#সমুদ্র_বিলাস
#Rahnuba_mim
অন্তিম পর্ব
সকালে ঘুম থেকে উঠে কুহেলিকা স্নান করে নেয়।আনজুমা এসে কয়েকবার কুহেলিকাকে বলে যান তাড়াতাড়ি রেডি হতে।
কুহেলিকা নিরবের দেওয়া নীল শাড়ি পড়ে।শরীরে কোনো স্বর্ণের গহনা না পড়ে ফুলের গহনা পড়ে।নিরবের ইচ্ছা ছিলো কুহেলিকা যেনো প্রাকৃতিক সাজে সজ্জিত হয়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুহেলিকা অকস্মাৎ নিরবের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া মনে করতে থাকে।
সেদিন শেষ রাতে আহিল কুহেলিকার রুমে আসে।কুহেলিকার কাছে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।পুনরায় কুহেলিকা তার কাছে ফিরে আসতে অনুরোধ করে।কিন্তু প্রতিত্তরে কুহেলিকা না করে।
আহিল তখন প্রচন্ড রাগান্বিত হয়।কুহেলিকার গায়ে কলঙ্কের দাগ দেওয়ার জন্য উঠে বসে লাগে।
শেষ রাতে নিরবেরও ঘুম ভেঙে যায়।কুহেলিকার রুম থেকে শব্দ শুনে সে তাড়াতাড়ি তার রুমে ঢুকে।
সে কুহেলিকাকে দেওয়ালের সাথে মিশে বসে থাকতে দেখে।তার পাশে অবহেলিত হয়ে পড়ে তার ওড়না।কুহেলিকার ঠোঁটের কিণারায় রক্তের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আর তার কপোলে থাপ্পড়ের দাগ।হয়ত আহিল কুহেলিকার গায়ে হাত তুলেছে।আহিল কুহেলিকার কাছে যেতেই যাবে তখন নিরবকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।
নিরব এতরাতে আহিলকে কুহেলিকার রুমে দেখে বলে ভাইয়া তুমি এখানে কেনো?আর কুহেলিকার এমন অবস্হা কেনো?
নিরবের কন্ঠস্বর শুনে কুহেলিকা অঝুঁরে কেঁদে উঠে।
তখনি রুমে ফয়জুল প্রবেশ করে।
তৎক্ষণাৎ তিনি বিস্তারিত ঘটনা বুজে যান।তিনি আহিলকে গালে কষে থাপ্পড় দেন।আহিল তখন কারো কথা পরোয়া না করে সেদিন ভোরে বাসা থেকে চলে যায়।ফয়জুল আহিলের এমন কান্ডে অনেক কষ্ট ও রাগান্বিত হন।তিনি বিলম্ব না করে নিরবের সম্মতিতে কুহেলিকার বিয়ে তার সাথে ঠিক করে।কুহেলিকা এতে কোনো আপত্তি তুলে না।আনজুমা বিয়ের ব্যাপারে কুহেলিকাকে প্রশ্ন করলে কুহেলিকা শুধু বলে তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটা করো।
রানু একদম বিয়েতে রাজি ছিলো না।কিন্তু তিনি নিজের ছেলের কান্ডে লজ্জিত হন।তাই তিনিও বিয়েতে কোনো আপত্তি তুলেননি।সবার সম্মতিতে বিয়ের তারিখ এক মাস পরে নির্ধারণ করা হয়।
নিরবের অদম্য ইচ্ছা ছিলো সে বিয়ের আগে সমুদ্র সৌকতে যাবে।আর আজ তাই নিরব আর কুহেলিকা সমুদ্র বিলাস করতে যাচ্ছে।বিয়ের আগে ঘুরতে যাওয়া লোকসমাজ কটু কথা বলবে তাই সবাই যাচ্ছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুহেলিকা তার আর্দ্র চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতেই যাবে তখন রুমে নিরব প্রবেশ করে।কুহেলিকা তখন নিরবকে সালাম করতে নত হয়।কুহেলিকার চুল লম্বা হওয়াই তার নত হওয়ার সাথে সাথে তার আর্দ্র চুলগুলো নিরবের পায়ে এসে পড়ে।কুহেলিকা নিরবের পা ছুঁয়ে দেওয়ার আগেই নিরব কুহেলিকার বাহু ধরে তুলে বলে সালাম করছ কেনো?তুমি কি জানো না পা ছুঁয়ে সালাম করা ইসলামে নিষেধ।
কুহেলিকা ডানে বামে মাথা নেড়ে না বলে।তার মা বলেছিলো নিরবকে দেখলে যেনো সালাম করে।তাই কুহেলিকা তার মার কথা মতো এমনটা করে।
নিরব পুনরায় বলে কখনো পা ছুঁয়ে সালাম করবে না।বরং মুখে সালাম দিবে।
কুহেলিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।সে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো।তার খুব লজ্জা করছে।নিরব কুহেলিকার লজ্জামাখা মুখশ্রী দেখে বলে এত লজ্জা পাচ্ছো কেনো?কিছুদিন পরেই তো আমাদের বিয়ে হচ্ছে।
কুহেলিকা তবুও নিশ্চুপ।নিরব কাজল নিয়ে বলে সাজ সব ঠিক আছে কিন্তু কাজল দেওনি।
কুহেলিকা নিরবের হাত থেকে কাজল নিতে চাইলে নিরব বলে আমি দিয়ে দিচ্ছি।
নিরব নিজ হাতে কুহেলিকাকে কাজল পড়িয়ে দেয়।সবশেষে বলে এখন একদম আমার বউয়ের মতো লাগছে।পুষ্পরাজি দিয়ে গলার হার,কানের দোল সব মিলিয়ে তোমাকে অসংখ্যা পুষ্পের মাঝে পুষ্পপরী লাগছে।
সবাই একে একে গাড়িতে এসে বসে।রানু প্রতিটি রুমে তালা লাগাতে গিয়ে আহিলের রুমে এসে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।রুমটা দেখার সাথে সাথে তার ঘৃণায় ভরে যায়।আহিল শুধু কুহেলিকাকে হেনস্ত করেনি বরং এতদিন ধরে মারতে চেয়েছিলো।সেদিনের ছেলেটি নিরবকে বিস্তারিত বলে।নিরবের আর আহিলের চেহারা কিছু কিছু মিল থাকায় কুহেলিকা প্রার্থক্য করতে অসুবিধা হয়েছিলো কে ড্রাইবিং সিটে ছিলো।
আহিল কুহেলিকাকে ভালোবাসে আবার হত্যা করতে চাই এটা আরো মাথায় ঢুকেনি।রানু কতক্ষন রুমে দাঁড়িয়ে থেকে অশ্রু ভেজা চোখে বের হয়।ফয়জুল রানুর চোখে অশ্রু দেখে বলে কাঁদছো কেনো?
যে ছেলে এতবড় কান্ড করতে পারে তার জন্য ঘৃণা ছাড়া কিছুই আসার কথা না।
রানু আচঁলে মুখে গুজে অঝুঁরে কান্না করতে থাকেন।
ফয়জুল বলেন দোষটা শুধু আহিলের ছিলো না,বরং সাথে আমাদেরও ছিলো।ছোট বেলায় যখন আহিলের মাথার সমস্যা দেখা দিয়ে ছিলো । তখন আমাদের উচিত ছিলো ডাক্তারের কথা শুনা।
রানু এবার কান্না থেমে বলেন ডাক্তারের কথা মতো বিদেশে পর্যন্ত আহিলকে নিয়ে গেছি।
আরে ডাক্তার বলেছিলো তার মস্তিষ্কের সমস্যা তার বড় হওয়ার সাথে সাথে বাড়বে।তাই যেনো আমরা তাকে মেন্টাল হাসপাতালে আজীবনের জন্য রাখি।কিন্তু তুমি তখন বলেছিলে আমার একটাই ছেলে তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।ছেলের মতো ছেলে হলে একটা ভালো।শুধু শুধু এতদিন আমি নিরবকে দোষে এসেছি।
রানু প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে মৌনতা পালন করতে থাকে।কি বলবেন তিনি?তার ভুলের জন্য আজ কত মানুষের কষ্ট পেতে হচ্ছে।সারা তার বাপের বাড়িতে চলে গেছে।তারও ঘৃণায় ভরে এসেছে আহিলের সাথে সংসার করতে।
রাত আটটায় তারা সবাই কক্সবাজারে পৌঁছে।হোটেলে রুম বুকিং করে সবাই নাস্তা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।রাত তখন গভীর।পৌষ মাস হওয়ার সত্ত্বেও আজ তেমন শীত নেই।আকাশে মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে।পৃথিবীতে তার আলোয় ছড়িয়ে দিয়েছে।
মেসেজের শব্দে কুহেলিকার ঘুম ভাঙে যায়।
মেসেজ সিন করে দেখে নিরব পাঠিঁয়েছে।
মেসেজ দেখেই কুহেলিকা মুখ ধুয়ে শাড়ি পড়ে।পুনরায় পূর্বের সাজে নিজেকে সাজায়।
সবশেষে আস্তে আস্তে দরজা খুলে বাহিরে আসে।পূর্ব থেকে রুমের বাহিরে নিরব দাঁড়িয়ে ছিলো।
কুহেলিকা বিরক্ত নিয়ে বলে এত রাতে এইসব পাগলামির মানে কি?আমাকে দিয়ে শাড়ি পড়ানো ,আবার সাজা এইসব কি?
নিরব বিনাদ্বিধায় কুহেলিকার হাত ধরে বলে সমুদ্র বিলাস করবো তাই।সবার সামনে কি সমুদ্র বিলাস করা যাবে।
কুহেলিকা কিছু বলতে চাইলে নিরব তার মুখে হাত রেখে বলে একটাও কথা শুনতে চাই না।
চাঁদের শুভ্র কিরণ মেঘবেঁধ করে সমুদ্রের বুকে পড়েছে।শুভ্র কিরণরেখাতে সমুদ্রকে রোপ্যে সমুদ্র বলে মনে হচ্ছে।রাত গভীর হওয়াই আশপাশে কেউ ছিলো না।অদূরে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে সমুদ্র আবছা দেখা যাচ্ছে।কিন্তু চাঁদের আলোতে সেই আবছা ছায়াটা দূর হয়ে স্পষ্টতার রুপ নিয়েছে।দিনের চেয়ে কম অংশে কম না।
নিরব কুহেলিকার হাত ধরে সমুদ্রের কাছে আসে।বেলী ফুলের খোঁপাটা কুহেলিকার মাথা দেয়।তা দেখে কুহেলিকা বলে তোমার তো এতে এলার্জি।
এলার্জি ছিলো কিন্তু এখন নেই।
পুনরায় নিরব কুহেলিকার হাত ধরে।দু’কদম হেঁটে বলে আজীবন আমার আমার সাথে থেকে আমার জীবনকে বসন্তের মতো করে দিবে?
কুহেলিকা অদূরে বন্যহংসের শব্দ শুনে সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলে থাকবো বলেই আমার হাত ধরাতে আপত্তি তুলেনি।
নিরব কুহেলিকার উত্তর শুনে মৃদু হাসলো।সমুদ্রের তরঙ্গমালা এসে কুহেলিকার পায়ে এসে স্পর্শ করে।দুজন দুজনের হাত ধরে জনমানবহীন সৌকতে হাঁটতে লাগলো।চাঁদ দুজনের ভালোবাসা দেখে লজ্জায় মাঝে মাঝে মেঘের অন্তরালে চলে যাচ্ছে।
সমাপ্ত,,,,,,