#সমুদ্র_বিলাস
#Rahnuba_mim
পার্ট:৬
কুহেলিকার বেডে সবাই তাকে বেষ্টন করে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে কখন কুহেলিকার সেন্স ফিরবে।এক্সিডেন্টে কুহেলিকা অনেক আহত হয়েছে।।ডাক্তাররা বলেছিল তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
কিন্তু আল্লাহর ফজলে কুহেলিকা মৃত্যু থেকে পুনরায় বেঁচে এসেছে।
কুহেলিকা তার আহত নেত্রপল্লব ধীরে ধীরে খুলে।
কুহেলিকার সেন্স ফিরছে দেখে সবার অধরে হাসি ফুটে উঠে।কুহেলিকা তার নেত্রযুগল সম্পূর্ণ খুলে ।সামনে নিরবকে দেখে আতঙ্কে তার মার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে মা আমাকে বাঁচাও।আমাকে নিরব ভাইয়া মেরে ফেলবে।
কুহেলিকার কথা শুনে সবাই অবাকে শেষ প্রান্তরে পৌঁছে।আনজুমা কুহেলিকার মাথায় হস্ত রেখে বলে কি সব বলছিস,নিরব তকে মারবে কেনো?নিরব তর ভাই হয়।
কুহেলিকা ভয়ে কাঁপতে থাকে।তার অসুস্হ শরীর নিয়ে উঠে বসে।ভয়ে আনজুমাকে ঝাঁপটে জড়িয়ে ধরে বলে মা নিরব ভাইয়াকে যেতে বলো।ভাইয়া আমাকে মেরে ফেলবে।
কুহেলিকার কথা শুনে সবাই একে অপরের মুখে দৃষ্টি দেয়।নিরব কুহেলিকার কাছে এসে বলে আমি তোমাকে মারব কেনো?
কুহেলিকা মাথা তুলে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে ভাইয়া প্লিজ নিরব ভাইয়াকে যেতে বলো।
কুহেলিকার পাগলামি দেখে সবাই নিরবকে কেবিনের বাহিরে যেতে বলে।আদিল কুহেলিকার কাছে বসে বলে কি হয়েছে বলো তো কুহি।নির্ভয়ে আমাকে সবটা বলো।
কুহেলিকা আনজুমাকে ছেড়ে দপ করে শুয়ে পড়ে।ডান হস্ত মাথায় রাখে। মাথার ব্যথায় কুহেলিকা চটপট করতে থাকে।তবুও নিজেকে ঠিক রেখে কুহেলিকা ওষ্ট ভিজিয়ে বলে আমার এক্সিডেন্ট যে গাড়িতে হয়েছে সেখানে ড্রাইবিং সিটে আমি নিরব ভাইয়াকে দেখেছি।নিরব ভাইয়াও আমাকে দেখেছে।কিন্তু তিনি ইচ্ছা করেই আমাকে এক্সিডেন্ট করে।
এতক্ষণ দাঁড়িয়ে সবটা রানু ও ফয়জুল শুনছিলো।রানু বলে কুহি তর হয়তো কোথাও ভুল হয়েছে।নিরব তকে মারবে কেনো?
ফয়জুল রানুর হাতে টিপ দিয়ে চুপ থাকতে বলে।ফয়জুলের মুখে মলিনতা দেখা যাচ্ছে।সেই সাথে মনে হচ্ছে তিনি ভয়ে আছেন।ফয়জুল কুহেলিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে মা আরো কিছু কি বলবে?
কুহেলিকা মৌনতা পালন করতে থাকে।মনে হচ্ছে সে কিছু মনে করতে চাইছে।কুহেলিকা তার বন্ধ নেত্রযুগল খুলে বলে মনে পড়েছে।হুম সেদিন নিরব ভাইয়া আমাকে কিডন্যাপ করতে চাইছিলো।কিন্তু পরে তিনি ভালো মানুষ সেজে আমার সামনে আসে।
রানু ফের কিছু বলতে যাই।কিন্তু ফয়জুল দেয় না।তিনি আরো কিছু কুহেলিকার কাছ থেকে জানতে চাই।কুহেলিকা কান্না ভেজা কন্ঠে বলে নিরব ভাইয়া আমাকে মেরে ফেলবে।
আদিল কুহেলিকার কাছ থেকে বিস্তারিত সব শুনে নিরবের কাছে আসে।রক্তবর্ণচক্ষু নিরবের গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে কুহি তর কি ক্ষতি করেছে যার জন্য তাকে মারতে যাচ্ছিস।
নিরব তার হাত গালে রেখে বলে কি বলছো এইসব।আমি কুহেলিকাকে মারতে যাবো কেনো?
আদিল নিরবের শার্ট চেপে ধরে বলে খবরদান মিথ্যা বলবি না।
আদিল পুনরায় নিরবের গায়ে হাত দিতে চাইলে ফয়জুল তাকে থামিয়ে বলে আদিল শুধু শুধু তুমি নিরবকে মারছো কেনো।
আদিল রাগান্বিত কন্ঠে বলে নিরবকে আমি অকারণে মারছি না।নিরব কেনো কুহিকে মারবে।কুহি কি করছে যার জন্য নিরব তাকে মারতে উঠে বসে লেগেছে।
আদিল তুমি অনেক কিছু জানো না যার জন্য এমন করছো।তুমি শান্ত হও আমি বিস্তারিত বলছি।
আদিল কিছু শুনার প্রয়োজন মনে না করে বলে নিরব তকে আমি দেখে নিবো।
দিগন্তে রক্তিম লালিমার ছড়াছড়ি।পাখিগুলো ডানা ঝাঁপটিয়ে বাসায় রাত্রি যাপনের জন্য চলে আসছে।গ্রাম বাংলায় সন্ধ্যাবধূ ঘরের দ্বার বন্ধ করে দেয়।কুহেলিকা বেডে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।তার আঘাতে জর্জরিত শরীর ব্যথা নামক মহাবিষাদময় বস্তু থেকে বাচঁতে ঘুমে আশ্রয় নিয়েছে।কিছু ভাঙ্গার শব্দ শুনে কুহেলিকার ঘুম ভেঙ্গে যায়।জানালার দিকে দৃষ্টি দিলে কোনো পুরুষের ছায়া মূর্তি দেখতে পায়।ছায়া মূর্তি দেখে কুহেলিকার অন্তঃস্তর কেঁপে উঠে।আস্তে আস্তে ছায়া তার নিরটে আসে।কুহেলিকা আবছা আলোতে দেখতে পায় ছায়াটা নিরবের।কেবিনে অন্ধকারে ঘুটঘুটে।কুহেলিকা কিছু বলতে চাইলে নিরব কুহেলিকার বাহু চেপে ধরে।নিরব তার নখের অংশ দিয়ে কুহেলিকা ঘাড়ে জুড়ে আচর দেয়।সাথে সাথে কুহেলিকা আহ শব্দ করে।তার মনে হতে তাকে নিরব আজ তাকে মেরেই ফেলবে।তাকে মারার জন্যে হয়তো সবার আড়ালে আসছে।কুহেলিকার অন্তঃস্তর থেকে ভয়ার্তের নিঃশ্বাস পড়ে।তার সর্বশরীর কাপঁতে থাকে।অশ্রু ভেজা কন্ঠে কুহেলিকা বলে নিরব ভাইয়া প্লিজ আমাকে মারবে না।আমি তোমার কি করেছি?
নিরবের ঠোঁটে শয়তানের হাসি।তার মুখে হিংস্রতার চাপ।দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে কুহেলিকাকে মেরে সে শান্তি পাবে।কুহেলিকা ভয়ে চিৎকার করে উঠে।সাথে সাথে কুহেলিকার ঘুম ভেঙ্গে যায়।স্বপ্ন ভেবে কুহেলিকা হাপ ছেড়ে বাঁচে।মনে মনে বলে নিরব ভাইয়া আমাকে স্বপ্নেও মারতে আসে।
কুহেলিকার দৃষ্টি তখন জানালায় যায়।স্বপ্নের মতো সে জানালার কাছে কারো ছায়া দেখতে পায়।ছায়াটা ধীরে ধীরে তার দিকে আসতে থাকে।স্বপ্নের মতো হতে দেখে কুহেলিকা তার সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠে।
দরজা খুলে হুমরি খেয়ে আদিল ও ফয়জুল প্রবেশ করে।ছায়া মূর্তিটা জানালা দিয়ে লম্প দিয়ে পালিয়ে যাই।আদিল বলে কুহি কি হয়েছে চিৎকার করলি কেনো?
কুহেলিকা জানালার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলে নিরব ভাইয়া পুনরায় আমাকে মারতে আসছে।
আদিল বলে নিরব বাসায়,তাহলে সে এখানে কি করে আসবে।
ফয়জুল বাসায় ফোন দেয়।রানু ফোন ধরলে তিনি বলেন নিরব কোথায়?
কোন বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে , কেনো বলতো?
না কিছু না বলে ফয়জুল ফোন রেখে দেয়।আদিল ফয়জুলের দিকে তাকায়।ফয়জুল বলে আদিল তুমি এখানে থাকো আমি নিরবের কাছে যাবো।কি শুরু হয়ছে এইসব।
তার আগে কাকা নিরবকে ফোন দেন।
ফয়জুল নিরবের নাম্বারে ফোন করে।তখন তার ফোন বন্ধ জানায়।আদিল সন্দেহ আরো বাড়তে থাকে।
এই মুহূর্তে সে নিরবকে পেলে সে হত্যা করতো।কুহেলিকা তার কি ক্ষতি করছে যার জন্য নিরব তাকে মারতে চাইছে।ফয়জুলের মুখে ভয়ের মাত্রা আরো বাড়ে।রাতে আদিল কুহেলিকাকে বাসায় নিয়ে আসে।তার কেনো যেনো মনে হচ্ছে নিরব ফের কুহেলিকাকে মারতে আসবে।রাতে নিরব বাসায় আসে না।সাথে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যাই।
আহিল প্রায় দুই দিন পর বাসায় আসে।এতদিন সে ব্যবসার সূত্রে ঢাকার বাহিরে ছিলো।বাসায় ঢুকে সে কুহেলিকার এক্সিডেন্টের খবর শুনে।বিলম্ব না করে সে কুহেলিকাকে দেখতে আসে।
আদিলের কথা শুনে কুহেলিকা খিলখিল করে হেসে বলে ভাইয়া পরে তোমার গার্লফ্রেন্ড কি করছিলো?
আদিল হাস্যজ্জ্বল মুখে বলে কি আর করবে সরাসরি আমার কাছে এসে বলে আমাকে মাপ করে দাও আমি জীবনে এমন করবো না।
যাই বলো ভাইয়া রুহি আপু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।তাই বলছি বিয়েটা করে নাও।বেচারি মেয়েকে আর কত ঘুরাবে।
কই ঘুরালাম?আমি রুহিকে ভালোবাসি সেটা পিচ্চি রুহি বুজেই না।বরং উল্টো সে মনে আরে আমি তাকে ভালোবাসি না।
আর মেয়েটার সাথে এমন করো না।তাকে ভালোবাসবে খুব ভালোবাসবে।
আহিল রুমে ঢুকার সময় কুহেলিকার মুখে ভালোবাসার শব্দ শুনে মনে করে কুহেলিকা হয়তো আদিলকে ভালোবাসে।আহিল কুহেলিকার রুম থেকে ফিরে যাতে চাইলে আদিল তাকে দেখে ফেলে।আহিলকে চলে যেতে দেখে আদিল বলে আহিল চলে যাচ্ছো কেনো?
আহিল ফিরে আমতা আমতা করতে থাকে।কি বলবে বুজতে পারছে না।আহিল প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য নিজেকে ধারস্ত করে বলে কুহি কেমন আছো?
কুহেলিকা বিরক্তের লেশ নিয়ে বলে হুম ভালো।
আহিল কি বলবে বুজতে পারছে না।তাই সে ফের বলে আমি আসি।মাত্রই বাসায় আসলাম ।
আদিল মৃদু হেসে বলে তাড়াতাড়ি যাও।সারা মনে হয় কেঁদে শেষ।আহিল বিনিময়ে হেসে চলে যায়।
রুমে ঢুকে দেখে সারা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।সে আহিলকে অনেক কিছুই বলার জন্য গুছিয়ে রেখেছে।এই কয়দিন শুধু আহিল আসার অপেক্ষা করেছে।মাঝে মাঝে সারার মনে আহিল নাম ব্যক্তির প্রতি ঘৃণা হয়।তার পিছনে অবশ্যয় এক কাহিনী আছে।
আহিল সারাকে উদ্দেশ্য করে রাশভারী কন্ঠে বলে এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আমার জন্য কফি নিয়ে আসো।আসার পর থেকে দেখছি তুমি এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো।
সারা আহিলের ডাকে সারা না দিয়ে পূর্বের ন্যায় অব্যক্ত যন্ত্রণায় দাঁড়িয়ে রইলো।দিনের পর দিন তার মনে বিশাল অভিমান জমা হয়েছে।আহিল সারা কোনো হেলদুল না দেখে বলে কি বলছি কানে যায় না।দিন দিন তুমি ঘাড় ত্যাড়া হয়ে যাচ্ছো।আমার কথা উল্টো চলে কি শান্তি পাও।
সারা পূর্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে বলে শুনলাম তোমার নাকি পুরাতন প্রেমে খুচা দিয়েছে।
আহিল হালকা অবাক হয়ে বলে তোমাকে এইসব কে বলছে ,মানে হলো কি বলছো?
সারা আহিলের বাকরোধ জনিত অক্ষমতা দেখে মৃদু হাসে।তার সন্দেহ ঠিক।আহিল সত্যি সত্যি কুহেলিকাকে ভালোবাসে।
সারার চুখের কার্নিশে অশ্রু এসে ভির করে।তৎক্ষনাৎ অশ্রু মুছে আহিলের কাছে আসে।তাচ্ছিল্য করে বলে ছি আমার ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে ।কি করে আমার সাথে তুমি এমন করলে।কুহিকে যখন ভালোবাসো তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলে?
আহিল মৌনতা পালন করতে থাকে।সারা এইসব জানলো কি করে?
আহিলের মৌনতা দেখে সারা বলে উত্তর দিচ্ছো না কেনো?
হ্যাঁ আমি কুহিকে ভালোবাসি।তোমাকে আমার সহ্য হয় না।তুমি চলে গিয়ে আমাকে মুক্তি দাও।ঘৃণা তোমার কি বরং তোমার সাথে সংসার করতে আমার ঘৃণা হয়।
সারা অশ্রু চক্ষু বলে ছয় বছরের প্রেমকে তুমি কুহিকে দেখেই ভুলে গেলে।
তোমার ন্যাকা কান্না অন্য কাউকে দেখাও দয়া করে এইমুহূর্তে আমার সামনে থেকে যাও।
পরেরদিন প্রত্যুষে নিরব বাসায় আসে।বাসার সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিলো।কিচেনে মনিরাকে নিয়ে আনজুম রান্না করছে।নিরব সোজা নিজের রুমে চলে যায়।কুহেলিকাকে একপলক দেখার জন্য তার মন উৎকন্ঠিত হয়ে উঠে।উঠে দাঁড়িয়ে পুনরায় বসে পড়ে।কুহেলিকা তাকে দেখে ভয় পাবে ভেবে নিজের অন্তঃস্তর থেকে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে।কুহেলিকাকে সে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু সে চাইনা তাকে দেখে কুহেলিকা ভয় পেয়ে যাক।তবুও সে নিজের বিক্ষু বক্ষকে ও চক্ষুকে শান্ত করার জন্য কুহেলিকার রুমে যাই।কুহেলিকার দরজা খুলা ছিলো।ধীরে পায়ে কুহেলিকার কাছে আসে।কুহেলিকার স্নিগ্ধজ্জ্বল মুখশ্রী দেখে কুহেলিকার কপালে তার ওষ্ট স্পর্শ করাই।কারো স্পর্শে কুহেলিকা নড়াচড়া করে।নিরব কুহেলিকাকে জাগ্রত হতে দেখে রুম থেকে চলে আসে।
চলবে,,,,,