সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ ২২
.
.
ভোর সকালবেলা অনুর ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে সাম্য।
এখন না উঠলে তো আর নামাজের সময় থাকবে না।
তাছাড়া ওর বড্ড ঘুম পাচ্ছে। অনুকে জাগিয়ে নামাজ শেষে সে ঘুমুতে যাবে।
সারা রাত ঘুমায়নি।
.
সাম্য- অনুমণি উঠ।
অনু- উঁহু! ঘুমোতে দাও।
– প্লিজ উঠ। না হলে নামাজের সময় চলে গেলে আবার মন খারাপ করবি।
– করবো না। আর পাঁচ মিনিট!
– পাগলী সকাল হচ্ছে তো।
.
.
অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সাম্য ডাকছে অনুকে।
অনুকে সামলানো এখন যে সহজ না সে এক দিনেই বুঝে গেছে।
পাশেই সীমন্তিনী ঘুমানো। এই মেয়ে দুনিয়া ভেসে গেলেও জানবে না। তাই সারা রাত সাম্য অনুর রুমের করিডরে বসে কাজ করেছে৷
অনু উঠে বসতেই একটা কাজ করলো। হয়তো ঘুমের ঘোরে।
সাম্যর বুকে মাথা রাখলো।
আঁতকে উঠেছে সাম্য কিন্তু অনু স্বাভাবিক ভাবে বললো
– প্রতিদিন না জাগালে হয় না?
রাক্ষস রাজ নিলয়!
.
.
সাম্য বুঝতে পারলো অনু নিলয় মনে করেই তাকে ধরেছে।
এখনো সাম্য অনুর চুলে বিলি কাটছে।
– খুব ভালোবাসিস নিলয় কে?
– হু??
– সাম্য কে বুঝি দেখতেই ইচ্ছে করে না?
– উঁহু!
– উঁহু কি?.
.
.
অনুর হুশ ফিরলো। দ্রুত উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
অনুর নামাজ শেষ অবধি সাম্য অপেক্ষা করলো। নামাজ শেষে উইমেন্স হরলিক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে সাম্য।
অনু কথা বাড়াতে চায় না। চুপচাপ খেয়ে নেয়।
.
.
.
নিলয় বার বার অনুর ফোনে কল দিচ্ছে। কিন্তু অনু ঘুমে। কল ধরেনি। বাধ্য হয়েই আশা কে কল দিলো।
.
– হ্যাঁ মেঝভাই
– মণি কই তুই?
– বাসায়। কেনো?.
– আজ ছুটি নে। অনুর কাছে চলে যা।
– কেনো?
– সারাদিন ঘুমাচ্ছে কেনো? কাল রাতে কল দিলাম। সীমন্তিনী বললো ঘুমে এখন কল দিলাম তাও ঘুমে
– তোরা কি শুরু করলি বল তো? কাল উনি কল দিয়ে প্যানিক হয়ে গেছিলো আজ তুই
– প্লিজ যা না। দেখ অনুর ৩৩ সপ্তাহ চলছে। বয়স টা এখন সবে ২২
– তাহলে বেবি নিলি কেনো?
– আরে! যাবি কি? না হলে আমার ট্রেনিং ছেড়ে আসতে হবে, এমনি তেই কাল রাত থেকে শরীর ভালো না।
– কি হয়েছে?
– কাল ব্লাড দিয়েছিলাম। আর সুই ভালো ভাবে লাগাতে পারেনি ।
– কি করেছিস?
– কেনো?
– ৯০ দিনো হয়নি ব্লাড দিয়েছিলি
– আরে ইমারজেন্সী ছিলো। এখন তুই যা।
– নিজের খেয়াল রাখিস৷
.
.ইরার সামনে বসে আছে ওর বান্ধুবী মোনা।
সে সাম্যর সব তথ্য নিয়ে এসেছে।
গভীর মনোযোগে তাকিয়ে ইরা জিজ্ঞেস করলো
– কিছু হবে কি?
– সাম্য মানে সাম্য মেহেবুব। শাহজাহান মেহেবুবের ছেলে।
বিন্দুবাসিনী ভয়েজ থেকে মাধ্যমিক, মাহমুদুল হাসান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক।
তারপর বুয়েট থেকে আর্কিটেকচার।
বুয়েটে যখন সাম্য দু বছর পার করে তখন অনু মানে অনুরুপা ওদের বাড়িতে আসে৷
অনুর সাথে সাম্যর সম্পর্কে কোন তেমন কিছু নেই।
ভার্সিটি লাইফে সাম্য প্রথমে কোন মেয়ের দিকে না গেলেও অনু আসার কয়েকমাস পর থেকে বেশ ভালো মেয়ে বন্ধু বানায়।
কথায় কথায় শোনা গেলো সাম্যর বাসায় অনু নিজেকে খুব সাধারণ ভাবে থাকতো।
এক কথায় ওদের কাজের লোকের মতোই।
সাম্যর বন্ধুরা প্রথমে ওকে কাজের লোক বলেই মনে করে।
তারপর সাম্যর বিয়ে ঠিক হয় ওর খালাতো বোনের সাথে৷
সাম্য স্কলারশিপ নিয়ে বাহিরে চলে গেলে একদিন হটাৎ বিয়ে ভেঙে দেয়।
তারপর দেশে ফিরলো প্রায়
পাঁচ বছর পর।
.
– অনুর সাথে সাম্যর তেমন কিছুই ছিলো না।
– হুম! আচ্ছা অনুর ছেলে ক্লাসমেট?
– না! নিলয় ওকে কারো সাথে মিশতে দিতো না।
– তাহলে?.
– জানি না। তবে অনুর কিছু তো করবো।
-শোন সামান্য সন্দেহের বশে অনুকে নিলয় যেভাবে মারতো তাতে করে কিন্তু তোর কাজ সহজ। আর বাই দি ওয়ে সাম্যর সাথে কিছু ক্লোজ মোমেন্ট এনাফ। নিলয়ের মনের সন্দেহের বীজ আবার আবার মাথা গজাবে।
– হুম আমি জানি । কিন্তু সাম্যর সাথে আমাদের আশার বিয়ে ঠিক। আর সাম্যর বোন এবাড়ির বউ হবে। অনুকে ওরা খুব ভালোবাসে রে। কিছু হতে দিবে না।
– যা করবি বাবু হওয়ার আগেই করবি । মনে রাখিস এক বার বাবু হয়ে গেলে কিন্তু….
.
.
এমন সময় ইরার ভাবী এলো। ইরাকে ওর পরিবারের সবাই খুব মানে। যে জন্য ওর ভাবী সব টা জেনেও কিছু করতে পারছে না।
ভাবী- ইরা! তুমিও তো মা হতে চলেছো। তোমার মাঝেও এক সত্ত্বা বড় হচ্ছে। তুমি কি ভাবে অন্যের এত বড় ক্ষতি চাইছো?
– ভাবী তুমি যাও।
– ওর বাচ্চার কি দোষ? বাবার অধিকার কেনো কেড়ে নিবে? কি পরিচয়ে বড় হবে?
– যা ইচ্ছা হোক তাতে আমার কি? নিলয় কে ছাড়া ওই মেয়ে অন্য কাউকে পেলো না?
– তোমরা পছন্দ করেই এনেছিলে ও একা আসেনি।
– আমার কিন্তু রাগ উঠতেছে৷
– কথা তেতো হলেও সত্যি। তুমি নিজের সংসার ঠিক রেখে অন্যের সংসার ভাঙবে?
– নিলয় শুধু আমার । ওকে কেনো আমি অন্য কে দিবো?
– হাসালে ইরা! তুমি নীলাভ্র ভাইয়ার বাচ্চার মা হতে চলেছো। আর নিলয়ে কে কাউকে দিবে না?
– তুমি কি যাবে?
– যাচ্ছি গো। কিন্তু এমন করো না।
.
ইরার চিল্লাচিল্লি শুনে ওর বড় ভাই এলো। ভাইকে ইরা কি বললো কে জানে?
ঘরে যাওয়ার পর শুধু কারো চাপা স্বরে চিৎকার ভেসে আসছে।
হায়রে দুনিয়া, হায়রে পুরুষ ।
.
.
চলবে
Please unfold Ira’s mystery to everyone ???