#সমাপ্তিতে_তুমি
পর্ব-০৬
(রহস্য উন্মোচন)
লেখিকা-#খেয়া
আমি এই বিয়েটা করতে পারব না মামনি।
প্রথমে তো তুমি আমাকে না জানিয়ে বিয়েটা ঠিক করলে আবার বিয়ের ডেটও ঠিক করলে আমাকে না জানিয়ে।
—-এত কথা না বলে চুপচাপ রেডি হয়ে নিচে আয়।আরিশ রেগে গেলে কিন্তু ব্যাপারটা খারাপ হবে।
—-কিন্তু মামনি,,,
আমি কিছু বলার আগেই আরহা আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলেো।আমি প্রচন্ড রেগে বললাম
—- আমাকে এভাবে কেন নিয়ে এলি আরহা।
—- দেখ তানহা,,,ব্যাপারটা যখন এতদূর গেছে তখন নিশ্চয় সব ভাইয়ার কথামতো হচ্ছে।আর তুই যদি এখন কিছু করিস তবে ভাইয়া খুব রেগে যাবে।আর ভাইয়া রেগে গেললে কী হতে পারে সেটা তোর কল্পনারও বাইরে।
—- কিন্তু তাই বলে কী আমি বিয়েটা করে নিবো।আরহা প্লিজ আমাকে কিছু একটা তো বল।আমার মাথা কাজ করছেনা।কী করব আমি এখন।আমি এই বিয়েটা করতে পারব না।
—- তানহা একটা কাজ করলে কী হয়।আমার তো মনে হয় রুদ্ধ স্যারের ওয়াইফের সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক বেশ গভীর।তুই বরং উনাকে ডাক উনি হয়ত ভাইয়ার বিয়েটা মেনে নিবে না।
—- তুই ঠিল বলেছিস আরহা কিন্তু আমি উনাকে এখানে ডাকবো কেমন করে।
—- ডাকা লাগবে না।আমার মনে হয় উনার কাছে জাস্ট এই খবরটা পৌছে দিলেই হবে।তোর কাছে কী উনার নাম্বার আছে।আমাদের যা করার খুব দ্রুত করতে হবে।
—- আমার কাছে উনার নাম্বার তো নাই।বাট উনার কাছে খবর পৌঁছানোর লোক ও আছে।
আমি দ্রুত দীপ্তকে ফোন করলাম।সেদিন উনার নাম্বারটা নিয়েছিলাম। আমি উনাকে আমাদের সব প্ল্যান জানালাম।উনিও সাহায্য করবেন বলে দিলেন।
মামনির ডাকে বিরক্ত হয়ে কোনো রকম তৈরি হয়ে নিচে গিলাম।আমি যাওয়া মাত্রই আরিশ বিয়ে পড়ানো শুরু করতে বললেন।
কাজী সাহেব ও বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন।আরিশ খুব দ্রত পেপারস গুলোতে সাইন করে দিলেন।আমাকে সাইন করতে বললো আমি কিছুতেই সাইন করছিলাম না।অনেকক্ষণ পর আরিশ বেশ রেগে গেলেন।কিন্তু আমি ভাবছি নিহা আপু এখনো আসছে না কেন?
আরিশ রেগে আমার দিকে তেড়ে এসে সাইন করতে বললেই পেছন থেকে কেউ বলে
—- স্টপ দিস আরিশ।
আমি দরজার দিকে তাকিয়ে বলি রুদ্ধ স্যারের ওয়াইফ।উনি এসে আরিশের গালে একটা চড় লাগিয়ে দিলেন।তখনই বাবাই চিৎকার করে বলল
—- এই মেয়ে কে তুমি? তোমার সাহস হয় কীকরে আমার ছেলের গাঁয়ে হাত তোলার।
নিহা আপু চিৎকার করে বলল
—- কে আমি? নিজের ছেলেকে জিঙ্গেস করুন কে আমি।তার বিয়ে করা বউ আমি।চারবছর আগে বিয়ে করেছিল আমায়।বিয়ে করা বউ থাকতেও সে আবার কীভাবে বিয়ে করে।
বলো আরিশ কেন করছিলে এটা তুমি।আমাকে কেন ঠকাচ্ছিলে।
আরিশ এতক্ষণ চুপ করে ছিল।কিন্তু মামনি এবার আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
—- মেয়েটা এসব কী বলছে আরিশ।যে তুই তানহাকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করলি সে তুই অন্য একজনকে বিয়ে করে নিলি।চারবছর আগে বিয়ে করেছিস আমাদের জানাসনি কেন?
“আপনার ছেলে তানহাকে পেতে এমন কী করেছে?”
কথাটা রুদ্ধ স্যার বললেন।কিন্তু উনি এখানে কেন?উনাকে কী এসব উনার ওয়াইফ বলেছেন।না সরি উনার ওয়াইফ না তো।আরিশের ওয়াইফ।
রুদ্ধ স্যারের কথায় আরিশ প্রচন্ড রেগে গেলেন।কিন্তু কেন তা বুঝলাম না।
রুদ্ধ স্যার আরিশের দিকে এগিয়ে এসে উনাকে একটা চড় মারলেন।উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হলেন।আরিশ প্রচন্ড রেগে রুদ্ধ স্যারের দিলে তেড়ে গেলে রুদ্ধ স্যার চিৎকার করে বলল
—- স্টপ দিস আরিশ।এতবছর তোরর অনেক অন্যায় সহ্য করেছি।তোর জন্য চারবছর নিহার সাথে অভিনয় করেছি।তোর জন্য আমি আমার রাতকে হারিয়ে ফেলেছি।শুধু তোরজন্য এতগুলো মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।
রুদ্ধ স্যারের কথায় নিহা আপু বলল
—- এসব কী বলছ রুদ্ধ। আরিশের জন্য সব হয়েছে মানে। রাতের চলে যাওয়াটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল জাস্ট।এখানে আরিশ কী,,,,
—- তোমার এখনো অনেককিছু জানার বাকি আছে নিহা।আজ আমি সবার সামনে সব বলল
আরিশ কখনোই তোমাকে ভালোবাসেনি নিহা।ও ভালোবাসতো রাতকে।আর রাতকে পাওয়ার জন্যই আরিশ এত কিছু করেছে।
রুদ্ধ স্যারের কথায় সবাই অবাক হলেও সবচেয়ে বেশি অবাক হয় নিহা আপু।রুদ্ধ স্যার খানিক থেমে আবারও বলতে শুরু করে
—- আরিশ আর আমি কলেজ ফ্রেন্ড ছিলাম।নিহার সাথে রিলেশন চলাকালীন আমার মাধ্যমেই রাতের সাথে আরিশের পরিচয় হয়েছিল।আরিশ শুরু থেকেই রাতকে পছন্দ করত।আরিশ নিহার সাথে ব্রেকআপও করতে চেয়েছিল কিন্তু নিহার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে সে নিহাকে ছাড়তে পারেনি।
আরিশ জানত আমি রাতকে ভালোবাসতাম।ওএটাও জানত যে আমি থাকতে ও রাতকে পাবেনা।তাই ও একটা প্ল্যান বানায়।
ও নিহাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলনা আবার ও নিহাকেও ছাড়তে পারছিল না।নিহার বাবা আরিশকে মেনে না নেওয়ায় আরিশ আরো সুযোগ পেয়ে যায়।আরিশ আর নিহা লুকিয়ে বিয়েয়ে করে নেই আর আমাকে রিকুয়েস্ট করে যেন আমি কিছুদিনের জন্য দুনিয়ার সামনে নিহার হাজবেন্ডের নাটক করি।পরে ও নিহার বাবাকে সব বুঝিয়ে বলবে।
তখন আমিও আরিশের কথা ফেলতে পারিনি।এই বিয়েটা নিয়ে আমার আর রাতের মাঝে বেশ ঝামেলা হয়।আরিশ ও ভাবে যে এবার তার রাস্তা ক্লিয়ার।এবারও খুব সহজেই রাতকে পাবে।
এরপর আরিশ একটা নকল কাগজ এনে রাতের সামনে আমাকে আর নিহাকে বিবাহিত প্রমান করে।এমনকি আমার পুরো পরিবাবের সামনে আরিশ নিহাকে অস্বীকার করে।জানিনা ও তখন নিহাকে কী বুঝিয়েছিল, নিহাও তখন সত্যিটা কাউকে বোঝায় নি।
আরিশ ভেবেছিল এবার ও খুব সহজেই রাতকে পেয়ে যাবে।কিন্তু তা আর হয়না।সেদিনই রাগের মাথায় রাত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
বাকিটুকু কী কী আমি বলব নাকি তুই বলবি আরিশ।
এতক্ষণ আরিশ বেশ রেগে থাকলেও এবার তার চোখেমুখে ভয় স্পষ্ট। নিহা আপুও মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।আমি রুদ্ধ স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম
—- আপনি প্লিজ সবটা ক্লিয়ার করে বলুন।
রুদ্ধ স্যার আবার বলতে শুরু করল
—- সেদিন আরিশও রাতের পিছনে গিয়েছিল।রাত প্রচন্ড স্পীডে গাড়ি চালানোর ফলে রাতের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।এতে আরিশ আরো সুযোগ পেয়ে যায়।ও রাতকে ওখান থেকে নিয়ে যায় আর ইচ্ছে করে রাতের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
নিহা আপু এবার বলে
—- তারমানে রাত বেঁচে আছে।কিন্তু,,,,
রুদ্ধ স্যার মামনি বাবাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল রাত কোথায় সেটা আপনারা বলবেন নাকি আমি বলব।
রুদ্ধ স্যারের কথাশুনে বাবাই বলল
—- তানহাই রাত। সেদিন আরিশ রাতকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। আর পরে আমাদের ফোন দেয়।তবে রাতের গাড়িতে আগুন ও লাগায়নি।গাড়িতে আগুন আগেই লেগে গিয়েছিল।আমরা আরিশকে বলেছিলাম রাতকে তার পরিবারে দিয়ে আসতে।কিন্তু ও রাজি হয়নি।একমাত্র ছেলের ভালোভেবে আমরাও তার কথা মেনে নিয়েছিলাম।
আমি এবার প্রচন্ড অবাক হলাম।আর বললাম
—- যদি তাই হয় তবে আমার কেন কিছু মনে নেই।তবে কী ঐ এক্সিডেন্টে আমার স্মৃতি,,,
রুদ্ধ স্যার এবার বললেন
—- না এক্সিডেন্টে তোমার স্মৃতি হারায়নি।তোমাকে একটা ঔষধ দেওয়া হতো।যার কারনে তুমি সব ভুলে গিয়েছো।আর এই সবকিছু আরিশ করেছে শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য।
—- যদি আপনি এই সবকিছু জানতেনই তবে এতগুলো বছর কেন এখানে আসেননি।আর আরিশও তো চাইলে অনেক আগেই বিয়েটা করতে পারতেন।এর জন্য উনি চারবছর কেন অপেক্ষা করল।
—- আরিশ নিহাকে বিয়ে করেছিল সেটা একটা এগ্রিমেন্টাল বিয়ে ছিল।হয়ত নিহা জানে না যে ওদের বিয়ের এগ্রিমেন্ট ছিল চারবছর পর আরিশ নিহাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে এবং নিহা তার বাবার ৫০% সম্পত্তি আরিশকে দিয়ে দিবে।
আরিশ তোমাকে এত দ্রুত বিয়েও করত না।যদিনা আমি ওর সব সত্যি জেনে না যেতাম।
নিহা আপু এবার প্রচন্ড ভেঙে পড়লো। আমারও মাথা কাজ করছেনা।শুধু মাত্র আমাকে পাওয়ার জন্য আরিশ এতকিছু করল।নিহা আপুর লাইফটা এভাবে নষ্ট করে দিলো।
নিজেকে প্রচন্ড দোষী মনে হচ্ছে আমার।আমার জন্য এতকিছু হলো।
আরিশও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।মামনি তো রীতিমতে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন।রুদ্ধ স্যার কিছু লোককে ভেতরে ডাকলেন।
কিছু পুলিশ এসে আরিশকে নিয়ে গেলেন।এখনো সবকিছু আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে।হঠাতই চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখতে লাগলাম।
—————–
চোখখুলে নিজেকে সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশে আবিষ্কার করলাম।পাশে অনেক অপরিচিত মুখের মাঝেও পরিচিত একটা মুখ পেলাম ” দীপ্ত”।
আমি তার দিকে করুণ চোখে তাকাতে সে আমার কাছে এসে বলল
—- দেখ রাত আমি জানি তোর কিছু মনে নেই।তাই বলে তো নতুন স্মৃতি বানাতেও মানা নেই।
(চলবে)