সমন্ধ

0
2617

গল্পঃ সমন্ধ
লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

৯ বছরের সম্পর্কে ত্যাগ করে পরিবারের মানুষদের মুখের দিকে তাকিয়ে একজন ৩৫ বছরের লোকের সামনে এক হাত খোমটা দিয়ে বসে আছি।

বাবা: আপনারা যা প্রশ্ন করার করতে পারেন

বাবার কথা শুনে সামনে বসে থাকে লোকটা গালা ঝেড়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করা শুরু করলো

লোক: মা তোমার নাম কি

আমি: জ্বি মাহমুদা সুলতানা বৃষ্টি সবাই আদিবা বলে ডাকে

লোক: বাহ খুব মিষ্টি নাম তো মা তোমার পড়াশোনা করেছো

আমি: ইন্টার শেষ করলাম কিন্তুু আমার স্বপ্ন আরো অনেক দুর পযন্ত পড়া

লোক: ওহহ

ভাইয়া: পাকামু না করে যা জিগাসা করছে উওর টা শুধু দে

লোক: না না ঠিক আছে বলতে দেন ওরে
তো মা তোমার কি আমার ছেলেকে বিয়ে করার সম্পূর্ন ইচ্ছে আছে না মানে দেখো মা আমি জানি তুমি অনেক ছোট আর আমার ছেলেটা বয়স অনেক বেশি

বাবা: ভাই সাহেব কি বলছেন ওর তো মত সম্পূর্ন আছে তাই না রে মা

আমি একবার বার দিকে তাকায় আবার লোকটার দিকে তাকায়

লোক: কি হলো বলো মা

আমি: হুম আমার সম্পূর্ন ইচ্ছে আছে

লোক: মাশআল্লাহ আলহহামদুলিল্লাহ

বাবা: হুম মিষ্টি মুখ করুন তো বেয়ায়সাহেব

লোক: হুম হুম

সবার মুখে হাসি কিন্তুু আমার নিজের কোন হাসি সেই। সবাই ঘোমটার আরালে থেকে মতামত শুনলো অতঃস কেউ ঘোমটা আরালে দু নয়নের পানি টা কেউ দেখতে পেলো না,,,,,,,,

বিয়ের সাজে পুরো সাজানো হয়েছে চার পাশে ঝলমল করছে কিন্তুু আমার মনের ভিতরটা অন্ধকারে ভরা না আছে সাজ না আছে ঝলমল যেটা আছে সেটা শুধু দুচোখের পানি।

পাশের বাড়ির বড় ভাবি লাল শাড়ি পরিয়ে বেশ সুন্দর করে সেজে দিয়ে গেলো। জানালা ভেদ করে চাদেঁরর আলো এসো গায়ে পরছে আয়না সামনে দাড়িয়ে নিজে নিজে দুচোখ জুরে দেখতে লাগলাম।

আজ সেই লাল বেনারশশি শাড়ি পড়েছি হাত জুরে কাচের চুড়ি কপাল জুরে টিপ চোখে মোটা করেে কাজল পরেছি কিন্তুু সাজটা অন্য কারো জন্য

চেয়ে ছিলাম এমন করে সাজবো শুধু ভালোবাসার মানুষটার জন্য কিন্তু ভাগ্যে এমন পরিহাস

বিয়ে টাও হয়ে গেলো
কেটেঁ গেলো ৫ টা বছর
আজ আমার জন্ম দিন কিন্তুু বাসায় কোন আয়জোন নেই তবু মুখে কোন কথা নেই।

বারান্দা দাড়িয়ে আছি আনমনে বাইরে তাকিয়ে আছি তখনি আমার বুড়ো বরটা এসে কাঁধে হাত রাখলো

সিয়াম: হ্যাপি বার্ডে আদিবা

আমি: থ্যাংস। আজ এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে যে

সিয়াম: আমায় তো চিনো আমি কেমন তোমাকে সারর্প্রাইজ দেওয়ার মতো কোন বুন্ধিও আমার মাথায় আছে না

আমি: ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই

সিয়াম: জানি তোমার মন খারাপ হয় সবার বর তো কত রোমেন্টিক আর আমি ( মন ভার করে)

আমি: সবার বর কেমন রোমেন্টিক শুনি

সিয়াম: এই যে রোমেন্টিক কথা বলা রাত জেগে গল্প করা পিছন থেকে জোরিয়ে ধরা

লোকটা কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলাম লোকটা মুগ্ধ হয়ে হাসিটা দেখছিলো

আমি: হা হা আপনি ও না
আমার রোমেন্টিক কথা শুনতে একটুও ইচ্ছে হয় না আর রাত জাগতে ভালোলাগে না আর আপনি যে জোরিয়ে না ধরে কাঁধে হাত রাখেন এটাই আমার খুব খুব ভালোলাগে আর মাঝে মাঝে যে মুগ্ধ হয়ে হাসি দেখেন এগুলোই আমার ভালোলাগে

সিয়াম: সত্যি বলছো তো

আমি: একদম ট্রাস মি

সিয়াম: ধন্যবাদ

আমি: বোকা কথা কার ( লোকটার পেটে চর্বিতে গুতো দিয়ে)

সিয়াম: আচ্ছা শুনো রেডি হও আজ দুজনে শহরটা হেটে হেটে দেখবো

আমি: আপনি হাটবেন

সিয়াম: হুম আমি কেনো

আমি: হা হা হয়ছে তাইলে

সিয়াম: মজা নিচ্ছো

আমি: এই না না ( মুখচেপে হেসে)

সিয়াম: ঠিক আছে যাও রেডি হও

আমি: ঠিক আছে

লোকটা মুচকি হেসে গালে হাত বুলিয়ে রুমে চলে গেলো। আমিও দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস নিলাম।

আজ দেখতে দেখতে ৫ টা বছর চলে গেলো এই মানুষটার সাথে। বয়স্ক বর গুলো কি এমনি হয় হয়তো হয়

তবে আমি কি সুখে আছে হ্যাঁ আছি নিজের সখগুলো আরালে রেখে লোকটারচ সখ গুলোকে আপন করে নিয়ে এখন নিজের সখ গুলোর কোন দাম নেই।

মজা করে রোমেন্টিক ভাবে না হাসালেও বোকামু করে যে আনন্দ গুলো দেই সেই গুলো আজ আমার কাছে অনেক দামি।

আজ ৫ বছর ধরে কোন ফ্রেন্ড সাথে কন্টাক করি না খুব খারাপ লাগতো যখন লোকটাকে নিয়ে সবাই ঠাট্টা তামাশা করতো শত হলে সে আমার স্বামী

একটা মেয়ের কাছে তার স্বামী একটা বটগাছের মতো।

হঠাৎ রুম থেকে লোকটা ডেকে যাচ্ছিলো এতো কিছু ভাবতে ভাবতে দেরি হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি করে রুমে যেতে

পাশে থাকা টেবিলের উপর সেই ৯ বছরের সম্পর্কের ডায়রিটা বন্ধ করে দিয়ে হাটা শুরু করলাম

( সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে