সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ ২৫
.
.
.
সন্ধ্যে থেকেই অনুর অবস্থা খারাপ হচ্ছিলো। বার বার বমি করছে। হাত পা কাপছে ।
ঘেমে নেয়ে একাকার৷
সবাই ভয়ে আছে।
রাত বাড়ছে সাথে ঝড়ের বেগ৷
কিন্তু পেইন নেই। ক্লিনিকে নিবে কি না বুঝছে না। এদিকে আশাও কল রিসিভ করার নাম নেই।
খাস বাংলায় খিস্তি তুলে আশা কে কয়েকদফায় মনে মনে গালি দিলো সাম্য।
.
.
কিছুক্ষণ আগে আশা, নীল এসেছে।
হঠাৎ অনুর এমন শরীর খারাপ হওয়াতে সাম্য নিজেকে সামলে নিতে পারছে না।
কেনো যেনো মনে হচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছে অনু।
ঘুমের মেডিসিন খাইয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। সাম্য ওর মাথার কাছে বসে।
সীমন্তিনী পা মালিশ করছে।
রাত বাড়ছিলো কিন্তু কারো মুখে কোন শব্দ নেই।
.
.
এখানে আসার সময় আশা মনে মনে ভেবেছিলো মেঝ ভাবীকে দেখে আজ সাম্যর সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারবে কিন্তু সাম্য তো ভাবীর পাশে থেকেই উঠতে চাইছে না।
.
অনুর ঘুম একটু হালকা হলো।
তখন রাত প্রায় ২ টার কাছাকাছি।
ক্ষুধা পেয়েছে। মনে হয় সবাই ঘুমে। একটু নড়ে উঠতেই সাম্য অনুকে ধরে বসিয়ে দিলো। এতটা দুর্বল ছিলো সে মাথা উঁচু করে রাখতে পারছে না।
সাম্যর কাধে মাথা আপনাআপনি চলে গেছে৷
.
– অনু….
– হুম!
– বেশি খারাপ লাগছে?
– উঁহু!
– জেগে গেলে যে? ক্ষুধা পেয়েছে?
– হুম্ম!
– একটু বসো আমি আসছি৷
– উঁহু!
– প্লিজ!
– না! তুমি থাকো।
.
.
বাধ্য হয়েই সাম্য সীমন্তিনী কে ডাকলো।
সে গিয়ে দ্রুত খাবার নিয়ে এলো।
ধোয়া উঠা গরম ভাত সাথে কাঁচ কলা ভর্তা, গরুর মাংস।
সীমন্তিনী খাইয়ে দিচ্ছে। অনু চোখ খুলে দেখলো ওর পাশের কাউচে আশা গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।
ওরা যায় নি তাহলে?.
.
অনুকে খাইয়ে দিচ্ছে আর সাম্য নানান কথা বলছে।
কারণ অনু যদি একবার মনে করে যে ওর বমি আসছে তাহলে তাই হবে ।
ওর মাইন্ড ডাইভার্ট করানো দরকার৷
এই প্রথম অনু সাম্যর হায় নিয়ে ওর পেটে রেখে বললো
.
– সাম্যদা! দেখো! ফিল করো! কেনো যেনো মনে হচ্ছে তোমার স্বপ্ন আছোয়া থেকে যাবে। তুমি পারবে না ওর গুটিগুটি হাত পায়ের সাথে খেলতে…….
.
.
সন্ধ্যের পর অনুর সাথে নিলয়ের আর কথা হয়নি।
ব্যস্ত ছিলো সে তারপর হয়তো অনু ঘুমিয়ে পড়েছে।
.
হঠাৎ করে ফোনে টুংটাং শব্দ করে ম্যাসেজ এলো। ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট।
কোন ছবি এসেছে।
লোডিং হচ্ছে। নেট এতো স্লো!
ছবি ওপেন হওয়ার পর নিলয় হাসলো তাচ্ছিল্যের সাথে।
.
.
নিলয়- হ্যালো!
অনু- হুম!
– ঘুমিয়ে গেছো?
– না!
– কেনো? তোমার সাম্যদা বুঝি এতই সুখ দিচ্ছে যে রাত আড়াই টের সময় তুমি জেগে আছো?
– মানে?
– অনু রাগছো কেনো? ৩৫+ উইক চলছে এখন ফিজিক্যালি ইনভলভ হলে হাপানো টা স্বাভাবিক । যাইহোক সাম্য পেরেছে তোমাকে স্যাটিসফাই করতে?
– কি সব বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে?
– কেনো রে? তুই রাত বিরাতে সাম্যর কাধে মাথা রেখে শুয়ে আছিস আমি বললেই দোষ?
.
.
অনু এখনো সাম্যর পাশেই। কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো।
নিলয় যাচ্ছে তাই বলছে৷ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো যখন অনুকে সে নানা ভাবে বকতেছিলো। নিকৃষ্ট ভাষায়।
.
.
– এই যে কি বললি তুই? অনু দুশ্চরিত্রা? অনু রাস্তার মেয়ে? তোর এতবড় সাহস? তোকে আমি মেরে ফেলবো। খুব তো জ্বালিয়েছিস৷
.
কম তো মারিসনি। এত কিসের সন্দেহ তোর? ও কোন রাস্তার মেয়ে না। ও শরীর বিক্রি করেও চলে না। ওর শরীরের ক্ষুধা এত বেশি? এসব কেউ বলে নিজের স্ত্রী কে? কোন মাটি দিয়ে বানিয়েছে তোকে? কম তো সহ্য করছে না ও। ওর পবিত্রতা নিয়ে কথা তুলিস কোন সাহসে? তুই কি জানিস অনু কতটা পবিত্র? তুই ওকে কিভাবে সন্দেহ করতে পারিস?তুই বলছিস বিয়ের আগে পেট বাধিয়েছে? বিয়ের আগেই যদি পেট বানাতো না তাহলে তুই ওকে এতদিন রাখতি? বিয়ের পর মেয়েটা তোর বিছানার চাদর রক্তাক্ত করে তোকে স্বতীত্ব প্রমাণ না দিলেই তুই রেখেছিস?
তুই কি জানিস? তুই কি বলছিস?
তুই কি অনুকে নিবি না? আমিই অনুকে দিবো না।
অনু আমার কাছেই থাকবে। আর হ্যাঁ! অনু ওর নাগরের সাথে না এখানে তোর ভাই বোন আছে। সন্ধ্যার পর থেকে তো এক বার কল দিস নি। জানবি কিভাবে যে মেয়েটা এতটা অসুস্থ হয়ে গেছে যে পানির গ্লাস টা তুলে ধরতে পারছে না। ডিভোর্স লেটার তুই পেয়ে যাবি
অনুকে আর কল দিবি না। ওর দিকে চোখ তুলে তাকালে চোখ তুলে নিবো।
.
সাম্যর চিল্লাচিল্লি তে সবাই জেগে গেছে।
কাহিনি কি কারো অজানা নেই। কিন্তু মেঝভাই হঠাৎ এমন করলো কেনো?.
.
অনু যেনো অনুভূতিহীন হয়ে গেছে ।চুপচাপ বসে আছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। চোখ বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
.
.
.
সামান্য ৫ টা ছবির জন্য ইরাকে পুরো ২০ হাজার টাকা গুনতে হলো।
এতে তার কোন আফসোস নেই। নিলয়ের জন্য ২০ হাজার কেনো ২০ লাখ সে এখনি দিয়ে দিতে পারে।
অনেক কষ্টে সে ড্রাইভার কে ম্যানেজ করেছে৷
আশাকে যখন কল দিলো তখন আশা বললো। অনুকে দেখতে যাচ্ছে তখন মনে মনে ছক কষে নিয়েছিলো।
এতদ্রুত ফল পাবে সে বুঝেনি।
দেখা যাচ্ছে ম্যাসেজ সিন হয়েছে।
খুশি ঠিকড়ে পড়ছে তার। ঈশ্ না জানি কি কি হচ্ছে। ফাইনালি! ফাইনালি কিছু করতে পেরেছে৷
.
.
বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছে নীল। সীমন্তিনী এসে দাড়িয়েছে।
.
– ভাইয়ার সাথে অনুর রিলেশন ছিলো?
– না, মানে….
– সীমো! লুকিয়ো না।
– হয়তো ছিলো।
– আমি জিজ্ঞেস করেছি!
– আমি জানতাম না। কয়েকদিন আগে জেনেছি । জানলে আমি….
– অনুকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিলো।
– ভাইয়া যাওয়ার আগে অনুর সাথে তেমন মিশতো না, কথা বলতো না কিন্তু যেদিন চলে যায় সেদিন পুরো সময় ভাইয়া অনুকে কাছে রেখেছিলো। আমি ভেবেছি এমনি… আর তখন অনুর প্রতি মায়ের ব্যবহার তো তুমি জানোই।
– বড্ড ভুল হয়ে গেছে রে পাগলী। অনুর ভালো করতে গিয়ে নরকে ঠেলে দিয়েছি।
– এখন কি হবে? ভাইয়া অনুকে দিবে না এদিকে তোমার ভাই?
– জানিনা অনুর কপালে কি আছে।
.
.
সকালে আশা নীল চলে যাওয়ার পর সাম্য বের হয় অনুর মেডিসিন আনতে৷
বাসায় এসে অনুর খোঁজ করতেই জানতে পারে কিছুক্ষণ আগেই নিলয় এসে না কি ওকে নিয়ে গেছে৷