সন্দেহ পর্বঃ ২০

0
1691

সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ ২০
.
.
.
সাম্যদের গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামলে অনুর মামা দ্রুত এগিয়ে যায়৷
ধরে প্রাণ ফিরে এলো। পুরো রাস্তা অনু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছে । কিন্তু ঘন্টা খানেকের রাস্তা আসতে সাম্যর লেগেছে প্রায় আড়াই ঘন্টা।
মামা খুব ধীরে অনুকে ধরে নিয়ে গেলো। ইদানীং অনু দেখতে হুবুহু ওর মায়ের মতো লাগে। মামা শুধু তাকিয়ে থাকে।
ছোট্ট একটা তারাহুরো তাদের জীবন থেকে অনুকে সরিয়ে দিয়েছে।
সাম্য যে অনুকে এতটা চাইতো যদি একটু জানতো
তাহলে তার কাছে আনার সাথে সাথেই সাম্য অনুর বিয়ে দিয়ে দিতো। হোক না বয়স কম তবুও দিতো৷ কিন্তু তার স্ত্রী যে অনুকে কখনো মেনে নিতে পারবে না একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে এটার জন্য সে আগায় নি। কিন্তু এখন মনে হয় তখন এসব নিয়ে যদি একটু চিন্তা করতো৷
.

.
বাড়িটা বাংলো বাড়ির মতোই তবে একটু ভিন্ন।
অনু যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে।
পুরো বাড়িটা তার পছন্দ মতো নয় তার স্বপ্নের বাড়ির মতো।
একটা সময় সে এমন বাড়ির স্বপ্ন দেখতো। চারপাশে প্রচুর গাছ।দুপাশে থাকবে ফুলের বাগান। তার মাঝ দিয়ে যখন হেটে যাবে ফুলের সৌরভে মুখরিত থাকবে চারপাশ।
.
বাড়ির ভিতর টা দেখে আঁতকে উঠল অনু। সব কিছু এভাবে মিলছে কেনো? ঘোর লাগছে না কি?
.
মামি- খারাপ লাগছে?
অনু- না। ঠিক আছি।
মামি- কি খাবি মা? বল আমি আনছি!
অনু- কিছু না মামি! আচ্ছা বাড়ি টার ডিজাইন কে করেছে?
মামি- কে আবার তোর সাম্যদা। সব কিছুই ওর ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী হয়েছে। বিদেশে বসেই সব করেছে।
অনু- ফার্নিচার গুলোও? কাঠ মিস্তির কাজ ও শুরু করেছে?
মামি- কি যে বলিস? এসব ও বলেছিলো আমরা সেভাবে কিনে এনেছি।
.
.
সে সময় সাম্য এলো। এসেই অনুকে বলে চল উপরে যাবি। তোর থাকার ব্যবস্থা উপরে করা হয়েছে।
.
অনু- সিড়ি বেয়ে উঠতে পারবো না। কষ্ট হবে। আমি নিচেই থাকবো। মামি তোমরা কই থাকো।
মামি- আমাদের বয়স হয়েছে। আমরা নিচেই থাকি।
অনু- আমিও থাকবো। উপরে উঠা কষ্ট হবে৷
সাম্য – রিকুয়েষ্ট করছি না৷ পারমিশন চাইছি না সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি।
মামি- সাম্য! ওর প্রায় নয়মাস। এভাবে সিড়ি ব্যবহার ঠিক হবে না।
.

.
সাম্য কোন কথা না বলেই অনুকে কোলে তুলে নেয় । ঘটনার আকস্মিকতায় অনু দুহাতে সাম্য কে শক্ত করে ধরে আছে।
.
সাম্য- আমি থাকতে তোর শরীরে ফুলের টোকাও লাগতে পারবে না৷ ভয় কেনো পাচ্ছিস? আমি আমার প্রমিস গুলোই তো রাখছি।
.
.
খাটের উপর বসে অনু কেদেই চলেছে৷ কেনো এমন হচ্ছে। সে এমন টা চায় না। কি হবে সাম্যদা এখন প্রমিস রেখে? তখন তো রাখোনি। শুধু অবহেলা করেছো। এখন কেনো দয়া করছো? কিন্তু প্রশ্ন গুলো করা হয়ে উঠে না।
কাদঁতে কাঁদতেই কল দেয় নিলয় কে
.
– বলো সানশাইন।
.
অনু চুপচাপ কেঁদেই চলেছে।
– এই ঠিক আছো তুমি? কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে? খারাপ লাগছে? আরে কথা বলো না কেনো? কি হয়েছে বলো….
– উঁহু!
– উঁহু কি?
– কিছু হয় নি।
– তাহলে পাগলী কাঁদছিস কেনো?
– ভালো লাগছে না তাই। কান্না পাচ্ছে তাই।

.
নিলয় বুজে অনুর মুড সুইং হচ্ছে। ঠোঁটের কোণে স্বস্তির হাসি।
– আচ্ছা বাবু! কি করো
– আমি বাবু না।
– ওকে সানশাইন। কি করো
– শুয়ে আছি।
– আমার কাছে বেবিদের নিউ ভিডিও আছে হোয়াটসঅ্যাপ করছি দেখো?
– উঁহু! ঘুমাবো। ঘুম পাচ্ছে।
– জেগে কল দিও?
– আপনি দিবেন! জাগাবেন।
– না গো! তোমার ঘুম প্রয়োজন। তুমি উঠে দিও।
– আচ্ছা।
– প্লিজ টেককেয়ার। বায়।
.
.
বাসায় তো সব সময় বউ বউ আর বউ। এখানে তো অন্তত বাদ দাও নিলয়।
.
বিপাশার কথা শুনে নিলয় হাসে।
– হাসছো কেনো?
– অনু প্রেগন্যান্ট সো আই হেভ টু টেককেয়ার হার…
– পুরুষ মানুষের ন্যাকামি ভালো না।
.
নিলয় উত্তর দেয় না। কাজে মনোযোগ দেয়।
.
.
.
সাম্য অনুর রুমে এসে দেখে সে ঘুমিয়ে আছে। এত ঘুম মেয়েটার চোখে?
বালিশ ঠিক নেই,হাত পা ঠিক নেই। যাকে বলে এলোপাথাড়ি ঘুম।
খুব সাবধানে সাম্য অনুকে ঠিক করে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
এসেই সীমন্তিনী কে পাঠালো অনুর কাছে । ওর ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু একা ছাড়া ঠিক না।
.
.
.
নিজের রুমের বিছানায় বসে আছে আশা। হাত বুলাচ্ছে বার বার। কাল বাসায় মানুষ বেশি থাকায় সাম্য শুয়েছিলো এই রুমে আর আশা অনুর সাথে।
সেই কখন থেকে বিছানায় তাকিয়ে আছে সে।
সকালে যখন রুমে এলো এসে দেখে সাম্য উপর হয়ে ঘুমিয়ে আছে ।
গালের হালকা দাড়ি চিকচিক করছে। শ্যামলা রঙের পিঠ উন্মুক্ত ছিলো। চুল গুলো বাতাসে উড়ছিলো। আশার খুব ইচ্ছে করছিলো সে একটু ছুয়ে দিবে কিন্তু লজ্জা?
কত প্রপোজ পেয়েছে হিসেব নেই । রুপে,গুণে সব দিকেই সে বেস্ট, খুব মিশুক।কিন্তু সাম্য? ও সামনে এলেই সব উলটপালট হয়ে যায়।
উপস্থিতি অশান্ত করে দেয়। মেঝভাবী কে যে ভাবে কেয়ার করে মাঝেমধ্যে অবাক লাগে৷
তাহলে যখন নিজের বেবি হবে তখন? তখন তো উনি অফিস বাদ দিয়ে বাসায় থাকবে। ভাবতেই কেমন অনুভূতি হয়। কালকের চাহনি সে ভুলতে পারেনা। যখন সে সেজে নেমেছিলো নিচে। সাম্যর চোখ যেনো আশার মুখেই আটকে গিয়েছিলো।
.
ভাবনায় ছেদ পড়ে ইরার কথায়।
.
ইরা- আশু, তোর নাকের ফুল কে দিলো?
আশা- মেঝভাবী!
ইরা- আমি যতদূর জানি নাকফুল টা অনুর জন্য তোর হবুস্বামী এনেছিলো। ওকেই দিয়েছিলো। কিন্তু অনু তোকে দিলো কেনো?
– ভাবীর আছে তাই তাছাড়া শাড়ির সাথে ম্যাচিং হচ্ছিলো।
– উঁহু! গিফটের জিনিস এভাবে দিয়ে দিলো? কিছু তো আছে! যা আমাদের অজানা।
.
আশা হেসে ইরার কথা উড়িয়ে দিলেও মনে কিছু একটা খুচাচ্ছে।
.
.

.
.

.
সাম্যর বাবা- সাম্য!
সাম্য- হ্যাঁ বাবা বলো
– কি করছিস তুই? এসব করিস না।
– ঠিক বুঝলাম না বাবা!
– অনুর সাথে নিজেকে এতো জড়িয়ে নিস না।
– নিচ্ছি না।
– তুই ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিস, তোর আবেগ মেয়েটার জীবন ধ্বংস করে দিবে।
– এটা আবেগ না৷ এটা….
– আশা তোর বাগদত্তা।
– মনে আছে।
– তাহলে কেনো এসব?
– যাতে কেউ আমার অনুর গায়ে ফুলের টোকা অবধি না দিতে পারে। যাতে কেউ অনুর দিকে চোখ তুলে না তাকায়। কারণ অনুর শরীরে মনে করা এক এক টা আঘাত আমি ১০০ গুণ করে শোধ তুলবো।
.
.
কথা শেষে সাম্য হন হন করে বেরিয়ে যায়। ওর বাবা ছেলের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ভাবে
এ কোন সর্বনাসের খেলায় মেতে উঠেছে সাম্য? এর ফলাফল যে ভয়ানক। সব না শেষ করে দেয়।
.
.
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে