#সম্পর্ক
#Tasfiya Nur
#পর্বঃ৮
রাত একটা ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে মহুয়া।মাথায় ঘুরছে রাহাতের বাবা মায়ের বলা কথাগুলো।ছেলের জন্য চান তারা মহুয়াকে তিথিয়াকে মেনে নিতেও সমস্যা নেই ছেলের ভালো আর ভালোবাসার জন্য তারা সব মানতে রাজী সাথে মহুয়াকেও তাদের খুব পছন্দ। অতীত মানুষের থাকতেই পারে তাই বলে অতীত আকড়ে থাকার কোনো মানে হয়না। অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় অতীত আকড়ে বাচা যায়না একজন সাবলম্বী মেয়ে হয়ে এমন করা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়,পরশু থেকে রিতুশার বিয়ের আয়োজন শুরু কাল শপিং করতে হবে হলুদের ফ্যাশন সম্পর্কে মহুয়ার ধারণা ভালো তাই তাকে যেতে বলেছেন তারা রিতুশা আর রাহাত এসে নিয়ে যাবে তাকে তিথিয়াকেও সাথে নিতে পারে চাইলে বল চলে গেছেন তারা।
অন্ধকারচ্ছন্ন আকাশের নিকেশ কালোর দিকে তাকিয়ে রাহাতের বাবার বলা কথাগুলো ভাবছিলো মহুয়া।শরৎ এর এই শীতের আগমনী বার্তায় হালকা ঠান্ডা ঠান্ডাও লাগছে।তখন ওনাদের প্রতুত্তরে কিছু বলেনি মহুয়া মৌন থেকেছে ওনারা টাইম নেওয়ার কথা বলে চলে গেছে হয়তো রাহাত বুঝতে পেরেছিলো বাবা মা না মানলে মহুয়া জীবনেও তার হবেনা মহুয়া মেয়েটাই যে এমন যেজন্য আত্মসম্মান বোধ একটুই বেশিই।
এ কেমন দোটানায় ফেললে আল্লাহ না পারছি তাকে ভুলতে না পারছি তার প্রতি ঘৃণা কমাতে এজীবনে হয়তো পারবোনা ঘৃণা ছাড়া আর কিছু করতে সম্পর্কে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া যায় হ্যা যায় তো কিন্তু কাচ ভাঙলে যেমন জোড়া লাগলেও দাগ থাকে তাই সাগরকে মানলেও সম্পর্ক টা ঠিক আগ্নেয়গিরির আগুনের মডো দাউ দাউ করে জ্বলবে সাগর চোখের সামনে থাকলে বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠবে সেই বিষাক্ত স্মৃতি যা না দেবে ভালো থাকতে না দেবে ভুলে থাকতে কি দরকার আমার জীবনে কোনো প্রয়োজন দেখছিনা কিন্তু আমার মেয়ে সে তো বাবার প্রয়োজন বোধ করে রাহাতের মাঝে নিজের বাবাকে খুজে এটাও তো আমি বুঝতে পারি কি করবো কোনো উপায় পাচ্ছিনা চলে যাবো খুব দূরে চলে যাবো ভালো লাগেনা আর এসব।
আর কত পালাবি মহু মা আর কত এই শহরে থেকেই আটটা বছর ধরে সাগরের থেকে পালালি কারণ ও তোর সাথে অপরাধ করেছে হ্যা আমি ওটাকে ভুল নয় অপরাধ ভাবি তাই বলবো এবার অন্তত নিজের কথা ভাব অনেক ভেবেছিস অন্যের কথা তুই মেয়ের ভালো ভাবিস তো হ্যা রাহাতের সাথে বিয়ে করলে তুই তিথিয়া ভালো বাবা পাবে কারণ ওর জন্মের পর যখন থেকে ওর সাথে তোর পরিচয় মেয়ে হিসেবে আগলে গেছে যখন যেটা দরকার সময় মতো হাজির করেছে তুই তো বিজি থাকতি হয় গান নয় ফ্যাশন হাউজ। সেসবের ফাকে রাহাত এসে তোর মেয়েকে দেখতো তুই না থাকলে ও আসতো তিথিয়ার মুখে হাসি ফুটাতো আজও হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছে তোর মেয়ের মুখে। স্কুলে ভর্তি করা থেকে সব রাহাত সামলে গেছে আমি একা সব সামলে উঠতে পারতাম না যত হোক বুড়ো মানুষ তো। বলি কি সবার কথাই তো ভেবেছিস এবার না হয় একটু মেয়ে আর রাহাতের কথা ভাব সে তো নিরপরাধ ওকে কষ্ট দিস না ওর চোখে তোর জন্য যে সম্মান আর ভালোবাসা তোর জন্য আমি দেখেছি আশা রাখি তা ভুল হতে পারেনা।
একা একাই কথা গুলো বলে যাচ্ছিলো মহুয়া তার পিছন থেকে মহুয়ার কথা গুলো শুনে উত্তরে মহুয়ার কাছে গিয়ে কাঁধে হা রেখে কথা গুলো বলেন মিসেস শিরিন।মহুয়াও নিশ্চুপ হয়ে শুনে গেছে মহুয়া কিই বা বলার আছে তার মিসেস শিরিন নেহাত ভুল কথা বলেননি।মহুয়ার কোনো জবাব না পেয়ে ঘুমাতে বলে চলে যান তিনি।
মহুয়াও সারাশব্দ করলো না ব্যালকনি থেকে রুমের দিকে তিথিয়া রুমে ঘুমাচ্ছে। পিছন ঘুরতেই কিসের জানি শব্দ হলো একটু জোড়েই তাই মহুয়া আবার দৌড়ে ব্যালকনির গ্রিলের কাছে গিয়ে ফাঁক দিয়ে দেখতে পায় নিচে রাহাত কেমন অসহায় চোখে হাটু গেরে বসে উপর দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখতে একদম ঠিক লাগছেনা। ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় হালকা বোঝা যাচ্ছে রাহাত কেমন অস্বাভাবিক ভাবে কাদছে রাতের নির্জনতায় যেন একটু মাত্রার চেয়ে বেশিই শব্দ হচ্ছে কান্নার।মহুয়ার বুকের ভিতর কেমন ছ্যাৎ করে উঠেছে সাত বছরের পরিচয়ে মহুয়া রাহাতকে এমন আচরণ করতে দেখেনি।কিছু না ভেবে গেটের চাবি নিয়ে চলে যায় সে। লিফটের ভেতরে ঢুকে তারাতাড়ি নিচে নেমে আসে রাহাতের কাছে। রাহাতের সামনে হাটু মুড়ে বসে দুই কাঁধে ধরে জিগাসা করে,
কি হয়েছে রাহাত তোমার এইমঅবস্থা কেন এতরাতে তুমি এখানেই বা কি করো?
রাহাতের যেন কানের ভিতর কোনো কথায় যাচ্ছে না মহুয়া তাকে ঝাকিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে কিন্তু রাহাত সে তো নিজের ভালোবাসাকে দেখতে ব্যস্ত। মহুয়া যখন দেখলো রাহাতের উত্তর নেই কোনে হঠাৎ ই তার রাহাতের পাশে পড়ে থাকা কাচের টুকরো দেখতে পায় রাহাতকেও দেখে কেমন তার নেশাচ্ছন্ন লাগছে।তারমানে রাহাত মদ খেয়েছে আর সে যে শব্দ পেয়েছে তা কাচের মদের বোতল ভাঙার শব্দ।
মনে মনে কথাগুলো ভাবছে মহুয়া।তারপর রাহাতের দিকে করা চোখে তাকায় মহুয়া তারপর ঝাঁজালো শাসানি কন্ঠে জিগাসা করে,
তুমি মদ খেয়েছো রাহাত মদ খেয়ে রাত-বিরেতে অন্যের বাসার সামনে মাতলামো করছো কিসের ভীমরতিতে পেয়েছে তোমায় আর ইউ আউট ওফ মাইন্ড?
রাহাত মহুয়ার ঝাঁজালো শাসানিতে মুচকি হেসে দিয়ে ভাবে মেয়েটা তাকে ভালোবাসে না অথচ তার ভুল কাজও সহ্য করতে পারেনা।রাহাতের নিশ্চুপ হয়ে থাকা মহুয়ার রাগ আরও বাড়িয়ে দেয় রাহাতকে সোজা করে দাড় করিয়ে ঠাস করে চর বসিয়ে দেয় রাহাতের গালে।তারপর বলে,
তুমি কথাও বলবেনা বাবা মাকে পাঠিয়ে বিয়ে করতে চাইবে আবার রাত-বিরেতে মদ খেয়ে মাতলামো করবে আমাকে কি মানুষ মনে হয়না তোমার একজনের যন্ত্রণা সহ্য করে পাথর হয়ে গেছি এখন তুমি সেই পাথরে হাতুরি ঠুকছো।
রাগে মহুয়ার হুস নেই এতদিনে সাগরের উপর জমা ক্ষোভ যেন এক নিমিষে ঝেড়ে দিলো রাহাতের উপর।রাহাতও তার প্রেয়সীর রাগান্বিত রুপ দেখে যেন আরও মজা পাচ্ছে। বাবা মা যখন তার বিয়ের কথা তুলছিলো রিতুশার বিয়ের আয়োজনের প্ল্যান করা হচ্ছিলো তখন কথার ছলে বাবা মাকে রুমে ডেকে মহুয়ার কথা বলে রাহাত তারাও মহুয়াকে পছন্দ করতো রাহাতের মা তো বলেই দিয়েছেন যে জীবন তার আর তার যাকে পছন্দ যাকে নিয়ে ভালো থাকবে সেই মেয়েকে ছেলের বউ করে রাজী তারা এজন্য সন্ধ্যায় সময় বের করে মহুয়ার কাছে যায় কিন্তু যখনই সে জানতে পায় মহুয়ার কোনো উত্তর নেই ব্যাপারে তাই অজানা যন্ত্রণায় মহুয়ার উপর জীদ করে রাহাত চলে যায় বারে কিন্তু এবার চুপ থাকলে মহুয়া সিওর রাগে জিদে নিজের চুল টানা শুরু করবে তাই মহুয়ার রাগ কমাতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নিয়ে নিজের শরীর থেকে জ্যাকেট খুলে মহুয়ার শরীরে জড়িয়ে দেয় মেয়েটা রাগে জিদে আর রাতের এই ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁপছে তার উপর ওরনাটাও গলায় নেই প্লাজু আর জামা পরে চলে এসেছে তার এই অবস্থা দেখে।সে এতটাও ড্রিংক করেনি যে হুস উবে যাবে তার।মহুয়াও রাহাতের এহেন কর্মে একটু লজ্জা পায় এক নিমিষেই রাগ হেরে গিয়ে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পরে তার স্বভাবে। রাহাত এবার মুখ খুলে বললো,
এতদিনে তোমাকে ভালোবাসি এটা বলিনি কারণ ভালোবাসি বললেই যে ভালোবাসা হয় তা আমি মানিনা আমি মানি ভালোবাসা বিশ্বাস কেয়ারিং আর সম্মানে প্রকাশ করা তাই এই অনুযায়ী আমি তোমার পাশে থেকে ধরতে পারো নিজের স্বার্থে তোমার পাশে থেকেছি কারণ তোমার হাসিতেই আমার কাছে আমার ভালো থাকা ধরতে পারো এটা নিজের স্বার্থ কারণ আমি ভালো থাকতেই তোমাকে ভালোবাসি কে বলে ভালোবাসা নিঃস্বার্থ হয় এটা একদম বাজে কথা মনে হয় আমার কাছে কারণ ভালোবাসার মানুষটার ভালো থাকায় যখন নিজের ভালো থাকা হয় তাহলে হলোনা স্বার্থপর হওয়া যাই হোক মেইন পয়েন্ট কাল শপিং যাওয়ার কথা রিতুশার পরশু তো গায়ে হলুদ বিয়েও শুরু হবে তো আশা রাখি কাল রিতুশা তুমি আমি রিতুশার জন্য শপিং এ যাবো মাও তে বলে গেছে মনে হয় তিথিয়াকে নিয়ে রেডি থেকো আমি আর রিতুশা গাড়ি নিয়ে এসে পিক করে নেবো।আর হ্যা আমি এতটাও নেশা করিনি যে মাতাল হবো আসলে অভ্যাস নেই তো তাই একবোতল থেকে একটু খেতেই বমি এসে গিয়েছিলো আমি তো শুধু তুমি কি করো এটা দেখতে এমন করেছি কিন্তু তুমি তো এত ইমোশনাল হয়ে গেছিলে যে ওরনা ছাড়াই দৌড় দিলে।
রাহাতের কথা এতক্ষণ চুপচাপ মহুয়া শুনছিলো কিন্তু রাহাতের শেষ কথায় একটু রাগী চোখে তাকালো মহুয়া।
সরি সরি আচ্ছা গুড নাইট গিয়ে ঘুমাও।
কথাটা বলেই রাহাত গাড়িতে চরে চলে গেলো।মহুয়াও গুটিগুটি পায়ে রুমে এসে মেয়ের পাশে শুয়ে পরে, কিন্তু দুচোখে ঘুম নেই তার মাথায় শুধু রাহাতের কথা গুলো ঘুরছে। রাতটা এভাবেই পার হয় মহুয়ার। সকালবেলা রাতজাগার কারণে একটু ঘুম ধরে যায় কিন্তু মিসেস শিরিনের ডাকে নাকেমুখে খেয়ে চলে যায় ফ্যাশন হাউজে।
সময়টা দুপুর মেয়ের স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছে সাগর উদ্দেশ্য মেয়েকে একনজর দেখা ঐদিন রিতুশাদের বাসায় আর কনসার্ট এ একঝলক দেখেছিলো সে তিথিয়াকে, রিংবদলের দিন বারকয়েক রিতুশা আর মিসেস রেহানার মুখে মেয়ের নাম শুনেছিলো সে।বারবার স্কুলের গেট আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে।অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে স্কুলের ঘন্টা বেজে উঠে সাগরের মুখে ফুটে উঠে চওড়া হাসি। গেট দিয়ে গুটিগুটি পায়ে হেটে বেরিয়ে আসছে তার মেয়ে তা রক্ত ভাবতেই মনের মাঝে এক অজানা আনন্দ হচ্ছে তার হাসি হাসি মুখ নিয়ে পা বাড়ায় মেয়ের দিকে।
তারাহুড়া করে ড্রাইভ করছে মহুয়া মিসেস শিরিন কল করে তাকে বলেছে হাটুতে ব্যাথা পাওয়ায় সে তিথিয়াকে আনতে যেতে পারেনি তাই তাকে কল করেছে।তিথিয়াকে নিতে যাওয়ার সময় হাটুর বাতের ব্যথা হঠাৎ ই বেড়ে যায় তাই তিনি যেতে পারেননি।
এদিকে তিথিার স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছে স্পিড বাড়িয়ে দেয় মহুয়া পনেরো মিনিটে পৌছে মেয়ের স্কুলের সামনে নেমে পা বাড়ায় স্কুলের গেটের দিকে সেখানে তিথিয়ার ব্যাকসাইড দেখা যাচ্ছে স্কুলের ব্যাগটার জন্য চিনতে আরও সুবিধা হয় মহুয়ার, কিন্তু ওর সামনে মনে হয় কেউ বসে কথা বলছে তার সাথে খিলখিল করে হাসছে তিথিয়া কিন্তু লোকটা কে ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যায় মহুয়া মেয়ের দিকে।
চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম, ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)