#সমুদ্র_বিলাস
#Rahnuba_mim
পার্ট:৭
শীতের রশ্মিচ্ছটার দিকে তাকিয়ে কুহেলিকা ভাবতে লাগলো।নিরবকে অকারণে দোষা ঠিক হয়নি।আজ প্রত্যুষে নিরব এক জীর্ণ শীর্ণ আকৃতি ছেলেকে ধরে আনে।সারারাত ধরে নিরব এইছেলেকে খুজেছিলো।নিরব তাদেরকে বিস্তারিত কিছু বলেনি,শুধু ছেলেটি এসে কুহেলিকার কাছে ক্ষমা চাই।ছেলেটা দেখতে রোগা।মুখে শ্মশ্রু,চুলগুলো এলোমেলো।ছেলেটি এসেই প্রথমে কুহেলিকার পায়ে পড়ে।কান্না ভেজা কন্ঠে বলে আপা আমাকে মাপ করেন।আমি জীবনে আপনার ক্ষতি করবো না।
ছেলেটি আরো বলে সেদিন কুহেলিকাকে অপহরণ সেই করেছে।এক্সিডেন্স করে মারা এইসব তার পরিকল্পনা।ছেলেটা কেন এমন করেছে সেই সম্পর্কে কিছুই বলেনি।সবাই ছেলেটার কথা বিশ্বাস করলেও ফয়জুল করেনা।তিনি একদৃষ্টিতে নিরবের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
কুহেলিকা তারপর থেকে ঠিক করে নিরবের কাছ থেকে ক্ষমা চাইবে।
পড়ন্ত বিকালে নিরব চিলের ছাদে বসে বই পড়তে থাকে।তখনি এক মেয়েলী কন্ঠস্বর তার পিছন থেকে ভেসে আসে।নিরব পিছনে তাকিয়ে দেখে কুহেলিকা।
কুহেলিকা নিরবের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে সরি।
নিরব ভ্রুকুটি করে বলে কেনো?
কুহেলিকা মনে মনে কিছু বাক্যামালা সাজিয়ে বলে তোমাকে অকারণে দোষার জন্য।
সমস্যা না ,কিন্তু তুমি কি করে নিশ্চিত ছিলে গাড়ির ছেলেটা আমি ছিলাম?
তোমার মতো হুবহু দেখলাম তাই আমি নিশ্চিত ছিলাম তুমি।
তোমার চোখের জ্যােতি কম তাই ডাক্তার দেখাতে হবে।আর একটু হলে আদিল ভাইয়া আমাকে জেলে দিতো।
কুহেলিকা মৌনতা পালন করতে থাকে।হাসপাতালে সে যতটা নিশ্চিত ছিলো এখন এতটা নিশ্চিত হতে পারছে না।কেন জেনো সে সবকিছু ভুলে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে তার মস্তিষ্কে থেকে সব মুছে দেওয়া হয়েছে।গাড়ির ছেলে নিরব ছিলো না অন্য ব্যক্তি তা প্রার্থক্য করা কুহেলিকার জন্য কষ্ট কর হচ্ছে।হাসপাতে সহসাই মনে হলে এখন কিছুই তার তেমন মনে নেই।কুহেলিকার নিয়ে হয়তো কেউ বড় ষড়যন্ত্র করছে।
আদিলের জন্য মেয়ে দেখার জন্য আজ সকাল থেকে সবাই রেডি হচ্ছে।আদিলের বাবার কথা হলো মেয়ে পছন্দ হলে আজকেই বিয়ে করিয়ে আনবে।তাই সবাইকে যেতে হবে।অহি অদ্রিজা শাড়ি পরাই কুহেলিকাও শাড়ি পরিধান করে।আর্দ্র চুলগুলো শুষ্ক করে কুহেলিকা খোঁপা করে।মাথায় বেলী ফুলের খোঁপা লাগায়।আয়নাতে নিজেকে দেখে নিচে আসে।সবাই তড়িঘড়ি করে গাড়িতে বসে।লোকসংখ্যা বেশি হওয়াই কুহেলিকার আর অহির জায়গা হয়নি।অহিকে অদ্রিজা কোলে নিয়ে নেয়।কুহেলিকা তখন বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।সারা কুহেলিকার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে কুহি তুমি নিরবের সাথে যাও।
ফয়জুল তা শুনে মুখোশ্রী মলিন করে বলে না না কুহেলিকা গাড়ি দিয়েই যাবে।
বাবা কুহেলিকার এখানে জায়গা হবে না।
কুহেলিকা মা বলেন কুহি বরং নিরবের সাথে যাক।নিরব তো বাইক দিয়ে যাচ্ছে।
আনজুমার কথার উপর ফয়জুল কিছু বলেননি।তার অন্তঃস্তরে অজানা ভয়ের জাল বুনতে থাকে।তার বারংবার মনে হচ্ছে কুহিকে নিরবের সাথে দেওয়াটা ঠিক হবে না।
নিরব কুহেলিকার সামনে বাইক এনে বলে তাড়াতাড়ি উঠো।
কুহেলিকা তৎক্ষণাৎ উঠে বসে।নিরব তার বাইকের গতি ঠিক রেখে বাইক চালাতে লাগলো।নিরব বাইকের আয়নাই গভীর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো।কুহেলিকার ছোট ছোট চুলগুলো তার কপালে এসে পড়ে আছে।দমকা বাতাসে মাঝে মাঝে চুলগুলো নৃত করে উঠছে।বেলী ফুল থেকে মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ প্রকাশ পাচ্ছে।বেলী ফুল তার আপন জায়গায় থেকে সৌন্দর্য ও মনোহারিতা প্রকাশ করছে।কুহেলিকার কটাক্ষ অতি স্নিগ্ধ যেনো বসন্তের মর্মরিত কম্পিত পাতার ন্যায়।নিরব সেদিকে তাকিয়ে নিজের অন্তকরণ দ্বারা কুহেলিকাকে একান্ত আপন করে নেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে।
বাইক হঠাৎ ঝাঁকুটি খাওয়াই কুহেলিকা তার হাত নিরবের ঘাড়ে রাখে।কুহেলিকার স্নিগ্ধকোমল স্পর্শে নিরব শরীরে শীতল বাতাস বইলো।নিরব বিবর্ণমুখে বলে কুহেলিকা এখন যদি আমি তোমাকে মেরে ফেলি।
হঠাৎ নিরবের এমন উদ্ভ্রান্ত কথা শুনে কুহেলিকা বলে মারবে কেনো?
এইযে বিনা কারণে সবার সামনে আমাকে দোষী বানালে।এখন ভাবছি অপরাধটা করেই ফেলবো।
নিরবের কন্ঠে তখন কোনো হাস্যজ্জ্বল ছিলো না।মুখ দেখেও মনে হচ্ছে না সে রসিকতা করছে।মুখে তার কঠিনতার ছাপ।মনে হচ্ছে সে সত্যি সত্যিই বলছে।কুহেলিকার ভয়ে তার কন্ঠনালি শুষ্ক হয়ে আসতে লাগলো।ভয়ার্ত কন্ঠে বলে শুধু শুধু মজা করছো কেনো?
নিরব অধরে হাসি নিয়ে বলে মজা করবো কেনো?যদি তোমাকে মেরেই ফেলি তখন কেমন হবে?
কুহেলিকা ভয়ে কেঁদে উঠে।আতঙ্কে ও ভয়ে ক্রন্দনের নদে কুহেলিকা যেনো ভেসে যাচ্ছে।নিরব তা প্রত্যক্ষ করে বলে আরে কাঁদছো কেনো?আমি তো মজা করছি।এতবড় হয়েও মজা কি বুজো না।
কুহেলিকা অশ্রু মুছে বলে তুমি যেভাবে বলছো মনে হচ্ছে সিরিয়াসলি তুমি আমাকে মেরে ফেলবে।
মারবো কেনো ভালোবাসার মানুষকে কি মারা যায়।
কিছু বললে কি?
নিরব মাথা নেড়ে না বলে।
নিরব পিছনে তাকিয়ে বলে তোমার মাথা থেকে বেলী ফুলটা খোল।আমার এতে এলার্জি।
কুহেলিকা তৎক্ষণাৎ বেলী ফুলের খোঁপা খুলে ফেলে।আধা ঘন্টা পরে নিরব সঠিক গন্তব্য এসে পৌঁছে।সবাই অনেক আগেই এসে পড়েছে।ফয়জুল তাদেরকে ঠিক মতো আসতে পারায় শান্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।বউ সাজে রুহি ছিলো।রুহি আদিলের গার্লফ্রেন্ড।রুহিকে দেখে সবার পছন্দ হয়।
সন্ধ্যায় রুহিকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়েরা আসে।বউ সাজানো রুমে অনেক হঠ্রগোল হচ্ছে দেখে কুহেলিকা বাড়িটা ঘুড়ে দেখতে থাকে।
নিরব পিছন থেকে বলে উঠে শাড়ি না পরতে পারলে শাড়ি পর কেনো?
কুহেলিকা মাথা ঘুরে বলে কে বলছে পারিনা।
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো কিভাবে শাড়ি পরেছো।
দেখবো কি করে?নিজেকে কি দেখা যায়।
নিরব রাগান্বিত হয়ে কুহেলিকার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চলতে থাকে।একটা রুমের কাছে এসে বলে এইরুমে আয়না আছে যাও নিজেকে দেখে আসো।
কুহেলিকা দু’কদম গিয়ে ফিরে এসে বলে রুমে অন্ধকার আমার ভয় করছে।
নিরব প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে কুহেলিকার হস্ত পুনরায় ধরে রুমে ঢুকে।আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলে দেখো কিভাবে পরেছো।তোমার নিউ শাড়ি পরা দেখে ছেলেগুলো তাকিয়ে ছিলো।
কুহেলিকা আয়নাতে নিজেকে দেখে।তার পেটের অংশ অল্প দেখা যাচ্ছে।তখন কুহেলিকা লজ্জায় মাথা অবনত করে ফেলে।
নিরব গম্ভির হয়ে বলে লজ্জা পেতে হবে না।নেক্সট টাইমে শাড়ি পরলে এগুলোর দিকে খেয়াল রাখবে।
নিরব রুম থেকে চলে যাওয়া জন্য পা বাড়ালে ফের দাঁড়িয়ে বলে তোমার চেইনটাও অল্প খোলে আছে,অল্প না অধিকাংশ অংশ খোলা।
আরেক দফায় কুহেলিকা লজ্জা পায়।এজন্য সে শাড়ি পরতে চাইনি।কুহেলিকা তার হস্ত পিছনে নিয়ে চেইন লাগানোর প্রয়াস করতে থাকে।বহু চেষ্টার পরও সে সফল হয়নি।নিরবের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বলে লাগাতে পারছি না।
নিরব বিরক্তে ভ্রু কুচঁকে কুহেলিকার চেইন বিনা স্পর্শে লাগিয়ে দেয়।বিরবির করে বলে যত তপস্বিনীর মতো কাজ।
নিরব চেইন লাগানো শেষ করে রুম থেকে চলে আসে।আহিল তার ব্যবসার কাজ শেষ করে সোজা রুহিদের বাসায় আসে।নিরবের পরপরেই কুহেলিকাকে বের হতে দেখে সে রুষ্ট হয়।যখন কুহেলিকা তার পার্শ দিয়ে যাচ্ছিল তখন আহিল বলে উঠে নিরব আর তুমি এক সাথে কি করছিলে।
কুহেলিকা কুম্ভলকবৃত্তি করে বলে নিরব আর তুমি এক সাথে কি করছিলে?
আহিল কুহেলিকার এমন আচরণ দেখে কুহেলিকার হাত ধরে বলে উত্তর না দিয়ে কুম্ভলক করছো কেনো?সোজাভাবে উত্তর দিবে ,না আমি অন্য ব্যবস্হা করবো।
কুহেলিকা তার হাত টেনে নিয়ে বলে আমি উত্তর দিতে বাধ্য নয়।আর কোন অধিকারে আপনি আমার হাত ধরলেন?
কুহেলিকা আমি তোমাকে ভালোবাসি।সেই ভালোবাসার অধিকারে ধরেছি।
কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।কথাটা বলে কুহেলিকা আহিলের পার্শ কাটিয়ে চলে আসে।
কাজী এসে রাত দশটায় বিয়ে পড়িয়ে নেয়।বিয়ের কার্য রাত এগারোটায় শেষ হয়।
পূর্বের ন্যায় কুহেলিকা নিরবের সাথে বাইকে করে আসতে থাকে।রাত গভীর হওয়াই রাস্তাঘাট শুনসান।চাঁদের আলোক রশ্মি চারপাশে তার ঔজ্জ্বল্যতা প্রকাশ করছে।হিম শীতল বাতাসে কুহেলিকা কাঁপতে থাকে।নিরব ব্যাপারটা বুজতে পেরে বাইক থামায়।কুহেলিকা প্রশ্নোচক্ষু বলে বাইক থামালে কেনো?
নিরব তার জেকেট কুহেলিকার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে যেভাবে কাঁপছো একটু হলে কাঁপতে কাঁপতে বাইক থেকে পড়ে যেতে।
তোমার শীত লাগবে না?
লাগবে কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি না।আমি চাই না শীতল বাতাস কারো চন্দ্রালোকিত শরীরে তার শীতলতায় আবদ্ধ করে নিক।
তুমি কি আমাকে বললে।
নিরব প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে মৌনতা পালন করে বাইক চালানো শুরু করে।কিছু দূর যাওয়ার পর বাইক কিছুতে ধাক্কা খাওয়া কুহেলিকা পড়ে যায়।নিরব বাইক থামিয়ে কুহেলিকার দিকে আসে।কুহেলিকা তার হস্ত বাড়িয়ে বলে আমাকে উঠাও আমি উঠতে পারছি না।
নিরবের মুখে হিংস্রতার চাপ।রাগে তার মুখ কঠিনতার রুপ নিয়েছে।সে রুষ্ট ও ক্ষুদ্ধে কুহেলিকা নিকটে দাঁড়ায়।কুহেলিকার হাত না ধরেই দাঁড়িয়ে রইলো।চাঁদের আলোতে ভালোভাবে বুজা যাচ্ছে তার চক্ষু থেকে রাগের স্ফুলিঙ্গ বেড় হচ্ছে।পাশে থাকা রডের মাথা নিরব দৃঢ়ভাবে মুষ্টি বদ্ধ করে উঁচু করে তোলে।কুহেলিকা নিরবের এমন কাজ দেখে ভয় পেয়ে যায়।নিরব হঠাৎ রড তুললো কেনো?কুহেলিকা ভয়ে বলে নিরব ভাইয়া এটা কি করছো।আমাকে মেরে ফেলবে কি?
নিরব নিশ্চুপ থেকে রডটা কুহেলিকার দিকে বাড়াতে থাকে।কুহেলিকা ভয়ে চিৎকার করে উঠে।শুনসান রাস্তায় কুহেলিকার চিৎকার বহু দূর পর্যন্ত যায়।
চলবে,,,,,