#সমাপ্তির_পূর্ণতা
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৩
অদ্রি নিজের মনকে এবার শক্ত করে কিছু একটা ভাবে। যে কোনো উপায়ে যা কিছু করে বিভান যে তার ভালোবাসা, তার স্বামীকে একান্ত নিজের কাছে রাখার জন্য। কিছু একটা ভেবে এরপর অফিসের নিউ ড্রাগটার জন্য বসের কাছে যেয়ে বলে,
–স্যার আমি নিউ ড্রাগটা নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক।
–আর ইউ শিউর অদ্রি! এটা অনেক রিস্কি প্রোজেক্ট। তোমার থেকে উপরের পোস্টের সিনিয়র প্রোডাকশন অফিসাররা যেখানে এই ড্রাগ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী না, সেখানে তুমি কেন এত আগ্রহ দেখাচ্ছ? তাছাড়া আমি জার্মানি থেকে একজন রিসার্চার এবং প্রোডাকশন অফিসার আনার ব্যাবস্থা করব ভাবছি।
অদ্রির কথার পরিপ্রেক্ষিতে অফিসের বস অদ্রিকে বলে। কালক্ষেপন না করে অদ্রি আবার বলে,
–ডোন্ট ওয়ারি স্যার, আই উইল হ্যান্ডেল। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি দায়িত্ব নিয়ে প্রোজেক্ট রেডী করতাম বিভিন্ন ফার্মেসি সেমিনারের জন্য।
–ঠিক আছে অদ্রি, এই প্রোজেক্টের জন্য তুমি ইন!
বস এই কথা বলে চলে যেতে নিলে অদ্রি তাকে আটকিয়ে বলে,
–স্যার!
–ইয়েস।
–আমি অফিসে আমার জবের সেকশন চেঞ্জ করার কথা বলেছিলাম ছয় মাস আগে। আমায় রিসার্চার হিসেবে কি নেয়া যায়?
–আই এম সরি অদ্রি। রিসার্চার হিসেবে তোমায় তার জন্য নিউ রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করতে হবে।
–আই এম রেডি টু ফুলফিল।
–কিন্তু, তুমি তো প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে নিউ ড্রাগ প্রজেক্টে থাকছ। তাহলে?
–জ্বী স্যার। আমি প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে থাকবো তবে তার আগে আমি রিসার্চারের রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করবো।
অদ্রির বস অদ্রির কথার ধরন বুঝতে না পেরে বলে,
— তুমি এগজ্যাক্টলি কি করতে চাইছো?
— আমার সবসময় নিউ কিছু নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। আমি এই প্রজেক্টের পর একজন প্রোফেশনাল রিসার্চার হিসেবে জয়েন করতে চাই এবং এই প্রোজেক্টে আমাকে যেনো রিসার্চ রিলেটেড কাজে রাখা হয়।
অদ্রির বস শিউর হবার জন্য বলে,
–দ্যাট মিনস, তুমি চাও তোমাকে যেনো রিসার্চের কাজে অল্প হলেও ইনভলব রাখা হয়!
হাসি ফোটে অদ্রির মুখে।
–জ্বী স্যার, আপনি আমার উপর ভরসা করে দেখতে পারেন।
–ওখে, এস ইউর উইশ। তুমি প্রোডাকশন অফিসার হয়েও রিসার্চের কাজে ইনভলব থাকবে।
বস চলে যেতে নিয়েও আবার বলে,
–মাস্ট বি শিউর! ডোন্ট লুজ মাই এক্সপেক্টেশন। তুমি আমার ছোট বোনের মতো এবং আমি জানি তুমি কিছু ভেবেই বলছ। আমি তোমার উপর ভরসা করতে পারি।
বস চলে যায় আর অদ্রির মুখে ফুটে উঠে রহস্যময় হাসি। অদ্রি সগোউক্তি করে আপন মনেই বলে,
” বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান!
শেষ বারে আমি তোমার বধিব পরান। ”
হেসে উঠে চলে যায় নিজের কাজে।
সেদিন বাসায় গিয়ে আগের মতো থাকতে লাগে। অদ্রি কাউকেই কিছু জানায়নি এই ব্যাপারে। তাছাড়া বিভান এখনো বাচ্চা নেওয়া বিষয়ক কোনো কথা বলেনি তবে এখন বলেনি তো কি হয়েছে! ভবিষ্যতে বলবে না তার কি গ্যারান্টি? তবে অদ্রি আস্তে আস্তে সব কিছু নিজ কন্ট্রোলে নিয়ে আসছে এবং অতি দ্রুত সে নিজের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছিয়ে যাবে।
অদ্রির জরায়ুর সিস্টটা ফ্যালোপিয়ান টিউবের একটু ভেতরের দিকে তাই সময়টা একটু বেশি লাগবে তবে হতাশ হবার কিছু নেই। এই বিষয়টা অদ্রি নিজেও জানে। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সে মেডিকেশন নিচ্ছে এবং বিয়ের পর যে কিছুটা ওজন বেড়ে গিয়েছিল সেটাকে কমানোর চেষ্টায় আছে।
এদিকে শিমু কিছুদিন পর পর আসে আর বিভানের মায়ের কানে একথা সেকথা তোলে। বিভানের মা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে অদ্রিকে কথা শোনায়। অদ্রি বুঝতে পারছে যে শিমু তার (অদ্রির) স্নেহময়ী শাশুড়ির মনে তার (অদ্রির) জন্য তিক্ততা ও বিষ ভরে দিচ্ছে। এতসব জানাপ পরেও অদ্রি চুপ করে আছে কারণ সে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় অপেক্ষমান। অদ্রি কোনো কাঁচা কাজ করে না। ফার্মেসি নিয়ে তার পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাইন্টিস্ট হওয়া। অদ্রি সাইন্টস্ট হয়ে এমন কিছু নিয়ে রিসার্চ করতে চায় যা তাকে সাফল্যের ধার প্রান্তে নিয়ে যাবে।
হসপিটাল থেকে রিপোর্ট পাওয়ার তিন মাস অতিক্রম করে ফেলেছে। এখন অদ্রি ও বিভানের বিয়ের দুই বছর দুই মাস চলে। অদ্রি নিউ প্রোজেক্টের কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে করে। কোনোরকম ভুল সে করতে নারাজ। এই নিউ ড্রাগটাই নির্ধারন করবে অদ্রির পরিক্লপনার বাস্তবায়ন।
ইদানিং শাশুড়ির বাচ্চা নিয়ে কথাবার্তা যেনো বেড়েই চলেছে। অদ্রি জানে এটা স্বাভাবিক। সব সংসারে শাশুড়ি বাচ্চার জন্য বলতে খাকে বিয়ের কিছু সময় পর থেকে। সেদিক দিয়ে অদ্রির শাশুড়ি অনেকটাই সহনশীল। শিমু ও রিমুর কুচক্রের কারণে তার শাশুড়ির দিন দিন অসহনশীল হয়ে যাচ্ছে। যেই শাশুড়ি এতোদিন অদ্রিকে মেয়ের মতো দেখতো ও ভালোবাসত, আজ সেই শাশুড়ির তাকে ছেলের বউয়ের অন্যথায় কিছু ভাবতে পারছে না।
অদ্রি জানে রিমু ভাবির সম্পত্তির প্রতি লোভ বেশি। সম্পত্তির লোভের কারণে নিজের কুঁয়ো সেচে বেড়ানো বোনের সাথে দেবরের বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছিল। শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। তবে বিয়ে দিতে সফল না হলেও এখন ঘর ভাঙ্গার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর বড় ভাই, সে তো বউ যা বলে সব সত্য মানে। এক কথায় তার বউ তাকে ও তাদের একমাত্র ছেলে রিহাবকে ছেড়ে চলে যাবার ভয় দেখায় যদি তার (রিমুর) বিরুদ্ধে কিছু বলে তো। বড় ভাই জানেও না যে তার বউ ও শালী মিলে কি ষড়যন্ত্র করছে। মা ও ছোট ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ তো আছেই এবং কোন উৎসব মুখর পরিবেশে সে নিজের স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে মা, ছোট ভাই ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে পালন করতে অাসে।
অদ্রি আইসোলেটেড ল্যাবে দাঁড়িয়ে কেমিক্যাল মিক্স করছে। দুই মাস হলো সে একই কম্পানীর “রিসার্চ এন্ড ডেবলপমেন্ট” বিভাগে জয়েন করেছে। তবে এই ড্রাগটার জন্য সে স্পেশালি হায়ার অথরিটি থেকে পারমিশন নিয়েছে যাতে তাকে প্রোডাকশন অফিসার থেকে রিমুভ না করে। পারিশ্রমিক সে প্রোডাকশন অফিসারের মতোই নিবে যতদিন না ড্রাগটা মার্কেটে আসছে।
কেমিক্যাল মিক্স করার সময় অদ্রি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেমিক্যালের যে রিঅ্যাকশন হচ্ছে সেটার দিকে। অদ্রির চাহনি খুব শান্ত, যাকে বলে হিমশীতল দৃষ্টি।
কিছু মানুষ ঠান্ডা মাথায় কাজ করে। আর তারাই তাদের লক্ষ্যে বিনা বাধায় পৌঁছায়। সেরকম মানুষের কাতারে অদ্রী নিজেও পড়ে। শীতল মস্তিষ্কের মানুষরা ভয়ঙ্কর হয় কিন্তু বাহির থেকে তাদের দেখলে সাদামাটাই মনে হয়। এরা কোনো কাজ করে যদি সেচ্ছায় কোনো নিশান না ছাড়ে তাহলে তাহলে তাদের ধরা যায় না। তারা তখনি ধরা পরে যখন তারা অনেক বড় প্রতারণার শিকার হয়।
শীতল মস্তিষ্কের মানুষদেরকে ” লাই ডিটেক্টর টেস্ট ” এর মাধ্যমেও ধরা যায় না। কারণ ওসব মানুষ নিজেদের মাথায় আগে থেকে সব কিছু গুছিয়ে রাখে। সাধারন মানুষ যেমন মিথ্যা বলতে গেলে, চোখে চোখ রাখতে পারে না, হাতের আংগুল খুঁটতে থাকে, বা কোনো কাজ করতে থাকে শুধুমাত্র যাতে সত্য ধরা না পড়ে তার জন্য। শীতল মস্তিষ্কের মানুষও এমন মাইন্ড ডাইভার্টের মতো কাজ করে মিথ্যা বলার সময় তবে সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না। এরা অনেক সময় সাইকো বা পাগল হয়ে যায় আর নিজ থেকে আত্নসমার্পন করে। এদের ওই রকম পরিণতির কারণ হয়, অতিরিক্ত সিক্রেট নিজের মস্তিষ্কে জায়গা দেওয়ার কারণে এবং হিউম্যান সাইকোলজি মোতাবেক, এরা অনেক সময় অতিরিক্ত ক্রাইম করে নিজের কাছেই শেষ পর্যন্ত নিজেকে শেষ করার পরিকল্পনা করে।
অদ্রি টেস্টটিউবে কেমিক্যালটা রহস্যময় ভাবে দেখছে। এই কেমিক্যালটা তার তুরুপের তাস হিসেবে কাজ করবে।
” ইট ঊইল ডিসাইড হার ফিউচার এন্ড হার লাভ। ”
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি।