সম্পর্কের বন্ধন পর্ব-১৪

0
1179

#সম্পর্কের_বন্ধন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৪

ঘড়ির কাটা টুংটাং শব্দ তুলে সন্ধ্যা সাতটার ঘরে গিয়ে থামলো। পিচ ঢালা রাস্তায় গাড়ি আনাগোনা আর বিরক্তিকর শব্দ। সন্ধ্যা হতে না হতেই নিয়ন বাতির আলোতে চারপাশ জ্বলজ্বল করে উঠলো। হাসপাতালের করিডোরে চলা মানুষের অভিব্যক্তিতে ভীষণ রকম ব্যস্ততা। ফিনাইলের তীব্র গন্ধে পেট গুলিয়ে আসছে। যারা ডাক্তার দেখাতে এসেছেন তারা সবাই সিরিয়াল দিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে আছেন। দুটো চেয়ারের পরবর্তী চেয়ার থেকে একটি বাচ্চার কান্নার তীব্র আওয়াজ ভেসে আসছে। মাথার ভেতর ঝনঝন শব্দ তুলে সেই আওয়াজ তরঙ্গিত হচ্ছে। তীব্র পেট ব্যথা ভাটা পড়লো মাথার যন্ত্রণার কাছে।

সিরিয়ালে সামাইরা তুহা নাম ডাক পড়তেই ইভান উঠে দাঁড়ালো। তুহার হাতের ভাঁজে তার শক্ত হাত গলিয়ে দিয়ে পা বাড়ালো ডাক্তারের চেম্বারে।

অফিস থেকে ফিরে তুহার কোনো সাড়া শব্দ পেলোনা ইভান। দরজায় বারংবার বেল দিয়েও যখন প্রতিত্তোর পেলোনা তখনই মনে খানিকটা ভ’য়ের সূচনা হয়। অস্থিরতা ঝেঁকে ধরে মন মস্তিষ্কে। দুপুরে ফোন করেও তুহাকে পাওয়া যায়নি। ইভানের ধারণা হয়তো ফোন পাশে ছিলোনা। কিন্তু এখন কপালে চিন্তার বলিরেখা ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে। বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রনায় কিছু একটা খচখচিয়ে উঠছে। পকেটে হাত দিলো চাবির জন্য। হতাশ হয়ে পকেট থেকে হাত বের করে ছুটলো দারোয়ানের কাছে। তার কাছে প্রতিটা ফ্ল্যাটের একটা করে চাবি থাকে। একপ্রকার উদ্ভ্রান্তের ন্যায় চাবি নিয়ে এসে দরজা খুললো ইভান। রুমে গিয়ে অস্থিরতা খানিকটা কমলো। তবে পুরোপুরি নিঃশেষ হলোনা।

খাটের উপর এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছে তুহা। জামাকাপড় ঠিক নেই। মাথা ভর্তি চুল অগোছালো,এলোমেলো হয়ে আছে। খাটের এক কোনে ওড়না ঝুলে আছে।
চোখমুখ ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।
মাথার চুল খামছে ধরলো ইভান। রাগ হচ্ছে প্রচুর। তাকে এভাবে হ্যানস্তা করে মেয়েটা দিব্বি ঘুমিয়ে যাচ্ছে।

গলার স্বর উঁচু করে তুহাকে ডাকলো। সাড়া দিলোনা মেয়েটা। এবার মেজাজ প্রচন্ড খিঁচড়ে গেলো। তুহার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দিলো।

আচমকা ঘুম থেকে তুলে দেওয়াতে তুহা ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। চোখজোড়া মৃদু খুলে নিয়ে আবার বন্ধ করলো।
ইভান অনবরত বকাবকি করতে লাগলো।
তুহা চোখ বুঁজে ঢলে পড়লো।

ইভানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো। কি হলো? তুহা তো এমন করেনা। তীক্ষ্ণ চোখে তুহাকে পরোখ করলো ইভান। চোখদুটো কেমন গর্তে নেমে পড়েছে। ঠোঁট জোড়া শুষ্ক,চোয়ালে মলিনতা।
ইভান খানিকটা নরম হলো। কোমল সুরে আরো কয়েকবার ডাকলো তুহাকে!
চোখ মেলে তাকালো তুহা। কিছু বললোনা। শরীরে সেই শক্তিটুকু নেই। আজ আবারও পেটে প্রচন্ড ব্য/থা শুরু হয়েছে। সাথে বমি হয়ে শরীর আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ইভান বলল,’শরীর খারাপ করছে? এভাবে শুয়ে আছো কেনো? এতবার বেল দিলাম শুনোনি?

তুহা খাটের কোনায় হাত রেখে উঠে বসার চেষ্টা করলো। ইভান ধরে বসতে সাহায্য করলো।
কন্ঠ খাঁদে নামিয়ে চাপা স্বরে তুহা বলল,’পেট ব্যথা ছিলো। একটু আগে চোখ লেগে আসায় টের পাইনি।

ইভানের মেজাজ চটে গেলো। তবুও নিজেকে খানিকটা শান্ত রেখে প্রশ্ন করলো,’দুপুরে খেয়েছিলে?’

তুহা নতজানু হয়ে মিনমিনে কন্ঠে বলল,’রান্না করিনি।’

ইভান আর রাগ সংযত করতে পারলোনা। মেজাজ খিঁচড়ে গেলো তার। ধমক দিয়ে বলল,’সব কিছুতেই তোমার হেয়ালিপনা। কখন থেকে অসুস্থ হয়ে আছো। আমাকে ফোন করার প্রয়োজন মনে করোনা। ডাক্তার দেখাতে বললে তুমি নানান বাহানা খুঁজবে। মাস না পেরোতেই তোমার কতবার পেইন উঠেছে? তোমার মনে হয়না ডাক্তার দেখানো উচিত?

অতঃপর আদেশের সুরে বলল,’দ্রুত উঠে জামা পাল্টে নাও। এখনই ডাক্তারের কাছে যাবে তুমি।’

তুহা মুখ ভার করে আস্তে আস্তে উঠলো। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে জামা পাল্টে আসলো।
ইভান খাটের উপর বসে হাঁটুতে কনুই ঠেকিয়ে মুখে হাত দিয়ে বসে রইলো। এখনও তার চোখেমুখে তেজ বিদ্যমান।
তুহাকে দেখে ইভান উঠে দাঁড়ালো। পকেটে ফোন আর ওয়ালেট চেইক করে নিয়ে তুহার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো।
তুহা পিছু পিছু যান্ত্রিক মানবের মতো হেঁটে গেলো। কোনো রা করলোনা। এই মুহূর্তে কথা বলা মানেই আ’হত বাঘকে ক্ষেপিয়ে দেওয়া।

ডঃ কামরুন্নাহারের চেম্বারে পাশাপাশি বসা দুজনে।
বয়স ৩৫ কি ৪০ এর মাঝামাঝিই হবে মহিলার। গৌরবর্ণ গোলগাল চেহারায় একগাল হেসে বললেন,’আপনাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক কি?

ইভান অকপটে দ্বিধাহীনভাবে উত্তর দিলো,’আমরা স্বামী-স্ত্রী।

ডাক্তার আবারও হাসলেন। তুহার দিকে তাকিয়ে বললেন,’নাম কি আপনার?’
সামাইরা তুহা বলতেই ডঃ বললেন,’এবার আপনার সমস্যা গুলো বলুন।’

তুহা হাত কচলে চলেছে। ডাক্তারের কাছে আসলে ওর সব সমস্যার কথা মনে থাকেনা। আংশিক মনে থাকলেও বাকিটা ভুলে যায়।
তুহাকে মোচড়ামুচড়ি করতে দেখে ইভান গলা ঝেড়ে বলল,’পেট ব্য’থা থাকে। এক মাসের কম সময়ে তিনবার ব্য’থা উঠেছে। তখন বমি ভাবটা ও থাকে।

ডাক্তার কামরুন্নাহার তুহার উদ্দেশ্য বললেন,’আপনি সব খুলে না বললে আমি সমস্যা বুঝবো কি করে? সমস্যা আপনার তাই সবটা আপনার কাছ থেকে জানলেই আমার মনে হয় সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবো।
আর কি কি সমস্যা হয় ধীরে ধীরে বলুন।

তুহা কোমর থেকে নিচের দিকে ব্যাথার কথাটাও বলল।
ডাক্তার আবারও প্রশ্ন করলেন,’পিরিয়ডের স্থায়িত্ব কতদিন পর্যন্ত থাকে?’

পাশে ইভান বসে আছে নির্বকার ভঙ্গিতে।
তুহা উসখুস করছে। এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বারবার কন্ঠনালিতে কথা আটকে যাচ্ছে।
বিড়বিড় করে বলল,’দশ বারো দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।

ডঃ কামরুন্নাহার কয়েকটা টেস্ট লিখে দিয়ে আপাততর জন্য কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। রিপোর্ট আসার পর বাকি ঔষধ দিয়ে দেবেন।
ইভান ফাইল হাতে নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে তুহাকে নিয়ে রিসিপশনে গেলো।
পরীক্ষা শেষে দুজনে আবারও ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলো। রিপোর্ট নিয়ে একেবারে বাসায় যাবে।

হসপিটালে আসার পর যে বাচ্চাটার কান্না শুনেছে তুহা এখন তাদের পাশেই বসেছে। তার পাশেই ইভান। বাচ্চাটার আম্মু কেমন উসখুস করছেন। মনে হচ্ছে কিছু বলতে চান।
তুহা উনাকে পরোখ করে বলল,’কিছু বলবেন?’

বাচ্চার আম্মু ইতস্ততভাবে বললেন,’আসলে একটু ওয়াশরুম ব্যবহার করতাম। কিন্তু বাবুকে কার কাছে দেবো বুঝতে পারছিনা। সাথে ওর বাবা ও আসেনি।

ইভান ফোনে কিছু দেখছিলো। তুহা বাচ্চাটাকে হাত বাড়িয়ে কোলে নিতেই বাচ্চাটা ভ্যাত করে কেঁদে উঠলো। ইভান ফোন রেখে পাশ ফিরলো। তুহার কোলে বাচ্চা দেখে ওর কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে বলল,’তোমার না পেট ব্য’থা? আমার কাছে দাও।

বাচ্চাটার কান্না থামছেই না। ইভান উঠে হাঁটা ধরেছে। ঘাড়ে মাথাটা চেপে ধরে পিঠে আস্তে করে চাপড়ে দিয়ে কান্না থামাচ্ছে।
তুহা মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইভান কিভাবে বাবুটার কান্না থামাচ্ছে?
কান্না থেমে আসতেই ইভান তুহার পাশে বসলো।
তুহা বাচ্চাটার তুলতুলে গাল টিপে দিয়ে ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলল,’মাশাআল্লাহ!বাবুটা কি সুন্দর তাইনা?

ইভান হেসে মাথা নেড়ে তুহার কথায় সায় জানালো।
মুহূর্তেই তুহার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।
উৎসুক হয়ে বলল,’বাবুটাকে আমরা নিয়ে যাই?’
উত্তরের আশায় ইভানের চেহারায় তাকিয়ে আছে তুহা।

ইভান চোখ ছোট ছোট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তুহার দিকে। মন্থর কন্ঠে বলল,’তুমি মানুষের বাচ্চা চু/রি করবে? তাহলো তোমার সাথে আমাকেও সবাই চু/রির মাম/লায় ফাঁ/সিয়ে দেবে।

‘কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলব আমি কিছু জানিনা। আপনি বাবুটাকে চু/রি করেছেন।’বলেই তুহা ফিক করে হেসে দিলো।

ইভান চোখ বড় করে চেয়ে থেকে কন্ঠে অপার বিষ্ময় নিয়ে বলল,’ তুমি তো খুব সাং/ঘা/তিক মেয়ে! নিজে চু/রি করে তার দায় আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছো?

তুহা খিলখিল করে হেসে উঠলো। আশেপাশের কয়েক জোড়া চোখ তুহার উপর এসে স্থির হলো। ইভান আশে পাশে তাকিয়ে তুহাকে আস্তে হাসতে বলল। এভাবে উচ্চস্বরে হাসাটা অনুচিত। সবাই মোটামুটি অসুস্থতা নিয়ে হসপিটালে এসেছে। তাদের সমস্যা হতে পারে। তুহা মুখ টিপে হাসছে। ইভানও হাসলো। নিঃশব্দ ক্ষীণ হাসি।

এতক্ষণ হয়ে যাওয়ার পর বাচ্চাটার আম্মু এসে তাকে কোলে নিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,’সরি!এক কাজে গিয়ে আরও দুইতিনটা কাজ সেরে এসেছি। তাই দেরি হলো।
তুহা মুচকি হেসে বলল,’না না ঠিক আছে। আমরা কিছু মনে করিনি।’

রিপোর্ট হাতে আসলো ঠিকই কিন্তু ডঃ কামরুন্নাহারের জরুরি কাজ থাকায় আজ তাড়াতাড়িই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ইভান তুহা বাসায় ফেরার পথে রাতের খাবারটা খেয়ে নিয়েছে।

———————————————————

মুঠোফোনের তীব্র শব্দে সম্বিত ফিরলো শামিমের। এতক্ষণ একটা কাজে ব্যস্ত ছিলো। ফোনের স্ক্রিনে তৃষার নাম্বার দেখে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলো।
একটু লোক সমাগমের আড়ালে গিয়ে কল রিসিভ করলো।

তৃষা কন্ঠে মধু মিশিয়ে বলল,’ কোথায় তুমি?’
শামিমের খুব হাসি পাচ্ছে তৃষার অভিনয় দেখে। যাই হোক সবকিছু নিজের মতো পেতে হলে তৃষার তালে তাল দিতেই হবে।

শামিম দ্বিগুণ আদুরে কন্ঠে বলল,’কাজে আটকা পড়েছি জান।
তৃষা বলল,’তোমাকে যেভাবে যেভাবে বলছি ঠিক সেভাবেই সবটার ব্যবস্থা করবে।’

শামিম আফসোসের সুরে বলল,’ আমিতো কয়েকদিনের জন্য কাজে আটকা পড়েছি। এখন এসব সম্ভব নয়। কাজ শেষ করে আসি। তখন তোমার কথামতো সবটা হবে।

তৃষা দাঁত কিড়মিড় করে মি/থ্যে হেসে বলল,’তাড়াতাড়ি ফিরবে। টেক কেয়ার।’

লাইন কেটে দিতেই শামিম শব্দ করে হাসলো। শামিম এম্বাসিতে এসেছে তৃষার পাসপোর্টের কাজে। কথাটা তৃষাকে জানালোনা। তৃষার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি বিয়েতে লাগবে বলে শামিম নিয়ে রেখেছি। যাতে করে পাসপোর্ট তৈরিতে আর বেশি ঝামেলা পোহাতে হলোনা। তৃষাও শামিমের যাতে সন্দেহ না হয় তাই শামিমকে সবকিছুর কপি দিয়ে রেখেছে।
‘নিজেকে খুব চা/লাক মনে করো তাইনা তৃষারানী।’শামিম হাসি দমিয়ে রাখতে না পেরে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো।

অফিস থেকে ফেরার পথে তুহার রিপোর্ট দেখানোর জন্য ইভান হসপিটালে গেলো। ডঃ কামরুন্নাহারের চেম্বারে বসে আছে ইভান।
উনি রিপোর্ট দেখে বলল,’আপনার স্ত্রীর জরায়ু মুখে টিউ/মার হয়েছে।

ইভান থমকালো,ভড়কালো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেশ। শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে কপালে জমে থাকা ঘর্ম বিন্দু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিলো।

ডঃ কামরুন্নাহার ইভানকে আশ্বস্ত করে বললেন,’রিল্যাক্স! ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ঠিক মতো চিকিৎসা করে ঔষধ নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
টিউমারের আকার এখনো ক্ষুদ্র।

ইভান খানিকটা শান্ত হলো। ওর ধারণা ছিলো বড় কোনো সমস্যা। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,’ ঔষধ নিলেই ঠিক হয়ে যাবে তো? পরে আবার কখনো সমস্যা হয় যদি?

ডঃ কামরুন্নাহার অমায়িক হাসলেন। বললেন,’আপনারা দুজনেই যথেষ্ট ম্যাচিউর। বেবি নেওয়ার মতো উপযুক্ত বয়স আর মাইন্ড দুইটাই ঠিক আছে। ঔষধে একটু সময় লাগবে। তবে আপনারা যদি বেবি নিয়ে নেন তবে সেটা বেশি ভালো হবে। পরবর্তীতে কোনোরূপ আ/শঙ্কা থাকবেনা।
এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের।

ইভান ডঃ এর চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসলো।
সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরেই দরজায় বেল দিলো।
তুহা দরজা খুলে পাশে সরে দাঁড়ালো।

ইভান কিছু না বলেই রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। তুহার রিপোর্ট খাটের উপর ছিলো।

তুহা কফি করে ইভানের জন্য বসে রইলো। ইভান কফি নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
বিকেল থেকে ইভান তুহার দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। হু, হা ছাড়া বেশি একটা কথাও বলেনি।

তুহা বিছানা ঠিক করে নিতেই ইভান এসে শুয়ে পড়লো। ভ্রু কুঁচকে গেলো তুহার। উনি এমন করছে কেনো বিকেল থেকে?
গলা ঝেড়ে তুহা বলল,’শুনছেন!
ইভান জবাব দিলোনা।

তুহা আবারও ডাকলো,’এই যে শুনছেন? কি হয়েছে আপনার? অফিসে সব ঠিকঠাক আছে? শরীর ঠিক আছে আপনার?

ইভান পাশ ফিরেই বলল,’ সব ঠিক আছে।’

তুহা স্বস্তির শ্বাস ফেলে রিপোর্ট হাতে নিয়ে বলল,’ ডঃ কি বললো আজ?সব ঠিক আছে?’

ইভান ছোট্ট করে উত্তর দিলো,’হুঁ!

তুহা পাশে এসে শুয়ে পড়তেই ইভান ওর চোখে চোখ রেখে বলল,’ ডঃ কি বলেছে শুনতে চাও?’

তুহা মাথা নেড়ে বলল,’কি বলেছে?’

ডঃ এর বলা প্রতিটি কথা বলতেই তুহা দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। গোলগাল হলদে ফর্সা গাল দুটো আরক্তিম হলো। অস্বস্তিতে হাসফাস করতে লাগলো।

ইভান তুহার উপর থেকে নজর সরালোনা। একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে বলল,’ তুমি কি চাও? সেটা বলো।’

তুহা আড়ষ্টতায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলোনা।

ইভান কোমল কন্ঠে বলল,’তুমি এক কদম বাড়াও। ট্রাস্ট মি!আমি দশ কদম বাড়িয়ে হাতটা ছুঁয়ে দেবো।অনুভূতির সাগরে ঘুরিয়ে আনবো।’

হৃদয়স্পন্দন তীব্র থেকে তীব্র হলো। বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দে তবলা বাজানোর মতো কম্পন সৃষ্টি হলো।

বুক কেঁপে ওঠা চোখের চাহনি উপেক্ষা করার মতো সাধ্যি তুহার নেই। কিয়দংশ সময় চুপ থেকে ধীরস্থির ভাবে ছুঁয়ে দিলো ইভানের হাতের উল্টো পিঠ। চোখের দৃষ্টি নত। ভারী পল্লব বিশিষ্ট চোখের পাতা পিটপিটিয়ে নড়ছে।
ইভানের ঠোঁটে চমৎকার হাসি ফুটলো। আরেকটু কাছে গিয়ে দূরত্ব ঘুছালো ইভান।
কেঁপে ওঠা আঁখিদুটিতে অধরের উষ্ণ পরশ শীতল করলো হৃদয়। উষ্ণ পরশের গতি গ্রীবাতে গিয়ে ঠেকতেই দুটি হৃদয় সিক্ত হলো গাঢ় প্রণয়ে।
#চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে