#সম্পর্কের_বন্ধন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৮
মধ্যাহ্নের শহর রোদে ঝলসানো। চামড়া পোড়া রোদ্দুরের উত্তাপ অন্যদিনের তুলনায় আজ খানিকটা বেশিই মনে হচ্ছে। মাথার উপর বিরতিহীন ভাবে গটগট আওয়াজ তুলে ফ্যান ঘুরছে। তবুও যেনো শরীর শীতল করতে ব্যর্থ সে। ফ্যানের নিচে থেকেও প্রচন্ড গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার ইভান। মুখ,গলা,ঘাড়ের দিকের ঘর্ম বিন্দু স্পষ্ট দৃশ্যমান। চুলের গোড়ায় গোড়ায় ঘাম জমা হয়ে আছে। বিরক্তিতে “চ” সূচক শব্দ করে শোয়া থেকে উঠে বসলো ইভান। পাশেই তুহা কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে।
এত গরমের মাঝেও যে কেউ এমন আরামে ঘুমাতে পারে সেটা এই মুহূর্তে তুহাকে না দেখলে ইভানের অজানা থেকে যেতো।
মেয়েটার নাকের ডগা, ঠোঁটের উপরিভাগে ও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।
ইভান পাশ থেকে তুহার ওড়না টেনে নিয়ে নিজের মুখ,গলা, ঘাড় মুছে মাথাটাও মুছে নিলো।
তুহার মুখটা মুছতেই তুহা নড়েচড়ে উঠলো।
ইভান বার কয়েক ডাকলো তুহাকে। সে উঠার বদলে বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে অন্যপাশ ফিরতে গিয়ে খাটের কারুকার্যের সাথে হাতে ধাক্কা লেগে ব্যথাতুর শব্দ করে চোখ মেলে তাকায়।
ছোট ছোট চোখে পিটপিটিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন, তাইনা? যাতে আমি হাতে ব্যথা পাই।”
ইভান এক ভ্রু উঁচিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,’ নিজের দো’ষে ব্যথা পেয়েছো। এখন সব দো’ষ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছো?’
“তো? আপনি আমাকে ডাকতে গেলেন কেনো? না ডাকলে আমি হাতে ব্যথা পেতাম না।”সোজা হয়ে বসে ঘুম জড়ানো ভাঙা গলায় তুহার উত্তর শুনে ইভান মাথায় হাত দিয়ে খাট থেকে নেমে গেলো।
সোফার রুমে যেতে যেতেই বিরক্ত হয়ে বলল,’তোমার সাথে আজাইরা ঝগড়া করার মুড নাই এখন। একটা সোজা কথা বললে তুমি তার একশটা বাঁকা উত্তর দিয়ে বসে থাকো।’
তুহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে।
এই ছেলে শুধু শুধু তাকে কথা শোনালো?
চট করে উঠে এলোমেলো পায়ে সোফার রুমে গিয়ে দেখলো ইভান সোফায় গা এলিয়ে টিভি ছেড়ে বসে আছে। গায়ে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি জড়ানো।
তুহা পা চালিয়ে ইভানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
ইভান তুহাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,’সরো বিরক্ত করোনা। নিজের কাজে যাও।’
তুহা নিজের জায়গা থেকে না সরে ইভানের কটিদেশে নিজের নরম হাতের বাঁধন দৃঢ় করে পেটে মুখ গুঁজে অষ্পষ্ট স্বরে বলল,’ শান্তি দেবো না। আমাকে এত কথা শোনানোর মানে কি?’
ইভান মিটিমিটি হাসছে। সে জানতো তুহা ঠিকই তার পেছন পেছন এখানে উঠে আসবে। একা একা বোর হচ্ছিলো বলে তুহাকে ডাকলো। সে উল্টো তেজ দেখিয়ে বকাবকি শুরু করলো? ইভানের খোঁ’চানো কথা শুনে যে তুহা উঠে আসবে সেটা নিশ্চিত ছিলো ইভান।
তুহা ইভানের পেট থেকে মুখ সরিয়ে সরু চোখে ইভানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,’ আপনি হাসছেন?’
ইভান হাসি আটকে রেখে বলল,’ তোমার সামনে হাসার এত সময় নেই আমার।’
একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে ফিক করে হেসে দিলো। খানিক আগের নিরব পরিবেশ হাসির শব্দে মেতে উঠলো। দেয়ালে বাড়ি লেগে দুজনের হাসির শব্দ যেনো দ্বিগুণ হলো।
—————————————————————
দিনটি সোমবার। অফিসে কর্মরত সবাই নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত। পুরো অফিস জুড়ে পিনপতন নিরবতা। একটা সুঁই পড়ার শব্দ ও যেনো কর্ণগোচর হবে। নিস্তব্ধ, শিথিল পরিবেশের নিরবতা কাটাতেই অফিসে তুহা আর ইভানের চরণ পড়ে।
মুহূর্তেই অফিসের পরিবেশ বেশ জমজমাট হয়ে উঠলো। কেউ কেউ ইভানের সাথে তুহাকে দেখে অবাক হচ্ছে। এতকিছুর পরও মেয়েটা মিস্টার ইভানের সাথে আছে? এরকম নানা প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসেছে সবাই। নিজেরা নিজেরাই আবার প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরি করার চেষ্টা করছে।
ইভান মৃদু হেসে সবার উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলো,’ সবাই কেমন আছেন?’
একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মৃদু আওয়াজে জানালো সবাই ভালো আছে। কেউ কেউ তা’চ্ছিল্য করছে ইভানকে দেখে। এর মধ্যে বস ও খবর পেয়ে নিজের কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। তৃষার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে সেও যথেষ্ট অবাক হয়েছে।
তুহা সব কিছু বাদ দিয়ে নিজের ঈগল দৃষ্টি তৃষার উপর নিক্ষেপ করলো। ঠোঁটের কোনো কিঞ্চিত হাসি খেলা করছে।
তুহার দৃষ্টি লক্ষ্য করে তৃষা নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে দাঁড়ালো।
বস খানিকটা দৃঢ় কন্ঠে বললেন,’ মিস্টার ইভান আপনি এখানে? আপনাকে তো রিজাইন করতে বলা হয়েছে আর আপনি রিজাইন ও করেছেন। তবে?’
বসকে থামিয়ে দিয়ে তুহা মৃদু হেসে বলল,’ মিস্টার ইভান এখানে আসার কারণ তার উপর যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটার একটা প্রমাণ তো লাগবে নাকি? শুধু শুধু কেউ কেনো মি’থ্যে অভিযোগ মাথা পেতে নেবে?
বস শ্লেষাত্মক হেসে বললেন,” আমরা নিজ চোখে না দেখে কিছু করিনি। এখানে উপস্থিত সবাই দেখেছে মিস্টার ইভানের কর্মকাণ্ড। এমনকি অনেকের ফোনে এখনো ভিডিও আছে। আমি অবাক হচ্ছি আপনি কিভাবে সব জানার পরও মিস্টার ইভানকে সাপোর্ট করছেন।”
তুহার সহজ স্বীকারোক্তি,” কারণ ভিডিওটি আমার কাছে ভিত্তি হীন মনে হয়েছে।”
কেনো ভিত্তি হীন মনে হয়েছে সেটাও বলছি।
আপনাদের এখানে নিশ্চিয়ই প্রজেক্টর আছে। এতবড় অফিসে প্রজেক্টর থাকবেনা এটা ভাবাটাও বোকামি। একটু কষ্ট করে প্রজেক্টর এখানে সেট করার ব্যবস্থা করুন।
সবাই বিদ্রুপের হাসি হাসছে। তৃষা একপাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। বস বললেন,’ আপনি কি করতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছিনা।
তুহা শক্ত কন্ঠে বলল,’ এতটা বুঝতে হবেনা। শুধু এতটুকুই বুঝে রাখুন।’
আপনি যেমন অন্যের দো’ষের কারণে নিজের কোম্পানির ক্ষতি চান না। তেমনি আমিও অন্যের চ’ক্রান্তে নিজের স্বামীর ক্ষতি হোক সেটা চাই না। দয়া করে প্রজেক্টর আনার ব্যবস্থা করুন।
বস প্রজেক্টর সেট করার নির্দেশ দিলেন।
কিছু মুহূর্তের মধ্যেই প্রজেক্টর সেট করা হয়ে গেলো। ভিডিও ওপেন করার দিকে মনযোগ দিয়ে তুহা মৃদু হেসে বলল,’এখন যাদের মুখে বিদ্রুপের হাসি। কে বলতে পারে হয়তো সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তাদের মুখে অনুতাপ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবেনা।
ইভান নিরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার কিছুই করার প্রয়োজন পড়ছেনা। মেয়েটা একা একাই সব সামলে নিচ্ছে।
সবার দৃষ্টি প্রজেক্টরে দৃশ্যমান ভিডিও ক্লিপে। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ে আর ইভান তারই কেবিনে আপ’ত্তিকর অবস্থায় আছে। যেখানে ইভানের এক হাত মেয়েটির পিঠে ঢিলে হয়ে আছে। অন্যহাত ঘাড়ের পাশ দিয়ে নিচের দিকে হেলে পড়ছে।
তুহা সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে প্রজেক্টরে তাকিয়ে বলল,’ ভালো করে দেখুন। মিস্টার ইভান যদি স্বজ্ঞানে থাকতো তবে তার হাত দুটি এভাবে হেলে না পড়ে বাঁধন আরো শক্ত হতো। এখানে মেয়েটিকে নড়াচড়া করতে দেখা গেলেও মিস্টার ইভানের কোনো রেসপন্স দেখতে পাচ্ছেন আপনারা?
সবাই ভাবনায় পড়ে গেলো। এতোটা মাথা খাটিয়ে দেখেনি তারা। সবাই আরও একবার ভিডিওটি ভালো করে দেখে সমস্বরে বলে উঠলো,
“মিস্টার ইভানকে দেখে মনে হচ্ছে না উনি স্বাভাবিক আছেন।”
একজন বলে উঠলো,’ মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় যেমন থাকে ঠিক তেমন মনে হচ্ছে মিস্টার ইভানকে।’
চট করে তুহা উত্তর দিলো,’ এক্সাক্টলি! আমিও সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি। কেউ হয়তো মিস্টার ইভানের ভালো চাইছেনা। তাই তার বিরুদ্ধে ষড়’যন্ত্র করার চেষ্টা করেছে। আর সে ব্যক্তি এই অফিসেরই কেউ।’
তৃষার তল পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। কপালে চিকন ঘামের রেশ। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘাম মুছে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো।
বস বললেন,’ আপনি এতটা শিওর কিভাবে হচ্ছেন?’
তুহা জোরালো কন্ঠে বলল,’ সেটা আপনাদের পিয়নকে ডাকলেই বুঝা যাবে।’
পিয়ন কে ডেকে আবার পর তুহা নম্রভাবে জিজ্ঞেস করলে,’ আপনি সেদিন মিস্টার ইভানকে কফি দিয়েছিলেন,রাইট?’
পিয়ন মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ জানাতেই তুহা পূনরায় প্রশ্ন ছুঁড়লো, “কফি নিয়ে কোথাও থেমেছেন? বা কারো সাথে কথা বলেছেন?
তৃষা বারবার ঘর্মাক্ত হাত জোড়া জামার এক অংশে মুছে নিচ্ছে। তীব্র কন্ঠে বলল,’ আজাইরা বিষয় নিয়ে আপনি অফিসের সময় কেনো নষ্ট করছেন?
বস আপনি কেনো কিছু বলছেন না?
তুহা ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলো। তৃষার দিকে না ফিরেই বলল,’ আপনাকে নিশ্চয়ই এখন কেনো প্রশ্ন করা হয় নি। তবে আপনি এখন কথা বলা বাধ্যতামুলক কেনো মনে করছেন? আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
তৃষা অপমানিত বোধ করে রে’গে কিছু বলতে গেলেই বস তাকে থামিয়ে তুহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ যা করার তাড়াতাড়ি করুন। আমাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটছে।
তুহা মাথা নেড়ে পিয়নকে বলল,’ আপনাকে যে প্রশ্ন করেছিলাম তার উত্তর দিন।’
পিয়ন জবাব দিলো,’ না তো।আমি কফি নিয়ে স্যারকে দিয়ে এসেছি। কারো সাথে কথা বলিনি।
তুহা কন্ঠে জোর দিয়ে বলল,’ ভেবে দেখুন একবার।
পিয়ন খানিক ভেবে বললেন,’ ওহ মনে পড়েছে। কফি নিয়ে যাওয়ার সময় তৃষা ম্যাডাম ডেকে একটা ফাইল দিয়ে বললেন বড় স্যারকে দিয়ে আসতে। আমি কফি রেখে ফাইল দিতে গিয়েছি।
তুহার সন্দেহ এবার দৃঢ় হলো। তার বিশ্বাস এসব কিছুর পেছনে তৃষা ছাড়া আর কেউ নেই। এখন সে পুরোপুরি নিশ্চিত হলো।
তুহা বলল,’ একবার সিসিটিভি ফুটেজ চেইক করতে চাই আমি।’
তৃষা বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,’ যাও যাও। মন ভরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখো।
বস সহ কয়েকজন তুহা ইভানের সাথে গেলো সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে। তিনদিন আগের ফুটেজ চেইক দিয়ে ইভানের কেবিনে মেয়েটির প্রবেশ সময়ের ফুটেজ পাওয়া যায়নি। সবার ফোনে যতটুকু ভিডিও ধারণ করা আছে ফুটেজে ও ঠিক ততটুকুই দেখাচ্ছে।
যিনি সব কিছু কন্ট্রোল করেন উনাকে ভালোভাবে ফুটেজ চেইক দিতে বলল তুহা। ইভান বলল,’ সকাল ১১ঃ৩৫ মিনিট থেকে এগারোটার ফুটেজ দেখান।
কন্ট্রোলার জানালেন ১১ঃ৩৫ থেকে ১১ঃ৪০ এই পাঁচমিনিটের ফুটেজ নেই।
কেউ হয়তো তখন সিসিটিভি অফ করে দিয়েছিলো।
এবার উপস্থিত সবাই মোটামুটি বুঝতে পারলো ইভানকে সত্যিই কেউ ফাঁ’সাতে চাইছে।
তুহা ভ্রু কুঁচকে বলল,’ আপনি তখন কোথায় ছিলেন?
লোকটা আমতা আমতা করে বলল,’ আমি সেদিন একঘন্টার জন্য বাইরে ছিলাম। আসলে আমার একটা জরুরি কাজ পড়েছিলো। বসকে না জানিয়েই চলে গিয়েছি। লোকটা মাথানিচু করে রইলো।
বস ক্ষে’পে গিয়ে বললেন,’ আমার পারমিশন ছাড়া এখানে ওখানে যাচ্ছো। তো একেবারে বাসায় চলে গেলেই পারো। অফিসে আসার দরকার নেই।
লোকটি নতজানু হয়ে বলল,’ সরি স্যার। একজন লোক আমাকে ফোন দিয়ে জানালো আমার মেয়ে নাকি স্কুল থেকে ফেরার পথে এক্সি’ডে’ন্ট করেছে। তাই আমি পা’গ’লের মতো ছুটে গিয়েছি। কিন্তু স্কুলের সামনে বা আশেপাশে কোনো গাড়ি এক্সি’ডে’ন্ট হয়নি। বাসায় ফোন করে জানতে পারি আমার মেয়ে বাড়িতেই আছে। লোকটি আমাকে মি’থ্যে সংবাদ দিয়েছিলো।
সেখানে আসতে আর যেতে সব মিলিয়ে একঘন্টা সময় আমি অফিস কামাই দিয়েছি।
সে সময়ে হয়তো কেউ সিসিটিভি অফ করে দিয়েছে।
বস আর কিছু বললোনা।
তুহা আর ইভানের কপালের চিন্তার বলিরেখা ফুঁটে উঠেছে। তৃষার সাথে আর কে আছে জড়িত? কিছুতেই আন্দাজ করতে পারছেনা তুহা।
হঠাৎ তুহা বলল,’ তার একঘন্টা আগের ফুটেজ দেখান তো?
লোকটি ১০ঃ৩৫ এর ফুটেজ দেখালো।
যেখানে দেখা যাচ্ছে পিয়ন কফি নিয়ে ইভানের কেবিনে যাওয়ার মুহূর্তে তৃষা উনাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো কফি কার জন্য নিচ্ছে।
ইভান স্যারের জন্য নিচ্ছি ম্যাডাম।
পিয়নের কথার পিঠে তৃষা আর কিছু বললোনা। একটা ফাইল ধরিয়ে দিয়ে পিয়নকে বসের কেবিনে পাঠালো।
পিয়ন যেতেই তৃষা ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে পাওডার জাতীয় কিছু কফিতে মিশিয়ে দেয়। তার অধরে কু’টি’ল হাসি।
সবাই এতটুকু দেখেই বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় তৃষার পানে। তৃষার চোর ধরা পড়ার মতো অবস্থা। এতটা বোকামি সে কিভাবে করলো? শামিমকে বলে শুধু এই পাঁচমিনিটের জন্য ইভানের কেবিনের সিসিটিভি অফ রেখেছিলো। ওর কেবিনের সিসিটিভি অফ করার কথা বলতেই ভুলে গেছে।
তৃষা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
সবাই তৃষাকে ধি’ক্কা’র জানালো।
তুহা আবার ও ১১ঃ৪০ মিনিট এর পরের ফুটেজ দেখাতে বললো। হঠাৎ তুহা বল স্টপ। সেখানেই পজ করা হলো।
তুহা বলল,জুম করুন। জুম করতেই সবটা আরও ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে গেলো।
ইভান যখন অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো ডখন মেয়েটিও ইভানের পেছনে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। তৃষার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটি তৃষার হাতের সাথে হাত ঠেকিয়ে পেছন ফিরে মৃদু হেসে চলে গেলো। তৃষা মেয়েটির হাতে টা’কা গুঁজে দিয়েছিলো।
সবটা সবার কাছে পরিষ্কার হতেই সবাই তৃষাকে নিয়ে বি’দ্রু’প শুরু করলো। যেখানে এই বি’দ্রু’প ইভানের জন্য ছিলো একন সেটা তৃষার জন্য। ইভানের সামনে দাঁড়িয়ে অনুতপ্ত হলো সবাই।
বস তৃষাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেন।
ইভানের সামনে দাঁড়িয়ে নতজানু হয়ে বললেন,’ দুঃখিত মিস্টার ইভান। আমরা আপনাকে ভুল বুঝে অনেক বড় অন্যা’য় করে ফেলেছি আপনার সাথে।
আমরা চাই আপনি আবার অফিসে জয়েন করুন।
ইভান তাচ্ছিল্য হেসে বলল,’ সরি! আমার পক্ষে এই অফিসে জব করা আর সম্ভব নয়। আমি এখানে এসেছি নিজের চাকরি ফিরে পাবো এজন্য নয়। আমি এসেছি নিজের উপর আসা অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ করতে। যেখানে আমার কোনো দো’ষই নেই সেখানে আমি কেনো মি’থ্যে অভিযোগ বয়ে বেড়াবো?
আপনাদের উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। তবে আমি আর এই অফিসে চাকরি করতে পারবোনা।
সবাই মিলে এক জোট হয়ে ইভানকে অনুরোধ করলো অফিসে জয়েন করার জন্য।
ইভান সবাইকে পাশ কাটিয়ে এসেছে। যেখানে বছরের পর বছর বিশ্বাস অর্জন করেও ক্ষনিকেই বিশ্বাস ভঙ্গ হয়ে চুরমার হয়ে যায় সেখানে আর যাই হোক,নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে চাকরি করা যায় না।
সবাই অপরাধীর ন্যায় নত হয়ে রইলো।
তৃষা যখন অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখনই তুহা তৃষার হাত খপ করে ধরে রোষানল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন মিস তৃষা?
আপনার শাস্তি যে এখনো পাওয়া হয়নি। আপনি চলে গেলে জে’লে’র ঘানি টানবে কে? পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে। মান’হানির মা’ম’লাতে আপনাকে গ্রে’ফ’তা’র করবে পুলিশ।
পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত আপনার দায়িত্ব আমার।
এরপর পরিবারের সবাই আপনার সাথে দেখা করতে যাবে। সবাই সবটা জানবে, আপনাকে কোমল কন্ঠে আদর করে আসবে।
তুহার ঠোঁটের বক্র হাসি দেখে তৃষা হাত ছাড়ানোর জন্য ছটপট করে উঠলো।
#চলবে…….