না।
– কিন্তু আমি চাই। কারণ আমি জানি, তুমি আমার জন্যই এখনো বিয়ে করছ না। অপেক্ষা করে আছো আমার জন্য।
– তাতে তোমার কী? আমার অপেক্ষার মূল্য তো তোমার কাছে নেই। তুমি তো চিরকাল আমাকে অবহেলা করেছ; এখনো করছ। অথচ আমি দিনের পর দিন শুধুমাত্র তোমাকেই নিয়েই ভেবেছি। এই ঘরে অসংখ্য আসবাবপত্র আছে। তাঁর থেকেও বেশি আছে তোমার ছবি। ঘরের নানান জায়গায় তোমার ছবি আমি লুকিয়ে রেখেছি। আমি আর্টকে প্রফেশনালি নিলে এতদিনে বেশ উপরে পৌঁছে যেতাম। কিন্তু তা করিনি। কারণ আমি সব সময় শুধুমাত্র তোমার ছবি এঁকেছি। অন্য কারোর, বা অন্য কোনো দৃশ্যের ছবি আঁকার প্রতি আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না।
কথা বলতে বলতে নুপুরের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সজল অপরাধী গলায় বলল,
– নুপুর, কেঁদো না। দেখো, তুমি চাইলে আমরা ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে পারি।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো নুপুর। হাত দিয়ে চোখের জল মুছে বলল,
– এতগুলো বছর পর তোমার মনে হলো, তোমার বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা আমার হয়েছে।
– তুমি আমায় ভুল বুঝছ নুপুর।
– আমি তোমায় ভুল বুঝছি না সজল। আমি এখন এইসব নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। আমি তো বলছি না, তুমি ওই মেয়েটার সাথে সম্পর্ক ভেঙে আমাকে বিয়ে করো। তুমি থাকো ওর সাথে। আমি আমার মতো থাকছি। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আগেও ছিল, এখনো আছে। এটা কখনো কমবে না। কিন্তু আমি চাই না, তোমার মনে আমার জন্য কোনোরকম সহানুভূতি তৈরি হোক। তুমি এখন যেতে পারো। রাতের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
– তুমি রাতের খাবার খাবে না?
– না। আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি ঘুমাবো এখন। যাওয়ার আগে দরজাটা একটু ভিড়িয়ে দিয়ে যেও।
সজল কিছু বলার আগেই নুপুর ঘরের লাইটটা বন্ধ করে দিলো। টেবিলল্যাম্প এর স্বল্প আলোয় সজল একবার নুপুরকে দেখল; এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে দরজাটা একটু টেনে দিলো।
১৩.
– তুই পৃথিবীতে কোনো একটা জায়গায় ছোট একটা কাঠের ঘর তৈরি করলি; আমি সেখাই থাকতে পারব। আমার একটা সংসার চাই। সংসারের জন্য স্বল্প কিছু আসবাব চাই; আর..
তাহমিদ চিন্তিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– আর কী চাস?
– আর তোকে চাই।
তাহমিদ রাগী কণ্ঠে ‘ নির্লজ্জ’ শব্দটা বলল শুধু। সেটা শুনে তানিশা পাশ থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো। দুই হাত কমোরে রেখে গাল ফুলিয়ে তাহমিদের দিকে তাকিয়ে রইল।
ওরা দু’জনে এখন রাস্তায় পাশে থাকা খোলা জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে। বিকেলে এই ফাঁকা জায়গাটায় আশেপাশের বাড়ির সব বাচ্চারা খেলাধুলা করে। দু’টো বেঞ্চ আছে একপাশে। বাচ্চাদের দোলন খেলার ব্যবস্থাও আছে। দুই পাশে দু’টো ল্যাম্পপোস্ট আছে। এটাকে ঠিক পার্ক বলা যায় না বটে; ছোট মাঠ বলা যায়। মাঠের গা ঘেষেই আছে তানিশাদের এক তলা বড় বাড়িটা। বাড়ির পশ্চিমে মাঠ; তানিশার ঘরও পশ্চিমে। তাহমিদ এখান থেকে কিছুটা উঁচু গলায় ‘তানিশা’ বলে ডাক দিয়েছিল। তানিশা বারান্দাতেই ছিল; তাই সহজেই দেখতে পেয়েছিল তাহমিদকে। দৌড়ে বেরিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে।
তানিশা বলল,
– আমাকে বিয়ে না করার একটা কারণ অন্তত দেখা?
– তোকে বিয়ে কেন করব, সেটা আগে বল।
– কারণ আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে বিয়ে করতে চাই। তুই এখন সিঙ্গেল। অর্থাৎ কোনো বাধা নেই। তাই তোর উচিত আমাকে ভালোবাসা, এবং বিয়ে করা। করবি কি না বল?
– তুই এত বেহায়া কেন বলতো? কীভাবে একটা ছেলেকে বলছিস, বিয়ে করবি কি না বল! মেয়েদের একটু লাজুক হতে হয়, তুই জানিস না?
– জানি তো। সেজন্যই তো তোর বাড়িতে গিয়ে কিছু বলতে পারিনি।
– তাহলে আমাকে কেন বলছিস?
– কারণ তুই আমার বন্ধু। তোর কাছে আবার কীসের লজ্জা?
– বন্ধু তো বন্ধু হয়েই থাক না। অযথা বিয়েসাদীর কথা তুলছিস কেন?
তাহমিদকে কিছুটা সিরিয়াস দেখালো এ সময়। তানিশা অবাক হলো বটে, কিন্তু দমে গেল না। তাহমিদের আরও একটু কাছে এলো। করুণ কণ্ঠে বলল,
– আমি সত্যিই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।
– এই জিনিসটা ঠিক কবে উপলব্ধি করলি; আজকে?
– না। আরো অনেকদিন আগে। কিন্তু বলার ইচ্ছা ছিল না এতদিন। ভেবেছিলাম যেহেতু পারিবারিক কোনোরকম তাড়া নেই, তাহলে আমি এত তাড়াহুড়ো কেন করব? আজ হঠাৎ করেই বলে বসলাম।
– তুই তো জানিস আমি একজনকে ভালোবাসতাম। জানিস না?
তানিশা মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলল,
– জানি।
– দেখ, ওকে যে এখনো ভালোবাসি, তা না। বা ওর জন্য যে আমি অপেক্ষা করছি, সেটাও না। বাট অন্য একটা কারণ আছে।
– কী কারণ শুনি?
– সেটা আমি বলতে পারব না। কেন পারব না, সেটাও বলব না। প্রত্যেকের জীবনে যেমন গোপনীয়তা আছে, তেমনি আমার জীবনেও আছে। সবকিছু অন্যের কাছে শেয়ার করা যায় না।
তানিশা, তাহমিদের পাশে এসে, তাহমিদের হাতের মুঠোয় নিজের একটা হাত রাখল। তাহমিদ নির্বিঘ্নে চেপে ধরল তানিশার হাত। তানিশা চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে। কণ্ঠও ভারী হয়ে গেছে। সে নিঃশ্বাস আটকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– আমাকে কী তোর ভালোলাগে না? দেখ, তুই হয়তো আমাকে নিয়ে এইরকম ভাবে কখনো ভাবিসনি; কিন্তু আমি ভেবেছি। আমি সত্যিই তোকে খুব ভালোবাসি।
– তানিশা, তুই খুব সুন্দরী এবং খুব ভালো একটা মেয়ে। তোর মধ্যে কোনো অহংকার নেই৷ তুই বড়লোক বাবার মেয়ে হয়েও গরীবদের পাশে থাকিস। কত মানুষকে তুই কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিস। আমার মতো ১০ হাজার টাকার একজন কর্মচারীকে কত আপন করে নিয়েছিস। অথচ সেসময় আমাদের বন্ধুত্ব তেমন গাঢ় ছিল না। অফিসের মালিকদের একজন হয়েও তুই আমাকে বন্ধু বলে সম্মোধন করেছিস। এবং আমাকেও বলেছিস, তোকে যেন নাম ধরে, এবং তুই বলে সম্মোধন করি। তোর মতো মানুষ আমি আগে দেখিনি। অন্য কেউ হলে হয়তো বলতো, বাইরে আমাদের মাঝে যেই সম্পর্কই থাক না কেন, অফিসে আমি তোমার বস। ঠিক এইরকমটাই বলতো। অথচ তুই কত ভিন্ন। সত্যি বলতে তোর মতো মেয়ে আমি একসময় জীবনসঙ্গী হিসেবে চাইতাম। সেজন্য মানহা নামের ওই মেয়েটাকে ভালোবেসেছিলাম। শুরুতে আমাদের সম্পর্ক ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ ও চেঞ্জ হতে শুরু করল। আমি ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা পরে আর সম্ভব হয়নি।
তানিশা চোখের জল মুছে বলল,
– তোদের ব্রেকআপ কেন হয়েছিল, সেটা এখনো আমার কাছে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। আমি যতদূর শুনেছি, মেয়েটা রাগ করে চলে গেছিল কোথায় যেন। রনি বলেছিল, ও তোর সাথে প্রতারণা করেছে। সবাই তো এটাই বলেছে।
তাহমিদ হাসল। রহস্যময় হাসি। ওর হাসির কারণ বুঝতে পারল না তানিশা। জিজ্ঞেস করল,
– হাসছিস কেন?
তাহমিদ দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
– এমনি।
– সত্যি করে বল তো, তুই কি এখনো ওর জন্য অপেক্ষা করছি?
– না।
– ওকে কি এখনো ভালোবাসিস?
– না।
– তোর কাছে ওর স্থানটা ঠিক কোথায় এখন? একজন প্রতারক?
তাহমিদ সোজাসাপটা বলল,
– না। ও খুব ভালো একটা মেয়ে। ওর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্রথম প্রথম ছিল অবশ্য। এখন নেই।
– কেন নেই? ওকে ভুলে গেছিস নাকি?
– হ্যাঁ।
– তাহলে আমাকে ভালোবাসতে অসুবিধে কী?
– অসুবিধে আছে। একটাই অসুবিধে আছে। যদি সম্ভব হতো, তাহলে আমি এক্ষুনি তোকে নিয়ে কাজী অফিসে চলে যেতাম। অবশ্য এখন কাজী অফিস বন্ধ। তবুও আমি কাজীকে এক্সট্রা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতাম।
তানিশা খিলখিল করে হাসল। ওর ভেজা চোখ-মুখে হাসিটা খুব বেমানান লাগছে। তাহমিদ বলল,
– তুই নিশ্চয়ই ভাবছিস, তাহমিদ খুব নিষ্ঠুর। তোকে বুঝতে পারছে না। এইরকমটা ভাবলে ভুল ভাববি। কারণ আমি তোকে বুঝতে পারছি। আমি এটাও বুঝতে পারছি, তুই আমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিস। তোর এই ভালোবাসাকে আমি অগ্রাহ্য করছি না৷ করলে হয়তো এইসময় তোর এখানে আসতাম না। দেখ, আমার কথাবার্তা শুনে অনেকেই ভাবে, মানহার চলে যাওয়া নিয়ে আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত আছি। তাই আমি একটু অসুস্থ। সত্যি বলতে একসময় আমিও এমনটাই ভাবতাম। কিন্তু আমি পরে ঠিকই উপলব্ধি করেছি যে, আসল কারণ এটা না। একসময় আমিও অনেক স্বপ্ন দেখতাম। ভালোবাসা অনুভব করতে পারতাম। ভেবেছিলাম মানহাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করবো। ভাইয়া, ভাবী, বোন, সবাইকে নিয়ে আমরা আনন্দে থাকবো। কিন্তু মানহা আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হঠাৎই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ভালোবাসা, সংসার, সুখ, এইসব কিছু পানশে হয়ে গেল আমার কাছে। তোরা কেউ আমার চোখের জল দেখিসনি। কিন্তু আমি কাঁদতাম, খুব কাঁদতাম। মানহার জন্য না; অন্য একটা কারণে আমার চোখ বেয়ে জল পড়তো৷ সবকিছু থেকে আমার মন ওঠে গেল। জীবনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শুরু করলাম। তবে একটা স্বপ্ন আছে আমার। সেটার জন্য এখনো সবার সাথে আছি। স্বপ্নটা পূরণ হয়ে গেলে হয়তো আমিও এইসব ছেড়ে চলে যাবো।
তানিশা, তাহমিদকে থামিয়ে দিয়ে হঠাৎ বলে উঠল,
– কোথায় যাবি? হিমালয়ে; সাধনা করতে।
তাহমিদ হাসল। তানিশার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের ভেজা চোখ মুছল। কাতর গলায় আবার বলতে শুরু করল,
– ধরে নে তাই। আমার সাথে থাকলে তুই ভালো থাকবি না। দেখছিসই তো আমার অবস্থা। আমার না আছে কোনো ভবিষ্যৎ, আর না আছে কোনো নিজস্ততা। এইরকম একটা মানুষকে বিয়ে করে তুই নিজের জীবনকে অনিশ্চিত কেন করবি?
– তুই তো আগে এমন ছিলি না। আমার বিশ্বাস, তুই কোনো একসময় আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবি। তোর মতো পাগলকে শায়েস্তা করার মন্ত্র আমার জানা আছে।
তাহমিদ চমকে ওঠে বলল,
– কী মন্ত্র?
– আছে। সেটা পরে নিজেই বুঝতে পারবি। আপাতত একটা কাজ কর। তুই বাড়িতে ফোন করে বল, আজকে রাতটা তুই আমার সাথে থাকবি।
তাহমিদের চোখ কপালে ওঠে গেল তানিশার কথা শুনে। থতমত মুখ করে বলল,
– নাউজুবিল্লাহ। এখনো বিয়েই হয়নি, তাঁর আগেই আমার সাথে রাত কাটাতে চাচ্ছিস। ছি ছি ছি!
তানিশা অবাক হয়ে নিজের মুখটা চেপে ধরল। কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে তাহমিদের মাথায় গাট্টা মারল। আর বলল,
– আরে বোকা, আমি এটা বলিনি যে তুই আমার রুমে রাত কাটা। আমরা আজ ড্রয়িংরুমে বসে থাকবো সারারাত। আমার বাবা-মা, তুই আমি, চারজন মিলে ক্যারাম খেলবো। কোনোরকমে রাতটা শুধু পাড় করব আরকি। শর্ত এটাই যে, তোকে সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে থাকতে হবে।
তাহমিদ কৌতূহল আর ভীত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– এইরকমটা কেন?
– কারণ, আমি দেখব তোকে কে মাঝরাতে “009” নাম্বার থেকে ফোন দেয়।
তাহমিদ ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,
– অসম্ভব। আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উত্তর জানার আছে।
– সত্যিই যদি কেউ তোকে ফোন দেয়, তাহলে সেখানেও দিবে। সেটা তুই যেখানেই থাকিস না কেন।
– আসবে না। আমাকে একান্তে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে হবে।তাছাড়া আমার ঘর ছাড়া বাইরে কোথাও ও ফোন দেয় না।
তানিশা হাসল। হেসে বলল,
– আসলে এইসব ধোঁকা খাওয়া, অনুভূতি নাই, প্রেম নাই, এইসব গাজাখুরি কথাবার্তা। তোর মতো মানুষ আমি অনেক দেখেছি জীবনে। তোর প্রধান এবং অন্যতম দূর্বলতা হলো ‘হ্যালুসিনেশন’। তুই প্রথমে মানহার চলে যাওয়াটাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পেরেছিস খুব ভালোভাবেই; কিন্তু কিছুদিন পর নিজে হঠাৎ অন্যরকম হয়ে গেছিস। কারণ সেদিন থেকেই তোর ‘হ্যালুসিনেশন’ নামক অসুখটা হয়। হয়তো কোথাও একটা মানসিক চাপ ছিল তোর মস্তিষ্কে। তাই সেখান থেকেই তোর অবচেতনায় একটা চরিত্র আসতে শুরু করে। ভাবীর সাথে আমি কথা বলেছি। আমাদের দু’জনেরই ধারণা তোকে যদি এই ০০৯ থেকে কিছুদিনের জন্য দূরে রাখা যায়, তাহলে তুই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবি।
– এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। ওই মেয়েটার সাথে কথা না বললে আমি বাঁচবো না। আমি জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ওর সাথে পরামর্শ করে নেই। ওকে হারিয়ে ফেললে আমিও অচিরেই হারিয়ে যাবো।
– তাহমিদ, নিজের বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করে একবার ভাব, তোর অসুখটা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর। এর সাথে তুই নিজের জীবনকে জড়িয়ে ফেলেছিস। এটি এমন এক মানসিক অবস্থা যখন কেউ ভ্রান্তির ভেতর বসবাস করে অজান্তে। আসলে মিথ্যার জগতে বসবাস করে কেউ ভাবে সে সত্যজগতে বসবাস করছে। এটি একটি অস্বাভাবিক অনুভূতি। এ অনুভূতি স্বাভাবিক অনুভূতির মতোই ঘটে থাকে।
যেমন ধর, কেউ একজন হয়তো দাবী করে অদৃশ্য কেউ তার কানে কানে কথা বলে যায়। তার মানে ঐ ব্যাক্তির শ্রবণেন্দ্রিয়ের হ্যালুসিনেশন ঘটে থাকে। হ্যালুসিনেশন দেহের প্রতিটি ইন্দ্রিয়তে ঘটতে পারে। কেউ হয়তো দেখে তার আশেপাশে একটা কুকুর সব সময় হাঁটাহাঁটি করছে; কিন্তু আদতে কোনো কুকুর তার আশেপাশে থাকে না। এটা ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন। এমনও হতে পারে আক্রান্ত মানুষটি এক বা একের অধিক মানুষের সাথে কথা বলতে পারে। হতে পারে সে এখানে বসে দূরের কারো সাথে কথা বলছে। আসলে কেউ কেউ এটাকে অলৌকিক শক্তি ভাবলেও এটা একটা মানসিক রোগের উপসর্গ।
এটি সাধারণত মানসিক রোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকেও হ্যালুসিনেশন হতে পারে। তোর যেহেতু মানসিক সমস্যা, তাই এর চিকিৎসা তোকেই করতে হবে। তুই যে বলছিলি না, তোর মধ্যে এখন আর কোনো ভালোবাসা নেই, কোনো আবেগ, অনুভূতি নেই। এটা তোর ভ্রান্তি ধারণা। ভালোবাসা না থাকলে তুই রোজ অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যেতি না। আড্ডা থেকে আবার বাড়িতে যেতি না। আবেগ, অনুভূতি, এইসব না থাকলে এই সময় আমাকে বুঝানোর জন্য, আমার কাছে ছুটে আসতি না। “009” জাস্ট একটা সংখ্যা। আর যে মেয়েটা আছে, ওটা তোর মস্তিষ্কের সৃষ্টি। মানুষ যখন সবকিছু অস্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করতে শুরু করে, তখন তাঁর মস্তিষ্ক এইরকম একটা চরিত্র সৃষ্টি করে৷ তারপর সেই চরিত্রের দ্বারা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। যেমন তোকে করছে। তোর এমন এক অবস্থা হয়েছে যে, ওই মেয়ে চরিত্রটা যদি তোকে বলে, তাহমিদ, তুমি আত্মহত্যা করো, তাহলে তুই ঠিক-ভুল বিচার না করে আত্মহত্যার চেষ্টা শুরু করে দিবি। অর্থাৎ ও যা বলবে, তুই সেটাই করবি। এর কারণ, তুই ওর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তুই কাউকে ভালো কোনো উপদেশ দিলে ভাবিস, এটা ওই চরিত্রের দেওয়া উপদেশ। আসলে এমনটা না৷ সব প্রশ্নের উত্তর তুই দিস। কিন্তু ভাবিস, ওই মেয়ে চরিত্রটা দিচ্ছে। এটা অনেক বড় একটা সমস্যা। এখান থেকে বের হওয়ার একটাই উপায়, তা হলো নিজের মনকে শক্ত করা। মনের উপর আস্থাশীল হওয়া। সবসময় ভাববি, তোর দ্বারা যার উপকার হচ্ছে, তাঁর কৃতিত্ব আসলে তোর, অন্য কারোর না। আবার তোর দ্বারা যদি কারোর ক্ষতি হয়, তাহলে সেটাও ভাববি তোর জন্য হয়েছে। এরপর আর ওইরকম কাজ তুই করবি না। বুঝেছিস কী বলছি?
তাহমিদ ব্যাক্কলের মতো তাকিয়ে মাথা নাড়ল শুধু। তানিশা পাশ থেকে আবার ওর সামনে এলো। তাহমিদের দুই হাতে হাত রেখে মৃদু হেসে বলল,
– আল্লাহর কাছে দোয়া কর। তাঁর উপর ভরসা রাখ। নিজেকে বিশ্বাস কর। এভাবে তুই শেষ হয়ে যাচ্ছিস। এখান থেকে তোকেই বের হতে হবে। শোন, কাল তোর অফিসে যেতে হবে না।
তাহমিদ কপাল কুঁচকে বলল,
– কেন?
– কারণ কাল তুই বরিশাল যাবি। ভাবীর মায়ের বাড়িতে। ভাবী বোনের বিয়েতে।
– কিন্তু, সেটা তো আরও দেরি আছে।
– থাক দেরি। ভাবীর সাথে আমার কথা হয়েছে।
– আর চাকরি; মানে ওখানে তো আর একদিনের জন্য যাওয়া হবে না।
– যতদিন ইচ্ছে ওখানে থাক। তোর চাকরির চিন্তা করতে হবে না।
– সবকিছুর একটা নিয়ম তো আছে, তাই না। যদিও আমি সেরকম নিয়ম অনুসরণ করি না। বাট এই ছুটি দেওয়ার দায়িত্ব তোর। আমি এখন পর্যন্ত আবেদনই করিনি। যদি তোর সিনিয়র তোর কাছে জবাবদিহি চায়।
– চাইলে চাইবে। তোর চাকরির দায়িত্ব আমার। মাস শেষে আমি তোকে বেতন দেবো। এই চাকরি চলে গেলে আরেকটা ধরবি। দেশের প্রায় সব পত্রিকার সাথে আমার যোগাযোগ আছে। আমি এক দিনে তোর চাকরির ব্যবস্থা করব। তুই ওখানে যা। নতুন জায়গায় ঘুরে আয়। আর রাতে ফোন থেকে সাবধান।
– বরিশাল যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।
– কেন নেই?
– কারণ, ওখানে মানহার বাড়ি।
তানিশা হেসে বলল,
– বরিশাল কী আর ছোট্ট একটা অঞ্চল? ওটা একটা বিভাগ। ওখানে মানহাকে খুঁজতে গেলেও তোর জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে। আর তুই যদি নিজেই ওর থেকে দূরে থাকিস, তাহলে ওর আশপাশ দিয়ে তোর যাওয়ার সুযোগই হবে না। তাছাড়া ও কী এখনো দেশে আছে? থাকলে তোর সাথে না হোক, অন্যান্য বন্ধুদের সাথে একবারের জন্য অন্তত যোগাযোগ করতো। বিয়েসাদী করো বোধহয় বরের সাথে বিদেশে চলে গেছে। তোরাই তো বলতি, ও শুধু বিদেশে যেতে চাইতো।
তাহমিদ নিজের মনেমনে বলল,
– সেই সুযোগ আর পেলো কোথায়!
তানিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
– অনেক বকবক করে ফেলেছি। মুখ ব্যথা হয়ে গেছে। শোন, তুই কী ভালো হতে চাস? তোর মনের কথাটা আমি জানতে চাই।
তাহমিদ মাথা ঝাঁকিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলল। তানিশা বলল,
– ওকে। তাহলে এখন বাড়িতে যা। ভয় পাস না। দাঁড়া, রিকশা করে যেতে হবে না। আমি ড্রাইভার কাকাকে বলে দিচ্ছি, উনি পৌঁছে দেবেন।
তানিশা ড্রাইভারকে ডাকতে গেল। তাহমিদ বড় করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
– বাপ্রে! কত কথা বলতে পারে মেয়েটা। একে বিয়ে করতে তো আমাকে সারাজীবন পস্তাতে হবে। বাচাল একটা।