#সমাপ্তির_পূর্ণতা
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৮ (ধামাকা)
অদ্রি বিভানদের বাড়ি থেকে চলে এসেছে একমাস হলো। প্রথম দুই দিন অদ্রি একটা হোটেলে ছিল। এরপর অফিসের ম্যানেজারকে রিকোয়েস্ট করে একটা অফিসার্স কোয়াটার নিয়েছে। অদ্রি যেহেতু প্রথমে অফিসার পদে ছিল এবং পরে রিসার্চ সেকশনে ঢুকেছে। তাই ম্যানেজার অদ্রিকে রিকুয়েস্টের ভিত্তিতে অফিসার্স কোয়াটার দিয়েছে।
এদিকে শিমু যেনো বিভানের পেছোনে লেগেই আছে। বিভান রুমে থাকলে হুটহাট বিভানের রুমে ঢুকে পড়ে শিমু। বিভান একদিন রুম তালা দিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিল তখন বাড়ি ফিরে নিজের রুমে যেয়ে দেখে ড্রেসিং টেবিল গোছানো, বিছানার চাদর পাল্টানো, তার আর অদ্রির বাঁধানো ছবিটাও নেই।
এগুলো দেখে বিভান অনেক ক্ষেপে যায়। সে তার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–মা, আমার রুমে কে ঢুকেছিল?
বিভানের মা তখন হাদিসের বই পড়ছিল। ছেলের কথা শুনে সে জবাব দেয়,
–কে আবার! শিমু। তোর ঘরটার অবস্থা দেখেছিস? ওইটা দেখে মনে হচ্ছিল কোন মানুষ থাকে? তাই শিমু আমাকে বলল ঘরটা গুছিয়ে দিবে তাই গুছিয়ে দিল।
বিভান বুঝলো তার মাকে এখন কিছু বলে লাভ নেই। তাই তার বড় ভাই ও ভাবীর ঘরের দিকে গেল কারন তার বড় ভাই এখন ঘরেই আছে। ভাইয়ের ঘরের দরজায় নক করার পর ইভান বিভানকে ভিতরে আসতে বলে। বিভান ভিতরে এসে বলে,
— দেখো ভাইয়া তোমার শালীকাকে তুমি বলে দাও, সে যেন আমার রুমে আমার পারমিশন ছাড়া না ঢোকে। তাছাড়া আমি তোমার শালিকাকে আমার রুমে ঢোকার পারমিশন কখনো দিবোনা।
ইভান বিভানকে আশ্বস্ত করে বলে, সে শিমুকে বলে দিবে। এরইমধ্যে রিমু মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
–কয়েকদিন পর তো আমার বোন তোমার ঘরে এমনি ঢুকবে, তাহলে এখন ঢুকলে সমস্যা কোথায়?
রিমুর কথায় বিভান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
–কে ঢুকবে আর কে ঢুকবে না, সেটা সময় বলে দিবে ভাবি।
বিভান নিজের রুমে চলে যায়। আর ইভান যায় শিমুকে নিষেধ করতে যেনো বিভানের রুমে না যায়। দুলাভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে শিমু কিছুটা অপমানিত হয় তাই চুপ করে শুনে যায়। রিমু তো এখন সাতমাসের প্রেগনেন্ট তাই ইভান রিমুকে কিছু বলছেনা।
পরেরদিন সকালে শিমুর ফোনে একটা কল আসে। কলকৃত ব্যক্তি শিমুকে বলে,
–মিস শিমু, আপনি যাকে বিয়ে করার জন্য এতো এতো ষড়যন্ত্র করছেন আদৌ সে কি কখনো বাবা হতে পারবে! আপনি কি শিওর যে সমস্যাটা শুধু মিসেস অদ্রির ছিলো! সমস্যাটা তো মিস্টার বিভানেরো থাকতে পারে!
শিমু প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় না ফোনের অপর পাশে থাকা লোকটার কথা। হ্যাঁ, ফোনের অপর পাশে অদ্রি কথা বলছে না! কথা বলছে অদ্রির কলিগ জাবির। অদ্রি তাকে এই একমাসে সব বলেছে। জাবির প্রথমে ড্রাগটা বিভানকে দেওয়া হয়েছে শুনে ভয় পেয়েছিলো তবে অদ্রির পুরো কাহিনী শুনে সে অদ্রিকে বড় ভাই হিসেবে ছোট বোনকে সাহায্য করবে। তাই জাবির শিমুকে প্রাইভেট নাম্বার দিয়ে ফোন করে।
শিমু প্রতিউত্তরে বলে,
— আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে যে আপনি এসব কথা বার্তা বলছেন বিভানের সম্পর্কে? এমন তো না যে আপনাকে অদ্রি ফোন দিতে বলেছে? এখন যাতে আমি বিভানকে বিয়ে না করি তাই অদ্রি এই চাল চালছে তাই না?
জাবির আগে থেকেই জানতো শিমু এই ধরনের কথা বলতে পারে। তাই সে একটুও না ঘাবড়িয়ে হেসে দেয় উচ্চস্বরে। এরপর বলে,
–না মিস! আপনার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে বিভানকে যেকোনো আপনার ইচ্ছামত হসপিটালে নিয়ে টেস্ট করিয়ে দেখতে পারেন। আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলছি মিসেস অদ্রিকে আমি চিনিনা। সাথে আমি এটাও জানি, আপনারা টাকা-পয়সার সম্পত্তির জন্য এসব গেম খেলছেন। কিন্তু মনে রাখবেন টাকা-পয়সার সম্পত্তি আপনার বোনের ছেলের হবে আপনার না। কারণ বিভানের তো বাচ্চা হবে না। আপনার বোনকে যেহেতু সম্পত্তি দিবেন, তাহলে কষ্ট করে আপনি আপনার জীবনটা কেন নষ্ট করবেন?
ফোনের অপরপাশে শিমু চুপ করে আছে। জাবির ও অদ্রি বুঝলো শিমুর মাথায় এখনো পুরোপুরি ব্যাপারটা ঢুকেনি তাই জাবির আবার বলে,
–সম্পত্তি আপনি অন্য ভাবেও নিতে পারবেন। কিন্তু নিজের জীবনটা কেন নষ্ট করবেন! আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন।
জাবির কল কেটে দেয়। আর জাবিরের সামনে বসে থাকা অদ্রি উচ্চস্বরে হেসে উঠে। এরপর সগোউক্তি করে বলে,
” মাকড়সা তার আপনা জালেই ফাঁসে। ”
–খুব তো চেয়েছিলে তাই না দুই বোন মিলে রাজত্ব করবে রিমু ভাবিইই! আমাকে সরিয়ে দিয়ে তোমার বোনকে আমার জায়গায় বসাবে তাই না! আমার জায়গা আমি কাউকে ছিনিয়ে নিতে দেই না, যদি স্বেচ্ছায় ছাড়ি তখন নিতে পারবে। কিন্তু বিভান আমার জীবনে এমন কেউ, যাকে আমি স্বেচ্ছায়ও কখনো ছাড়বো না।
এরপর জাবিরের উদ্দেশ্যে বলে,
–জাবির ভাই, শিমুকে এখন আর কোনো ফোন দিবেন না। আবার কালকে ঠিক এসময় আবার ফোন দিবেন।
–ঠিক আছে। আমিও দেখবো এই নিচ মনের মেয়ে এবার কি করে। এসব মেয়ে কারো সংসার গড়তে পারে না। সংসার ভাঙতে এরা পটু। আমার মনে হয়, এখন সব স্ত্রীকে তোমার মতো হতে হবে। যাতে শিমুর মতো মেয়েরা জিততে না পারে।
অদ্রি তৃপ্তির হাসি হাসে জাবিরের কথায়।
—-
ওদিকে শিমু সারাদিন এই কথা নিয়ে ভাবতে থাকে। নিজের বোনকেও এই কথা জানায় নি।
দুইদিন আগে অদ্রি ডাক্তারের কাছে আবার চেকআপ করেছে। ডাক্তার বলেছে, অদ্রি এখন পুরোপুরি সুস্থ। সে এখন যেকোনো সময় কনসিভ করতে পারবে। নিজের দিক থেকে ক্লিয়ার হয়ে অদ্রি এই স্টেপটা এখন নিয়েছে।
পরেরদিন জাবির নিয়ম মতো আবারো শিমুকে কল করে।
–কি মিস! কি ভাবলেন? আমার কথা নিশ্চয়ই আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না! তাহলে আজকেই না হয় একবার চেকআপ করিয়ে নিন। সবাইকে বলুন সমস্যাটা বিভানের। তারপরে চেকআপ করিয়ে সিওর হয়ে নিন। যেকোনো হসপিটাল থেকে করতে পারেন। যদি ইচ্ছা হয় তাহলে আপনাদের পরিচিত কোন ডাক্তারের কাছ থেকেই না হয় চেকআপটা করিয়ে নিন।
শিমুর এবার নিজেরো ভয় হচ্ছে তাই সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে সবাইকে কথাটা বলে। সবাই কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। বিভানের মা তো রেগে গেছে তার ছেলে সম্পর্কে এরকম কথা শুনে। কিন্তু সে রেগে গেলেই বা কি হবে শিমু নাছোড়বান্দা সে টেস্ট করাবেই। বিভান এতে আপত্তি করে না। কারণ যদি বিভানের সমস্যাটা হয় তাহলে তার মাকে বোঝানো যাবে। সবাই মিলে হসপিটালে যায় এবং ডক্টরের কনসাল্ট নিয়ে টেস্ট করায়। ইমারজেন্সিতে আধাঘন্টা পর রিপোর্ট দিতে বলে।
রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সবাইকে যখন বলে, বিভানের প্রবলেম তখন বিভানের মা শকড হয়ে যায়। শিমু আর রিমু বিরক্তিতে বসে থাকে। ইভান নিজের ভাইকে স্বান্তনা দিতে থাকে কারণ বিভান অনেকটা কষ্ট পেয়েছে।
বাসায় ফিরে বিভানের মা বিভানকে বলে,
–আমি ভুল করেছি। আমি এটা ভাবিনি যে সমস্যা দুজনেরই থাকতে পারে। অদ্রি তো বলেছিল, সে তিন মাস পরে কনসিভ করতে পারবে কিন্তু তার কনসিভ না হওয়ায় আমি তাকে কত কিছু বলেছি। এমনকি শিমু ওর রিমুর কথায় তাকে ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে বলেছি।
উপস্থিত সকলে তো হতবাক! রিমু ও শিমু তো ভয় পেয়ে গেছে কারণ ইভান জানত না যে ডিভোর্স পেপার তার বউ ও শালী তার মাকে দিয়েছে অদ্রিকে সাইন করতে বলতে। বিভান এগুলো জানত তাই সে চুপ করে আছে।
এগুলো নিয়ে সেদিন ইভান ও রিমুর মধ্যে ঝামেলা হয়। রিমু বলে, সে নাকি বিভানের ভালোর জন্যই কাজটা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে কি জানত যে বিভানের সমস্যা!
এগুলো বলে ইভানকে কিছুটা থামায়।
অদ্রি ওদিকে শান্তিতে একটু ফুসরতের জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। ক্যামেরা ও মাইক্রোচিপে কি কি হচ্ছে সেগুলো সে পরে শুনে নিবে সময় করে।
সেদিনই রাত বারোটার পর রিমু শিমুর ঘরে যায় নতুন প্লেন করতে। সবাই ঘুমিয়ে আছে তাই ঘরের দরজা বন্ধ না করে হালকা চাপিয়ে তারা আলাপ করতে লাগে। এদিকে বিভানের মা টেনসনে ঘুমাতে পারছে না। সে নিজের রুমে পায়চারি করছে। ইভানের মা স্বভাববসত কখনো দরজা লাগায় না। সবসময় চাপানো থাকে। হঠাৎ করে শিমুর রুমে লাইট জ্বলতে দেখে সে আস্তে আস্তে সেদিকে যায়। শিমুর রুমের দরজার সামনে গিয়ে সে আড়াল থেকে সব শুনতে থাকে। শিমু ও রিমু নতুন প্লেন করছে,
–দেখ আপু, আমি তোর অক্ষম দেবরকে বিয়ে করতে পারবোনা। তুই অন্য কোন উপায়ে ভাব কিভাবে সব সম্পত্তি নিজে লিখতে পারবি। অবশ্যই আমাকেও কিছু দেওয়া লাগবে।
–আরে চিন্তা করিস না। বিভানের তো কখনো বাচ্চা হবেই না তাহলে সব সম্পত্তি এমনি আমার ছেলের নামে চলে আসবে। সেখান থেকে তোকেও আমি 25 শতাংশ দিব।
আরো অনেক কিছুই বলতে লাগে আর দরজার বাহির থেকে বিভানের মা এসব শুনে যেনো নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে দুজনের প্লেনে পানি ঢালতে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে। হঠাৎ করে রুমের মধ্যে কাউকে প্রবেশ করার আভাস পেয়ে দুই বোন সেদিকে তাকায়। রিমু নিজের শ্বাশুড়ীকে দেখে একদম ভয় পেয়ে যায়। বিভানের মা বলে,
–এই তোমাদের কথা শুনে, আমি আমার ছোট বৌমাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছি। আর তোমরাই কিনা আমার ছেলের ক্ষতি চাইছো! তাও সামান্য সম্পত্তির জন্য। আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম রিমু কেমন স্বভাবের মেয়ে তারপরও আমি তোমাদেরকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করেছিলাম। তোমাদের এই পরিকল্পনা আমি সফল হতে দিব না। আমি কাল সকালে আমার দুই ছেলেকে সব কিছু বলবো।
শিমু ও রিমু ভয় পেয়ে যায়। এই ভয় পাওয়া থেকে তারা এমন কিছু করে বসে যা তাদেরকে সারাজীবন বইতে হবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,