সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০৩

0
5

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০৩

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

কেউ একজন অয়নের রুমে চলে আসে আর অয়ন কে টেবিলের উপর এমন ভাবে বসে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠে। অয়ন যদিও নিজের হুসে আছে। তবে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকানোর মতো শক্তি অয়নের নেই। অয়ন তাই ঠাই মাথা নিচু করে বসে আছে। এই দিকে ফারিয়া অয়নের এমন অবস্থা দেখতে পেয়ে দ্রুত অয়নের কাছে এগিয়ে আসলো। আর নিজের বুকের উপর থাকা ওড়না টা টেনে নিয়ে অয়নের হাত শক্ত করে বেধে নিলো। ফারিয়া অয়নের হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে ভিশন রকম বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো

— অয়ন এসব কি করে হলো? তোমার হাত কি করে কেটে গেছে? সত্যি করে বলো আমায়!

ফারিয়ার কথা গুলো অয়নের কান অব্দি হয়তো পৌঁছে গেছে কিন্তু অয়নের ব্রেন অব্দি যায়নি। অয়ন অতিরিক্ত নেশা করে আছে। তাই অয়নের কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে নিজের জায়গায় বসে থাকলো। ফারিয়া অয়নকে কোনো কথা বলতে না দেখে অয়ন কে কোনো মতে নিজের বাহুর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে অয়ন কে ধরে তার বিছানার দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলো। অয়ন ফারিয়ার থেকে তুলনামূলক ভারী। তাই অয়নকে বিছানায় নিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হলো ফারিয়াকে। ফারিয়া অয়নকে তার বিছানায় কোনো মতে শুইয়ে দিয়ে ডক্টরকে কল করলো। ফারিয়া ডক্টর কল করার প্রায় মিনিট দশেক সময় অতিবাহিত হতেই ডক্টর অয়নের রুমে চলে আসলো। ডক্টর অয়নের রুমে এসে অয়নের চিকিৎসা শুরু করলো। অয়নের হাতে ভালো করে ব্যান্ডেজ করে দিতেই ফারিয়া ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলো

— ডক্টর অয়নের হাতের কোনো সমস্যা হবে না তো? অনেকটা কেটে গেছে। সব ঠিক থাকবে তো?

ডক্টর ফারিয়ার প্রশ্নের জবাবে বলল

— আপনি দয়া করে শান্ত হয়ে যান। আমাকে আগে বলুন এতো বড় আঘাত ওনার হাতে কি করে লাগলো? মানে ইচ্ছে করে এমনটা করেছে সেটা তো মনে হচ্ছে না আমার!

— ডক্টর আমি জানি না কি করে হয়েছে! আপনি প্লিজ কিছু একটা করুন।

ডক্টর ফারিয়ার কথা শুনে খানেক সময় ফারিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা আপন মনে চিন্তা করলো। অতঃপর ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কেমন স্ত্রী হয়েছেন নিজের স্বামীর খেয়াল রাখতে পারেন না! শুনুন আপনার স্বামী অতিরিক্ত মদ্যপান করেছে। এমনটা যেনো আর কখনো না করে সেই দিকে খেয়াল রাখুন। তা না হলে আপনার স্বামীর পাগলামি আরো বেড়ে যেতে পারে। তারপর আপনাদেরই বিপদ বাড়বে।

— জ্বি আমি খেয়াল রাখবো।

ডক্টর কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। ডক্টর অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই ফারিয়া অয়নের পাশে গিয়ে বসলো। ফারিয়া অয়নের পাশে গিয়ে বসে আলতো করে অয়নের চুলের উপর নিজের হাত রেখে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কেনো এমন করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো অয়ন? যেই মেয়েটা তোমার ব্যর্থতার দিনে তোমাকে ছেড়ে গেছে। তার কথা ভেবে নিজেকে একটু একটু করে শেষ করে দেয়ার কোনো মানে হয় বলো? আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে সারাটা জীবন থাকতে চাই। আমাকে কি একবার আপন করে নিতে পারো না তুমি?

ফারিয়া কথা গুলো বলতে বলতে অয়নের কপালের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। ফারিয়া অয়নের কপালের দিকে এগিয়ে এসে আলতো করে নিজের ঠোঁটের উষ্ণ পরশ অয়নের কপালের এঁকে দিলো। ফারিয়া অয়নের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে অয়নের বুকের উপর নিজের মাথাটা রেখে চোখ বন্ধ করে ডক্টরের বলে যাওয়া কথাটা চিন্তা করতে লাগলো। ডক্টর যখন ফারিয়াকে অয়নের স্ত্রী মনে করেছে। তখন ফারিয়ার মনের মাঝে এক অদ্ভুত প্রশান্তি হয়ে গিয়ে ছিলো। এই প্রশান্তিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ফারিয়া কিছুক্ষণের জন্য একটাই বিশ্বাস করতে শুরু করে ছিলো যে সে নিজেই অয়নের স্ত্রী। ফারিয়া আপন মনে এসব ছাই পাশ কথা চিন্তা করতেই আচমকা ফারিয়ার পিঠের উপর অয়নের হাত চলে আসলো। অয়নের হাত ফারিয়ার পিঠের উপর চলে আসতেই ফারিয়া খানেক চমকে উঠলো। এই সময়ে অয়নের এই স্পর্শ ফারিয়ার সারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলল। ফারিয়া অয়নের মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অয়ন ফিসফিস করে বলতে লাগলো

— অধরা আমি তোমাকে পাবার জন্য নিজের সব কিছু ত্যাগ করতে পারি। আমার এই সফলতা চাই না। আমার তোমার ভালোবাসা চাই। আমি তোমার ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে গেছি অধরা। আমি কখনো তোমাকে ভূলতে পারবো না।

অয়নের মুখে এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ফারিয়া। এতোক্ষণ আপন মনে অয়ন কে নিয়ে কত সব স্বপ্ন বোনা শুরু করে দিয়ে ছিলো নিজের মনের মাঝে। সেই সব স্বপ্ন যেনো অয়নের একটা কথায় ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো। অয়নের মুখে অধরার নাম একদমই সহ্য হয় না ফারিয়ার। ফারিয়া অয়নের বুকের উপর থেকে নিজের মাথাটা তুলে নিতে চেষ্টা করতেই অয়ন আরো শক্ত ভাবে ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। ফারিয়া অয়নের এমন আচরণে ভিশন রকম বিচলিত হয়ে পড়েছে। ফারিয়া বুঝতে পারছে না যে তার এখন কি করা উচিত। অয়ন তো মদের নেশায় ফারিয়াকে অধরা ভাবতে শুরু করেছে। এই সুযোগ অয়ন কে নিজের ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে দিয়ে অয়ন কে নিজের আপন করে নেয়া। তা না হলে কখনোই ফারিয়া অয়নকে নিজের আপন করতে পারবে না। ঐ অধরা এসে তার কাছ থেকে তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষকে ঠিক কেড়ে নিয়ে যাবে। ফারিয়া আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো

— না সেটা আমি কখনো হতে দিবো না। আমি অয়ন কে কখনোই ছাড়বো না। আমি সারাটা জীবন অয়নের হয়ে থাকবো। আর অয়ন শুধু মাত্র আমার হয়ে থাকবে। আমি অধরাকে কোনো ভাবেই আমার থেকে অয়ন কে কেড়ে নিতে দিবো না।

ফারিয়া বিড়বিড় করে কথা গুলো বলতেই অয়ন ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরতেই ফারিয়া দুষ্টু একটা হাসির রেখা নিজের ঠোঁটের উপর একে নিলো। ফারিয়ার মুখে থাকা এক দুষ্টু হাসির পেছনে এক ভয়ংকর প্লান আছে। যেটা অয়ন জানে না। প্রায় মিনিট পাঁচ সময় অয়নের মাথায় মদের নেশা থাকলো। অতঃপর সকল নেশা কেটে গেলো অয়নের। পাঁচ মিনিট পর অয়ন নিজের সকল ঘোর কাটিয়ে ফেলল। আর দুম করে নিজের চোখের পাতা মেলে তাকালো সে। অয়ন নিজের চোখের পাতা মেলে তাকাতেই ফারিয়াকে নিজের বুকের উপর অনুভব করছে পেরে হকচকিয়ে উঠলো আর ফারিয়াকে এক ঝটকায় নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলো সে। অয়ন ফারিয়াকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করলো

— কি ব্যাপার ফারিয়া! তুমি আমার রুমে কেনো? আর এসব নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো তুমি?

অয়নের কথাটা শুনে ফারিয়া এক মুহুর্তেই নিজের মুখটা মলিন করে ফেলল। আর অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি কি করেছি? আমার এই অবস্থা তো তুমি নিজেই নিজে হাতে করেছো।

— ওয়াট? পাগল হয়ে গেলো? কি সব কথা বলছো তুমি? আমি তোমাকে…! আচ্ছা এসব বিষয়ে পরে কথা হবে। আগে নিজের জামা কাপড় ঠিক করে নাও।

অয়নের কথা মতো ফারিয়া বিছানা থেকে উঠে পড়ে নিজের জামা ঠিক করে নিলো। ফারিয়া নিজের জামা ঠিক করে নিয়ে মাথা নিচু করে অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো। এমন ভাব করছে ফারিয়া যেনো সে কিছুই জানে না। অয়ন ফারিয়াকে নিশ্চুপ দেখে বলল

— ফারিয়া আমি জানি আমাদের মাঝে…..!

অয়ন সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই আচমকা……..!

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে