সমুদ্র বিলাস পর্ব-০৮

0
1968

#সমুদ্র_বিলাস
#Rahnuba_mim
পার্ট:৮

কুহেলিকা যখন অনুভব করে রডটা তার মাথায় পড়ে নি তখন সে চোখ উন্মুক্ত করে।কিছু তরল প্রদার্থ তার হাতে অনুভব হওয়াই সে পাশে তাকায়।তার ঠিক গা ঘেশে একটা মৃত সাপ পড়ে আছে।এতক্ষন সে ভেবেছিল নিরব তাকে মারবে।নিরব কুহেলিকার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে এত নেগেটিভ চিন্তা করো কেনো?আমি তোমাকে কি কারণে মারবো?সাপটা তোমার একেবারে কাছে থাকায় আমি তড়িঘড়ি করে রড নিয়ে মারি।এদিকে তুমি ভাবছ আমি তোমাকে মারব!তোমাকে নিয়ে আসা আমার ঠিক হয়নি।যদি দিন হতো এতক্ষনে লোকজন একত্রিত হয়ে আমাকে গণপিটুনি দিতো।

কুহেলিকা নিরবের বাক্যাবর্ষণে মৌনতা পালন করতে থাকে।নিরব এদিকে অনবরত কুহেলিকাকে বকেই যাচ্ছে।কুহেলিকা সেদিকে ভ্রক্ষেপ না করে পুনরায় সাপের দিকে দৃষ্টি দেয়।সাপটা আকারে অনেক বড়।বিষাক্ত সাপ বলে মনে হচ্ছে।কুহেলিকা সাপ থেকে প্রাণে বাঁচায় সে আনন্দিত হয়।এটা হর্ষের উল্লাস নয় বড় বৃহত এক সাপের দংশন থেকে মুক্তির উল্লাস।
নিরব তা দেখে উষ্ণ কন্ঠে বলে বসে না থেকে বাইকে উঠো।
কুহেলিকা উঠে বাইকে বসে।নিরব অনুরক্ত হয়ে বলে অংসে হাত রাখ।বাইক ফুল স্পিডে চালাবো।পড়ে গেলে পুনরায় বলে উঠবে নিরব ভাইয়া আমাকে মারতে চাচ্ছে।

কুহেলিকা এবার মুখ খুলে বলে যেভাবে রড নিয়েছ মনে হচ্ছিল তুমি আমাকে মারবে।এমন ধারণা হওয়াটা স্বাভাবিক।এটা নিয়ে বারংবার লজ্জা দিতে হবে না।

আমি লজ্জা দিচ্ছি না বরং বলছি এমন অহেতু ধারণা না করতে।

কুহেলিকা প্রত্যুত্তরে কিছু বলেনি।বাধ্য মেয়ের মতো নিরবের অংসে হাত রাখে।

রাত তার আপন খেজাব সরিয়ে দেয়।আগমণ হয় প্রত্যুষের।সূর্যের রক্তিম আভা দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে।গাছে গাছে পাখির কূজন শুনা যাচ্ছে।কুহেলিকা নিদ্রা থেকে উঠে।সকাল থেকে বাড়িতে মানুষের আনাগোনা হতে থাকে।অকস্মাৎ আদিলের বিয়ে করাই সকাল থেকে একে একে আত্মীয় অনাত্মীয়রা আসতে লাগলো।বউ পক্ষের লোকেরা দুপুরে এসে বিকালের দিকে চলে যায়।

যখন বেলা পুরিয়ে রাতের আগমণ হয় তখন থেকে বাড়িতে এক হঠ্রগোল শুরু হয়।হঠ্রগোলের সূচনা আদিল করে। আদিল সবাইকে বলে কোনো বাসর ঘর যেনো সাজানো না হয়।কারণ সে নিশ্চিত বাসর ঘর সাজিয়ে সবাই তার কাছে অধিক হারে টাকা চাইবে।
কিন্তু বাড়ির মেয়ে ছেলেরা বাসর ঘর সাজাবেই।তারা আদিলের খলচাতুরিতা অতি সহজে বুজতে পারছে।
পরিশেষে সিদ্ধান্ত হয় বাসর ঘর সাজানো হবে।
অদ্রিজা,নিরব, কুহেলিকা,সারা,সিয়াম আর মীরা মিলে বাসর ঘর সাজানো শুরু করে।সাজানোর ফাকে ফাকে তারা দুষ্টুমি করতে থাকে।
সিয়াম পুষ্পের পাপড়িগুলো বিছানায় ছিটিয়ে দিতে দিতে বলে কবে আমার এইদিন আসবে।আহ বিয়ে দেখলে শুধু বিয়ে করতে ইচ্ছা হয়।কেউ যদি রাজি হতো তাহলে আজকেই বিয়েটা করতাম।

অদ্রিজা চোখ রাঙ্গিয়ে বলে কি সব বাজে কথা বলছিস।তকে আমি ভালো ছেলে ভাবতাম আর তুই এত খারাপ তা ভাবেনি।এত পিচ্চি ছেলে হয়ে কি করে এইসব বলছিস।

সিয়ামের বদন দীপ্তি দূর হয়ে যায়,যা এতক্ষন ফড়ফড় করছিল।সাথে লজ্জায় মাথা নিচু করে।তার একদমেই মনে ছিলো না অদ্রিজা এখানে।অদ্রিজা সবার চেয়ে অন্য স্বভাবের।তার কাছে বয়সে ছোট ছেলে মেয়ের মুখে এইসব কথা শুনলে রাগ হয়।
সিয়াম মুখশ্রী অমসৃণ করে বলে আপু এখানে এইসব কথা হবেই তাই দয়া করে তুমি চলে যাও।তুমি যে আনরোমান্টিক জীবনে তোমার কপালে জামাই থাকবে না।
সিয়াম বিরবির করে বললেও কথাগুলো অদ্রিজার কানে না গেলেও সবার কানে যায়।
সিয়ামের শেষের বাক্য শুনে সবাই হুহু করে হেসে উঠে।

নিরব কুহেলিকার কানের কাছে এসে বলে সমুদ্রের মুক্তাগুলি অত্যন্ত দামী।আর এইগুলো গায়ে পড়লে হয়ে যায় দৃষ্টিনন্দন।আর তার চেয়ে দামী হলে তুমি।তাই ভাবছি দামী পণ্যটা আমার কাছে রাখবো।

কুহেলিকা নিরবের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে পণ্য বলতে কাকে উদ্দেশ্য নিছো,আমি না মুক্তা?

নিরব কুহেলিকার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বলে আমার পুষ্পপরীকে বলছি।

কুহেলিকা কিছুক্ষন মৌনতা থেকে বলে তার মানে সেদিনের চিঠি তুমি দিয়েছো?

নিরব হ্রস্ব নিশ্বাস নিয়ে বলে কোন চিঠি আমার মনে পড়ছে না।

তুমি যদি আমাকে চিঠি দিয়ে থাকো সেটা।

চিঠি আমি আমার পুষ্পপরীকে দিয়েছিলাম।সেটা যদি ভুলে তোমার কাছে যায় তাহলে আমি কি বলব।

কুহেলিকা কিছু বলতে চাইলে তখন অদ্রিজা এসে বলে কাজ শেষ তাই তুমি রুহিকে নিয়ে আসো।
কুহেলিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে রুম থেকে চলে যাই।
অল্প সময় ব্যবধানে কুহেলিকা রুহিকে রুমে নিয়ে আসে।সবাই দরজা লক করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।কিন্তু বহু সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও আদিল আসার নাম নেই।
মীরা বিরক্তি নিয়ে বলে আদিল ভাইয়া কৃপন ।টাকা দিবে বলে বাসর ঘরে আসছে না।

সবার যখন ধৈর্যের সিমা অতিক্রম করতে থাকে তখন আদিল এসে বলে তরা কেউ চলে যাসনি।
কুহেলিকা তন্দ্রার ভাব নিয়ে বলে তোমার মতো কৃপন লোক দেখেনি।টাকা দিবে বলে আসছ না।

আদিল পকেটে হাত দিয়ে বলে আরে এই জন্য না আমি টাকা আনতেই গিয়েছি।

সারা হাত বাড়িয়ে বলে টাকা দিয়ে দাও আমরা চলে যাচ্ছি।

আদিল পকেটে বারবার হাত ঢুকিয়ে বলে মানিব্যাগ মনে হয় কোথাও পড়ে গেছে।তরা বরং কালকে টাকাটা নিস।

সিয়াম কিছু বলতে গিয়ে থেমে চাই।কিছু বললে ফের যদি অদ্রিজা কিছু বলে।
অবশেষে আদিল বাধ্য হয়ে সবাইকে টাকা দেয়।

সবাই যে যার রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।কুহেলিকা তার চক্ষু বন্ধ করে ঘুমানোর প্রয়াস চালাতে থাকে।তখনি মেসেজের শব্দে সে চোখ খোলে।
ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা সিন করে।সাবলীল ভাষায় লেখা নক্ষত্রগুলো যখন তার আপন জায়গায় থেকে জ্বলজ্বল করছে,চন্দ্রের বদনের দীপ্তি ধরণীতে বিস্তিত লাভ করছে তখন কেনো তুমি ঘুমের দেশে চলে যাচ্ছো?ব্যালকনিতে এসো তোমার রক্তকরবী মুখশ্রী যে দেখতে চাই।যে মুখশ্রী থেকে ঔজ্জ্বল্যতা প্রকাশ পাবে।

কুহেলিকা মেসেজের বাকি অংশটুকু না পড়ে ফোনটা পাশে রেখে দেয়।ঘুমে যেনো তার দু’চোখ আঠার মতো একত্রে মিশে চাচ্ছে।চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে কুহেলিকা অতল ঘুমে পাড়ি দেয়।

নিরব আরো কয়েকটা মেসেজ করে।কিন্তু কোনোটার থেকে কোনো উত্তর না আসায় সে আশান্বিত হয়ে কতক্ষন বসে থাকে।দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও যখন কোনো উত্তর না আসে তখন সেও ঘুমাতে শুয়ে পড়ে।

শেষ রাত্রিতে আহিল ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়।আজ কাল তার কোনো কাজে মন বসছে না।সবকিছু বিষাদময় মনে হতে লাগলো।জীবন নামক প্যারাময় থেকে সে মুক্তি পেতে চাই।কুহেলিকা আগে তার জন্য পাগল থাকলেও বর্তমানে সে তাকে সহ্য করতে পারছে না।বিরবির করে আহিল বলে একটা ভুলের মাসুল আজীবন দিতে হবে।
কুহি সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমার গল্পের শ্রেষ্ঠাংশে তোমারেই বিচরণ।আমার মিঠা স্বপ্নের আবির তোমাকে দিয়ে রাঙাতে চাই।জনমানবহীন তেপান্তরে খাদ্য জল ছাড়া বাঁচা যেরুপ অসম্ভব তদ্রুপ তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব।তুমি যে নীলকান্তমণি,তাই তোমাকে না পেলে আমার আক্ষেপ কখনো শেষ হবে না।

সারা আহিলকে বিছানায় না পেয়ে ব্যালনিতে আসে।সুখের আতিষ্যে আহিলকে জড়িয়ে ধরতে আসলে সে
আহিলকে বিরবির করতে দেখে তার কাছে আসে।
আহিলের পুরো কথাগুলো সারা শুনতে পায়।
কুহেলিকার প্রতি আহিলের অনুভুতি দেখে সারা ক্ষোধে ও দুঃখে কেঁদে দেয়।আহিল কারো শব্দ শুনে পিছনে তাকায়।সারাকে দেখে বিস্মিতা হয়ে বলে তুমি এখানে কেনো?

সারা তার অশ্রু গোপন করে বলে বিছানায় তোমাকে পায়নি তাই আসলাম।

আহিল সারার পার্শ কাটিয়ে আসতে আসতে বলে ঘুম আসছিল না তাই ব্যালকনিতে এসেছি।

সারা আহিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে আমাকে ভালো না লাগলে তুমি আমাকে ডিফোর্স দিতে পারো।

আহিল তার নেত্রপল্লব সারার দিকে নিক্ষেপ করে।
মুখে ক্ষনিকের জন্য আনন্দের আবাস থাকলেও সাথে সাথে তা স্তিমিত হয়ে যায়।ছোট করে বলে আচ্ছা।
সারা আহিলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অশ্রু বর্ষণ করতে থাকে।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে