সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
5

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০৪/অন্তিম

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই আচমকা অধরা চলে আসলো অয়নের রুমে। অধরাকে নিজের রুমে দেখে অয়নের খানেক অবাক লাগলো। এতো তারাতাড়ি অধরা কি করে এখানে উপস্থিত হলো? সেটাই অয়নের বোধগম্য হচ্ছে না। অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই ফারিয়া অধরাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। অধরা ফারিয়াকে নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে অয়নের সামনে এগিয়ে এসে সজোরে অয়নের গালে একটা থাপ্পড় মারলো। অয়ন থাপ্পড় খেয়ে অধরার দিকে তাকাতেই অধরা রাগে গজগজ করতে করতে অয়ন কে বলল

— ছিঃ এতোটা নিচে নেমে গেছো তুমি! আরে এতোই প্রয়োজন পড়লে বিয়ে করে নিতে। তবুও এটা করলে কেনো?

অধরার কথাটা শুনে অয়ন শব্দ করে হেসে ফেলল। অয়ন হেসে হেসে অধরাকে বলল

— পাগল হয়ে গেছো তুমি? অয়ন কে চিনতে পারোনি এখনো। এই মেয়ের সাথে কিছু করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।

— যদি ইচ্ছে না থাকে তবে এসব কি? এই ছবি গুলো কি করে আসলো?

অধরার ফোনের দিকে তাকিয়ে অয়ন দেখতে পেলো ফারিয়ার সাথে অয়নের বেশ ক্লোজ ছবি আছে এখানে। অয়ন ছবি গুলো দেখার পর মোটেও অবাক হলো না। কারন অয়ন এতোক্ষণে ঠিক বুঝতে পেরে গেছে যে এই সব কিছু ফারিয়ার চাল। ফারিয়া অয়নকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তবে অয়ন কে ফাঁসানো এতোটাই সহজ নাকি? অয়ন তার রুমের দেয়ালে লাগানো নিজের ছবির পেছন থেকে একটা স্পাই ক্যাম বের করলো। আর সেটার ফুটেজ অধরাকে দেখালো। অধরা স্পাই ক্যামের ফুটেজ দেখার পর একদম থ হয়ে গেলো। অয়ন ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

— আমি তো তোমাকে নিজের বন্ধু ভেবে ছিলাম। অধরাকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব ও দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি আসলে এতোটা নিচ! সেটা আমি কখনো ভাবতে ও পারিনি।

অয়নের কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে ফারিয়া অয়নের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অয়নের পা ধরে কান্না করতে লাগলো। আর অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— সরি অয়ন। আমি আসলে তোমাকে আপন করার জন্য এসব কাজ করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি। আমার দ্বারা আর কখনো এমন….!

ফারিয়াকে সম্পূর্ণ কথাটা বলতে দিলো না অয়ন। অয়ন ফারিয়াকে থামিয়ে দিয়ে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল

— শার্ট আপ। একটাও কথা বলবে না তুমি। অয়ন চৌধুরীর কাছে প্রতারণার কোনো ক্ষমা নেই। আজকের পর থেকে আর কখনো আমার চোখের সামনে আসবে না। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।

অয়নের ঝাড়ি খেয়ে ফারিয়া আর কোনো কথা বলল না। আজ ফারিয়ার সব প্লান ফাঁস হয়ে গেছে অয়নের সামনে। অয়নকে আর সে বোকা বানাতে পারবে না। ফারিয়া অয়নের কথা মতো অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। ফারিয়া অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা অয়নের দিকে এগিয়ে আসলো। অয়ন অধরাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে খানেক চিৎকার করে বলে উঠলো

— এই ওখানেই দাঁড়াও। একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।

অয়নের কথা মতো অধরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়লো। অধরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে মলিন কন্ঠে বলল

— অয়ন সরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ভেবেছি ফারিয়া একজন মেয়ে হয়ে নিজের চরিত্র নিয়ে মিথ্যাচার তো করবে না। তাই আমি ওর কথা বিশ্বাস করে….!

— হয়েছে তো বিশ্বাস! ভাগ্য ভালো স্পাই ক্যাম ছিলো। তা না হলে আজ তো আমার লেগে যেতো।

— হুম লাগবেই তো। নিজের স্ত্রীকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখলে নানা ধরনের বিপদ ঠিক চলে আসবেই। এটাই স্বাভাবিক।

অধরার কথাটা শুনে অয়নের টনক নড়ে উঠে। অয়ন অধরার দিকে তাকিয়ে বলে

— কি বললে তুমি? আমি ঠিক শুনতে পাইনি। আবার একটু বলো তো!

— কি আবার যা বলেছি সেটাই। আমি তোমাকে ছেড়ে গেছি কারন আমি জানি তোমাকে কমফোর্ট জোনে রাখলে তুমি কখনো কিছু করতে পারবে না। তাই আমি তোমার মনের আগুন জ্বালাতে তোমাকে ছেড়ে গেছি। আমি চাই তোমাকে সফল দেখতে। তোমার ব্যর্থতা গুলো আমাকে লোকের সামনে ছোট হতে বাধ্য করে। তাই আমি এমনটা করেছি অয়ন।

অধরার কথা শোনার পর অয়ন কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। অধরা অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। অয়ন মিনিট খানেক সময় নিরব থাকার পর অধরাকে উদ্দেশ্য করে খানেক শক্ত গলায় বলল

— হয়ে গেছে তোমার? এবার আসতে পারো।

— অয়ন আমি ভূল করেছি। আমার উচিত ছিলো তোমার পাশে থাকা। কিন্তু তোমাকে সফল করার জন্য আমি এমনটা করেছি। আমি তোমাকে ঠকাইনি। আমার গর্ভে তোমার সন্তান অয়ন। আমি তোমার কাছে হাত জোর….!

অধরা কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করতে লাগলো। অধরা কান্না করার এক পর্যায়ে আর নিজের জ্ঞানে থাকতে পারলো না। অধরা সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে নিলো। অধরা মাটিতে পড়ে যেতে নিতেই অয়ন পেছন ফিরে তাকায় আর দৌড়ে অধরার দিকে এগিয়ে যায়। অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে গিয়ে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অধরাকে নিজের কোলে রেখে অয়ন অধরাকে ডাকতে লাগলো। এমনিতেই অধরা প্রেগন্যান্ট। তার উপর এতো প্রেশার! সব কিছু মিলিয়ে অধরা আর সামলাতে পারেনি নিজেকে। অয়ন অধরাকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে গেলো। অয়ন অধরাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে অধরাকে সোজা নিয়ে গেলো ডক্টর দেখাতে। ডক্টর অধরার অবস্থা দেখে বেশ খানেক সময় অধরাকে পর্যবেক্ষণ করার পর অয়নকে জানালো অধরা এখন আউট অফ ডেঞ্জার আছে। কোনো সমস্যা নেই। অধরার জ্ঞান ফিরতেই অধরা দেখতে পেলো অয়ন তার পাশে বসে তার হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। নিজের স্বামীকে নিজের পাশে দেখার পর অধরা মুচকি হেসে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল

— অভিমান কি শেষ হয়েছে? নাকি এই অভিমানটা সারাটা জীবন বুকে পুষতে থাকবে?

অধরার কথাটা কানে এসে লাগতেই অয়নের ঘোর কাটে। অয়ন অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন অধরাকে জড়িয়ে ধরতেই অধরা ও অয়ন কে জড়িয়ে ধরলো ভালোবাসা সত্যি অদ্ভুত। ছোট ছোট অভিমান মানুষের মনের মাঝে ভালোবাসাকে একটা চাদরের মতো ডেকে রাখে। অভিমান করা ভালো। তবে অতিরিক্ত নয়। কারন অতিরিক্ত অভিমান প্রতিটা সুন্দর সম্পর্ক কে নষ্ট করে ফেলে। অতঃপর আর কি! অয়ন অধরাকে ক্ষমা করে দিয়ে সারা জীবনের জন্য অধরার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো। অভিমানের চাদর সরে যেতেই অয়ন আর অধরা এক হয়ে গেলো তাদের ভালোবাসায়।

————————— সমাপ্ত———–

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে