#সমাপ্তির_পূর্ণতা
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৪
হঠাৎ কারও তুড়ি বাজানোর শব্দের ধান ভাঙ্গে অদ্রির। টেস্টটিউবটা হাত থেকে রেখে দেয় সুরক্ষিত জায়গায়। অদ্রির কলিগ অদ্রিকে বলে,
–তো মিসেস অদ্রি, কি ভাবছেন হাতে টেস্টটিউব নিয়ে?
আলতো রহস্যময় হাসে অদ্রি। তারপর জবাব দেয়,
–কিছুনা জাবির ভাই।
অদ্রির কলিগ সামান্য রসিকতার সুরে বলে,
–কিছুনা বললেই হলো! আপনি যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন দেখে মনে হচ্ছিলো, আপনি নিউ ড্রাগটা কারো উপর এপ্লাই করার কথা ভাবছেন।
জাবিরের কথায় একটুও বিচলিত হলো না অদ্রি বরং মুচকি হেসে বলল,
–আপনি দেখি বুঝে গেলেন, আমিও ভাবছি কার উপর এটা এপ্লাই করা যায়!
জাবিরের মুখ দেখে অদ্রির মনে হলো জাবির সামান্য ভয় পেয়ে গেছে। হাসলো অদ্রি এরপর আবার নিজের কাজে মন দিলো। জাবির স্বভাবত ভিতু, সে এই ড্রাগটা নিয়ে রিসার্চ করতে চায়নি কারণ সে এখনো বিয়ে করেনি।
ড্রাগটা যেহেতু, ” পুরুষদের পুরুষত্ব কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অকার্যকর করার জন্য।”
এই ড্রাগটা কোনো পুরুষের শরীরে ইনজেক্ট করলে বা কোনো ভাবে শরীরে প্রবেশ করালে সেই পুরুষ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের সিমেন দ্বারা কোনো নারীকে প্রেগনেন্ট করতে পারবে না।
জাবির বসকে সবার সামনে বলেছিলো, সে অন্য ড্রাগের প্রোজেক্টে যেতে চায় তবে বস রাজী হয়নি কারণ জাবির একজন ভালো রিসার্চার। জাবির ভিতু কন্ঠে অদ্রিকে প্রশ্ন করে,
–আর ইউ সিরিসাস অদ্রি? আপনি কি সত্যি সত্যি কারো উপর ড্রাগটা প্রয়োগ করার কথা ভাবছেন?
অদ্রি এবার খিলখিল করে হেসে ফেলে। অদ্রির হাসি দেখে জাবিরের মুখটা পাংশুটে হয়ে গেছে এটা অদ্রি খেয়াল করেছে। অদ্রি হাসি থামিয়ে ঠোঁট সামান্য কামড়িয়ে বলে,
–ইয়েস, আই এম সিরিয়াস! আমি এটা অবশ্যই কারো উপর প্রয়োগ করব।
জাবির তোতলানো স্বরে বলে,
–ককার উপপর?
মুচকি হেসে অদ্রি বলে,
–আমার হাসবেন্ডের উপর।
জাবির বেকুবের মতো মুখ বানিয়ে অদ্রির মুখপানে তাকিয়ে আছে। তারপর সে হরবড়িয়ে বলে,
–কি বলছেন আপনি? আপনি আপনার হাসবেন্ডের উপর এটা কেনো প্রয়োগ করবেন? তাছাড়া আপনাদের এখনো বেবি হয় নি। আপনি জানেন তো যে, এটা শরীরে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময় কার্যকর থাকে এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে অবশ্যই এর এন্টিডট শরীরে প্রবেশ করাতে হয়। নাহলে সেই পুরুষ সারাজীবনের মতো তার সক্ষমতা হারাবে।
জাবিরের প্রতিটা কথা অদ্রি মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই শুনেছে এবং এই হাসি দেখেই যেনো জাবিরের শরীর হিম হবার উপক্রম! অদ্রির কাছে অন্তত তাই মনে হলো।
অদ্রি এবার ভাবলো, জাবিরর ভয় আক বাড়ানো ঠিক হবে না। তাই সে কথা কাটাতে বলে,
–কুল ডাউন জাবির ভাই। আমি তো আপনার সাথটে রসিকতা করছিলাম। আর আপনি কি না সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন!
জাবির যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। তারপর তটস্ত করার মতো সুরে বলে,
–এরকম মজা করবেন না মিসেস অদ্রি। আপনার বলার ধরনে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিলাম।
অদ্রি ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–আমি তো প্রথমে বলেছিলাম যে, আমি কিছু ভাবছি না। কিন্তু আপনি তো কথাটাকে প্যাচালেন তাই আমিও একটু প্যাচালাম আরকি।
–আমি কি করে জানব যে আপনি এভাবে ভয়ংকর মজা করবেন! জানলে আমি বলতাম না।
অদ্রির কথার বিপরীতে জাবির বলে।
অদ্রি এবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
–আমি আমার হাসবেন্ডকে মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসি এবং সে নিজেও আমাকে ভালোবাসে। তাহলে আমি কেনো তাকে এই ড্রাগ ইনজেক্ট বা তার শরীরে প্রবেশ করাবো? আপনিও না জাবির ভাই! মজা করে বলা কথা বুঝেন না।
অদ্রি আবার মুখে রহস্যময়ী হাসি টেনে বলে,
–জাবির ভাই, আপনি কি জানেন এই ড্রাগটার ইফেক্টে কিছু হলে তা মেডিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে বুঝা যায় না। একদম প্রাকৃতিক ভাবে হয়েছে মনে হয়!
জাবির ঘামতে থাকে অদ্রির কথায়। জাবির আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় সেখান থেকে নিজের কাজে। অদ্রি মনে মনে বলে,
” আমি বাধ্য কাজটা করতে। নিজের মানুষকে নিজের কাছে রাখার জন্য। তাছাড়া এই ড্রাগটা আমি বিভানকে দিবো এবং মেয়াদ শেষ হবার আগেই এন্টিডট দিয়ে দিবো। তাহলে শিমু ও রিমু ভাবির পরিক্লপনা বাস্তবায়ন হবে না।
বাট আই কান্ট লুজ বিভান, হি উইল বি মাইন ফরএভার এট এনি কস্ট। ”
এরপর দিন অদ্রি ইচ্ছা করেই অফিসে যায় নি, ছুটি নিয়েছে বসের থেকে। অদ্রিদের ছুটা বুয়া বলেছে, শিমু সপ্তাহে দুইদিন আসে। সোমবার ও বৃহস্পতিবার। আজকে সোমবার তাই অদ্রি দেখতে চায় শিমুর ব্যাবহার।
ঠিক বেলা বারোটায় কলিংবেল বাজে আর অদ্রি বুয়া বা তার শাশুড়িকে দরজা খুলতে উঠতে না দিয়ে নিজে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
অদ্রি দরজা হাসি মুখে খুলে কিন্তু অপর পাশের মানুষটা হয়তো অদ্রিকে এসময় আশা করেনি তাই তার মুখশ্রী অন্ধকার হয়ে গেলো।
শিমু কি পরিক্লপনা নিয়ে এসেছিলো তা আজকে অদ্রি কিছুতেই সফল হতে দেবে না। অদ্রি শিমুর সাথে গল্প জুড়ে দিয়ে বসেছে। অদ্রির শাশুড়ি সেও হাসিমুখে ওদের সাথে কথা বলছে। কিন্তু শিমু! সে বারবার উসখুস করছে অদ্রির শাশুড়িকে একটু একা পাওয়ার জন্য। অদ্রি তো অদ্রি! সে আজকে বুয়াকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে যাতে তাকে সাহায্য করে।
দুুপুরের খাবার খেয়ে অদ্রির শাশুড়ি নিজের রুমে ঘুমাতে চলে যায়। শিমু সেটা দেখে নিজেও যেতে নেয় কিন্তু তখনই তার পথ রোধ করে দাঁড়ায় অদ্রি। অদ্রি শিমুকে হাসি মুখে বলে,
–শিমু, চলো না আরেকটু গল্প করি। রিমু ভাবি থাকলে তার সাথে গল্প করতে পারতাম কিন্তু এখন নিজের জীবনটাকে রোবটের মতো লাগে। সারাদিন অফিস করে রাতেই একটু সময় পাই আর সেটা বিভানের সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করি। গার্লস টপিকে তো এখন কথায় হয় না কারো সাথে। আজ অনেকদিন পর কাউকে পেয়েছি। চলো ছাদে যাই।
কথা গুলো বলে অদ্রি ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। অজ্ঞতা শিমুকেও অদ্রির সাথে যেতে হয়।
।
।
অদ্রি ও বিভানের বিয়ের আড়াই বছর হয়েছে। অদ্রির শাশুড়ি বিভানকেও বাচ্চা নেওয়ার কথা বলেছে দুই-তিনবার। তাই বিভান ভাবলো আজকে অদ্রিকে বলবে বাচ্চা নেওয়ার কথা। অনেক তো সময় হলো, বিভান ও অদ্রি দুজনেই এখন নিজের ক্যারিয়ারে সাকসেসফুল।
এক সপ্তাহ আগে অদ্রির নিউ ড্রাগ প্রজেক্ট সাকসেসফুলি শেষ হয়েছে। তবে ড্রাগটা এখনই বাজারজাত করবে না, আগে এর এন্টিডোট জার্মানি থেকে আনানো হবে।
রাতের বেলা বিভান অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে বিছানার বোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। অদ্রি চুপ করে স্বামীর বুকে মাথা রেখে বসে আছে। কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর বিভান বলে,
–অদ্রিপাখি!
–হু।
–তোমাকে একটা কথা বলবো।
–বলো, এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে বিভান?
–না আসলে, মা বলছিলো, আমাদের এখন বাচ্চা নেওয়া উচিত।
–ওহ।
–তুমি কিছু বলবে না?
–বলবো তো।
–তাহলে বলো।
–শুধু কি মা বলেছে না কি তুমিও। মায়েরটা মা আমায় বলেছেন এখন তুমি তোমারটা বলো।
বিভান বুক ভরে শ্বাস নেয় আর অদ্রি বিভানের বুক থেকে মাথা উঁচিয়ে বিভানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বিভান বলে,
–আমারো মনে হয়, এখন বাচ্চা নেওয়া ভালো হবে।
বিভানের কথায় অদ্রি প্রতিউত্তর করে না। অদ্রির রেসপন্স না পেয়ে বিভান বলে,
–কিছু বলছো না যে?
অদ্রি বলে,
–কি বলবো? বাচ্চা আসলে অবশ্যই নিবো।
বিভান বুঝলো না অদ্রির কথা তবে সে আজ তার প্রিয়তমাকে কাছে পেতে চায়। প্রিয়তমার ভালোবাসায় সিক্ত করতে চায় নিজেকে।
অদ্রি বাধা দেয় না বিভানকে। অদ্রি নিজেও ডুবে যায় তার প্রানপুরুষের ভালোবাসায় তবে সে তার পরিকল্পনা কালকে থেকে শুরু করবে। আজকে স্বামীর ভালোবাসায় সিক্ত হবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,