#সম্পর্ক
#Tasfiya Nur
পর্বঃ১০
ফ্যাশন হাউজে বসে সবাই সবার মতো কাপড় সিলেক্ট করতে ব্যস্ত। তাসলিমা আর বাকি কর্মচারীরা সব সামলাচ্ছে, মহুয়া চৌধুরী বাড়ির সবাইকে দেখে নিজের কেবিনে গিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে আছে।রাহাত সবার সাথে কাপড় নিয়ে আলোচনা করছে কার কোনটা পছন্দ সেটা খেয়াল রাখছে সাথে সাদিফকে কি গিফট করা যায় সেটা রাহাত দেখছে কারণ ছেলেদের পছন্দ ছেলেরাই বুঝবে ভালো।রাত্রী তো রাহাতের সামনে এটা ওটা কাপড়এ এনে দেখাতে ব্যস্ত আর রাহাতের নজর খুজছে মহুয়াকে। পরে সবাইকে ফোনের অজুহাত দেখিয়ে মহুয়ার কেবিনে যায়।
কি হলো মহুয়া সবাই ওখানে কাপড় দেখছে আর তুমি এখানে মাথা ধরে বসে আছো এনি প্রবলেম?
চিন্তিত হয়ে মহুয়াকে জিগাসা করে রাহাত।
না তেমন কিছু নয় কিছু মানুষ এসেছে তো ভালো লাগছেনা তাদের সামনে থাকতে।
হাসার চেষ্টা করে কথাটা বলে মহুয়া।
অতীত যদি ভুলেই যাও তাহলে তার মুখোমুখি হতে ভয় কেন মহুয়া, অতীতের মুখোমুখি হয়ে জবাব দাও তুমি ভালো আছো তাদের জন্য তোমার জীবন থেমে থাকেনি।
মহুয়ার পাশে বসে নিজের দিকে করে বসিয়ে কথাটা বলে রাহাত।
রাহাত বাবা কথাটা ঠিক বলেছে মহুয়া মা আমরা না হয় ভুল করেছিলাম সেজন্য তুই তোর জীবনের খুশি হারাবি কেন সবাই মিলে কত মজা করছে চল সেখানে আর শুন মা রাহাতের সাথে বিয়েটা করে ফেল।
মিসেস মিলি চৌধুরী মহুয়ার কেবিনে নক না করে ঢুকেই রাহাতের কথা শুনতে পেয়ে কথাটা বলেন তিনি।মহুয়া আর রাহাত অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে মিসেস মিলির দিকে।
অবাক হওয়ার কিছু নেই বেয়াইনের থেকে শুনলাম তোকে রাহাত বিয়ে করতে চায় মেনে নে মা আর কত একা থাকবি আমার ছেলের কাছে তোকে ফিরতে বলবোনা কারণ যে অপমান হয়েছে তোর সেখানে ফিরতে বলে ছোটো করার কোনো অধিকার আমার কিংবা আমার পরিবারের নেই।
মহুয়া আর রাহাতকে অবাক হতে দেখে মৃদু হেসে কথাটা বলেন মিসেস মিলি।রাহাত কিছুটা ইতস্তত হয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। মহুয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সোফায়।মহুয়াকে চুপ থাকতে দেখে মিসেস মিলি বলেন,
তুই বোধহয় আমার সাথে কথা বলতে রাজী নস মহুয়া আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু একটা কথা রাহাতকে ফিরিয়ে দিসনা যে কষ্ট আমরা দিয়েছিতার বদলে না হয় তুই এবার সুখ কুড়িয়ে নে।
কথাটা শেষ করে বেরিয়ে যেতে ধরেন মিসেস মিলি, মহুয়া এবার কাঁপা কাঁপা গলায় জিগাসা করে,
আমার মা বাবা ভাইয়া কেমন আছে মা কোনো খোজ জানো?
মহুয়ার প্রশ্নে অবাক হন মিসেস মিলি তারপর হতাশ কণ্ঠে জবাব দেন,
তুই চলে আসার একমাসের মাঝেই সাগর সব গুটিয়ে নিয়ে ঢাকায় এসে পড়ে তারপর আর গ্রামে যাওয়া হয়নি বলতে পারিনা রে মা।
আচ্ছা ঠিক চলো বাইরে চলো সব মার্কেটিং শেষ করো তোমরা আমার কাজ আছে দশদিন পর আমার একটা প্রজেক্ট এ ড্রেস ডিজাইনিং এবং তা রেডি করে লঞ্চ করতে হবে।
কথাটা বলে মহুয়া বাইরে চলে যায় মিসেস মিলিকে রেখেই।
মিসেস মিলিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন মহুয়ার স্বাভাবিক ব্যবহারে তিনি ভেবেছিলেন হয়তো মহুয়া সিনক্রিয়েট করবে তাদের আসায় কিন্তু নতুন আত্মীয়র সামনে এমন কিছু হোক তিনি তা চান না।
মহুয়া বাইরে এসে দেখে তার মেয়ে সিফাতের সাথে খেলছে এক কোর্ণারে।তা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মহুয়া বিরবির করে বলে সব ঠিক থাকলে হয়তো আজ সে বাড়ির মেঝো বউ হয়ে সব দায়িত্ব পালন করতো কিন্তু আফসোস তার আগের পক্ষের দেবরের বউয়ের ভাইয়ের সাথে তার বিয়ের কথা শুনতে হচ্ছে, ব্যাপারটা ঠিক ড্রামাটিক হয়ে গেলো না।রাত দশটায় সবার সব কেনা হয়ে গেলে বাসায় চলে যায় সবাই।
পরদিন দুপুরে মহুয়া তিথিয়াকে নিয়ে পা দেয় মির্জা ভিলায়। ছাদে রিতুশার হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছিলো মেহেন্দি আর হলুদ একবারেই করবে ওরা সময় কম, বিয়ে করে বউকে নিয়ে সাদিফ বড় ভাইয়ার জায়গায় চলে যাবে সাগরের বর ভাই সাদিদ এসেছে দেশে সে এবার থাকবে যাবেনা।ছেলে বাড়ি থেকে হলুদ এসে গেছেএসেছে সাগরও।
মিসেস রেহানার সাথে দেখা করে সে যায় ছাদের দিকে। ছাদে উঠতেই চোখাচোখি হয় রাহাতের সাথে বোনের সামনেই চেয়ারে বসে আছে সে হাতে ফোন। রাহাতের নজর মহুয়ার দিকে আট বছরের পরিচয়ে আজ প্রথম সে মহুয়াকে শাড়ি পড়তে দেখলো এর আগে জিন্স টপস প্লাজু থ্রিপিস এগুলোতেই দেখে অভস্থ্য সে। কিন্তু আজ মহুয়াকে একটু আলাদাই লাগছে হলুদ শাড়ি হালকা মেকআপ আর চুলগুলো হাতখোপা করে ফুল গুজে দেওয়া। রাহাতের পাশাপাশি আরও একজন মহুয়াকে নয়ন ভরে দেখছিলো সে হচ্ছে সাগর।কতদিন পর শাড়িতে দেখছে সে আগে তো মহুয়া সবসময় শাড়ি পড়ে থাকতো সাগর শাড়ি পছন্দ করতো খুব।
রাহাতকে ওভাবে থাকিয়ে থাকতে দেখে মহুয়া এগিয়ে যায় রিতুশার কাছে সেখানে বসতেই নজর পড়ে সাগরের দিকে সাগরও তার দিকে তাকিয়ে আছে ভাবতেই কেমন অসস্থি লাগছে। সাগরের পাশে একটা নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে যে ফোনের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে আছে মেয়েটা সাগরের চাচতো বোন সুমিতি সাথে আরও আছে সুমিতির ভাই সোহেল ছবিতে দেখেছিলো বলে চিনতে পারে মহুয়া।সকাল দিকেই তারা এসেছে বিদেশ থেকে এসেছে।হলুদ মাখানো শেষ হলে মেয়ের বাড়ি থেকেও সবাই চলে যায় ছেলেকে হলুদ মাখাতে।মহুয়াকে যেতে বললেও সে মানা করে কিন্তু মিসেস রেহানা আর রাহাতে বাবা মিঃ রমিত শুনেননি জোড় করে পাঠিয়ে দেয়।প্রায় ন’বছর পর মহুয়া পা দেয় সেই চিরচেনা বাড়িতে যেখানের কানায় কানায় লেগে আছে তার আর সাগরের খুনশুটির স্মৃতি। কেমন এলেমেলো লাগছে তার নিজের কাছে।তিথিয়া রাহাতের কোলে আছে। দেখা হয় মহুয়ার তার একসময়ের শ্বশুর মশাইয়ের সাথে কিন্তু কথা বলেনা কেউই চাপা অভিমান জমেছে গেছে মহুয়ার মনে যে মানুষকে বাবা ডাকতো সে কেন পাশে ছিলোনা মহুয়ার। কিন্তু কথায় আছে না যার উপর অধিকার থাকেনা তার উপর কিসের অভিমান কোন গুরুত্ব আছে নাকি।ভাবতেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো মহুয়া।
সেদিনের মতো হলুদ শেষ হয়ে যায়।পরদিন বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে বিজি।মহুয়াও নিজের ফ্যাশন হাউজে ব্যস্ত যেতে ইচ্ছে করছেনা বিয়েতে।বারবার ঐ মানুষগুলোকে দেখলে তার যন্ত্রণা হয় যতই হোক সেও তো মানুষ আর কতই বা সহ্য করা যায়।ঘড়ির দিকে তাকায় মহুয়া বেলা বারোটা বেজে আসছে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর দুটোয়।মিসেস রেহানা মহুয়ার উপর রিতুশাকে সাজানোর দায়িত্ব দিয়েছিলো কিন্তু সে শরীর খারাপের কথা বলে এড়িয়ে যায়।সব দেখে তার চোখের সামনে সাগরের সাথে বিয়ের স্মৃতিও যেন খোচায় তাকে।মনে পরে সাগরের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত। কিছুক্ষণ ধুম মেরে বসে থেকে তাসলিমাকে সব সামলাতে বলে বাসায় চলে যায় মহুয়া।একঘন্টা লাগিয়ে গোসল দিয়ে নিজেকে শক্ত করে বেরিয়ে আসে সে তিথিয়াকে মিসেস শিরিন রেডি করে দিচ্ছে।বিয়ের দাওয়াতে তাকেও যেতে বলা হয়েছিলো কিন্তু তিনি পায়ের ব্যাথায় যাবেনা। বিয়েতে যাওয়ার জন্য মহুয়া জিন্স লেডিস টিশার্ট আর উপরে মেয়েদের জ্যাকেট পরে চুলগুলো উচু করে ঝুটি করে নেয় মুখে কোনরকম কিছু লাগায় না। মনে মনে ভেবে নেয় মহুয়া মেয়েলি সাজ তাকে তেমন মানায় না নরম হয়ে যায় মন কিন্তু তাকে তো শক্ত হতে হবে কোনো প্রকার ইমোশনাল হলে চলবেনা ঐ সাগর চৌধুরীর সামনে তো একদমই না।পায়ে কেডস পড়ে গাড়ির চাবি নিয়ে তিথিয়াকে সাথে করে বেড়িয়ে পড়ে মহুয়া।রাস্তায় যেতে যেতে তিথিয়া তার মাকে গম্ভীর থাকতে দেখে জিগাসা করে ভয়ে ভয়ে জিগাসা করে,
কিছু কি হয়েছে মাম্মাম তুমি এত রেগে কেন আছো?
মেয়ের কথায় অবাকই হয় মহুয়া তার হাসিখুশি থাকা মেয়েটা তাকে দেখে ভয় পাচ্ছে এতটা রুড হওয়া ঠিক নয় তার, তাই একটু নরমাল হওয়ার চেষ্টা করে মৃদু হেসে বলে,
কিছু হয়নি মাম্মামের মাম্মাম ঠিক আছি তুমি বলোতো তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে?
ভালো, মাম্মা তোমাকে একটা কথা বলি?
হুম বলো।
শুনো না মাম্মা রাহাত আঙ্কেল বলছিলো তাকে বিয়ে করে নিলে রাহাত আঙ্কেল আমার বাবা হয়ে যাবে প্লিজ তুমি বিয়ে করো প্লিজ আমার সব ফ্রেন্ড এর বাবা আছে তুমিও আমায় বাবা এনে দাও প্লিজ।
তিথিয়ার কথায় আশ্চর্য হয়ে যায় মহুয়া তিথিয়াকে এসব কেন বলেছে রাহাত ছোট্ট মেয়েটার মাথায় কি ঢুকিয়েছে সে এসব।রাহাতকেই জিগাসা করতে হবে মনে মনে ভেবে সে তিথিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
মাম্মাম এসব কথা বলতে হয়না ওকে তোমাকে আমি পরে বুঝিয়ে বলবো আপাতত আমি তোমার মা আমিই বাবা।নো মোর টক ওকে।
তিথিয়াও বাধ্য মেয়ে হয়ে চুপ থাকে।মহুয়া স্পিড বারিয়ে চলে আসে বিয়ের বাড়ি।বর এসে গেছে।তিথিয়ার হাত শক্ত করে ধরে ভিতরে ঢুকে মহুয়া কিন্তু স্টেজের কাছে গিয়ে এমন শকড হবে ভাবতে পারেনি সে। শুধু গোলগোল চোখে তাকাচ্ছে একবার রিতুশার দিকে একবার সাগরের দিকে।রাহাতও মহুয়াকে খেয়াল করে মিটমিটিয়ে হাসছে দারুণ সারপ্রাইজ করতে পেরেছে সে মহুয়াকে ভাবতেই খুশিখুশি লাগছে রাহাতের।
চলবে?
(রিচেক করিনি ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)