#সম্পর্ক
#Tasfiya Nur
#পর্বঃ৭
নিজের ফ্যাশন হাউজে ওয়ার্কার দের সাথে কিছু ডিজাইনের ব্যাপারে কথা বলছে মহুয়া। মুলত সে সবাইকে একটা প্রজেক্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে। একটা বড় কোম্পানি থেকে ড্রেস ডিজাইনিং এবং তা লঞ্চ করার অফার পেয়েছে সে এজন্যই আজ ফ্যাশন হাউজে আসা। তাছারা মহুয়া সব দায়িত্ব তাসলিমাকে দিয়ে নিজে মেয়ে আর গান নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর এদিকটা তাসলিমা সামলায়।তাসলিমা আসলে মহুয়ার ক্লাসমেইট ছিলো খুব ভালো ফ্রেন্ডও।
যখন মেয়েকে বড় করার জন্য রোজগারের কোন দিক পাচ্ছিলাম না তাসলিমাই অনেকটা হেল্প করেছিলো পাশে থেকে এবং আজও আছে।কিন্তু এবার কাজটা বড় হওয়ায় তাসলিমা আমাকে ইনফর্ম করে।আমার ফ্যাশন হাউজে মুলত পনেরো জন মেয়ে জব করে নিজে সামলম্বী হওয়ার সাথে আমি এই ক’জন মেয়েকে সামলম্বী হতে হেল্প করতে পেরেছি আর এইসব কিছু করার পিছনে আমার শক্তি সাহস হয়েছিলো মিসেস শিরিন ও তাসলিমা এবং যার কথা আমি কখনও অস্বীকার করতে পারবোনা সে হচ্ছে রাহাত।সবার জীবনে হয়তো একজন ডিভোর্সী মেয়ের পাশে এত ভালো মানুষ থাকেনা কিন্তু আমার জীবনে আছে ভাগ্যে হয়তো তারা ছিলো বলে সে পাশে পেয়েছিলাম।সত্যি বলতে এই সমাজে এসে একটা মেয়ের সামলম্বী হওয়া অতীব জরুরি নয়তো সারাজীবন অন্যের কথা শুনেই জীবন পার করতে হবে, হয়তো এই কথা শুনার ধৈর্য বা ক্ষমতা অনেকের থাকেনা যার ফলীস্বরুপ হয় ডিভোর্স নয়তো মেয়েটা সুইসাইড করে নিবে।জীবনটা নিছক সহজ হয়না সহজ করে নিতে হয় নয়তো সমাজের মানুষ মেয়েদের পিষে মাটিতে মিশিয়ে দিবে।কারণ সমাজের মানুষের সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক হয়না বলেই এই বৈষম্য। আমি মেয়ে আমি যদি ঘরকোনা হয়ে স্বামী সংসার সামলে যাঃ স্বামী তার বন্ধুমহলে গেয়ো আনস্মার্ট বলে কারো সামনে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়না আবার সামলম্বী হয়ে কোনো সিধান্ত নিলে বা নিজের মতো একটু স্পেস চাইলে মেয়েদের শুনতে হয় চাকরি করে বলে পাখা গজিয়েছে যা খুশি তাই করছে।তাহলে মেয়েরা করবেটা কি যেদিকে যাবে সেদিকেই মেয়েদের দোষ।দুপুরের লাঞ্চ আওয়ারে নিজের কেবিনের পাশে রাখা ছোট্ট সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে হাতে কফির মগ নিয়ে বসে ভাবছিলো মহুয়া।কথা বলতে বলতে মাথাটা ধরে গেছে তাই কফি নিয়ে বসেছে সে।
তাসলিমা এসে দুপুরের খাবার রেখে গেছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছেনা মহুয়ার কফিটা শেষ করে একমনে আবার ভাবনায় ডুব দিয়ে কাল রাতের ব্যাপারে।
সাগর যখন দ্বিতীয় সুযোগের কথা বলছিলো আমি রাহাতের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর সাগরের চোখে চোখ রেখে বলে দিয়ে এসেছি
সুযোগ দিবোনা কেনই বা দিবো সাগর তুমি যে আমার আত্মসম্মান নষ্ট করেছো একা তো করোনি নিজের সাথে পুরো গ্রামকে নিয়েই করেছো দ্বিতীয় সুযোগ তো দিয়েছিলাম সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে বাচ্চা নিয়েছিলাম তোমার সব কুকীর্তি জেনে নিজের ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে তাহলে আর কিভাবে সুযোগ দিতাম তখন কিন্তু না তুমি তো আমার উপর বিশ্বাস রাখোইনি আমার পেটের সন্তানকে আরাফাত ভাইয়ার সন্তান বলে চালিয়ে দিলে সবার সামনে। যেদিন তোমায় সারপ্রাইজ দিতাম সেদিন তুমি কি করলে গ্রামে নিয়ে গেলে রাতের বেলা তারপরদিন সকালে গ্রামের সব মানুষকে জরুরী বৈঠক বলে ডেকে নিয়ে এসে সবার সামনে কি বললে আমি চরিত্রহীনা শহরে গিয়ে কাজিনের সাথে পরকীয়া করে পেট বাধিয়ে এখন তোমায় ঘাড়ে চাপাতে চাই তুমি সব সত্যি জানতে পেরে তাই গ্রামবাসীর অতি আদরের মেয়ের আসল চরিত্র ফাস করতে গ্রামে আনলে মিথ্যা বলে সত্যি জানলে নাকি আমি আসতাম না আমার বাবা মাকে তো স্পেশাল ভাবে ডেকে আনলে তারপর তাদের যত নিচু করা যায় করলে গ্রামবাসী তো তোমার কথা সাদরে গ্রহণ করে আমার বাবা মায়ের মুখে চুনকালির প্রলেপ লেপ্টে দিয়েছিলো যেজন্য আজও আমি আমার বাবা মায়ের কাছে মৃত। পরে কি করলে ডিভোর্স পেপার ও হাতে ধরিয়ে দিলে অবশ্য তখন আমি সাইন করিনি কারণ বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় কেমনে হতো ডিভোর্স তাই তিথিয়া জন্ম নিলেই সাইনটা করেছিলাম যে মানুষটা এতটা জঘন্য ভাবে আমায় অপমান করতে পারে তাকে আর যাই হোক আত্মসম্মান খুয়িয়ে নিজের স্বামী করে রাখা যায়না। তাও কোন কথার উপর ব্যাসিক করে এতকিছু করেছিলে তার পিছনের সত্যি কি হাতিয়ে দেখেছিলে ঐ দিন আরাফাত ভাইয়ার সাথে হসপিটাল গিয়েছিলাম আমি হোটেলে নয় ভুল একটাই করেছিলাম তোমাকে সেই কথা না বলে বলেছিলাম কলেজে আছি সত্যিটা বলিনি কারণ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরে তো নিজের সবথেকে বড় সারপ্রাইজ টা পেয়েছিলাম।এসবের পর যখন কেউ আৃার পাশে দাড়ায়নি ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে ফুফুর বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু আমার ফুফু আমার জন্য নাকি ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে তাই সেখানে ঠাই মিলেনি আমার অবশেষে মিসেস শিরিন যে আমার রক্তের কেউনা কিন্তু ঐ যে কথায় আছে আল্লাহ সব রাস্তা বন্ধ করলেও আন্টিকে আমার পাশে দিয়েছিলো যে জন্য আজ এই অব্দি পৌছাতে পেরেছি। আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই আপনি আপনার জায়গায় নিজেকে ঠিক ভেবেছিলেন সেটা আপনার ব্যাপার আপনাকে ক্ষমাও আমি আগেই করেছি শুধু যে হাত ছেড়েছি ওটা আর ধরতে পারবোনা মেয়ের অযুহাত দিবেন তিথিয়া শুধু আমার মেয়ে যাকে আপনি অস্বীকার করেছিলেন ইতিমধ্যে হয়তো মেয়েকে দেখেও নিয়েছেন কিন্তু বলবোনা আপনার কোনো জায়গায় আমার জীবনে নেই মনে রাখবেন মিঃ সাগর চৌধুরী আমরা নারীরা যাকে ভালোবাসতে জানি ঘৃণা করার কারণ পেলে তাকে ঘৃণা টাও ভালোবাসার থেকেও বেশি করতে পারি।তা আজ এতগুলো বছর পর আট বছর কম নয় কিন্তু কিভাবে আপনার ভুল ভাঙলো যদি জানাতেন আমায় কৃতজ্ঞ হতাম
আমার কথা শুনে সাগর শুধু চোখভরা জল নিয়ে তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়েছিলো উত্তরে শুধু এটুকু বলেছিলো আমার সত্যিই এত অভিযোগের পর কিছু বলার নেই যে ভুল করেছিলাম তার মাশুল আজ তুমি চলে যাওয়ার পর পাচটা বছর ধরে পেয়ে আসছি রুমাইশা আমায় ঠকিয়ে চলে যায় তার কথাতে এতকিছু করে ফেলছিলাম যাকে ভালোবেসেছি তাকে বুঝিনি সৌন্দর্যের মোহকে ভালোবাসা ভেবে তোমাকে হারিয়েছি আজ সব বুঝতে পারছি যন্ত্রণা হয় মহুয়া প্লিজ ফিরে এসো।
ওহহ রুমাইশা চলে গেলো বলে আমার অভাব আপনি বুঝেছেন আবার সেই প্রয়োজনের তাগিদেই আমাকে চাচ্ছেন এখন প্রথমবার তো বিয়েই করেছিলেন কারণ কিশোরী মেয়ের সৌন্দর্য বেশি ছিলো মোহ কোটে গেলো আর কি করলেন বাহবা দিতে হয় আপনাকে কিন্তু আমার কি করার জীবন মরণ সই হলেও তাকে গ্রহণ করবো না।প্রয়োজন নই প্রিয়জন হতে চেয়েছিলাম পারিনি এটা আমার ব্যার্থতা এখন আমার মেয়ে জব ফ্রেন্ড সব নিয়ে ভালো আছি আমি দয়া করে আর বিরক্ত করবেন না। কথাগুলো বলেই রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললাম বাকি কথা জানতে চেয়েছিলেনা এটাই ছিলো দ্যা গ্রেট সাগর চৌধুরীর আমার জন্য উপহার।আমি যাচ্ছি তুমি এসো।বলেই গাড়িতে এসে বাসায় চলে আসছি।চলে আসার সময়ও আবছা শুনতে পেয়েছিলাম রাহাতকে উদ্দেশ্য করে তোমার বলা কথা সাগর যে রাহাতকে পেয়েছি বলে তোমাকে চাচ্ছিনা এজন্য ঘৃণা আরও বেশি করি তোমায় সাগর। এতকিছু হলো তবুও তোমায় বিশ্বাস হলো না আমার উপর।
তাসলিমা অনেক ধরে মহুয়াকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু সে তো নিজের ভাবনায় মশগুল এজন্য তাসলিমা কয়েকটা ফাইল জোড়ে সোফার সামনে রাখা টি টেবিলটায় ফিক মারে এতেই মহুয়া সোফায় লাফ দিয়ে উঠে বলে,
কি কি হয়েছে তাসলি এমন ভাবে চিল্লাচিল্লি কেন করছো বাসায় ডাকাত পরলো নাকি।
না ডাকাত না এলিয়েন এসেছে এলিয়েনটা তুমি কখন ধরে ডাকছি বলি কোন জগতে আছো।
কপট রাগ দেখিয়ে বললো তাসলিমা।
সরি সরি একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম বলো কি হয়েছে যে এত ডাক।
বাইরে চলো সবাই তোমার কথা অনুযায়ী ডিজাইন করেছে চেক করো সেই হিসেবে ড্রেস বানানো শুরু করবো সময় কম।
আচ্ছা চলো।
সবকাজ সেরে সন্ধ্যায় বাসা আসে মহুয়া মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখনই মহুয়ার বাসার কলিং বেলটা বেজে উঠে। দরজা খুলে দেখে রাহাতের বাবা মা দাড়িয়ে আছে।মহুয়া সাদরে তাদের সালাম দিয়ে ভিতরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে নাস্তা বানাতে যায়। উনারা তিথিয়ার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
ছাদের রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে আছে সাগর হাতে সিগারেট।একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছে সে।
কপন মহুয়া জানি ভুল করেছি মাশুল তো দিচ্ছি এখনও ফিরে আসা কি যায়না আর কত পুরবো ছাই হয়ে উড়ে যাচ্ছি যে এবার। আসলেই কিছু ভুলের মাশুল আসলেই সারাজীবন দিয়েও শেষ হয়না।তুমি চলে যাওয়ার পর চলে যাওয়া কি বলছি তাড়িয়ে দিয়েছি রুমাইশা আমায় নিজের মতো ঘুরাতে লাগে নিজের চাহিদা শেষ হলে সে ছুড়ে ফেলে চলে যায় আসলে সে তো প্রতিশোধ নিতে এসেছিলো যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলো যে ছেলে বউ থাকতে পরনারীর কথায় বউকে ছাড়ে সে আমায় ছাড়বেনা তার কি গ্যারান্টি আসলেই সে ঠিক বলেছিলো এই যে দেখোনা তোমায় চায় এখন বেহায়া মন আসলে রুমাইশা তো এসেছিলো তার বোনের প্রতিশোধ নিতে কারণ রুমাইশার বোন ছিলো যে আমার বেস্টফ্রেন্ড ফাইজা যে আমায় ভালোবাসতো অথচ আমি জানতামই না বিয়ে করার এক সপ্তাহ পর সে সুইসাইড করে পরে আর তার পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগই ছিলোনা ফাইজা সবসময় বলতো আমার বোন আছে এবরোডে সে ফাইজার থেকেও চোখ ধাধানো সুন্দরী কখনও পিকও দেখায়নি। তাই চিনতেও পারিনি,সৌন্দর্যের পুজারী সব পুরুষ এই কথাকে হাতিয়ার করে সে আমায় ডুবিয়ে দিয়ে গেলো তার বোন তো মরে গিয়ে মিটে গিয়েছে আর আমাকে জিন্দালাশ করে দিয়ে গেলো রুমাইশা। কিন্তু আমার কি অপরাধ ছিলো জানতামও তো না যে ফাইজা আমায় ভালোবাসতো।
আসলেও মানুষ ঠকালে নিজেও ঠকে আমি তোমায় ঠকিয়েছি মহুয়া রুমাইশা আমায়।শোধবোধ হয়ে গেছে আজ যা আমার হয়েছে দায়ী তো আমি।
সিগারেট পুড়ে হাতের আঙুলে আগুনের ছ্যাকা লাগায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে সাগর।
ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছে আর গল্পে মেতে আছে মহুয়া তিথিয়া মিসেস শিরিন আর রাহাতের বাবা মা।
কথা বলার এক পর্যায়ে রাহাতের বাবা মহুয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
তোমার কাছে আজ একটা আবদার নিয়ে এসেছি মহুয়া মা যদি অনুমতি দাও তাহলে বলতে পারি।
আংকেল প্লিজ এভাবে বলবেন না অনুমতি নয় বলুন মেয়ের কাছে বাবার আবদার আপনি বলুন।
রাহাতের বাবা মহুয়ার কথায় হেসে দিয়ে বলেন?
তাহলে বলে ফেলি।
রাহাতের বাবা যা বললেন তাতে মহুয়ার চারপাশে যেন দুনিয়া ঘুরতে লাগলো।
(আসসালামু আলাইকুম, ভুল গুলো ক্ষমা করবেন রিচেক দেইনি)