সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০২

0
4

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০২

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা তার নিজের গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ফারিয়া অধরার সামনে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্যটা দেখার পর অয়নের আর হজম হলো না। অয়ন দৌড়ে ছুটে ফারিয়ার সামনে এসে দাড়িয়ে এতো গুলো লোকের সামনে অয়ন ফারিয়ার গালের উপর পরপর দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ফারিয়া নিজেও হয়তো এমন কিছু আশা করেনি। ফারিয়া অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই অয়ন ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে ভিশন শক্ত গলায় বলল

— তোমার সাহস হলো কি করে অধরার গায়ে হাত তোলার? তুমি জানো না অধরা প্রেগন্যান্ট? ওর গায়ে হাত তোলার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়?

অয়নের প্রশ্ন শুনে ফারিয়া কোনো উত্তর দিতে পারলো না। ফারিয়া মাথাটা নিচু করে ফেলল। ফারিয়া মাথা নিচু করে ফেলতেই অধরা হেসে ফেলে অয়ন কে বলল

— এটাই তো আমার প্রাপ্তি। আমি তো এটাই প্রমান করতে চাই অয়ন।

অধরার কথাটা কানে আসতেই অয়নের টনক নড়ে। অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে অধরাকে জিজ্ঞেস করলো

— কি প্রমান করতে চাও? সরি আমি তোমার কথার মানেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কি প্রমান করার জন্য এখানে এসেছো তুমি?

— আমি এখানে এসেছি এটাই প্রমান করতে যে, তোমার মনের মাঝে এখনো আমার জন্য অনুভূতি বেঁচে আছে। তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো। আমার প্রতি তুমি এখনো দূর্বল।

অধরার কথাটা শুনে অয়ন ভিশন শব্দ করে হেসে ফেলল। অয়নের হাসির শব্দে আশেপাশে থাকা সকল লোকজন অয়নের মুখের দিকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে। অয়ন হাসতে হাসতে আচমকাই নিজের হাসি বন্ধ করে ফেলল। অয়ন হাসি বন্ধ করে ফেলে অধরার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুম করে অধরার হাত ধরে ফেলল সে। অয়ন অধরার হাত ধরে একটা হেঁচকা টান দিয়ে অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিলো। অয়ন অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে অধরার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গেলো। অয়ন অধরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল

— তুমি কি ভেবেছো? এতো বড় প্রতারণা করার পর ও আমার মনের মাঝে তোমার জন্য জায়গা থাকবে? আমার বুকে যেই আঘাত তুমি করেছো! তারপর ও আমি তোমাকে ভালোবাসবো? কি করে ভাবলে তুমি?

— অয়ন আমি যেটাই করেছি তোমার ভালোর জন্য। আমি চেয়েছি…..!

অধরা নিজের কথাটা সম্পূর্ণ বলার আগেই অয়ন একটা ঝাড়ি দিয়ে উঠলো। অয়নের ঝাড়ি খেয়ে অধরা চুপসে গেলো। অয়ন অধরাকে আবার ও বলতে লাগলো

— কথা দিয়ে ছিলে আমায়! সারা জীবন এক সাথে থাকবে। কখনো ছেড়ে যাবে না। সেই কথা তুমি রাখতে পারোনি। আমি কোনো অযুহাত চাই না। তুমি এখুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। এটাই আমার ফাইনাল কথা।

— অয়ন আজ তুমি আমাকে বের করে দিতেই পারো। আমি তোমাকে আটকাতে ও আসিনি। তবে একটা কথা বলতে চাই। ভূল মানুষের দ্বারা হয়। আমার ও হয়েছে। একটিবার আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি। প্লিজ! আমি সত্যি….!

— তুমি যাবে নাকি আমি সিকিউরিটি ডাকবো?

— হুম।

* অধরা আর কোনো কথা বলার সুযোগ পেলো না। কারন অয়ন তাকে সেই সুযোগটাই দেয়নি। অয়নের বুকের বাম পাশে যেই আঘাত অধরা দিয়েছে। সেই আঘাতের ক্ষত এতোটা সহজে মুছবে না। অধরা মাথা নিচু করে অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেলো নিজের বাবার বাড়িতে। অধরা অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভেবেছে এই বুঝি অয়ন তাকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার তাকে ডেকে নিবে নিজের কাছে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। অধরা চলে যাওয়ার পর অয়ন ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

— তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তুমিও চলে যাও।

অয়নের কথাটা কানে এসে পৌচ্ছাতেই ফারিয়া অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল

— অয়ন সরি। আসলে আমার রাগ উঠে গেছিলো অধরার উপর। তাই আরকি আমি ওর গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। সরি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।

— বিষয়টা ক্ষমা করার নয়। আমার সাথে এমন কিছু করোনি তুমি যে আমাকে ক্ষমা করতে হবে। যার সাথে করেছো তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও।

— কিন্তু অয়ন আজ আমাদের বিয়ে। তুমি আমাকে যদি এই মুহূর্তে চলে যেতে বলো! তবে কেমন করে বিয়ে হবে?

— বিয়ে করার জন্য আমার এখন আর কোনো মুড নেই। আমাকে প্লিজ এই বিষয়টা নিয়ে আর ফোর্স করো না।

— অয়ন এসব কি বলছো তুমি? এতো আয়োজন! সব কিছু এমন ভাবে নষ্ট করে দিবে?

— আমার কথা পরিষ্কার। এসব আমার কাছে কোনো প্রকার গুরুত্ব রাখে না। আসছি আমি।

অয়ন নিজের কথাটা শেষ করতেই হনহন করে হেঁটে চলে গেলো নিজের ঘরের দিকে। ফারিয়া অয়নের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফারিয়া বুঝতে পারছে না যে অয়ন তার সাথে এমনটা করলো কেনো? অয়ন নিজেই তো ফারিয়ার সাথে বিয়ের কথা পাকা করেছে। আর এখন সে নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিলো। তাও আবার এতো আয়োজনের পর! ফারিয়া আশেপাশের লোকজনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সবাই চলে যাচ্ছে নিজেদের মতো। ফারিয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। ফারিয়া খানেক সময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকার পর চলে গেলো অয়নের বাড়ির সামনে থেকে। ঐ দিকে অয়ন নিজের রুমে ফিরে এসে একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে চলেছে আর ড্রিংক করছে। কোনো ভাবেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না অয়ন। যেই অয়ন অধরাকে আঘাত দিতে ফারিয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছে। সেই অয়ন কি না নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসলো! অয়নের নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। অয়ন নিজের রাগ সামলাতে না পেরে কাঁচের গ্লাসটা শক্ত হাতে চেপে ধরলো। অয়ন এতোটা শক্ত ভাবে গ্লাস ধরেছে যে গ্লাসটা ভেঙ্গে অয়নের হাতের বেশ কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। অয়নের হাতে কাঁচের গ্লাস ভালো ভাবে বিঁধে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়ছে। অয়নের চোখ থেকে ও কয়েক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। যদিও আজ অয়নের নিজের দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। অয়নের মাথায় একটাই বিষয় ঘুরছে। আর সেটা হলো নিজের এক্স ওয়াইফ অধরার কথা। পাগলের মতো ভালোবাসতো অয়ন অধরাকে। আর সেই অধরা অয়নের বুকের বাম পাশে আঘাত করে অয়নকে ছেড়ে চলে গেছে। তাও আবার নিজের বাবার কথায়। অর্থ একটা মানুষকে নিজের প্রিয়জন গুলোর সামনে হয় বড় করে, নয়তো ছোট। অয়ন কাছে যখন নেইম, ফেইম, অর্থ ছিলো না। তখন এই অধরা অয়ন কে ছেড়ে গেছে। আজ অয়নের কাছে সব আছে। আর অধরা ও ফিরতে চায় অয়নের লাইফে। তবে সেটা আর সম্ভব নয়। অয়ন আর অধরাকে চায় না। অয়ন নিজের অতীতের কথা গুলো ভাবতেই ডুকরে কেঁদে উঠলো। অয়ন না পারছে অধরাকে ক্ষমা করতে আর না পারছে অধরাকে ভূলে যেতে। অয়ন নিজের কেটে যাওয়া হাতটা টেবিলের উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রেখে টেবিলের উপর মাথা রেখে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। অয়ন নিজের চোখ বন্ধ করেই ফেলেতেই আচমকা কেউ একজন অয়নের রুমে চলে আসে আর অয়ন কে………..!

#চলবে…………..!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে